গর্ভের মধ্যেই ভ্রূণের মাথায় বিরল অস্ত্রোপচার! চিকিৎসা জগতে শোরগোল ফেলল যে ঘটনা

Brain Surgery of Fetus: অস্ত্রোপচারের পরে যখন নির্দিষ্ট সময়ে ওই শিশুর জন্ম হয় দেখা যায় কোনও সমস্যা নেই তার দেহে।

পৃথিবীর আলো দেখেনি তখনও। দেখা তো দূর অস্ত, দেহটাই ভালো করে গড়ে ওঠেনি। গর্ভের মধ্যে দিন প্রতিদিন বড় হয়ে উঠছিল ভ্রূণটি। অথচ পরীক্ষায় দেখা গেল, ভ্রূণের মস্তিষ্কে এক বিরল বিকৃতি! গর্ভে থাকা অবস্থাতেই ভ্রূণের উপর এই প্রথম এক অভাবনীয় অস্ত্রোপচার সারলেন চিকিৎসকরা! সফলভাবে ভ্রূণের মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচার করে তৈরি হতে থাকা মস্তিষ্কের এক মারাত্মক ভাস্কুলার বিকৃতি সারিয়ে তুলেছেন চিকিৎসকরা! আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহার করে এই অপারেশন সারা হয়েছে। ভ্রূণটির বয়স তখন মাত্র ৩৪ সপ্তাহ দুই দিন। গর্ভস্থ ভ্রূণের বিকাশজনিত ব্যাধির চিকিত্সার ক্ষেত্রে এ নিঃসন্দেহে এক বিশাল অগ্রগতি।

ভ্রূণটির মস্তিষ্কের একটি শিরাতে গ্যালেন বিকৃতি দেখা দেয়। এটি একটি মারাত্মক এবং আক্রমণাত্মক গঠন যাতে মস্তিষ্কের ধমনীগুলি প্রথমে ক্যাপিলারির মধ্য দিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে শিরাগুলির সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করে। এই ক্যাপিলারিগুলি বিশেষভাবে রক্তচাপকে ধীর করার জন্যই তৈরি হয়েছে। তাই এই বিকৃতিটির ফলে অত্যন্ত উচ্চ রক্তচাপ দেখা যায় কারণ এটি সরাসরি শিরায় চলে যায়। এর ফলে জন্মের সময় এবং পরেও মস্তিষ্ক আর হার্ট দুই প্রবল সমস্যায় পড়ে। পালমোনারি হাইপারটেনশন, হার্ট ফেলিওর এবং অন্যান্য জীবননাশক সমস্যা দেখে দিতে পারে এর জেরে।

গর্ভাবস্থাতেই ওই ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিরল সমস্যাটি নজরে আসে। সাধারণত এন্ডোভাসকুলার এমবোলাইজেশন নামক একটি ন্যূনতম আক্রমণাত্মক পদ্ধতির মাধ্যমে চিকিত্সা করা হয়। এই পদ্ধতিতে চিকিৎসক কুঁচকির মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে, মস্তিষ্কের ভাস্কুলেচারে প্রবেশ করার জন্য একটি টিউব ব্যবহার করেন। এই টিউবের মাধ্যমে আঠা প্রবেশ করানো হয় ইনজেকশনের মাধ্যমে যাতে রক্ত সরবরাহ বাধা পায়।

আরও পড়ুন- কোনও দিনও আবিষ্কার হবে না ক্যান্সারের চিকিৎসা! ভয়াবহ যে তথ্য কাঁপিয়ে দিল বিশ্বকে

প্রায় একই ধরনের অস্ত্রোপচার করেছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু এবার সমগ্র অস্ত্রোপচারটি সম্পূর্ণরূপে জরায়ুর মধ্যে করা হয়। ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তত্ত্বাবধানে, চিকিৎসকরা জন্মের সময় চাপের বৃদ্ধি রোধ করে ভ্রূণের মস্তিষ্কে উচ্চচাপের রক্তনালীগুলিকে বন্ধ করতে সক্ষম হন। এই অস্ত্রোপচারের পরে যখন নির্দিষ্ট সময়ে ওই শিশুর জন্ম হয় দেখা যায় কোনও সমস্যা নেই তার দেহে।

এই বিরল রোগটিকে সারানোর পদ্ধতিটি এই মুহূর্তে ক্লিনিকাল ট্রায়ালে আছে। জন্মের আগে গ্যালেনের বিকৃতির শিরাকে সারিয়ে তুলতে আল্ট্রাসাউন্ড-নির্দেশিত ট্রান্সউটারিন এমবোলাইজেশন পদ্ধতি ব্যবহার করছেন চিকিৎসকরা। প্রথম চিকিত্সার সাফল্যের ক্ষেত্রেই তারা তাজ্জব, জানাচ্ছেন বস্টন চিলড্রেনস হাসপাতালের সেরিব্রোভাসকুলার সার্জারি অ্যান্ড ইন্টারভেনশন সেন্টারের সহ-পরিচালক ড্যারেন বি অরবাচ।

আরও পড়ুন- নেই নির্দিষ্ট চিকিৎসা, অধিকাংশ মহিলাকেই পোহাতে হচ্ছে এই নরক যন্ত্রণা! উপসর্গ কী?

“আমরা জানাতে পেরে আনন্দিত যে ছয় সপ্তাহেই, শিশুটি লক্ষণীয়ভাবে উন্নতি করছে। কোনও ওষুধ ছাড়াই, স্বাভাবিকভাবে খাচ্ছে, ওজন বাড়ছে এবং বাড়িও ফিরেছে। মস্তিষ্কে কোনও নেতিবাচক প্রভাবের কোনও লক্ষণ নেই," জানান তিনি। জন্মের পর নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের রাখা হয় শিশুটিকে। শিশুটির কোনও কার্ডিওভাসকুলার সহায়তার প্রয়োজন পড়েনি। সমস্ত স্নায়বিক স্ক্যানও ছিল স্বাভাবিক। এই একটি অভাবনীয় অস্ত্রোপচার আগামীর আরও কত কত শিশুর ক্ষেত্রে যে আশার আলো হয়ে উঠল তা চিকিৎসকরা বিলক্ষণ জানেন। জন্মের আগেই গ্যালেন ম্যালফর্মেশনের ক্ষেত্রে এই অস্ত্রোপচার একটি দৃষ্টান্ত। ভ্রূণাবস্থায় এই চিকিৎসার আবিষ্কার শিশুদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি মস্তিষ্কের ক্ষতি, অক্ষমতা বা মৃত্যুর ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে, জানাচ্ছে স্ট্রোক পত্রিকায় প্রকাশিত এই গবেষণাটি।

More Articles