বিকল্পের সন্ধানে যুবরা! প্রতি ঘরে একজন ইউটিউবার, ভারতেই রয়েছে ইউটিউবারদের আস্ত গ্রাম

YouTube Village India: ছত্তিশগড়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রথম বারোটি ইউটিউব চ্যানেলই এই গ্রাম থেকে। মাসে অন্তত এক লক্ষ টাকা করে রোজগার করেন ইউটিউবাররা।

ইউটিউব এখন বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলির মধ্যে একটি। সারাবিশ্বের প্রায় ১০০ কোটি মানুষ প্রতিদিন পাঁচ বিলিয়নের বেশি ইউটিউব ভিডিও দেখেন। ইউটিউব বিশ্বজুড়ে এতটাই জনপ্রিয় যে ইউজাররা প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০ মিনিট সময় ইউটিউবে ব্যয় করেন। ইউটিউবের মাধ্যমে আমরা বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষের কাজের ভিডিও হাতের মুঠোয়। জল গরম থেকে শুরু করে রকেট সায়েন্স, সবকিছুর ভিডিও ইউটিউবে দেখা যায়। একইসঙ্গে ইউটিউবে ভিডিও পোস্ট করার মাধ্যমে আপনি টাকাও রোজগার করতে পারেন। ইদানিংকালে দেখা গিয়েছে ইউটিউবে সময় দিলে মোটা অঙ্কের টাকা উপার্জন করা যায়। বিশ্বজুড়ে ইউটিউব ইউজারদের এই বিপুল পরিমাণ চাহিদাকে মাথায় রেখে নতুন ভিডিও বানানো এখন পেশা হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আমাদের দেশের প্রচুর কন্টেন্ট ক্রিয়েটর এখন ইউটিউবে কন্টেন্ট তৈরি করে সেখান থেকে টাকা আয় করছেন। এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে, যাঁরা ইউটিউবের উপার্জন দিয়েই বাড়ি-গাড়িও করে ফেলেছেন। ইউটিউবের মাধ্যমে সদুপায়ে অর্থ উপার্জনের অনেক রকম পদ্ধতিও শেখা যায়। এই কারণে অনেকেই ইউটিউবকে অর্থ উপার্জনের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছেন।

বয়সের কোনও বাধা নেই, সময়ের কোনও বিধিনিষেধ নেই, কেবল কল্পনায় পাড়ি দিয়ে রোজগারের এর থেকে সহজ বিকল্প পাবেন কি? অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা এসব পথ আগে থেকেই জানেন। দেশে তো বটেই, পশ্চিমবঙ্গেও, এমনকি গ্রামেও তাই দ্রুত বাড়ছে ভিডিও ক্রিয়েটরদের সংখ্যা। সম্প্রতি একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ১ লাখ বা তার বেশি সাবস্ক্রাইবার রয়েছে ভারতে এমন ক্রিয়েটরের চ্যানেলের সংখ্যা এই মুহূর্তে ৪০,০০০ পেরিয়েছে। গত বছরের থেকে সংখ্যাটি ৪৫ শতাংশ বেশি। এক লাখ বা তার বেশি টাকা রোজগার করে এমন চ্যানেলের সংখ্যা ভারতে প্রতি বছর অবিশ্বাস্য ৬০ শতাংশ হারে বাড়ছে। যে পরিসংখ্যান সঠিকভাবে না জানলেও তা আন্দাজ করে, অনেকেই ডাক্তারি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বপ্ন আর বিপুল খরচের পিছনে না ছুটে এখন ইউটিউবেই ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে এগোচ্ছেন।

অর্থাৎ ইউটিউবে চ্যানেল বানিয়ে তার মাধ্যমে ভালোই করে-কম্মে খাচ্ছেন এমন ক্রিয়েটর রয়েছেন প্রচুর। এই সংখ্যাটা ক্রমশ বাড়ছে। বাড়বে নাই বা কেন! দেশ দু’টি বড় বড় লকডাউন কাটিয়েছে। যার ফলে নামী কোম্পানির উচ্চপদস্থ চাকুরে থেকে শুরু করে দ্বাররক্ষী পর্যন্ত অনেকেই বেকার হয়েছেন। প্রত্যেক দিন পরিস্থিতি হয়ে উঠেছিল জটিল থেকে জটিলতর। আয় কমলেও মানুষের খরচ কমেনি! এই পরিস্থিতিতে ইউটিউবই হয়ে ওঠে বাড়তি আয়ের দিশা। অনেকের ধারণা রয়েছে, চ্যানেলে সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা বাড়লেই বোধহয় ইউটিউবের তরফ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা জমা পড়বে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। বিষয়টা একেবারেই তা নয়। এমনকি, পোস্ট করা ভিডিওয় কত সংখ্যক ‘views’ হল, প্রত্যক্ষভাবে তার উপরেও রোজগার নির্ভর করে না। বরং পোস্ট করা ভিডিওয় বিজ্ঞাপন আসছে কি না, সেটাই মোদ্দা কথা। এইসব কারণেই মানুষ প্রতিনিয়ত সন্ধান করছেন ‘ভাইরাল’ কন্টেন্ট তৈরির।

আরও পড়ুন- নেশা প্রত্নতত্ত্ব, দশ হাজারের বেশি প্রত্নবস্তু দিয়ে সুন্দরবনে সংগ্রহশালা গড়লেন মৎসজীবী

ফলত, আজকাল শহরের আনাচে কানাচে ইউটিউবার সংখ্যায় অঢেল। রাস্তায় বেরিয়ে একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যায় কেউ না কেউ ঠিক হাতে ক্যামেরা এবং ট্রাইপড নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তবে শুধু শহরের মানুষই নন ইউটিউবে পাল্লা দিয়ে ভিডিও বানাচ্ছে গ্রামের মানুষরাও। তবে এরকম কি কখনও শুনেছেন যে একটি গ্রামের প্রতিটি পরিবারেই ইউটিউবার রয়েছে? শুনে তাজ্জব লাগলেও এটাই সত্য। ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুর থেকে ৪৫ কিমি দূরে তুলসি নামের একটি গ্রাম রয়েছে যে গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই ইউটিউবার। আর মোটেও হেলাফেলা করার মতো ইউটিউবার নন, ইউটিউব কমিউনিটিতে তাঁরা যথেষ্ট প্রতিষ্ঠিত।

এই গ্রামের জনসংখ্যা মাত্র ৩ হাজার হলেও প্রতিটি বাড়িতে একজন করে ইউটিউবার রয়েছেন। বেশিরভাগ যুবকই ইউটিউবে চ্যানেল খুলেছেন। মূলত ‘vines’ বা কমেডি ভিডিও তৈরি করেন তাঁরা। পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলি ওই গ্রামকে নাম দিয়েছে ‘লাফটার চ্যাম্পিয়ন ভিলেজ’। গ্রামে হয়তো বাসিন্দা ৩ হাজার, তবে ওই ৩ হাজারের মধ্যেও প্রায় ১ হাজার জন ইউটিউবে চ্যানেল খুলেছেন। একটি গ্রামেই ১০০০টি ইউটিউব চ্যানেল এবং প্রত্যেকটি মনিটাইজড এবং যথেষ্ট নামকরা। ইউটিউবের ওপর ভিত্তি করেই ছোটখাটো অর্থনীতি চলছে এই গ্রামে।

আরও পড়ুন- রাজনীতিতে ভরসা নেই যুবসমাজের, বিস্ফোরক তথ্য উঠে এল সমীক্ষায়

ছত্তিশগড়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রথম বারোটি ইউটিউব চ্যানেলই এই গ্রাম থেকে। মাসে অন্তত এক লক্ষ টাকা করে রোজগার করেন ইউটিউবাররা। এই গ্রামে কৃষিকাজ যেমন জীবিকা অর্জনের একটা পথ, তেমনই যুবক-যুবতীরা পড়াশোনার পাশাপাশি ইউটিউবে নিজেদের শিল্পীসত্ত্বা তুলে ধরেও প্রচুর উপার্জন করেন। যুবক যুবতীদের মধ্যে অধিকাংশই অন্য কোথাও চাকরি বা পড়াশোনা করেন এবং অবসর সময়ে ভিডিও তৈরি করেন।

এই গ্রামের বর্তমান প্রজন্ম প্রথাগত চাকরি, ব্যবসা এবং চাষবাসের পাশাপাশি ইউটিউবকে এক নতুন পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছে। এদের মধ্যে জনপ্রিয় কিছু চ্যানেল হলো, ‘নিগমা ছত্তিশগড়িয়া’ এবং ‘বিইং ছত্তিশগড়িয়া’। ছত্তিশগড়ের এক জনপ্রিয় ইউটিউবার এবং এই গ্রামের বাসিন্দা সন্দীপ সাহু সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “আমাদের গ্রামে সকলেই কোনও না কোনও শিল্পকর্মের সঙ্গে জড়িত। আমাদের বাবা-কাকাদেরও দেখেছি কেউ গান, কেউ নাটক বা যাত্রা করেছেন। গ্রামের অনেক লোকই দীর্ঘদিন ধরে চাকরি এবং চাষবাসের পাশাপাশি শিল্পকলাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। যা পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও পৌঁছে গিয়েছে। এখন ইন্টারনেট আর স্মার্টফোনের যুগ। ফলে গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই নিজেদের ইউটিউব চ্যানেল খুলে সেখানে নানা রকম ভিডিও আপলোড করে সেখান থেকে অর্থ উপার্জনও করছেন।” তিনি আরও জানান, একবার একটি ফোন পেয়েছিলেন তিনি, ফোনে তাঁকে বলা হয় হাসপাতালে ভর্তি একজন বয়স্ক ব্যক্তি তাঁর ভিডিও দেখে অত্যন্ত আনন্দ পেয়েছেন। ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথাও বলেন তিনি। তারপর থেকেই তুলসির যুবকরা মানুষকে হাসাতে একনাগাড়ে কমেডি ভিডিও তৈরি করতে থাকেন।

More Articles