চরম দারিদ্রকে তুড়িতে উড়িয়ে UPSC জয়, যে অসম্ভবকে সম্ভব করলেন বিহারের অনিল

Success Story: অনিলের বাবা বিনোদ বসাক ছিলেন পেশায় ফেরিওয়ালা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে জামাকাপড় ফেরি করতেন তিনি। অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরাতো।

অর্থাভাব, চরম দারিদ্র, মাথার উপর ছাদ না থাকাটা কঠিন পরিস্থিতি হতে পারে, কিন্তু কখনওই তা যে অজুহাত হতে পারে না, তা ফের প্রমাণ করে দিলেন অনিল বসাক। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া, সংবাদমাধ্যম জুড়ে চর্চায় এই নামটি। কে এই অনিল বসাক? বিহারের কিসানগঞ্জের এক নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম অনিলের। তবে সেই সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেই বিহারের পরম্পরা রক্ষা করেছেন তিনি। দারিদ্রকে পিছনে ফেলে অধ্যাবসায় আর জেদকে হাতিয়ার করেই ইউপিএসসি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় দুর্ধর্ষ ব়্যাঙ্ক দখল করেছেন অনিল। হয়েছেন আইএএস অফিসার।

বিহারকে মঠের দেশ বলা হত এককালে। বৌদ্ধ সন্ন্যাসিদের পীঠস্থান ছিল বলে, সে রাজ্যের নাম হয় বিহার। সেই বিহার রাজ্যটিকে নিয়ে গোটা দেশ যতই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করুক না কেন, একটা ব্যাপারে কিন্তু বরাবরই বিহারে। আর সেটা ইউপিএসসি-র ব়্যাঙ্ক। দেশের একটা বড়সড় সংখ্যক আইএএস আজও বেরোয় বিহার থেকেই। আর সেই সংখ্যাটা প্রতি বছর নয় নয় করে অন্তত ১২ থেকে ১৩ শতাংশ তো হবেই।

অনিলের বাবা বিনোদ বসাক ছিলেন পেশায় ফেরিওয়ালা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে জামাকাপড় ফেরি করতেন তিনি। অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরাতো। নিজে স্কুলের গণ্ডিও পেরোতে পারেননি বিনোদবাবু। কিন্তু ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করবেন, সেই স্বপ্ন ছাড়তে পারেননি কখনও। তার উপরে ছেলে ছোট থেকেই ছিল মেধাবি। আর্থিক কষ্ট তো বরাবরেই সঙ্গী তাঁর। আর সেই অসুবিধাই তাঁকে শক্তি জুগিয়েছে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াইয়ের।

আরও পড়ুন: হিন্দি ছাড়া সবেতে ফেল! যেভাবে আইপিএস হয়েছিলেন বাস্তবের টুয়েলভথ ফেল মনোজ শর্মা

কিষানগঞ্জের ওরিয়েন্টাল পাবলিক স্কুলে পড়াশোনা শুরু অনিলের। পরে আরারিয়া পাবলিক স্কুল থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পাশ। ২০১৪ সালে আইআইটি দিল্লিতে পড়ার সুযোগ মেলে। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন অনিল। বিহারের পরম্পরা মেনে তার পাশাপাশিই শুরু হয়ে গিয়েছিল ইউপিএসসি-র প্রস্তুতি। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়াশোনা শেষ করেই ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসেন অনিল। না, প্রথম বারে শিকে ছেঁড়েনি তাঁর ভাগ্যে। তবে হাল ছাড়েননি অনিল। দ্বিগুণ উদ্যোগে ফের পড়াশোনা শেষ করেন। সেই বার ব়্যাঙ্ক এল ৬১৬। কিন্তু এই ব়্যাঙ্ক তো তিনি চাননি। ফের শুরু হল হাড় ভাঙা খাটনি। তৃতীয়বারে অবশ্য় সমস্ত পরিশ্রমের ফল পেয়েছেন হাতে হাতে। অবশেষে ইউপিএসসির সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ৪৫ ব়্যাঙ্ক করেন অনিল।

কিছুদিন আগেই সিনেমার দৌলতে আইপিএস অফিসার মনোজ শর্মার জীবনের কথা সামনে এসেছে। কীভাবে দ্বাদশ ফেল মনোজ অদম্য শক্তি আর পরিশ্রমের জেরে ইউপিএসসি পাশ করে দেখিয়ে দিয়েছিলেন, রূপোলি পর্দায় সেই গল্পে মজেছিল দর্শক। ব্যাপারটা নিয়ে বেশ হইচইও পড়ে যায়। সেই কাহিনি মনগড়া ছিল না, যেমন নয় অনিলের এই লড়াই।

Meet IAS Anil Basak, IITian son of cloth seller, cracked UPSC with AIR 45; know his inspiring story

পরিবারের চার সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে বড় অনিল। ফলে অতিরিক্ত চাপ তো একটা ছিলই কাঁধে। সংসার চালাতে বাবাকে নানাবিধ কাজকর্ম করতে দেখেছেন জীবনে। কখনও তিনি জিনিসপত্র ফেরি করেছেন, কখনও কোনও সংসারে গিয়ে করেছেন পরিচালকের কাজ। সেই ভাবেই তিলে তিলে সঞ্চয় করে কিসানগঞ্জে জামাকাপড়ের ছোট্ট একটা ব্যবসা দাঁড় করিয়েছিলেন বাবা বিনোদ।

সেই বাবাকে অনুপ্রেরণা হিসেবে সামনে রেখেই জানপ্রাণ লড়িয়ে দিয়েছিলেন অনিল। ভাড়া বাড়ি থেকে নিজেদের পাকা বাড়িতে উঠে আসার মধ্যের যে লড়াই নিজের চোখে প্রত্যক্ষ করেছেন অনিল, তা প্রতিমুহূর্তে তাঁকে মনে করিয়ে দিয়েছে, জিততেই হবে। জিতেওছেন অনিল। দ্বিতীয়বার ইউপিএসসি-তে পাশ করে রাজস্ব দফতরে সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। তবে তাঁর বরাবরের স্বপ্ন বিহার ক্যাডারের অংশ হবেন। আর শেষপর্যন্ত সেই ফিনিশিং লাইন ছুঁয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন অনিল।

আরও পড়ুন:বাংলা মাধ্যমে পড়েই ইউপিএসসি পরীক্ষায় বাজিমাত! কোন মন্ত্রে লুকিয়ে বাপ্পা সাহার সাফল্যের রহস্য

কিছু স্বপ্ন সত্যি হয়। প্রবল প্রতিবন্ধকতা, দারিদ্র, অনটন সেই সব কিছুকে পিছনে বড় হয়ে ওঠে সেই স্বপ্নের দৌড়। আর সেই কথাটাই আরও একবার প্রমাণ করে দিয়েছেন কিসানগঞ্জের অনিল। অনিল বসাক, মনোজ শর্মারাই আসলে প্রমাণ করে দেন বারবার, ইচ্ছা থাকলে পাহাড় ডিঙানো কঠিন নয় মোটেও।

More Articles