এবার পুজোয় সাবেকিয়ানা আর থিমের মেলবন্ধন দেখতে আসতেই হবে হাতিবাগানের এই মণ্ডপগুলিতে

হাতিবাগান এলাকায় বহু পুরনো বারোয়ারি পুজো রয়েছে।

হাতিবাগানে কার হাতি থাকত, তা নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন থাকলেও এই এলাকায় দুর্গাপুজোর সময় যে কিছু অসাধারণ মণ্ডপ এবং প্রতিমা দেখতে পাওয়া যায়- সেই ব্যাপারে বেশিরভাগ মানুষের মনে সংশয় নেই। উত্তর কলকাতায় অল্প কিছু দূরত্বের মধ্যে অনেক মণ্ডপ এবং প্রতিমা দেখার জন্য আদর্শ এলাকার মধ্যে হাতিবাগান অন্যতম। এই এলাকায় বহু পুরনো বারোয়ারি পুজো রয়েছে। সেই পুজোকমিটিগুলো প্রতি বছর বিভিন্ন জিনিস, এলাকা অথবা চিন্তাধারার আদলে মণ্ডপ এবং প্রতিমা নির্মাণ করে। প্রায় প্রতিটি পুজো আজ অবধি বহু পুরস্কার অর্জন করেছে।

সিকদারবাগান সর্বজনীন
১৯১৩ সালে সিকদারবাগান সর্বজনীন পুজোর সূচনা হয়েছিল। শতবর্ষ অতিক্রম করে সেই পুজো আজও প্রতি বছর আয়োজিত হয়। হাতিবাগানের কাছেই টাউন স্কুলের বিপরীত গলিতে খুবই অল্প পরিসরের মধ্যে সিকদারবাগানের পুজোর মণ্ডপ তৈরি করা হয়। কলকাতার অন্যতম পুরনো বারোয়ারি পুজো এখন থিমের হাত ধরেছে। এই অল্প পরিসরে বিভিন্ন বিষয়ের আদলে তৈরি মণ্ডপ মানুষকে তাক লাগানোর ক্ষমতা রাখে। শহর এবং শহরতলির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাসে চেপে হাতিবাগান অথবা টাউন স্কুল বাস স্টপেজে নামলে এই মণ্ডপে পৌঁছে যাওয়া যাবে । এছাড়া বিধাননগর স্টেশন, শোভাবাজার মেট্রো স্টেশন অথবা শোভাবাজার লঞ্চ ঘাট থেকে অটো করে হাতিবাগানে পৌঁছে কয়েক মিনিট হাঁটা পথেই এই মণ্ডপে পৌঁছনো সম্ভব।

নলিন সরকার স্ট্রিট সর্বজনীন
১৯৩৩ সালে হাতিবাগানের কাছেই নলিন সরকার স্ট্রিটের বারোয়ারি দুর্গাপুজোর সূচনা হয়েছিল। বহু বছর পেরিয়ে থিমের হাত ধরে প্রতি বছর নিত্যনতুন বিষয়ের আদলে এই পুজোর মণ্ডপ এবং প্রতিমা নির্মাণ করা হয়। গত বছর পুরনো কলকাতার আদলে তৈরি হয়েছিল এই পুজোর মণ্ডপ। মণ্ডপের চারপাশে লাগানো হয়েছিল পুরনো চায়ের দোকানের সাইনবোর্ড থেকে পুরনো কলকাতায় পাইস হোটেলের মেনু এবং আরও অনেককিছু। ২০২২ সালে নলিন সরকার স্ট্রিট দুর্গাপুজোর ভাবনা 'আগমনীর আবাহনে আগামীর কারিগর'। কলকাতা এবং শহরতলির বিভিন্ন এলাকা থেকে বাসে চেপে হাতিবাগান অথবা খান্না বাস স্টপেজে নেমে কয়েক মিনিট পায়ে হেঁটে এই মণ্ডপে পৌঁছনো যায়। এছাড়া বিধাননগর স্টেশন, শোভাবাজার মেট্রো স্টেশন অথবা শোভাবাজার লঞ্চ ঘাট থেকে অটো করে খান্না পৌঁছে ২-৩ মিনিট হাঁটা পথেই এই মণ্ডপে পৌঁছনো সম্ভব।

আরও পড়ুন: কলকাতার দুর্গাপুজোর আমেজ পেতে আসতেই হবে উত্তর কলকাতার এই মণ্ডপগুলিতে

নবীন পল্লী সর্বজনীন
১৯৩৪ সালে হাতিবাগান নবীন পল্লী সর্বজনীন দুর্গাপুজোর সূচনা হয়েছিল। দীর্ঘদিন সাবেক পুজোর ধরন বজায় রাখলেও বিগত দশক থেকে এখানে থিমপুজোর সূচনা হয়। এই বছর নবীন পল্লী সর্বজনীনের পুজোর ভাবনা হলো, 'জীবনের ধন কিছুই যায় না ফেলা, হোক না যতই ফেলনা'। প্রতি বছর নলিন সরকার স্ট্রিটের মণ্ডপের খুব কাছেই নবীন পল্লী-র মণ্ডপ তৈরি করা হয়।তাই কয়েক মিনিট পায়ে হেঁটেই নলিন সরকার স্ট্রিট দুর্গাপুজোর মণ্ডপ থেকে নবীন পল্লী-র মণ্ডপে পৌঁছনো সম্ভব। কলকাতা এবং শহরতলির বিভিন্ন এলাকা থেকে বাসে চেপে হাতিবাগান অথবা খান্না বাস স্টপেজে নেমে কয়েক মিনিট পায়ে হেঁটে এই মণ্ডপে পৌঁছনো যায়। এছাড়া বিধাননগর স্টেশন, শোভাবাজার মেট্রো স্টেশন অথবা শোভাবাজার লঞ্চ ঘাট থেকে অটো করে খান্না অথবা হাতিবাগান পৌঁছে ২-৩ মিনিট হাঁটা পথেই এই মণ্ডপে পৌঁছনো সম্ভব।

হাতিবাগান সর্বজনীন
হাতিবাগান চারমাথার মোড়ের খুব কাছেই প্রতি বছর আয়োজিত হয় হাতিবাগান সর্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতির পুজো। হাতিবাগানের অন্যান্য পুজোর মতো এই পুজো থিম পুজো। গত বছর হাতিবাগান সর্বজনীনের পুজোর ভাবনা ছিল 'পিছুটান'। ২০২২ সালে এই পুজো ৮৮ বছরে পদার্পণ করতে চলেছে। কলকাতা এবং শহরতলির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাসে চেপে হাতিবাগান বাস স্টপেজে নামলে এই মণ্ডপে পৌঁছে যাওয়া যাবে । এছাড়া বিধাননগর স্টেশন, শোভাবাজার মেট্রো স্টেশন অথবা শোভাবাজার লঞ্চ ঘাট থেকে অটো করে হাতিবাগানে পৌঁছে মিনিটদুয়েক  হাঁটা পথেই এই মণ্ডপে পৌঁছনো সম্ভব।

কাশী বোস লেন সর্বজনীন
১৯৩৭ সালে কাশী বোস লেন বারোয়ারি দুর্গাপুজোর সূচনা হয়েছিল। বহু বছর পেরিয়ে এসে বিভিন্ন বিষয়ের আদলে এই বারোয়ারি পুজো তাদের মণ্ডপ এবং প্রতিমা নির্মাণ করে। দেবীর ঘট থেকে পুরনো দালানবাড়ির মতো বিভিন্ন বিষয়ের আদলে মণ্ডপ তৈরি করে এই সর্বজনীন পুজো বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। শহর এবং শহরতলির বিভিন্ন এলাকা থেকে বাসে চেপে হেদুয়া অথবা স্কটিশ চার্চ স্কুল স্টপেজে নেমে কয়েক মিনিট পায়ে হেঁটে এই মণ্ডপে পৌঁছে যাওয়া যাবে। এছাড়া নিকটবর্তী মেট্রো স্টেশন গিরিশ পার্ক থেকে অটো করে হেদুয়া পৌঁছে সেখান থেকে কয়েক মিনিট পায়ে হেঁটে এই মণ্ডপে পৌঁছনো সম্ভব।

এইসব পুজো ছাড়াও হাতিবাগান এবং তার আশপাশের এলাকায় বহু সাবেকি এবং থিম পুজো আয়োজিত হয়। তাদের মধ্যে অন্যতম চোরবাগান সর্বজনীন, চোরবাগান শীলবাড়ির পুজো, হেদুয়া পার্কের পুজো, চালতাবাগান, সিমলা ব্যায়াম সমিতির পুজো। খুব অল্প দূরত্বের মধ্যে বহু মণ্ডপ এবং প্রতিমা দেখতে পাওয়ার আনন্দ পেতে দিনের বিভিন্ন সময়ে বহু মানুষ এই এলাকায় ঠাকুর দেখতে ভিড় জমান।

More Articles