নোটবন্দির জুজু, কেন হঠাৎ দু'হাজারের নোট তুলে নিচ্ছে RBI?

RBI is suddenly withdrawing two thousand notes : মাত্র সাত বছরের মাথায় আচমকা বাতিলের হুশিয়ারি, কেন বাজার থেকে ২০০০ টাকার নোট তুলে নিচ্ছে RBI?

২০১৬ থেকে ২০২৩, ঠিক সাত বছর পথ চলেই ইতি পড়তে চলেছে সফরে! এবার বাজার থেকে পুরোপুরি ২০০০ টাকার নোট সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিল রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া। যদিও ২০১৬ সালের সঙ্গে খানিকটা তফাৎ রয়েছে এবারের নোটবন্দির ধরনে। এবার আর রাতারাতি নয়, বেশ খানিকটা সময় হাতে দিয়েই বাজার থেকে সমস্ত ২০০০ টাকার নোট তুলে নিতে চাইছে রিজার্ভ ব্যাংক। কিন্তু আনকোরা নতুন একটা নোট, তাও আবার আধুনিক ফিচার সমৃদ্ধ, তবু কেন টিকে থাকতে পারলো না বেশিদিন, এই নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে ইতোমধ্যেই।

বেশ কিছু দিন আগে থেকেই আঁচ পাওয়া গিয়েছিল এই বিষয়ে। বাজারে ক্রমেই কমে গিয়েছিল নতুন চালু হওয়া ২০০০ টাকার নোট। এমনকী ব্যাংক অথবা ATM থেকে টাকা তুলতে গেলেও ২০০০ টাকার নোট বিশেষ হাতে পাচ্ছিলেন না গ্রাহকরা। বন্ধ হয়ে যেতে পারে, এই মর্মে বেশ কয়েকবার শিরোনামেও উঠে এসেছে এই নোটটি। অবশেষে ছুটির ঘণ্টা বেজেই গেল। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিল রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া। এর মধ্যেই যাদের কাছে এই নোট রয়েছে তাদের ব্যাংকে জমা করার নির্দেশ দেওয়া হল। জানানো হয়েছে এক সঙ্গে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত জমা করা যাবে।

ফের একবার নোটবন্দি! কিন্তু কেন? এর কারণ হিসেবে আরবিআই প্রথমেই উল্লেখ করেছে এই নোট ব্যবহারের হিসেবের দিকটি। জানা গিয়েছে, লেনদেনের ক্ষেত্রে এত বেশি মূল্যের ব্যাংক নোট ব্যবহার করার প্রবণতা জনসাধারণের মধ্যে ক্রমেই হ্রাস পেয়েছে। ফলে গত কয়েক বছরে বাজার থেকে ক্রমেই একটু একটু করে হারাতে শুরু করেছিল এই নোট। ২০২৩ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পাওয়া হিসেব অনুযায়ী, বাজারে প্রচলিত ব্যাংক নোটগুলির মধ্যে ২০০০ টাকার নোট রয়েছে মাত্র ১০.৮ শতাংশ।

আরও পড়ুন - ভারতেই ছাপানো হয়েছিল শূন্য টাকার নোট! কারণ জানলে চমকে উঠতে হয়…

অন্যদিকে, আরবিআই আরও জানিয়েছে, ২০১৬ সালে রাতারাতি নোটবন্দিকে ঘিরে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়েছিল গ্রাহকদের। তাই ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিলের পর, বাজারে মুদ্রা নোটের ঘাটতি মেটাতে দ্রুত ২০০০ টাকার নোট প্রকাশ করা হয়েছিল। কিন্তু, বর্তমানে পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। ৫০০, ২০০, ১০০ টাকার মতো অন্যান্য মূল্যের ভারতীয় নোটগুলি এখন উপযুক্ত পরিমাণে প্রচলিত রয়েছে। যা, সাধারণ মানুষের চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট। তাই, যে উদ্দেশ্যে ২০০০ টাকার নোট ছাপা হয়েছিল, তা সম্পূর্ণ হয়েছে বলে মনে করছে আরবিআই।

যদিও আজ নোট বাতিলের তারিখ ঘোষণা করা হলেও, এর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল আগে থেকেই। ২০১৬ সালের নভেম্বরে বাজারে আসার পরে ২০১৮-১৯ সালের মধ্যেই ২০০০ টাকার নোটের ছাপানো বন্ধ করে দেওয়া হয় রিজার্ভ ব্যাংকের তরফে। ফলে দেখা গিয়েছে, বাজারে যে ২০০০ টাকার নোটগুলি বর্তমানে চালু রয়েছে, তার বেশিরভাগই ২০১৭ সালের মার্চ মাসের আগে ইস্যু করা। এবং সেগুলির ভালো থাকার যে চার-পাঁচ বছরের সময়সীমা রয়েছে তা ইতিমধ্যে পার করে গিয়েছে। এর আসল কারণ হল ক্লিন নোট পলিসি। এই পলিসির আসল বিষয়টা হল, এতে আরবিআই খেয়াল রাখে যাতে বাজারে যে নোটগুলি বর্তমানে আদান-প্রদান হচ্ছে, তার কোয়ালিটি যেন ভালো থাকে। অর্থাৎ নোংরা বা ছেড়া বা অব্যবহারযোগ্য নোট যাতে বাজারে বেশি না থাকে তা খেয়াল রাখে আরবিআই। আর এই পলিসির নিরিখেও এবার ধাক্কা খেল ২০০০ টাকার নোট। ফলে সব দিক থেকে বিচার করেই এই সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে আরবিআই। একদিকে বাজারে উপযুক্ত পরিমাণে অন্যান্য নোটের চল এবং অন্যদিকে ক্লিন নোট পলিসির ধাক্কা, এই দুইয়ের প্রভাবেই হারিয়ে যেতে চলেছে গোলাপি রঙা এই নোটটি।

More Articles