এই পাঁচটি ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগেই কিস্তিমাত, বলছেন বিশেষজ্ঞরা

বিশ্ববাজারে বিপুল জনপ্রিয়তা এবং বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের বিষয়বস্তু হওয়ার কারণে বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ক্রিপ্টোকারেন্সি। এই ক্রিপ্টোকারেন্সির বহুল ব্যবহার শুরু হয়েছে পৃথিবীর বহু দেশে। চিন, বাংলাদেশ, মিশর, রাশিয়া, মরক্কো, নাইজেরিয়া, কাতার এবং টার্কিতে এই ধরনের মুদ্রা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ হলেও বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশেই বেশ জনপ্রিয় এই ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার। ক্রিপ্টোগ্রাফি দ্বারা সুরক্ষিত এই বিশেষ মুদ্রা ইতিমধ্যেই বিশ্বের বেশ কিছু দেশে আইনগত স্বীকৃতিও পেয়েছে। এল সালভাডরের মতো কিছু দেশে তো স্বীকৃত মুদ্রা হিসেবে গৃহীত হতে শুরু করেছে ক্রিপ্টো। 

তবে ভারতের বিষয়টা একটু অন্যরকম। বিটকয়েন, পলিগন, ইথেরিয়াম, ডোজিকয়েনের মতো একাধিক ক্রিপ্টোকারেন্সি উপলব্ধ থাকলেও ভারতে এখনো ক্রিপ্টোকারেন্সি আইনগত স্বীকৃতি পায়নি। তবে তার মানে এটা নয় যে আপনি ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করতে পারবেন না। বিগত কয়েক বছরের মধ্যে ক্রিপ্টোকারেন্সির মার্কেট ভ্যালু বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণে। ২০২১ অর্থবর্ষে বিনিয়োগকারীদের দুর্দান্ত সফলতাও এনে দিয়েছে এই ক্রিপ্টো মুদ্রা। স্বভাবতই ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়েছে হু হু করে। যদি আপনিও আগামী অর্থবর্ষে নিজের ব্যাঙ্ক-ব্যালান্স বৃদ্ধির জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগে আগ্রহী হন, তাহলে আমরা আপনার জন্য তৈরি করেছে একটি তালিকা, যেখানে আলোচনা করছি ২০২২ সালের সবথেকে বিনিয়োগ সুরক্ষিত কিছু ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যাপারে।

১. বিটকয়েন 

বিশ্বের ক্রিপ্টো বিপ্লবের সূচনা হয়েছিলো এই বিটকয়েনের মাধ্যমেই। ২০১৩ সালে নিজের যাত্রা শুরু করার পর দীর্ঘ আট বছরে উন্নতির একাধিক মাইলফলক স্পর্শ করেছে এই ক্রিপ্টো মুদ্রাটি। অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের অধিকাংশই মনে করেন, যদি ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ শুরু করতে হয় তাহলে সবার আগে বিটকয়েন দিয়েই শুরু করা ভালো। বিটকয়েন মূলত একটি পিয়ার-টু-পিয়ার টেকনোলজির মাধ্যমে কাজ করে, এবং এই ক্রিপ্টোকারেন্সি বেশ কিছু দিক থেকে বেশ সুরক্ষিত। অত্যন্ত কম প্রসেসিং ফি, সারাবিশ্বে গ্রহণযোগ্যতা এবং দ্রুতগতির ট্রানজ্যাকশনের মত সুবিধা আপনাদের দিয়ে থাকে এই বিটকয়েন। 

বিগত ৫২ সপ্তাহের মধ্যে বিটকয়েনের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৭২ শতাংশ, যা একটি ক্রিপ্টোকারেন্সির জন্য বেশ বড় সাফল্য। ২০২০ সালের শেষদিক পর্যন্ত ক্রিপ্টোকারেন্সির ট্রেডিং মূল্য যেখানে প্রতি মুদ্রা পিছু ছিল ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেখানে ২০২১ সালের শেষ অব্দি এই মুদ্রার ট্রেডিং মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রতি মুদ্রা পিছু ৩২ হাজার মার্কিন ডলার। সম্ভাবনা রয়েছে, ২০২২ এর শেষ অবধি বিটকয়েনের ট্রেডিং মূল্য মুদ্রাপিছু ৬০ হাজার মার্কিন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। যদিও পুরনো হিসেব দেখে বিটকয়েনের আগামীদিনের মূল্য এবং তার পারফরম্যান্স বিচার করাটা খুব একটা সমীচীন কাজ হবে না। তবে হ্যাঁ, এটা অবশ্যই বলা চলে, যদি আপনি একটা দীর্ঘ সময়ের জন্য বিনিয়োগ করতে চান, তাহলে বিটকয়েন অবশ্যই একটি ভাল বিকল্প হতে পারে আপনার জন্য।

২. ইথেরিয়াম 

বিকেন্দ্রীকৃত এবং ওপেন সোর্স ক্রিপ্টোকারেন্সিতে যদি আপনি বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক থাকেন, তাহলে আপনার পছন্দের তালিকায় অবশ্যই রাখুন ইথেরিয়ামকে। বিটকয়েনের থেকে অনেক দ্রুত ট্রানজাকশনের কারণেই এখনো অনেকে পছন্দের তালিকায় ইথেরিয়াম জায়গা পায়। অপেক্ষাকৃত অনেক নবীন ক্রিপ্টোকারেন্সি হলেও খুব কম সময়ের মধ্যেই ক্রিপ্টোকারেন্সি জগতে একটা আলাদা জায়গা তৈরি করে ফেলেছে ইথেরিয়াম। ইথেরিয়াম এবং বিটকয়েন, এই দুটি ক্রিপ্টোকারেন্সি অনেক দিক থেকে প্রায় একই রকম। কিন্তু অপারেশন ও অ্যাপ্লিকেশনের দিক থেকে এই দুটি ক্রিপ্টো মুদ্রা অনেকাংশে আলাদা। ইথেরিয়াম এবং বিটকয়েন সম্পূর্ণ দুটি আলাদা প্রয়োজনের জন্য তৈরি এবং তারা কাজও করে একেবারে একে অন্যের থেকে আলাদা ভাবে। আপনি যদি এনএফটি এবং বিকেন্দ্রীকৃত অর্থনীতির সঙ্গে সড়গড় হন, তাহলেই ইথেরিয়ামের উপর বিনিয়োগ করুন। 

ইথেরিয়াম ক্রিপ্টো মুদ্রাটি শুধুমাত্র একটি পেমেন্ট সিস্টেম না, বরং তার থেকে অনেকটাই বেশি। একাধিক অর্থনৈতিক অ্যাপ্লিকেশনের মার্কেটপ্লেস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে এই ইথেরিয়াম। ২০১৫ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ইথেরিয়ামের জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে বেড়েছে। প্রথমদিকে ইথেরিয়াম এর খুব একটা প্রচলন না থাকলেও, ২০২০ সালের পর থেকে ইথেরিয়াম এর দাম এবং প্রচলন বৃদ্ধি পেয়েছে বহুলাংশে। অধিক মূল্যের এনএফটি পেমেন্ট সিস্টেমের ক্ষেত্রে ইথেরিয়ামের ব্যবহার অনেকটাই সুবিধাজনক। তার সঙ্গেই ব্লকচেইন টেকনোলজি, বিকেন্দ্রীকৃত ফাইন্যান্স সিস্টেমে একাধিক ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে ইথেরিয়াম দুর্দান্ত কাজ করতে পারে। এই দুই কারণেই মূলত ক্রিপ্টো জগতে বিনিয়োগকারীদের পছন্দের তালিকায় স্থান পেতে শুরু করেছে ইথেরিয়াম। 

৩. বিনান্স কয়েন 

যদি আপনি ক্রিপ্টো জগতে ট্রেডিং করতে ইচ্ছুক থাকেন তাহলে বিনান্স কয়েনকে আপনার তালিকায় রাখতে পারেন। ক্রিপ্টোকারেন্সি জগতে সবথেকে বেশি ট্রেডিং হওয়া মুদ্রা এই বিনান্স কয়েন। ক্লাসিক, অ্যাডভান্সড, পিয়ার-টু-পিয়ার, স্ট্র্যাটেজি, মার্জিন, ফ্যান টোকেনের মতো একাধিক ট্রেডিং সংক্রান্ত বিষয় যুক্ত রয়েছে বিনান্স কয়েনের সঙ্গে। ২০১৭ সালে এই বিনান্স কয়েন এর জন্ম। বিনান্স এর ইকোসিস্টেম জনপ্রিয় মূলত তাদের সার্ভিস, ট্রানজাকশন, টোকন সেল এবং টোকন ফার্মিং সুবিধার জন্য।

এছাড়াও বিনান্স ভিসা কার্ড এবং বিনান্স লোনের সুবিধা আপনি পেতে পারেন এই কয়েনে বিনিয়োগ করলে। এপ্রিল ২০২১ সালে বিনান্স কয়েনের মূল্য ছিল মুদ্রা পিছু ৫৯৯ মার্কিন ডলারের আশেপাশে, যা ডিসেম্বর ২০২১ এ গিয়ে দাঁড়ায় ৬২৩ মার্কিন ডলারে। সময়ের সাথে সাথে এই বিনান্স কয়েনের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এই মুহূর্তে যদি আপনি ক্রিপ্টোকারেন্সি জগতে ট্রেডিং করার ইচ্ছা রাখেন, তাহলে বিনান্স কয়েনকে অবশ্যই রাখুন তালিকায়।

৪. টেথার 

ব্লকচেন টেকনোলজিতে কার্যকরী একটি স্থায়ী প্রকৃতির ক্রিপ্টোকারেন্সি টেথার। সারা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা এবং টোকন সিস্টেমের কারণে অনেক ক্ষেত্রেই টেথার বিনিয়োগকারীদের পছন্দের তালিকায় থাকে। এছাড়াও এই ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি যদি আপনার প্রোফাইলে থাকে তাহলে কিছু ইন্ডাস্ট্রি সাপোর্ট এবং কিছু ফিচার এবং সার্ভিস আপনি অতিরিক্ত পাবেন। তবে, টেথারের মূল বিশেষত্ব এখানে নয়। অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি যেখানে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং দামের ওঠানামা যেখানে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার, সেখানেই এই মুদ্রা অনেকটাই স্থিতিশীল এবং বিনিয়োগকারীকে স্থায়ী উপার্জন দিতে সক্ষম। ২০১৪ সালে এই ক্রিপ্টোকারেন্সির যাত্রা শুরু। ২০১৭ সালটিতে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি হয়ে ওঠে এই টেথার। পরবর্তীতে জনপ্রিয়তা কিছুটা কমলেও দামের দিক থেকে এই মুদ্রাটি অত্যন্ত স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে এখনো। 

৫. সোলানা 

পাবলিক ব্লকচেইন ইকোসিস্টেমে কাজ করা সমস্ত ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সির মধ্যে সবথেকে দ্রুততম হলো এই সোলানা। বিকেন্দ্রীকৃত অর্থব্যবস্থা, এনএফটি, ওয়েব থ্রি সহ একাধিক বিনিয়োগের জায়গায় ইথেরিয়াম এর মত মুদ্রাকে টক্কর দেওয়ার ক্ষমতা রাখে সোলানা। ২০২০ থেকে ২০২১ এর মধ্যে এই সোলানা ক্রিপ্টোকারেন্সির ভাগ্য অনেকাংশেই বদলেছে। দাম বৃদ্ধি হওয়ার পাশাপাশি জনপ্রিয়তাও বেড়েছে হু হু করে। স্মার্ট কন্ট্রাক্ট অপারেশন এবং প্রুফ হিস্ট্রি সুবিধা থাকার কারণে অনেকেই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ইথেরিয়ামকে ছেড়ে সোলানার দিকে ঝুঁকেছেন। এছাড়াও, প্রধানত বিনিয়োগের মুদ্রা হলেও সোলানায় কোন প্রকৃতির ট্রানজাকশন ফি নেই, তাই ট্রানজাকশনের ক্ষেত্রে অনেক জায়গাতেই ইথেরিয়ামকে ছাপিয়ে যায় সোলানা। তবে হ্যাঁ, এই মুদ্রাকে আপনার প্রোফাইলে তখনই রাখবেন যখন আপনি সঠিক বিনিয়োগ করার মানসিকতা নিয়ে নেমেছেন, নতুবা সোলানা ইকোসিস্টেমে আপনি খুব একটা কিছু সুবিধা করতে পারবেন না।

More Articles