ভোটে-যুদ্ধে সব 'জায়েজ'! কংগ্রেসকে পথে বসিয়ে কেন বিজেপিতে যেতে বাধ্য হলেন প্রার্থী?

Indore Congress 2024: ইন্দোরের বর্তমান বিজেপি সাংসদ শঙ্কর লালওয়ানির বিরুদ্ধে এই প্রথম ভোটে লড়ছিলেন কংগ্রেসের অক্ষয় কান্তি বাম।

সুধীজনরা বলেন, প্রেমে আর রণে সবকিছু 'জায়েজ'। দেশের নির্বাচন একই সঙ্গে প্রেম, একই অঙ্গে রণও। এই মুহূর্তে রাজনীতিবিদদের কাছে ভোটের চেয়ে বড় প্রেম কিছু নেই, আসন দখলের চেয়ে বড় যুদ্ধ কিছু নেই। তাই ছল-বল-কৌশল যা যা সম্ভাব্য অস্ত্র আছে তা ব্যবহারে খামতি নেই। যে যত শক্তিমান তাঁর তত অস্ত্রভাণ্ডার। বিজেপি কখনও দল ভেঙে, বিধায়ক বা সাংসদ কিনে, ইডি-সিবিআই ঢুকিয়ে কী কী করে তা এতদিনে সকলেরই জানা। সমস্ত অস্ত্রই আসন ও ক্ষমতা দখলের জন্য। লোকসভা নির্বাচনের মাঝে বিজেপি এমনই এক অস্ত্র প্রয়োগ করেছে মধ্যপ্রদেশে। কংগ্রেসের ইন্দোরের লোকসভা প্রার্থী অক্ষয় কান্তি বাম নিজের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তিনি বিজেপিতে গেছেন। এই প্রথম ইন্দোর আসনে কোনও প্রার্থী নেই কংগ্রেসের।

হঠাৎ এক সকালে উঠে অক্ষয় কান্তির মনে হলো তিনি বিজেপিতে যাবেন, চলে গেলেন, এমন তো নয়। কংগ্রেস অভিযোগ করেছে, অক্ষয় কান্তি বাম চাপের মুখে পড়ে তাঁর মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। অক্ষয়কে ভয় দেখানো হয়েছে, হুমকি দেওয়া হয়েছে এবং বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।

জেলা কালেক্টর আশিস সিং জানিয়েছেন, ইন্দোরে ১৩ মে নির্বাচন। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ছিল গত সোমবার। কংগ্রেসের অক্ষয় কান্তি বাম সহ তিনজন প্রার্থী তাঁদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। দিন কয়েক আগে নির্বাচন কমিশন কংগ্রেসের সুরাটের প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাখ্যান করে। যার ফলে বিজেপির মুকেশ দালাল ওই লোকসভা আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হতে চলেছেন। কংগ্রেসের প্রার্থী নীলেশ কুম্ভনীর মনোনয়ন গত ২১ এপ্রিল প্রত্যাখ্যান করা হয়। তিনজন প্রস্তাবকারী সুরাট জেলা নির্বাচন অফিসারের কাছে হলফনামা জমা দিয়ে দাবি করেছিলেন যে নথিতে যে স্বাক্ষরগুলি আছে, সেগুলি তাদের নয়।

আরও পড়ুন- দেশছাড়া প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর নাতি, কোন যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে এই সাংসদ?

ইন্দোরের বর্তমান বিজেপি সাংসদ শঙ্কর লালওয়ানির বিরুদ্ধে এই প্রথম ভোটে লড়ছিলেন কংগ্রেসের অক্ষয় কান্তি বাম। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন পেরিয়ে যাওয়ায়, কংগ্রেস ইন্দোরে আর প্রার্থীও দিতে পারবে না। কংগ্রেসের কাছে এখন একমাত্র বিকল্প অন্য বিরোধী প্রার্থীকে সমর্থন করা।

কিন্তু কেন অক্ষয় কান্তি বাম তাঁর মনোনয়ন প্রত্যাহার করলেন? রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি জিতু পাটোয়ারী বলেছেন, কয়েকদিন আগে অক্ষয় কান্তির বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ৩০৭ (খুনের চেষ্টা)-এর অধীনে অভিযোগ আনা হয়। সারা রাত তাঁকে ভয় দেখানো, হুমকি দেওয়া এবং বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হয়। রবিবার রাত অবধি ইন্দোরে প্রচার করেছিলেন অক্ষয় কান্তি। সোমবার সকাল ৭ টাতেও কংগ্রেসের কিছু কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। পরদিনই কৈলাশ বিজয়বর্গীয়র সঙ্গে তাঁর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার হতে শুরু করে।

 

অক্ষয় কান্তির পরিবার ইন্দোর শহরে বেশ কয়েকটি বেসরকারি আইন ও ম্যানেজমেন্ট কলেজের মালিক। তাঁদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি বেশ কিছু তদন্তও চলছে। নিজের নির্বাচনী হলফনামায়, অক্ষয় কান্তি বাম প্রকাশ করেছেন যে, তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে দু'টি ছিল জমি সংক্রান্ত বিরোধ, এবং তৃতীয়টি ছিল ২০১৮ সালে নথিভুক্ত হওয়া একটি অসাবধানে গাড়ি চালানোর মামলা।

২৪ এপ্রিল, যেদিন অক্ষয় কান্তি বাম তাঁর মনোনয়ন দাখিল করেন, সেদিন একটি জেলা আদালত তাঁকে এবং তাঁর বাবা কান্তিলালের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৭ ধারার (খুনের চেষ্টা) অধীনে অভিযুক্ত করে। অক্ষয় ও তাঁর বাবাকে ১০ মে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য তলব করা হয়।

মনোনয়নপত্র যাচাইয়ের সময়, বিজেপির আইনী শাখা অক্ষয় কান্তি বামের মনোনয়নের নিয়ে আপত্তি তোলে। জানায়, খুনের চেষ্টার অভিযোগের কথা উল্লেখ করেননি অক্ষয় কান্তি বাম। কিন্তু নির্বাচনী আধিকারিকরা মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন এই খুনের অভিযোগ আসায় বিজেপির ওজর-আপত্তি বাতিল করে দিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন- চিনের যুদ্ধে হারের শোকে নেহরুর মৃত্যু! বাবার মৃত্যুর পর কোন কৌশলে নির্বাচনে জিতলেন ইন্দিরা?

কাকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ তোলা হয়েছে? অক্ষয় কান্তির বিরুদ্ধে মামলাটি মূলত ২০০৭ সালের। একটি জমি সংক্রান্ত এই মামলা, যে জমিটি অক্ষয় কান্তি বামের পরিবার ইউনূস খান নামে একজন ব্যক্তির কাছ থেকে কিনেছিল। এই ইউনূস খান বামের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। স্বেচ্ছায় আঘাত করা, জনসমক্ষে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার, অপরাধমূলক ভয় দেখানো, হিংসা, বেআইনি সমাবেশ এবং আগুন বা বিস্ফোরক পদার্থ নিয়ে হেনস্থা করা সংক্রান্ত মামলা দায়ের হয়। আদালত বলছে, অক্ষয় কান্তি বাম এবং তাঁর বাবা সহ অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ২০০৭ সালের ৪ অক্টোবর অভিযোগকারীর শ্রমিকদের হেনস্থা করেন, সয়াবিনের বস্তায় আগুন লাগিয়ে দেন এবং গুলি চালানোর নির্দেশ দেন।

২৪ এপ্রিল, মনোনয়ন জমা দেওয়ার একদিন পরেই, ইন্দোরের জেলা ও দায়রা আদালত পুলিশকে এই মামলায় ৩০৭ এবং ৪৩৬ ধারা যুক্ত করার নির্দেশ দেয়। ৩০৭ অর্থাৎ হত্যার চেষ্টা এবং পরেরটি বাড়ি ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে আগুন বা কোনও বিস্ফোরক পদার্থের ব্যবহার বিষয়ক। দুই অভিযোগেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, অক্ষয় কান্তি বামের বাবা কান্তিলালের একজন সহকর্মী, সতভীর সিং খানকে তাঁর বন্দুক থেকে এক রাউন্ড গুলি করেছিলেন। এই বন্দুকটি পরে পুলিশ বাজেয়াপ্ত করে।

বিজেপি নেতারা অবশ্য বলছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গ্যারান্টি দ্বারা 'অনুপ্রাণিত' হয়েই অক্ষয় কান্তি বাম দল পরিবর্তন করেছেন। মধ্যপ্রদেশে বামই একমাত্র কংগ্রেস নেতা নন যিনি দল বদলেছেন। কয়েক সপ্তাহ আগে, কংগ্রেসের বরিষ্ঠ নেতা সঞ্জয় শুক্লা মার্চ মাসে বিজেপিতে যোগ দেন। সম্প্রতি ইন্দোরের কাছে বারোলি গ্রামে অবৈধ খনির জন্য ১৪০.৬ কোটি টাকা জরিমানা সহ খনি বিভাগ তাঁকে একটি নোটিশ জারি করেছে।

More Articles