আজও আলোহীন গ্রাম! কোথা থেকে উঠে এসে রাইসিনা হিলের পথে দ্রৌপদী মুর্মু?

দেশের আদিবাসী সম্প্রদায়ের কাছে একপ্রকার আশার প্রদীপ হয়ে উঠেছে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে দ্রৌপদী মুর্মুর বাছাই। তবে দ্রৌপদী যে গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং বড় হয়েছেন, সেই গ্রামে নাকি সব বাড়িতে এখনও জ্বলে না বাতি!

 

সব হিসেব যদি ঠিকঠাক থাকে, তাহলে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই দেশের প্রথম নাগরিক হিসেবে নির্বাচিত হতে চলেছেন ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন রাজ্যপাল দ্রৌপদী মুর্মু। নির্বাচিত হলে প্রথম আদিবাসী তথা প্রথম ওড়িয়া হিসেবে এই পদে বসতে চলেছেন দ্রৌপদী। বিজেপির তরফ থেকে দ্রৌপদীর নাম ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই রাষ্ট্রপতি হওয়ার দৌড়ে সবথেকে এগিয়ে রয়েছেন তিনি। বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা এই আদিবাসী নেত্রীর নাম ঘোষণার পরেই অনুগামীদের ভিড় বাড়তে শুরু করে দ্রৌপদীর বাড়িতে। গভীর রাত পর্যন্ত শুভেচ্ছা জানাতে মানুষজন ভিড় করেছেন তার বাড়িতে।

একেবারে তৃণমূল স্তর থেকে রাজনীতি করা এই নেত্রীকে প্রার্থী করে বিজেপি যেমন চমকে দিয়েছে, তেমনই এই প্রার্থী নির্বাচন তাদের ভোট সমীকরণ মেলাতেও অনেকটা সাহায্য করেছে। ইতিমধ্যেই উড়িষ্যার শাসক দল বিজু জনতা দল ঘোষণা করেছে, তারা এই নির্বাচনে দ্রৌপদী মুর্মুকে সমর্থন করবে। দেশের আদিবাসী সম্প্রদায়ের কাছে একপ্রকার আশার প্রদীপ হয়ে উঠেছে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে দ্রৌপদী মুর্মুর বাছাই। তবে দ্রৌপদী যে গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং বড় হয়েছেন, সেই গ্রামে নাকি সব বাড়িতে এখনও জ্বলে না বাতি!

এতদিন পর্যন্ত নাকি এই বিষয়টা কারও নজরে পর্যন্ত আসেনি। তিনি ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল ছিলেন দীর্ঘ পাঁচ বছর। কিন্তু তবুও, তাঁর গ্রামে তিনি নিয়ে আসতে পারেননি বিদ্যুৎ। এবারে তিনি আসীন হতে চলেছেন আরও সু-উচ্চপদে। বসতে চলেছেন দেশের শীর্ষ পদে। কোনও অঘটন না ঘটলে, তিনি হতে চলেছেন ভারতের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি। আর সেটাই যেন ম্যাজিক হয়ে উঠল দ্রৌপদী মুর্মুর আদি বাসস্থানের জন্য। দীর্ঘ কয়েক দশকের লড়াইয়ের পর অবশেষে ভারতের সম্ভাব্য রাষ্ট্রপতির গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে উদ্যোগী হল বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা। আর এই খবর সামনে আসতেই হাসি ফুটেছে উড়িষ্যার ময়ূরভঞ্জ জেলার অনামী সেই সাঁওতাল গ্রামটির মানুষজনের মুখে।

আরও পড়ুন: দ্রৌপদী মুর্মুকে সামনে রেখেই চলছে ইতিহাস পালটে দেওয়ার খেলা

শুরু হলো বিদ্যুৎ আনার কাজ
শনিবার উড়িষ্যার সরকার উড়িষ্যার ময়ূরভঞ্জ জেলার এনডিএ রাষ্ট্রপতি প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুর পৈতৃক গ্রাম উপর্বেদার একটি অংশে বিদ্যুৎ আনার কাজ শুরু করে দিয়েছে। এত কাল সেখানে রীতিমতো অন্ধকারে ছিল মানুষ। তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে বিজেপির তরফ থেকে প্রার্থী হচ্ছেন, এই খবর সংবাদমাধ্যমের কাছে পৌঁছে যেতেই অনেকেই ছুটে আসেন গ্রামের মানুষদের বক্তব্য নিতে। কিন্তু সেখানে গিয়েই দেখা যায় অন্য গল্প। দ্রৌপদীর জন্য সকলেই বেশ খুশি হলেও সংবাদমাধ্যমের সামনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাধারণ মানুষ। গ্রামের মেয়ে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন, এই বিষয়টা সকলের কাছেই ছিল বেশ আনন্দের। কিন্তু তাঁর গ্রামই নাকি এখনও ডুবে রয়েছে গভীর অন্ধকারে! সংবাদমাধ্যমের এই খবরেই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। বিড়ম্বনায় পড়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা। শুরু হয়েছে বিদ্যুৎ আনার কাজ।

গ্রামের মেয়ে দ্রৌপদী মুর্মু
ভারতের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুর জন্ম উড়িষ্যার ওই গ্রামে, ময়ূরভঞ্জ জেলার কুসুমি ব্লকের উপর্বেদা গ্রামে আদি বাড়ি ছিল তাঁর। তবে তাঁর গ্রামে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও পৌঁছয়নি বিদ্যুৎ। এখন যদিও দ্রৌপদী ওই গ্রামে থাকেন না। কয়েক দশক আগেই ওই গ্রাম থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে একটি পৌরশহর রাইরংপুরে চলে এসেছেন তিনি। কিন্তু, তাঁর জন্ম এবং তার জীবনের একটা বড় অংশ কেটেছে ওই গ্রামেই। স্কুলের পড়াশোনা থেকে শুরু করে কলেজজীবনের কিছুটা সময় ওই গ্রামেই অতিবাহিত করেছেন দ্রৌপদী। সাঁওতাল গ্রাম হওয়ার কারণে প্রথম থেকেই উড়িষ্যার সরকার নজর দেয়নি ওই গ্রামের দিকে।

গ্রামের মানুষরা যে বিদ্যুতের জন্য প্রশাসনের কাছে আবদার করেননি, এরকমটা কিন্তু নয়। এর আগেও উড়িষ্যা সরকার ও ওপরমহলের নেতাদের সঙ্গে এই মর্মে আলোচনা করেছেন ওই গ্রামের বাসিন্দারা। কিন্তু, সব চেষ্টাই ছিল বৃথা। কখনও তাদের আশ্বাস দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, আবার কখনও তাদের কথা শোনাই হয়নি। তাই দ্রৌপদীর জন্য গর্ব হলেও কোথাও না কোথাও একটা চাপা ক্ষোভ জমা রয়েছে গ্রামবাসীদের মনে।

উপর্বেদা গ্রাম
মাত্র ৩৫০০ মানুষের বসবাস রয়েছে উড়িষ্যার ময়ূরভঞ্জ জেলার এই সাঁওতাল গ্রামে। এই গ্রামের দু'টি ভাগ রয়েছে। একটি ভাগের নাম বাদশাহি। সেই অংশের সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ এসে গিয়েছে। কিন্তু এই গ্রামের আরও একটি অংশ রয়েছে যার নাম ডঙ্গুরশাহি। এই অংশটি এখনও রয়েছে গভীর অন্ধকারে ডুবে। এই অংশটিতে মাত্র ১৪টি পরিবারের নিবাস। এখনও পর্যন্ত এই জায়গায় আসেনি বিদ্যুৎ। গ্রামবাসীদের আবদারের পরেও গ্রামের এই অংশে এখনও বিদ্যুৎ আনা সম্ভব হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ডঙ্গুরশাহির বনভূমিতে বাড়িঘর তৈরি হওয়ার কারণে বিদ্যুৎ আনা যায়নি। এবার সেই কাজ শুরু হবে। কিন্তু দ্রৌপদী রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হবার পরেই, হঠাৎ জঙ্গল সাফ! ওই কর্মকর্তা বলছেন, 'আমাদের গ্রামবাসীদের অন্ধকারে রাখার কোনও উদ্দেশ্য নেই। তবে নির্দিষ্ট সরকারি ছাড়পত্রের অভাবেই এমনটা হয়েছিল।'

দ্রৌপদী মুর্মুর নিজের ভাগ্নে বিরিঞ্চিনারায়ণ টুডু, তাঁর স্ত্রী এবং দুই সন্তান এখনও ওই গ্রামে বসবাস করেন। তাঁর মুখ থেকেই শোনা গেল এই গ্রামের দুরবস্থার কথা। তিনি বলছেন, 'আমাদের গ্রামের ডঙ্গুরশাহি অংশটিতে বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য অনেক মানুষকে অনুরোধ করেছিলাম। তবে কেউ আমার কথায় কর্ণপাত করেননি। সবাই মুর্মু উৎসবের সময় গ্রামে বেড়াতে আসেন। এখানে এসে সেই সময় মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু তারপরেও কেউ বিদ্যুৎ আনার জন্য একটা কাজও করেন না। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় বিষয়টি স্থানীয় বিধায়ক এবং সাংসদকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয়নি। গ্রামে সন্ধ্যা হলেই লন্ঠন জ্বালাতে হয়। হয়তো এবার সেই দিন শেষ হতে চলেছে।'

ওই এলাকার প্রাক্তন সাংসদ সালখান মুর্মু, ভবেন্দ্র মাঝি এবং প্রাক্তন মন্ত্রী কার্তিক মাঝির জন্মস্থানও ওই উপর্বেদা গ্রাম। কিন্তু এত জন নেতা-মন্ত্রীর জন্মস্থান হলেও কেন এতটা উপেক্ষিত রইল সেখানকার মানুষ? বিদ্যুতের পাশাপাশি ওই গ্রামে ভাল রাস্তা পর্যন্ত নেই। ময়ূরভঞ্জ জেলায় ৫০০টি গ্রামে এখনও পর্যন্ত নেই কোনও ভালো রাস্তা। ১৩৫০ গ্রামে বিদ্যুৎ নেই। এই বিষয়টা সংবাদমাধ্যমের নজরে আসতেই শুরু হয়েছে তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেওয়ার কাজ।

টাটা পাওয়ার শুরু করে দিয়েছে কাজ
টাটা পাওয়ার নর্থ উড়িষ্যা ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের আধিকারিকরা এবং কর্মীরা মাটি খনন করার মেশিন, বৈদ্যুতিক খুঁটি এবং ট্রান্সফরমার নিয়ে উপর্বেদা গ্রামে উপস্থিত হয়েছিলেন ২৫ ও ২৬ জুন। যে অংশে এখনও পর্যন্ত বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি, সেই অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য শুরু করে দেওয়া হয়েছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ। টাটা পাওয়ারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, 'আমরা কোম্পানির ময়ূরভঞ্জ বিভাগের বিদ্যুৎ আনার কাজ সম্পন্ন করতে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুরো গ্রামে বিদ্যুৎ আনার কাজ শেষ করতে চাইছি।'

৩৮টি বিদ্যুতের খুঁটি এবং ৯০০ মিটার কেবল ট্রান্সফরমার নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে কাজ। তাদের সঙ্গে রয়েছে একটি ট্রাক এবং মাটি খোঁড়ার মেশিন। ২৪ এক ঘণ্টার মধ্যে গোটা গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার নির্দেশ জারি করা হয়েছে সংস্থার তরফ থেকে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই বিদ্যুতের কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থার সিইও ভাস্কর সরকার। রাষ্ট্রপতির গ্রামে বিদ্যুৎ নেই, এই বিষয়টা নিয়ে আর বিশ্বের কাছে হাসির খোরাক হতে চাইছে না ভারত। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিয়ে আসতে হবে বিদ্যুৎ!

গ্রামের বাড়ি থেকেই শুরু হয় যাত্রা
২০ জুন ১৯৫৮ সালে এই গ্রামের বাড়িতেই জন্ম হয়েছিল দ্রৌপদীর। স্কুল এবং কলেজের পড়াশোনা শেষ করে, জুনিয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করা, দ্রৌপদীর জীবনের একটা বড় অংশের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত ছিল এই ছোট্ট সাঁওতাল গ্রাম। তাঁর জীবনের এই যাত্রা কখনওই ছিল না সহজ। জীবনের প্রতি পদে একের পর এক খেয়েছেন ধাক্কা, আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন, নতুন করে শুরু করেছেন জীবন। উপর্বেদা গ্রাম থেকে জীবন শুরু করে আজ ভারতীয় রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী। দ্রৌপদীর জীবনটা কোনও সিনেমার প্লটের থেকে কম কিছু না।

একের পর এক ধাক্কা
রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হবার আনন্দের মধ্যেও দ্রৌপদীর জীবনে রয়েছে বেশ কিছু চাপা কষ্ট। খুব অল্প সময়ে মৃত্যু হয়েছিল সাঁওতাল পরিবারের মেয়ে দ্রৌপদী মুর্মুর স্বামীর। শ্যামচরণ মুর্মুর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পরেই তাঁদের জীবনে আসে দুই পুত্রসন্তান এবং এক কন্যাসন্তান। কিন্তু সুখের সংসার খুব একটা বেশিদিন থাকেনি। স্বামীর মৃত্যুর শোক ভুলতে না ভুলতেই, দুই সন্তানকে হারিয়ে ফেলেন ঝাড়খণ্ডের প্রথম আদিবাসী এই রাজ্যপাল। তবে বছরখানেক আগে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। নাতি, জামাই এবং মেয়েকে নিয়ে এখন ভালোভাবে কাটছে তাঁর জীবন।

মেয়েকে পড়ানোর জন্য অনিচ্ছাসত্ত্বেও করতে হয়েছে শিক্ষকতার কাজ
শিক্ষক কিংবা ট্রেনিং কলেজের প্রোফেসর হওয়াটা কখনওই দ্রৌপদীর ইচ্ছা ছিল না। তবে একটা সময় ঘর চালানোর জন্য এবং মেয়েকে পড়ানোর জন্য তাঁকে শিক্ষকতার কাজ করতে হয়েছিল। শিক্ষিকা হিসেবে নিজের কেরিয়ার শুরু করেছিলেন দ্রৌপদী মুর্মু। তারপরে একটি ট্রেনিং কলেজের পার্টটাইম প্রোফেসর হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। পাশাপাশি, উড়িষ্যার সেচ বিভাগে জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট অর্থাৎ কেরানি হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। এই সমস্ত কাজ করে যে টাকা বেতন হিসেবে পেতেন দ্রৌপদী, তা দিয়ে সম্পূর্ণ নিজের সংসারের খরচ চালাতেন তিনি। শুধু তাই নয়, তাঁর কন্যাকে ওই বেতনের টাকা থেকে পড়ালেখা করাতেন দ্রৌপদী মুর্মু। তবে ১৯৯৭ সালে বিজেপিতে যোগদানের পর থেকেই তার জীবনটা অনেকটা পাল্টাতে শুরু করে।

সহজ ছিল না মেয়ের জীবনটাও
তাঁদের পরিবারের পক্ষে কর্মসংস্থান এবং সচ্ছল জীবনযাপন সব সময় ছিল একটা বিলাসিতার মতো। একটা ছোট্ট গ্রাম থেকে উঠে আসার কারণে অনেকেই তাঁদের পরিবারকে কাজ দিতে প্রস্তুত ছিলেন না। আর সেই একই সমস্যায় পড়েছিলেন দ্রৌপদী মুর্মুর কন্যা ইতি। ছোট থেকেই একটা অনটন ছিল পরিবারে। তাই কলেজের পড়াশোনা শেষ করার পরেই একটা ব্যাঙ্কে চাকরি করতে শুরু করে দেন ইতি মুর্মু। আজকাল দিনে ঝাড়খণ্ডের রাজধানী রাঁচিতে থাকছেন। কয়েক বছর আগেই ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা গণেশকে বিয়ে করেছেন তিনি। তাঁদের দু'জনের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে, যাঁর নাম আদিশ্রী।

নজর কেড়েছে দ্রৌপদীর কাজ
ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভালো হওয়ার সুবাদে উড়িষ্যার ভারতীয় জনতা পার্টির আদিবাসী সম্প্রদায়ের অংশে একটা ভালো জায়গায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন দ্রৌপদী মুর্মু। এরপর ভারতীয় জনতা পার্টি এবং বিজু জনতা দলের জোট সরকারের সময় দ্রৌপদী মুর্মু মন্ত্রী হিসেবে সামলেছেন দায়িত্ব। বাণিজ্য এবং পরিবহণ মন্ত্রী হিসেবে দ্রৌপদী মুর্মুর কাজ নজর কেড়েছে গোটা উড়িষ্যাবাসীর। এমনকী, মৎস্য এবং প্রাণীসম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এরপরেও ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল হিসেবে নিজের সম্পূর্ণ মেয়াদ শেষ করেছিলেন দ্রৌপদী। সেই রাজ্যের প্রথম মহিলা রাজ্যপাল হওয়ার পাশাপাশি তিনি ছিলেন ঝাড়খণ্ডের প্রথম রাজ্যপাল যিনি নিজের মেয়াদ শেষ করতে পেরেছিলেন। এমনকী, আদিবাসী মহিলা রাজ্যপাল হিসেবেও তাঁর কাজ সকলের নজর কেড়েছিল।

এবার লক্ষ্য রাইসিনা হিল
যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে, তাহলে আগামী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপি জোটের প্রার্থী হিসেবে ভারতের প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি হতে চলেছেন দ্রৌপদী মুর্মু। ২০১৭ সালের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীদের তালিকাতেও তাঁর নাম ছিল। কিন্তু সেই সময় তাঁর পরিবর্তে বিজেপি বেছে নিয়েছিল দলিত হিন্দু নেতা রামনাথ কোবিন্দকে। তবে এবার তেমনটা হয়নি। রাষ্ট্রপতি পদে বিরোধী প্রার্থী যশবন্ত সিনহাকে মার্জিন রেখে পরাজিত করতে পারলেই দ্রৌপদী হয়ে উঠবেন দেশের প্রথম আদিবাসী মহিলা রাষ্ট্রপতি। পাশাপাশি তিনিই হবেন ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি, যিনি ভারতের স্বাধীনতার পরে জন্মগ্রহণ করেছেন।

 

More Articles