যে বাসনে রোজ রাঁধেন, সেখান থেকেই মারণ রোগ! অজান্তেই শরীরে তিল তিল করে বাড়ছে ক্যানসার

গবেষকরা আশঙ্কা করছেন, ইতিমধ্যেই যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে কারণ এই রাসায়নিকগুলি পূর্বানুমানের চেয়েও বেশি বিপজ্জনক।

নন স্টিকের তৈরি রান্নার বাসন আজ মানুষের ঘরে ঘরে। কিন্তু আপনি কি জানেন, এই রান্নার বাসন তৈরির জন্য যে রাসায়নিকের ব্যবহার করা হয়, তা লিভার ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এ কিন্তু কোনও মনগড়া কথা নয়, বরং গবেষণায় প্রমাণিত সত্য। ক্যালিফোর্নিয়ার একদল গবেষক এই গবেষণার রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন চলতি মাসের শুরুতে। গবেষকরা আশঙ্কা করছেন, ইতিমধ্যেই যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে কারণ এই রাসায়নিকগুলি পূর্বানুমানের চেয়েও বেশি বিপজ্জনক। ফলে বহু মানুষ নিজের অজান্তেই বিপদের দিকে পা বাড়িয়েছেন।

নতুন গবেষণা রিপোর্ট
লস অ্যাঞ্জেলেসের ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষকদের রিপোর্ট বলছে, যে সিন্থেটিক রাসায়নিকগুলি দিয়ে গৃহস্থালির জিনিসপত্র এবং রান্নার পাত্র তৈরি করা হয়, তা একজন সুস্থ ব্যক্তির লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে।

গবেষণায় সতর্ক করে বলা হয়েছে, রান্নাঘরের জিনিসপত্র এবং খাবারের প্যাকেজিংয়ের কাজে চিরাচরিত প্রচলিত রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে ক্যান্সারের ঝুঁকি চারগুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়। সেন্টার অফ ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের মতে, এই ক্ষতিকর রাসায়নিকগুলি নন স্টিকের পাত্র তৈরি থেকে জলের কল, ওয়াটারপ্রুফ পোশাক, পরিষ্কারের জন্য ব্যবহৃত নানা রাসায়নিক, এমনকী শ্যাম্পু- প্রায় সর্বত্রই রয়েছে ।

আরও পড়ুন: শরীরে তিল তিল করে বাড়ছে মারণ ফ্যাটি লিভার, কী ভাবে বুঝবেন, প্রতিরোধ সম্ভব?

গবেষণা চলাকালীন ডেইলি মেলের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, এই জাতীয় রাসায়নিকের সংস্পর্শে এসেছে, এমন রেকর্ড সংখ্যক মানুষের মধ্যে নন ভাইরাল হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমা, সাধারণ লিভার ক্যানসারের সম্ভাবনা ৪.৫ গুণ বেশি বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে গবেষণায়।

সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট ডক্টরাল গবেষক ড. জেসি গুডরিচ একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন, লিভার সমস্যার একবারের অন্তিম পর্যায় হল লিভার ক্যানসার এবং এটিই প্রথম গবেষণা যেখানে দেখানো হয়েছে, পিএফএএস মানুষের শরীরে লিভার ক্যানসারের জন‍্য দায়ী। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পারফ্লুওকটেন সালফেট (পিএফএএস) হলো এক ধরনের পার- এবং পলিফ্লুরোঅ্যালকাইল পদার্থ, যা গৃহস্থালির বাসন তৈরির জন্য চিরাচরিত প্রচলিত রাসায়নিক। এই রাসায়নিক মানুষের শরীরে এবং পরিবেশে মিশতে বছরের পর বছর সময় নিয়ে নেয়। তাই এতদিনে যা ক্ষতি হওয়ার হয়েই গেছে, একথা বলাই বাহুল্য।

গবেষকরা একশো জনের মধ্যে এই পরীক্ষা চালিয়ে রিপোর্ট পেশ করেন। এই একশো জনের মধ্যে অর্ধেক মানুষ লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত এবং বাকিরা সুস্থ। ক্যানসার-আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা শুরুর আগে তাঁদের দেহ থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। পাশাপাশি সুস্থ ব্যক্তিদের দেহ থেকেও রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। রক্তের নমুনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যাঁরা ক্যানসার আক্রান্ত, তাঁদের রক্তে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক উপস্থিত রয়েছে, যা রোগের জন্য দায়ী। কোনও ব্যক্তির দেহে অতিরিক্ত মাত্রায় রাসায়নিক উপস্থিত থাকার অর্থ তাঁর লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি খুবই বেশি।

পিএফএএস রাসায়নিক লিভারে প্রবেশ করে তার কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয় এবং ফ্যাটের সঞ্চয় হতে থাকে। ফলে ফ্যাটি লিভারের মতো রোগ সৃষ্টি হয়। তাই অ্যালকোহল সেবন না করলেও একজন ব্যক্তি ফ্যাটি লিভার রোগে আক্রান্ত হন। পরবর্তীকালে যা ক্যানসারের রূপ নেয়। তাই এখনই সাবধান হওয়া খুব জরুরি। এই বছরের শুরুতেই আমেরিকার পরিবেশে রক্ষাকারী সংস্থা রান্নার বাসনে পিএফএএস রাসায়নিকের ব্যবহার ৯৯% পর্যন্ত কম করার নির্দেশ দিয়েছেন। এই সংস্থার ধারণা ২০৩০ সালের মধ্যেই আমেরিকার এক তৃতীয়াংশ মানুষ ফ্যাটি লিভার এবং লিভারে ক্যানসারের মতো রোগে আক্রান্ত হবেন পিএফএএস রাসায়নিকের কারণে।

অন্যান্য শারীরিক ঝুঁকি
পিএফএএস রাসায়নিক শুধু লিভার ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় তাই নয় শরীরে বিভিন্ন হরমোনের ভারসাম্যও নষ্ট করে দেয়। পূর্বের এক গবেষণা রিপোর্টেই একথা প্রমাণ হয়েছে। এই রাসায়নিকের কারণে মহিলা ও পুরুষদের সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতাও হ্রাস পায়। তাই রাসায়নিক দিয়ে তৈরি বাসন না করাই ভালো।

তবে উপায় কী?
নন স্টিকের পাত্রের বদলে বেছে নিন কাস্ট আয়রন, সেরামিক, কপার এবং স্টেনলেস স্টিলের তৈরি বাসন। অ্যালুমিনিয়ামের বাসনও সীমিত মাত্রায় ব্যবহার করুন কারণ অ্যালুমিনিয়াম মানব শরীরে সংশ্লেষিত হয় না।ফলে শরীরে জমা হয়ে রোগ সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে তেল দিয়ে নিন পাত্রে একটু ভালো করে তবে খানিক বিপদ এড়ানো সম্ভব। কিন্তু অতিরিক্ত তেল আবার শরীরের ক্ষতি করবে তাই চেষ্টা করুন অ্যালুমিনিয়ামের বাসন এড়িয়ে চলতে।

More Articles