রাজ-সিমরানের মাদকতার ২৭ বছর পার, এখনও রমরমিয়ে প্রেম বিলিয়ে চলেছে শাহরুখের 'DDLJ'

DDLJ Shahrukh Khan continues : DDLJ-এর জাদু শেষ হয়ে যাবে এত সহজে! রাজ-সিমরানের প্রেম কি এত তাড়াতাড়ি ফুরোয়?

খয়েরি জ্যাকেট, কাঁধে ম্যান্ডোলিন। একদৃষ্টিতে ছেলেটি তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। একটি মেয়ে চলে যাচ্ছে তাঁর সামনের দিকে। ছেলেটি তো তাঁকে ভালোবাসে। আর মেয়েটি? ম্যান্ডোলিন নিয়েই ছেলেটি বলে উঠল সেই অমোঘ লাইন –

“আগার ওহ তুমসে প্যায়ার করতি হ্যায়, তো ওহ এক বার পলটকে দেখেগি… পলট… পলট… পলট…”

এরপর কেটে গিয়েছে ২৭টি বছর। গঙ্গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে অজস্র জল। কত প্রেমিক নিজের প্রেম না পেয়ে কেঁদে ভাসাল। কতজন আবার জীবনসঙ্গীকে আঁকড়ে রাখল। কিন্তু প্রেমের আবহে ভাসলে একবার অন্তত এই ডায়লগগুলি মনের মধ্যে চলে আসবে। লায়লা-মজনু, সেলিম-আনারকলি, রোমিও-জুলিয়েটের পাশে জায়গা পেয়েছে আজকের রাজ-সিমরান। ২৭টি বছর কেটে গিয়েছে; তবুও ফিকে হয়ে যায়নি ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’। DDLJ-এর জাদু শেষ হয়ে যাবে এত সহজে! রাজ-সিমরানের প্রেম কি এত তাড়াতাড়ি ফুরোয়?

সেভাবে দেখতে গেলে, আর পাঁচটা বলিউডি সিনেমার থেকে খুব একটা আলাদা নয়। বিলেতে গিয়ে রাজ আর সিমরানের পরিচয়, তারপর সেখানেই প্রেমে পড়া। কিন্তু সেই প্রেম পূর্ণতা পাবে না, জানে সিমরান। ভারতে ফিরে আসার পর বাবার বেছে রাখা পাত্রের সঙ্গেই বিয়ে করতে হবে। তারপর রাজ চলে আসে ভারতে। শুরু হয় পরিবারকে রাজি করানোর কাজ। একেবারে শেষে হিরো আর হিরোইনের এক হওয়া। নব্বই দশকের গড়পড়তা বলিউডের সিনেমায় মোটামুটি এমন দৃশ্যই দেখা যেত।

DDLJ 3

বিদেশে রাজ-সিমরান, পলট... পলট... পলট...

তাহলে কেন এমন ম্যাজিক? কেন এখনও ঘুরে বেড়ায় DDLJ-র কিসসা? আসলে রাজ-সিমরানের প্রেমের সঙ্গে অনেক তরুণ তরুণীই হয়তো জুড়ে গিয়েছেন। সেইসঙ্গে আছে সিনেমার বেশকিছু ডায়লগ, এভারগ্রিন কিছু গান… সেইসঙ্গে শাহরুখ খান আর কাজল। এই জুটির পথচলা শুরু হয় DDLJ দিয়ে। এর আগে শাহরুখ বা কাজল – কেউই প্রচণ্ড জনপ্রিয় ছিলেন না। কিং খান তখন একটু একটু করে ফুটে উঠছেন। সেই সময় ঝড়ের মতো সামনে এল DDLJ। শাহরুখের রোম্যান্টিক ম্যানারিজম, সঙ্গে কাজলের কেমিস্ট্রি – তৈরি করল এক অদ্ভুত মাদকতা।

আরও পড়ুন : সবরকম সাক্ষাৎকারে ‘না’, কেন এত বড় সিদ্ধান্ত নিলেন ‘পাঠান’ ছবির পরিচালক

সেইসঙ্গে জুড়ে থাকলেন লতা মঙ্গেশকর, উদিত নারায়ণ, কুমার শানু, অলকা ইয়াগনিকের মতো গায়ক-গায়িকারা। আজও ভ্যালেনটাইন্স ডে বা ‘বাঙালির প্রেমের মরসুম’ সরস্বতী পুজোয় বেজে ওঠে ‘তুঝে দেখা তো ইয়ে জানা সনম’। সর্ষে খেতের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে প্রেমের ছোঁয়া। বন্ধুবান্ধবরা যদি হলুদ সর্ষে খেতের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি দেয়, সবাই মস্করা করে বলে, “কীরে? DDLJ-র শাহরুখ খান ভাবছিস নাকি নিজেকে?” মিম থেকে ওয়েব সিরিজ, পরবর্তী বলিউড সিনেমার মধ্যেও ছাপ ফেলে গিয়েছে এই একটি সিনেমা।

DDLJ 2

হলুদ সর্ষে খেতে রাজ-সিমরান আর 'তুঝে দেখা তো ইয়ে...'

সেইসঙ্গে আছে ভারতীয় জনতা। রাজ সিমরানকে পালিয়ে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করেনি। বরং, প্রেমের ওপর বিশ্বাস রেখেছিল সে। ভারতে এসে সিমরানের পরিবারকে, ‘দজ্জাল বাবা’ অমরীশ পুরীকেও মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। দুই পরিবার যখন সম্মতি দিল, তখনই ষোলকলা পূর্ণ হল। স্টেশনে দাঁড়িয়ে অমরীশ পুরী বললেন ‘যা সিমরান যা, জি লে অপনি জিন্দেগি’। এই যে সম্মতি, এই প্রেম, পুরোটার মধ্যেই অদ্ভুত এক ভারতীয়ত্ব লুকিয়ে রয়েছে। বিদেশি প্রভাব, আধুনিকতা সব থাকলেও সেই ভারতীয়ত্বই বেশি টানল জনতাকে। তাই তো আজও তরুণ প্রজন্ম গোগ্রাসে গিলতে থাকে এই সিনেমা।

আরও পড়ুন : “তুমি নেশাগ্রস্ত, তাই ঝামেলা করেছ”, কেন শাহরুখ খানকে বলেছিলেন বিগ বি?

DDLJ এলে অবধারিতভাবে সামনে আসবে মারাঠা মন্দিরের কথা। মুম্বইয়ের এই ঐতিহাসিক সিনেমাহলে আজও সকাল সাড়ে ১১টায় ভিড় জমায় মানুষ। এখনও প্রতিদিন ওই সময় সেখানে দেখানো হয় ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’। ২৭ বছর ধরে সিনেমাহলে নাগাড়ে চলছে একটিই সিনেমা। শত বিদ্রোহ, বিতর্ক থাকলেও এই নিয়ম থেকে সরেনি একচুলও। এমন সম্মান কটা সিনেমা পেয়েছে? আর সেই সিনেমার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে নানা গল্প। মারাঠা মন্দিরে রোজ সকাল সাড়ে ১১টায় আসেন এক মহিলা। সামনের দিকে বসেন, আর মন দিয়ে দেখেন DDLJ। কেন? কারণ, ওই মহিলার নামও যে সিমরান! সিনেমার মধ্যে দিয়েই কি স্বপ্নের ‘রাজ’-কে ছোঁয়ার চেষ্টা করেন? চোখের কোণে লুকিয়ে রাখেন জল?

DDLJ 1

সিনেমায় একেবারে শেষে ট্রেনের সেই সিকোয়েন্স, যা কালজয়ী হয়ে থেকেছে

ট্রেনের দরজায় হাত বাড়িয়ে আছেন ‘রাজ’ শাহরুখ। বধূ বেশে, লেহেঙ্গা পরে তাঁর দিকে দৌড়ে যাচ্ছেন কাজল। শেষমেশ হাতে হাত ঠেকতেই সিটি মেরে ওই ট্যাক্সিচালক। একবার নয়, বারবার। এরকমই অজস্র চরিত্র ঘুরে বেড়ায় মারাঠা মন্দির চত্বরে। কেউ ৫০ বার, কেউ ২০০ বার দেখে নিয়েছেন সিনেমাটি। তবুও এক অমোঘ আকর্ষণ। কেবল যুবক যুবতী? আজ্ঞে না, আট থেকে আশি – প্রত্যেকেই এখনও সমান তালে উপভোগ করেন রাজ-সিমরানের কেমিস্ট্রি। হয়তো মনে মনে নিজের গল্পও তৈরি করতে থাকেন। যে গল্প হয়তো কখনও তৈরিই হয়নি… তৈরি হবে না হয়তো…

আরও পড়ুন : পিছিয়ে টম ক্রুজও! বিশ্বের চতুর্থ ধনী অভিনেতা শাহরুখের কেনা সবচেয়ে দামি জিনিস কী?

২০২৩-এ দাঁড়িয়ে ‘পাঠান’ নিয়ে ব্যস্ত বলিউডের বাদশা শাহরুখ খান। বিতর্ক কম হয়নি এই সিনেমাটি নিয়ে। একটি বিশেষ গোষ্ঠীর তরফ থেকে সিনেমাটি বয়কট করার ডাক দেওয়া হয়। শাহরুখ খানকেও হেনস্থার মুখে পড়তে হয়। কিন্তু প্রতি বছর ২০ অক্টোবর দিনটি এলেই মনে পড়ে ২৭ বছর আগের কথা। যে মুহূর্তটি জন্ম দিয়েছিল সুপারস্টার শাহরুখকে। জন্ম দিয়েছিল কাজল নামের শক্তিশালী অভিনেত্রীকে। জন্ম দিয়েছিল আরও অজস্র না বলা, না হওয়া, আড়ালে থাকা প্রেমকে। জন্ম দিয়েছিল আরও অজস্র DDLJ-র।

More Articles