নেশার খেলা থেকে স্নায়ুর যুদ্ধ, জীবনকে মাপছে দাবা

Dibyendu Barua Chess Grandmaster: খেলার হলে গিয়ে জানতে পারলাম আমার প্রতিপক্ষ নাকি ভিক্টর কর্সনয়। তিনি তখন বিশ্বের ২ নম্বর খেলোয়াড়! প্রচণ্ড শক পেলাম, প্রচণ্ড!

DB

১৯৭২ সাল। ম্যাচ অব দ্য সেঞ্চুরি, বরিস স্প্যাস্কি বনাম ববি ফিশার। সাবেকি সোভিয়েত ইউনিয়ন আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর দাবা খেলা। আসলে দাবা ঠিক নয়, যেন দুই রাষ্ট্রশক্তির খেলা- একে অপরের বিরুদ্ধে। স্নায়ুযুদ্ধে কার জয় হবে, সেই একটি বিষয় সারা বিশ্বে প্রভাব ফেলেছিল। দাবাতে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রাধান্য দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। দাবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোভিয়েতের ২৪ বছরের একচেটিয়া আধিপত্য সেবার ভেঙে যায়। বরিস স্প্যাস্কি ম্যাচ জেতার জন্য প্রবল রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়েছিলেন। অন্যদিকে, কোনও আমেরিকান তখনও বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করতে পারেননি। এই দাবা ম্যাচটিকে ঘিরে জনসাধারণের অস্বাভাবিক আগ্রহ এবং উত্তেজনা এতটাই বেশি ছিল যে একে 'শতাব্দীর ম্যাচ' নামে ডাকা হতে থাকল। ববি ফিশারই ছিলেন প্রথম আমেরিকান খেলোয়াড় যিনি বরিসকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন। তার আগে পর্যন্ত মানুষের ধারণা ছিল, দাবা নেশার খেলা। সময়ের ছিরিছাঁদ নেই, অনন্তকাল ধরে খেলে যাও! ১৯৭২-এর পর থেকে দাবা আর নেশার খেলা রইল না, দাবা এখন যুদ্ধ, স্নায়ুর এক লড়াই।

আমরা যারা পেশাদারি দাবা খেলি, তাঁদের থেকে অ্যামেচার খেলোয়াড়দের মূল ফারাক হচ্ছে, অ্যামেচার খেলোয়াড়রা অনেক বেশি মজা করে খেলয়াতে পারেন। খেলার চাপ বা নিজের পারফর্ম্যান্স ধরে রাখার কোনও চিন্তা তাঁদের থাকে না। আমাদের ক্ষেত্রে, প্রতিপক্ষের মাথার মধ্যে কী চলছে সেটা মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। দাঁড়াতে বাধ্য। দাবা তো ইনডোর গেমের চেয়েও বেশি সাইকোলজিকাল গেম, মাইন্ড গেম। দাবা খেলে মানসিক যে উন্নতি হয়, তা একজনকে আকাদেমিক এবং ব্যক্তিগত জীবনের নানা স্তরে সাহায্য করে। তবে, সব কিছুর ঊর্ধ্বে দাবা সাইকোলজি বোঝার এক চরম অস্ত্র। আমাকে ভাবতে হচ্ছে, আমি যার সঙ্গে খেলছি, মানে আমার প্রতিপক্ষ কী কী ভাবছে! সেই সময় বিবিধ বিষয় কাজ করে। প্রতিপক্ষের চালচলন, আগেকার খেলার ইতিহাস, মানে তাঁর খেলার ঘরানা এসব দেখে অনেক কিছু বুঝতে হয়। মুখের অভিব্যক্তি একজন দাবা খেলোয়াড়ের সবচেয়ে বড় অস্ত্র, একইসঙ্গে দুর্বলতাও। সে স্বচ্ছন্দ বোধ করছে কিনা তা প্রতিপক্ষের হাঁটাচলার মধ্যেই বোঝা যায়। মানুষের প্রবৃত্তিই হচ্ছে, ভুল করলে একটা অভিব্যক্তি চলেই আসে। সেই অভিব্যক্তিটাকেই পড়ে ফেলতে হয়, ধরে ফেলতে হয়। ভুলের সুযোগটিকে ধরে বুঝে নিতে হবে প্রতিপক্ষ এই মুহূর্তে দুর্বল। তখন মনোযোগ দিতে হয় বেশি। প্রতিপক্ষ তো মনে প্রাণে চান যেন কিচ্ছুটি না বোঝা যাক। ভেতরের অস্থিরতা, ভুল চাল দিয়ে ফেলার ছটফটানি যাতে প্রতিপক্ষ বুঝতে না পারে সেটাই সবাই চায়। কিন্তু ধরে ফেলা যায়। হ্যাঁ, অনেকসময় দুরন্ত প্রতিপক্ষ মিথ্যা আচরণও করে। হয়তো ভুল চাল দিয়েছে, কিন্তু কোনওভাবেই সেটা প্রকাশ্যে আনছে না। উল্টে চূড়ান্ত আত্মবিশ্বাসী আচরণ করছে। বোর্ড ছেড়ে উঠে গেল, ঘুরে বেড়াল চারদিকে। অন্য বোর্ড দেখছে, হাসছে। কিন্তু মনের মধ্যে চলছে যে, সে একখানা চরম ভুল করে ফেলেছে। সেই একটি ভুলকে প্রতিপক্ষের থেকে আড়াল করতে সে আত্মবিশ্বাসী মিথ্যা আচরণ করছে।

আরও পড়ুন- খেলার সুযোগটুকুও জুটত না! যেভাবে দাবার ইতিহাসের বাঁক বদলালেন ডিং লিরেন…

প্রতিপক্ষ কী ভাবছে না ভাবছে, চোখই তার সবচেয়ে বড় আয়না। এখন অনেকক্ষেত্রেই অনেকে টুপি পরে খেলেন যাতে, চোখের সঞ্চালন বোঝা না বোঝা যায়, প্রতিপক্ষের সঙ্গে চোখাচোখি না হয়। ধরা যাক, আমি চাল দিয়ে বসে আছি। প্রতিপক্ষ চাল দেওয়ার সময় ভাবছে, প্রতিপক্ষের ঘড়ি চলছে। প্রতিপক্ষ হয়তো ডানদিক দেখল, আমরা বুঝে যাব ওই অংশে কোনও একটা চালের পরিকল্পনা চলছে বা ওই অংশে কোনও ভুল থেকে থাকতে পারে। সেটাকে আড়াল করার জন্য অনেকেই টুপি পরে খেলছেন, চোখ বাঁচাতে, দৃষ্টি বাঁচাতে। চোখ কোথায় পড়ছে তা প্রতিপক্ষকে বুঝতে দেওয়া যাবে না একদম। চাল দেওয়ার পরে সাধারণত আমরা বসে থাকি, ভাবি। প্রতিপক্ষ যখন ভাবছে আমিও পরিকল্পনা করে রাখছি। কিন্তু চাল দিয়ে, যেটুকু সময় আছে, মানে ২ মিনিট হোক বা ১৫ মিনিট, তখন মাথাকে অন্যদিকে ঘোরাতে অন্যান্য বোর্ড দেখি। দেখি মানে তাকাই। খুব মন দিয়ে দেখলে বিপদ। এই সময়টুকুতেই ধরা যায় প্রতিপক্ষ ভুল করে ফেলেছে কিনা, তাঁর দুর্বলতা তখন ফুটে ওঠে মুখে, চোখে, শরীরে। খেলার মধ্যে চাল নিয়ে, পরিকল্পনা নিয়ে ভাবতে তো হবেই, কিন্তু অনেকসময় অন্য বোর্ডগুলিতে কী চলছে সেটাও ঘোরে মাথার মধ্যে। আসলে একটা ঘরে ৪০ টা খেলা চলছে হয়তো, একই সময়ে। তখন উঠে গিয়ে অন্য বোর্ডের খেলা দেখে ফেলি। দেখে ফেলা মানেই সেই বোর্ডের খেলায় ডুবে যাওয়া নয়। এ খানিক রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কোনও এক বাড়ির দিকে তাকানো, তার অন্দরে ঢুকে পড়া নয়।

এই যে ৪ ঘণ্টা, ৬ ঘণ্টা ধরে বসে বসে খেলা, তার জন্য যে পরিমাণ শারীরিক জোর দরকার, মানসিক চাপের মধ্যে শরীরকে ধরে রাখা- এর জন্য মাথাকে মাঝে মাঝে মুক্তি দিতে হয়। হেঁটে বেড়াই, হালকা পায়চারি করি, ইতস্তত বোর্ড দেখি। তবে ওই চত্বরের বাইরে কোথাও যাওয়া যাবে না। দর্শকদের মাঝে যাওয়া যাবে না। যত কিছু, যা কিছু সব ওই চৌষট্টি ঘরের আঙিনাতে।

এক ভগ্নাংশ মুহূর্তও যদি অমনোযোগী হই তখনই আমি দুর্বল! সুতরাং এ খানিক ধ্যান। চুপচাপ অন্যকে মেপে যাওয়া, চুপচাপ নিজের মাথায় নকশা এঁকে যাওয়া। সমানে সমানে যদি খেলা হয়, তাহলে জমে গেল! খেলা চলেও দীর্ঘক্ষণ, খেলে মজাও তেমন। অধিকাংশ সময়ই ম্যাচ ড্র! আমার প্রতিপক্ষ কী দিতে পারে, ১০ চাল, ১৫ চাল, ২০ চাল- কেবল ভেবে যাও! পরিকল্পনা সাজিয়ে যাও। বাড়ি থেকে হয়তো প্রবল হোমওয়ার্ক করে গেছি, প্রতিপক্ষের খেলার ঘরানা বুঝে, আগের খেলা দেখে দুর্বলতা, ভুল সব কিছুর অঙ্ক কষে মাঠে নেমেছি- দেখা গেল খেলা সম্পূর্ণ অন্য! তবে একান্ত সারপ্রাইজ না দিতে চাইলে বা কোনও পরীক্ষা না করতে চাইলে দাবা খেলোয়াড় কখনও একেবারে নতুন কোনও খেলা খেলেন না। সাধারণত নিজের ঘরানাতেই খেলতে স্বচ্ছন্দ সকলে।

আমাদের সময় তো এত থিওরি ছিল না, এত কম্পিউটার ছিল না। প্রযুক্তির দিক দিয়ে এত এগিয়ে ছিলাম না। এখন কম্পিউটার, সফটওয়্যার এত বেশি অ্যানালাইজড যে সবাই মোটামুটি তৈরি হয়েই আসেন। তা সত্ত্বেও অচেনা খেলা পড়ে, অজানা চাল পড়ে, তখন মাথা ঠান্ডা রাখা ছাড়া উপায় নেই। দাবার গুণই এটা, বিভিন্ন চরম পরিস্থিতি যখন তৈরি হচ্ছে, নিজের মাথা ঠান্ডা রেখে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি পরিস্থিতিকে দখলে না আনতে পারি, তখনই ভুলটা হবে। এরকম প্রচুর খেলা হয়েছে যেখানে আমি পরিস্থিতির মুখে পড়ে দিশেহারা হয়েছি। প্রতিপক্ষ যে এমন চাল কস্মিনকালেও দিতে পারে, হয়তো ভাবিইনি। কিন্তু সে দিয়ে ফেলেছে, তখন ঘেঁটে ফেললাম। কী করব বুঝতে না পেরে ভুল চাল দিলাম। এখানেই একজন ভালো খেলোয়াড় আর একজন শিক্ষানবিশের ফারাক। দাবায় যত পোক্ত হবে, মাথা ঠান্ডা হবে তত।

মনে পড়ছে আমার সঙ্গে ভিক্টর কর্সনয়ের খেলা। সাল ১৯৮২। তখন তো ইন্টারনেট ছিল না, কম্পিউটারও নেই। কার সঙ্গে যে আমার খেলা পড়েছে তা জানিই না। এখন তো কার সঙ্গে খেলা পড়েছে ওয়েবসাইটে গেলেই জানা যায়। এখন প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্র অনেক বেশি সোজা। সেইজন্য এখন খেলার মানও হচ্ছে সাংঘাতিক! দু'জনেই তুখোড় প্রস্তুতি নিয়ে নামছেন। দু'জনেই দু'জনের দুর্বলতা জানেন, শক্তিও জানেন। অ্যাটাকিং নাকি ডিফেন্স, এন্ডগেম দুর্বল নাকি মিডল গেম- এসব এখন আগে থেকে নাড়াঘাঁটা করলেই জানা যায়। আগে তো এসব ছিল না। টুর্নামেন্টে খেলার আগে সাধারণ প্রস্তুতি নিয়েই যেতে হতো।

সে যাই হোক, সেবার খেলার হলে গিয়ে জানতে পারলাম আমার প্রতিপক্ষ নাকি ভিক্টর কর্সনয়। তিনি তখন বিশ্বের ২ নম্বর খেলোয়াড়! প্রচণ্ড শক পেলাম, প্রচণ্ড! তখন আমার ১৬ বছর বয়স। মানসিক কোনও প্রস্তুতিই নেই। গেছিও অনেকটা দূর থেকে, পাঁচ মিনিট দেরি হয়ে গেছে ঢুকতে ততক্ষণে। মানে পাঁচ মিনিট সময় কমে গেছে খেলার। শুরু হয়ে গেছে চাপা উত্তেজনা, ভেতরে ভেতরে বিলক্ষণ তা টের পাচ্ছি। ডবল টেনশন, একদিকে ভিক্টর কর্সনয়, অন্যদিকে সময় ফুরিয়ে আসছে! তখন মনে মনে ঠিক করে নিলাম কয়েকটা বিষয়। আমি একজন ভারতীয় খেলোয়াড়, বয়স ১৬, আমার উল্টোদিকে রয়েছেন বিশ্বের দু' নম্বর দাবাড়ু! অতএব আমার হারানোর কিছু নেই। ঠিক আছে, হারব তো বটেই। ততক্ষণ নিজের সেরাটা দিই। সাদা নিয়ে খেলছিলাম। খেলতে খেলতে বুঝলাম, ভিক্টর একবার ড্র পেলেন, তিনি নিলেন না। আমি তো ভাবছি তিনি বোধহয় ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন, জিততেই চলেছেন। একটা সময়ের পরে গিয়ে বুঝলাম আমি জিততে চলেছি। ওই যে একটা অদ্ভুত আনন্দ, গর্ব তাতে নিয়ন্ত্রণ রাখা কঠিন। লন্ডনে হয়েছিল খেলাটা, একেবারে পিন ড্রপ সাইলেন্স। মাত্র ১৬ বছরে এই জয়, আমার কাছে বিশাল পাওনা। কিন্তু এই যে চমকে যাওয়ার মতো একটা পরিস্থিতি হলো, এই মুহূর্তগুলোতে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে তরী ডুবতে পারে। দাবা যেহেতু বসে খেলা, অনেকটা সময় ধরে খেলা এবং যেহেতু লজিক্যাল থিঙ্কিং প্রক্রিয়াটা চলে তাই অনেকসময় ঠিকঠাক সিদ্ধান্ত আমরা নিতে পারি। দাবা খেলোয়াড়রা তাই অনেক বেশি সুচিন্তিত হন, অনেক বেশি ধীর স্থির হন।

আরও পড়ুন- শুধু পেলের খেলা দেখবে বলে যুদ্ধ থামিয়ে দিয়েছিল দুই দেশ!

দাবা সম্ভবত তার এই ধৈর্যগুণের জন্যই বাচ্চাদের মধ্যেও জনপ্রিয় হয়েছে। আসলে বাবা মায়েরা বুঝছেন সন্তানের ধৈর্য বাড়বে, গাণিতিক চিন্তা, যৌক্তিক ভাবনা বাড়বে। আমাদের সময় অনেকেই ভাবতেন দাবা সময় কাটানোর খেলা, এইসব খেললে কোনও উন্নতি হবে না, বখাটে হয়ে যাবে। এখন ধারণা বদলেছে। দাবা শিখলে মাথা পরিষ্কার হবে, সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক সুচিন্তিত হয়ে যাবে- এটা বুঝছেন অভিভাবকরা। বাচ্চাদের কাছে এই মুহূর্তে মনোযোগ হরণের বিষয় প্রচুর। লকডাউনের মধ্যে দেখলাম, বাচ্চাদের মধ্যে দাবা খেলাটা বেশ পছন্দের বিষয় হয়ে উঠল। পাবজির মতো ধ্বংসাত্মক খেলা না খেলে, দাবার দিকে তারা এগিয়ে গেল। মোবাইলে দাবা খেলা বিষয়টাকে আমি অন্তত ইতিবাচকভাবেই নিই।

মোবাইলে অবশ্য অনেকে ফুটবলও খেলেন। আমার ছেলেকেও দেখেছি, টিম গড়ত, খেলোয়াড় নিত, ড্রিবলিং করত। ফুটবল তো শারীরিক খেলা, সেখানে মোবাইলে কিছু কৌশল রপ্ত করা যায় ঠিকই তবে বল পায়ে মাঠে না নামলে খেলা শেখা যায় না। দাবাও স্রেফ মোবাইলে খেললে উন্নতি হবে না। তবে যেহেতু দাবা কম্পিউটারের সঙ্গে খেলা, তাই দাবা খেলার প্রাথমিক জ্ঞান তাঁর হচ্ছে। কম্পিউটারকে হারানো কিন্তু সোজা না, মেশিনের শক্তি অনেক বেশি। দাবাতে কম্পিউটারকে হারানো বেশ কঠিন। আমরাও কম্পিউটারের সঙ্গে খেলতে বসলে মাঝে মাঝে বেশ কঠিন অবস্থায় পড়ি। তবে ভালো খেলোয়াড় হতে গেলে মানুষ প্রতিপক্ষ দরকার, টুর্নামেন্ট দরকার, মানুষের চিন্তা পড়তে পারা, অভিব্যক্তি পড়তে পারা, সিদ্ধান্ত নিতে পারা তবেই সে শিখবে। মোবাইলে বেজায় ভালো ড্রিবলিং করে কেউ যদি আসল মাঠে নামে, কিছু বুঝেই উঠতে পারবে না। কিন্তু কম্পিউটারের সঙ্গে বসে তারপর যদি কেউ বোর্ডে বসে অন্তত একটা ধারণা সে পাবেই।

দাবার শেষ রাউন্ডের খেলাতে এক অদ্ভুত পরিস্থিতি তৈরি হয়। তখন মাথায় চলতে থাকে, আমি কি জিতব? দ্বিতীয় হব? গ্র্যান্ডমাস্টার হব? জিততেই হবে! সেই মানসিক চাপটাকে নিজের উপর পেয়ে বসতে দিলেই সমস্যা। নিজের চালটা যেমন ভাবতে হবে, প্রতিপক্ষকেও ফাঁদে ফেলতে হবে। নিজের লক্ষ্য হবে, প্রতিচালে নিজের সেরাটা দেওয়া, আর প্রতিপক্ষের লক্ষ্যটাকে ধরে ফেলা। এটাই দাবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমি যদি বুঝতে পারি প্রতিপক্ষ কী চাইছে, সেটা যদি আটকে দিতে পারি, সেই আক্রমণ যদি ঠেকাতে পারি, সেইটাই যথেষ্ট! আন্তলি কার্পভ বলতেন, "ফাইন্ড দ্য বেস্ট মুভ ইন ইচ অ্যান্ড এভরি মুভ!” দাবা তো আসলে ৬৪ ঘরের কূটনীতি। যে কারণে রাজনীতিবিদরা দেখেছি, মাথায় দাবাটা ভালোই খেলেন। সিনেমাতেও দেখেছি, কোনও স্ট্র্যাটেজিক পরিস্থিতিতে এলেই দাবার প্রতীক ব্যবহার করা হয়, হিন্দি হোক, অন্য বিদেশি ভাষার হোক- সব সিনেমায় এই মোটিফ আসেই। বাংলাতেও দেখায়, তবে বোর্ডের চালগুলো সব ভুলভাল থাকে সেখানে। দাবার প্রতিটা চাল মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে! এগিয়ে যেতে হলে পিছিয়ে আসতে হবে- দাবার চালে আছে। নিজেরা নিরাপদে থেকে আগে বোড়েদের আগে এগিয়ে দেওয়া- কঠিন এক সমাজনীতি, রাজনীতি। আবার অন্যদিকে, সৈন্যও যে একদিন মন্ত্রী বা রাজা হতে পারে, দাবার চেয়ে ভালো কেই বা প্রমাণ করে! দাবা কূটনীতির খেলা, দাবা স্নায়ুর এক জটিল লড়াই। মানুষের জীবন থেকে উঠে আসা, মানুষেরই রণকৌশল মাত্র!

More Articles