আউশভিৎস আজও ভয়াবহ নাৎসি অত্যাচারের স্মৃতি বয়ে ফেরে

অপমানে ঘেন্নায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিল। মহিলা, মা, বয়স্ক মানুষ নির্বিশেষে ওরা সমানে কিল-চড়-লাথি-ঘুষি চালাচ্ছে। জানলার পাশে দাঁড়িয়ে এই অমানুষিক অত্যাচারের সাক্ষী ছিলাম আমি। রাগে ছটফট করছিলাম। কী ভাবে আমাদের অসহায়তা, আমাদের নিঃসঙ্গতা মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছে! আমাদের কথা কি বলবে না কোনও মুখ? আমরা অসহায়, কী প্রচণ্ড অসহায়! বৃষ্টি পড়ে চলেছে বাইরে একটানা। হেরে গিয়েছি। আমরা একা। রসিকতার খোরাক শুধু। এই যাবতীয় অপমানের জ্বালা বয়ে বেড়াতে হবে আর কতদিন…………হিটলারের বাহিনী দেশ ঘিরে ফেলেছে। জোর করে যুদ্ধ চাপিয়ে দিলে আমরাও কি ছেড়ে দেব? এই ঔদ্ধত্যের উত্তর আমরা দেবোই। এই মাটিতেই ওদের কবর দেওয়া হবে। বাড়ির পিছনদিক পাহারা দিচ্ছে যে রুশ সেনাটি, তার চেহারা শান্ত, স্থিতধী। হঠাৎ করেই ওর দিকে চোখ গেল। কেমন চিরায়ত চেহারা। লোকটি হয়তো মারা যাবে, কিন্তু ওর টুপির ঐ তারাটা থেকে যাবে, লোকটির নশ্বরতা ছাড়িয়ে ওটা জ্বলজ্বল করবে অনন্তকাল। (জুন ১৯৪০-৪১)

লিখছেন লিথুয়েনিয়ার কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প থেকে ১৩ বছর বয়সি ইৎশোক রুদাশেভস্কি। ভিলনা গেটো পড়শোনা চালানোর দায়িত্ব এই বয়সের ইহুদি কিশোররাই তুলে নিয়েছিল কাঁধে। আড়াই বছর সেই গেটোতে থাকার পর তাকে পাঠানো হয় পোনারি ক্যাম্পে। এই ক্যাম্পেই হাত দিয়ে একশো ফুট দৈর্ঘ্যের একটি সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ফেলেছিলেন বন্দিরা। পালিয়েওছিলেন বেশ কয়েকজন। তবে ইৎশোক তাঁদের মধ্যে ছিলেন না। ১৯৪৪-এর পয়লা অক্টোবর গুলি করে মারা হয় তাঁকে। ইৎশোক মারা যাওয়ার বছর কয়েক পরে ভিলনা গেটোতে খাতাগুলি খুঁজে পায় সোভিয়েত বাহিনীতে থাকা তাঁরই এক ভাই। ১৯৭৩-এ প্রকাশিত হয়েছিল সেই ডায়েরি। কিন্তু যুদ্ধের অভিঘাত তখন কমে গিয়েছে অনেকটাই। আনা ফ্র্যাঙ্কের মতো জনপ্রিয়তা পায়নি সে ডায়েরি। হলোকস্টে ইহুদি নিধন হয়েছিল ৬০ লক্ষেরও বেশি, যার মধ্যে ১৫ লক্ষই ছিল শিশু ও কিশোর-কিশোরী। তার মধ্যে ইৎশোক এবং আনা–দুজনেই ছিল। ১৯৪২-এর জুলাই মাসের মাঝামাঝি আনাদের পরিবার-সহ আরেকটি ইহুদি পরিবার গা ঢাকা দেয় আনার বাবার দোকানেরই চোরাকুঠুরিতে। সেখানেই লেখা হতে থাকে আনা ফ্র্যাঙ্কের ডায়েরি। কোনও পরিচিত লোকের বিশ্বাসঘাতকতাতেই ২৫ মাস পরে সেই চোরাকুঠুরি থেকে নাৎসিদের হাতে গ্রেফতার হয় তারা। এরপরে আউশভিৎস হয়ে বের্গেন-বেলসেন। প্রায় ষোল বছরের দোরগোড়ায় টাইফাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় আনা। কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পেই। ৭৭ বছর আগে ঠিক আজকের দিনটিতেই সোভিয়েতের হাতে নাৎসিবাহিনীর পরাজয়ের পর আউশভিৎস থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন যে কয়েকজন ইহুদি, তাঁদের মধ্যে  আনার বাবা ওটো ফ্রাঙ্কও ছিলেন। মুক্তি পেয়ে ১৯৪৭ সালে মেয়ের ডায়েরি তিনিই প্রথম ছাপবেন।

আনা ফ্র্যাঙ্ক ও ইৎশোক রুদাশেভস্কি

 

আউশভিৎসের গোলকধাঁধা

কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের আবিষ্কর্তা কিন্তু জার্মানরা নয়। দক্ষিন আফ্রিকায় দ্বিতীয় বোয়ার যুদ্ধে আগেই ব্রিটিশরা এ জিনিস ব্যবহার করেছে। স্প্যানিশরা ১৮৯০-এর আশেপাশে কিউবাতে এ ধরনের ক্যাম্প গড়ে তুলেছিল। আমেরিকা এই ধরনের ক্যম্পেই আটকে রেখেছিল হাজারে হাজারে জাপানি যুদ্ধবন্দিদের। কিন্তু জার্মানরা একে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল। দাশাও আর ওরানিয়েনবার্গের প্রথম দু'টি জার্মান কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প চলত পূর্বোক্ত বন্দিশালার মতোই। যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে অপরাধী, সমাজবিরোধী–সবাইকে এখানে আটকে রাখা হত। কিন্তু পরের দিকে উঠে আসা ট্রেবলিঙ্কা, সোবাইবর, বেলজেক, কেল্মনো, আউশভিৎস-বার্কেনেউ ইত্যাদি ঠিক কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প নয়, বরং এক্সটারমিনেশন ক্যাম্প, বধ্যভূমি হয়ে উঠেছিল। মাত্র সাড়ে চার বছরে নাৎসি বাহিনী আউশভিৎসেই খুন করে ১১ লক্ষ মানুষ, যাদের মধ্যে প্রায় লাখ দশেক ইহুদি। গ্যাসচেম্বারে পুরে, অভুক্ত রেখে,  প্রবল খাটিয়ে মানুষ মারা হয়েছে সেই ক্যাম্পে। বার্কেনেউ ক্যাম্প, যাকে দ্বিতীয় আউশভিৎস বলা হত, সেখানেই গ্যাসচেম্বারে মারা হয়েছিল সিংহভাগ মানুষকে।

গ্যাস চেম্বার- ইতিহাসের ঘৃ্ণ্য অধ্যায়

১৯৩৩-এ ক্ষমতায় এসেই নাৎসিরা ইহুদিদের ওপর চরম অত্যাচার শুরু করে। ১৯৩৯-এ পোল্যান্ড দখলের পরে থার্ড রাইখ থেকে দলে দলে ইহুদিদের পাঠানো হতে থাকে পোল্যান্ডের বিভিন্ন গেটোতে। ১৯৪১-এ রাশিয়া আক্রমণ। ইতিমধ্যেই নানা প্রকারে এক সঙ্গে প্রচুর মানুষ মারার অপেক্ষাকৃত সহজ পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। ১৯৩৯ নাগাদ পরীক্ষানিরীক্ষামূলক গ্যাসের ভ্যানে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত মানুষদের খুন করা শুরু করে নাৎসিরা। সেখানে বিষাক্ত ধোঁয়া একটি ছোট কামরার মধ্যে চালান দিয়ে শ্বাসরোধে ভিতরের মানুষজনকে হত্যা করা হত। এইভাবে টুকরো টাকরা পরীক্ষার পথ বেয়েই ১৯৪১এর শীতকালে আউশভিৎসে গ্যাস চেম্বার তৈরি হয়ে গিয়েছিল।

আউশভিৎস আদতে পোলিশ সেনাদের একটি ব্যারাক। পোল্যান্ড দখলের পর জার্মানি একে বিশ্বের সবথেকে বড় কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পরিণত করে ১৯৪০-এর মে মাস নাগাদ। হলোকস্ট চলাকালীন ধীরে ধীরে একে আরো পরিবর্ধিত করে তারা। ১৯৪১ এর সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম আউশভিৎসে কিছু পোলিশ এবং সোভিয়েত বন্দিকে গ্যাস দিয়ে হত্যা করা হয়। এই শুরু। এরপরে দ্বিতীয় আউশভিৎসে গড়ে তোলা হয় বিশাল গ্যাস চেম্বার। যেখানে কয়েক মুহূর্তে মানুষ মেরে ফেলা হবে হাজারে হাজারে। সঙ্গে লাগোয়া ক্রিমেটোরিয়ামে সেইসব লাশ পুড়িয়ে ফেলা হত।

 

সমগ্র ইউরোপ থেকে বন্দিদের আউশভিৎসে পাঠানো হত যে সব গাড়িতে, তাতে জানালা, মল-মূত্র ত্যাগের কোনও জায়গা, বসার সিট বা খাবার—কিচ্ছু থাকত না। সেই আবর্জনা মাখা অভুক্ত ক্লান্ত শরীরগুলো ক্যাম্পে পৌঁছতেই সঙ্গে সঙ্গে ঠিক হয়ে যেত কে কে সমর্থ, তাদের আলাদা করে বেছে রাখা হত। জিরোবার সময় বলতে কিছুই ছিল না। অসমর্থ বলে যারা বিবেচিত হল তাদের পুরোপুরি নগ্ন করে চান করানো হত গরু ছাগলের মতো। একে জার্মানরা বলত শুদ্ধিকরণ। শুদ্ধ করে সেইসব বন্দিদের গ্যাসচেম্বারে তোলা হত। সেইসব ‘হাইজেনিক ইন্সটিটিউট’এর রক্ষীরা এরপর সেই চেম্বারে জিকলন-বি নামক ভয়াবহ মারণক্ষমতা সম্পন্ন গ্যাস ঢালত। ফের অপেক্ষা কুড়ি মিনিট। চেম্বারের মোটা দেওয়াল ফুঁড়ে উঠে আসা করুণ আর্তনাদ ধীরে ধীরে ততক্ষণে চরম নিস্তব্ধতায় পরিণত হয়েছে।

বন্দুকের নলের সামনে সক্ষম বন্দিদের দিয়ে সেইসব লাশের থেকে খুলিয়ে নেওয়া হত পরচুলা, বাঁধানো দাঁত, চশমা বা কৃত্রিম অঙ্গ–অর্থাৎ যা কিছু বাড়তি, সবই। তারপর সেইসব লাশ পুড়িয়ে ছাই করে মাটিতে সার হিসেবে ব্যবহার করত নাৎসিরা। খুলে নেওয়া জিনিসপত্র সংগ্রহ করে রাখা হত কানাডায়।

সোভিয়েত সেনাদের হাতে পড়ার ভয়ে এই সব ক্যাম্পের রক্ষীরা যাবতীয় রেকর্ড জ্বালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। ফলে, ঠিক কত মানুষ এই বীভৎসতার শিকার–তা বলা একটু মুশকিল। তবে গবেষণা বলছে ১৩ লক্ষ বন্দীকে আনা হয়েছিল এই ক্যাম্পে, খুন হয়েছিলেন ১১ লক্ষ প্রায়। সিংহভাগই ইহুদি। হাঙ্গেরির উদাহরণ দেওয়া যায়। ১৯৪৪-এর মে থেকে জুলাই, মাত্র দুমাসের ব্যবধানে হাঙ্গেরির ৪ লক্ষ ৩৭ হাজার ইহুদির মধ্যে ৪ লক্ষ ২০ হাজারকে আউশভিৎসে পাঠান হয়। প্রতিদিন হাজার দশেক ইহুদি পাঠান হত এই ক্যাম্পে। এদের এক চতুর্থাংশ বীভৎস সেই যাত্রাতেই মরে যেত। প্রায় ৭৫০০০ পোলিশ নাগরিক, ১৫০০০ যুদ্ধবন্দি সোভিয়েত সেনা, ২৫০০০ রোমা এবং সিন্টি–এছাড়াও জেহোভার সাক্ষীদের, সমকামীদের এবং রাজবন্দীদের নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয় এখানে।

মুক্তির খবর

রাশিয়া আক্রমণ ছিল জার্মানির সবথেকে বড় ভুল। ক্রমশ ক্ষমতা হারাচ্ছিল বিশ্বজয়ে বেরনো জার্মানরা। অবস্থা আন্দাজ করে গ্যাসের নির্মাণ থামিয়ে দেয় নাৎসি বাহিনী। গ্যাস চেম্বার ও ক্রিমেটোরিয়ামগুলিও ধ্বংস করে দেওয়ার হুকুম আসে। ১৯৪৪এর শেষে জার্মানির অত্যাচার জয় করতে করতে এগিয়ে আসছিল সোভিয়েত বাহিনী ক্রমশ। ক্যান্ডায় সংগ্রহ করা যাবতীয় চোরাই মাল জাহাজে করে জার্মানিতে রপ্তানি করে দেওয়া হয়। নিজেদের অপরাধ মুছে ফেলতে তখন ‘সহি আর্য’রা মরিয়া। ৫৬-৫৮ হাজার বন্দিকে তারা তাড়িয়ে নিয়ে চলল আরো পশ্চিমের ক্যাম্পগুলির (বার্গেন-বেলজেন, দাশাও এবং শসেনহওসেন) দিকে। এই মিছিল বিখ্যাত ‘ডেথ মার্চ’ বা মৃত্যু মিছিল নামে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় এবং যাত্রার ধকলে মারা গেল প্রায় এক চতুর্থাংশ মানুষ। অসুস্থ এবং দুর্বলদের ফেলে রাখা হল আউশভিৎসেই মৃত্যুর অপেক্ষায়। হয় মৃত্যু নয় মুক্তি। এই দুইয়ের দিন গুনছে বন্দীরা তখন। সোভিয়েতের সেনা এসে পড়ার আশ্বাস দীর্ঘ অন্ধকারের পর আবার তাদের কিঞ্চিৎ আশার আলো দেখাচ্ছে। অবশেষে ২৭শে জানুয়ারী ১৯৪৫। অবসান হল মানুষের দ্বারা মানুষের উপর প্রত্যক্ষভাবে উদযাপিত সেই নৃশংসতার অধ্যায়ের। সোভিয়েত সেনারা পা রাখল আউশভিৎসের মাটিতে। সেই কদমের ছন্দে ছন্দে প্রাণ জেগে উঠল বন্দীদের প্রাণেও, যেটুকু তখনও দেহ আঁকড়ে পড়ে আছে, হারিয়ে যায়নি মহাকালের স্রোতে। কিন্তু অভিনন্দন জানানোর বা আনন্দিত হওয়ার ক্ষমতাটুকুও তাদের ছিল না।‌

“এক বিবর্ণ দৃশ্য আমাদের নজরের আওতায় এল। অসংখ্য ব্যারাকের বাঙ্কে শুয়ে রয়েছে অসংখ্য মানুষ, অথচ মানুষ নয়। নিছক কঙ্কাল, গায়ে চামড়াটুকু জড়িয়ে রেখেছে কোনও মতে। সেইসব দৃষ্টির পিছনে কিচ্ছু নেই, কেবল অতল শূন্যতা।” রেড আর্মির সঙ্গে থাকা এক ক্যামেরা অপারেটর, আলেকজাণ্ডার ভোরোন্তজো সেই অভিজ্ঞতার কথা লিখছেন। ১০০তম ইনফ্যান্ট্রি বিভাগের সেনারা এবং ইউক্রেনিয়ান ফ্রণ্টের ৬০তম সৈন্যদল একত্রে লড়ে ছিনিয়ে নিয়েছিল আউশভিৎসের মুক্তি। তারপএই এই নরক দৃশ্য দিয়ে তাদের অভিনন্দন জানাল মানবতার কঙ্কাল। শুকিয়ে আসা সেই সব দেহ তখন উকুনে ভরে উঠেছে, খাবারের খোঁজে তাদের উপর দিয়ে যাতায়াত করছে ইঁদুর। জীবিত মরায় জড়াজড়ি। তোবড়ানো গাল, কোঁকড়ান মুখ জীবিতদেহগুলোর কুলকিনারা ঠাওর করা যাচ্ছে না। মৃত্যুর গন্ধে ভারি হয়ে রয়েছে সমস্ত বাতাস।

কারা এরা? কোন সেনা? ততক্ষণে সেই সব বোধবুদ্ধিও লোপ পেয়েছে বেশিরভাগ বন্দির। অদৃষ্টের হাতে নিজেকে ছেড়ে দিয়ে তারা নির্বিকার। সেই সময়ের বর্ণনা দিয়েছেন জিয়র্জি এলিসাভেৎস্কি। তিনি এবং তাঁর সঙ্গীরা যখন নানান ভাষায় বন্দীদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে তাঁরা এখন মুক্ত, কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। শেষে য়েডিস ভাষায় কথপোকথনে বোঝান সম্ভবপর হল। অত্যাচার মানুষকে কতখানি অসহায় করে। মুক্তির কথা শুনে বন্দীরা আনন্দে ছুটে যেতে থাকলেন সোভিয়েত সেনার দিকে। ফরিশতার পায়ের কাছে বসে তাদের ঝোলা কোটে, বুটজুতোয় চুমু খেতে শুরু করলেন তাঁরা পাগলের মতো। অনেকেই ভাবতে পারেননি জীবনে আবার মুক্তির স্বাদ পাবেন। মুক্তির আনন্দ তাদের চোখের জলে নতুন প্রাণের উচ্ছাসে নতুন এক জন্ম হয়ে উঠল যেন। প্রায় ৮৪০০০ যুদ্ধবন্দিকে উদ্ধার করেছিল সোভিয়েত সৈন্যরা। যদিও ম্যালনিউট্রেশন এবং ডায়ারিয়া তখন উদ্ধৃতদের মধ্যে বেশ জাঁকিয়ে বসেছে। টাইফাসে ভরে গিয়েছে চারদিক। ক্যাম্পকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে উদ্ধৃতদের খাবার, উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিল সোভিয়েত। কিন্তু তারপরও মারা গিয়েছিল শয়ে শয়ে মানুষ।

বর্তমানে সেই বিভীষিকাময় অতীত হয়েছে জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পট। মানুষের বিচিত্র খেয়াল। ২০০৫ সালে, ইউনাইটেড জেনারেল অ্যাসেম্বলি ২৭শে জানুয়ারিকে হলোকস্ট মেমোরিয়াল ডে হিসাবে ঘোষণা করে। আজ সেই দিন। সোভিয়েত সেনা যেদিন আউশভিৎসের মাটি স্পর্শ করেছিল। আজ বিশ্বমানবতার গৌরবের দিন। আউশভিৎস জড়িয়ে এখনও সেই সব দীর্ঘশ্বাসের শব্দ রয়ে গিয়েছে। যন্ত্রণার ইতিহাস তাকে মানবতার পীঠস্থান করে তুলেছে। আজ জাতিকেন্দ্রিক ঘৃণা, বর্ণকেন্দ্রিক ঘৃণা, লিঙ্গকেন্দ্রিক ঘৃণায় ভেজা এক মানবেতিহাসের এক লজ্জাজনক অধ্যায় স্মরণ করারও দিন। ঘৃণার অত্যাচার থেকে মুক্তি উদযাপনের মধ্যে দিয়েই মানুষ ভালোবাসতে শিখুক। দৈবী নয়, সামান্য মানুষী ভালোবাসায় একটা গোটা আউশভিৎস রুখে দেওয়া যায়।

 

তথ্যঋণ-

After the liberation of Auschwitz-Birkenau, January 27 1945 [WWW Document], n.d. . Sky HISTORY TV channel. 

Auschwitz: How death camp became centre of Nazi Holocaust, 2020. . BBC News.

Chatterjee, M.S., 2016. হলোকস্টের দিনলিপি / ১. Medianest: Remembering Sandipta Chatterjee.

Holocaust Memorial Day Trust | 27 January 1945: Liberation of Auschwitz-Birkenau, n.d.

Jan. 27, 1945: Nazi Hell on Earth | WIRED [WWW Document], n.d.

নাৎসি গণহত্যা পুনরাবৃত্তির বিরুদ্ধে ইহুদীদের আহ্বান [WWW Document], 2015. . BBC News বাংলা.

প্রথম আলো | বাংলা নিউজ পেপার [WWW Document], n.d. . Prothomalo.

More Articles