কেউ বলে দেবতা, কেউ বলে শয়তান, কেন বিশ্বের সবচেয়ে বিতর্কিত মানুষ এলন মাস্ক

৯ এপ্রিল, ২০২১- নিউরোটেকনোলজি সংস্থা নিউরালিঙ্ক প্রকাশ করল এক অভাবনীয় ভিডিও। সেখানে দেখা যাচ্ছে একটি বাঁদরকে, যে ভিডিও গেম খেলছে। না, চমক এটা নয়, সে গেমটা কোনও যন্ত্রের সাহায্যে খেলছেনা, খেলছে শুধু মাত্র তার মস্তিষ্কের সহায়তায়।

৫ মে, ২০২১- মহাকাশযান প্রস্তুতকারক এবং মহাকাশ যাত্রা ব্য়বস্থাপক কোম্পানি স্পেসএক্স তাদের স্টারশিপ প্রকল্পের প্রোটোটাইপ রকেট এসএন ১৫ শুধু সফল উৎক্ষেপনই ঘটাল না, তার সফল ভাবে অবতরণ করাতেও সক্ষম হল। হ্যাঁ, ঠিকই পড়লেন। আজ পর্যন্ত মহাকাশযানের শুধু মাত্র উৎক্ষেপনই হত, অবতরণ হতো না। ৫ মে এর পর থেকে এমন এক প্রযুক্তির জন্ম হল যাতে একটি মহাকাশযান একবার ব্যবহৃত হয়েই পৃথিবীর মহাসাগরে পঞ্চত্ব প্রাপ্তি পাবে না, বারবার তাকে ব্যবহার করা যাবে। এই প্রযুক্তি গড়ে তোলার মূল উদ্দেশ্য? আগামী দশকের মধ্যে মঙ্গল গ্রহে মানুষকে পৌঁছে দেওয়া এবং নিয়মিত যাতায়াতের ব্যবস্থা করা।

৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ টেসলা, এক বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা, যারা ২০০৮ সালে প্রথম রোডস্টার নামক বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজারে এনেছিল এবং একেবারে বিদ্যুতের গতিতে বাজারে একছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিল,( প্রথম স্বয়ংক্রিয় গাড়ি আনে), তারা এক অভাবনীয় ঘটনা ঘটায়। রোডস্টারকে সোজা পাঠিয়ে দেয় মহাকাশে, যার ভেতরে বসে স্টারম্যান, রোডস্টারের চালক। সে এখন আছে পৃথিবী আর মঙ্গল গ্রহের মাঝে, মহাশূন্যে, একা।

আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলস শহর, খুব বিখ্যাত এক শহর, কিন্তু তার যানজটের জন্যে তার ভীষণ বদনাম। সেই সমস্যা সমাধানে খোলা হল দ্য বোরিং কোম্পানি। দুটি শহরকে জুড়ে দেওয়া হবে মাটির নিচে, সুড়ন্ঙ খুঁড়ে, হাইপারলুপ প্রযুক্তির মাধ্যমে। ঘণ্টার পর ঘণ্টার সময়ের ব্যবধান কমে দাঁড়াবে কয়েক মিনিটে।

"I think it is possible for ordinary people to choose to be extraordinary"

প্রথমে চারটি সংস্থার কথা লিখলাম, তার পর এই উদ্ধৃতি, একটু ঘেঁটে যেতে পারে। এই চারটি সংস্থা নিজ নিজ ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক, প্রযুক্তির অভূতপূর্ব প্রয়োগের বলে অসম্ভব কে সম্ভব করছে, এবং সেই চারটি সংস্থার কর্ণধার একজনই। তার নাম ইলন মাস্ক। বাস্তবের আয়রন ম্যান। অনেকে তাঁকে বলেন সুপার ভিলেন, ইভিল জিনিয়াস। এক সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আজ পৃথিবীর ধনীতম মানুষ মাস্ক, অর্ডিনারি থেকে এক্সট্রাঅর্ডিনারি হয়ে ওঠার, চড়াইউৎরাইয়ের এক অবিশ্বাস্য কাহিনি তাঁকে আর পাঁচজন ধনীর থেকে আলাদা করে দিয়েছে।

আরও পড়ুন-ভারতীয়দের শরীরে তিলে তিলে বাসা বাঁধছে মারণ রোগ ক্লাইমেট অ্যাংজাইটি! কে দায় নেবে

ইলন মাস্কের জন্ম ২৮ জুন, ১৯৭১ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়ায়। দক্ষিণ আফ্রিকান পিতা এবং কানাডিয়ান মাতার তিন সন্তানের তিনি প্রথম। একদম ছোট বয়স থেকেই মাস্ক কম্পিউটার এবং প্রযুক্তির ব্যবহারে চূড়ান্ত দক্ষ হয়ে ওঠেন, এবং বানিয়ে ফেলেন একটি ভিডিও গেম।  মাস্কের যখন বয়স ১০, তখন তার বাবা-মার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। প্রথম কয়েক বছর তাকে তার বাবার সঙ্গেই কাটাতে হয় এবং মাস্কের ভাষায় তিনি ছিলেন একজন অত্যন্ত খারাপ মানুষ। মাস্কের শৈশব খুব কঠিন এবং অনাদরে কাটে, সৌজন্যে ওঁর বাবা। এই পরিস্থিতিতে মাস্ক খুবই চুপচাপ থাকতেন, একেবারেই নিজের জগতে, নিজের চিন্তাভাবনায় মগ্ন হয়ে। তাকে বোঝার চেষ্টা বিশেষ করেননি তার বাবা। নিজের ভাইবোনের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন কম, বইয়ে মুখ গুঁজে সময় কাটিয়েছেন অনেক বেশি। সেই কারণে প্রিটোরিয়ায় তার স্কুলেও তাকে অনেক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছিল। স্কুলে তার বন্ধু বিশেষ ছিল না, শত্রু ছিল অনেক বেশি, কিন্তু শত্রু বানানোর মত কাজ তিনি বিশেষ করেননি। তা সত্ত্বেও চূড়ান্ত অত্যাচার সহ্য করতে হত, মারও খেতে হয়েছে। সেটা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে তাকে একবার হাসপাতালেও ভর্তি করতে হয়েছিল।

এই কঠোর এবং একাকীত্বের শৈশব থেকে একটা বিষয়েই তাঁকে মুক্তি দিত, তা হল কম্পিউটার প্রযুক্তি। যে বছর তার বাবা মার বিচ্ছেদ হয়, সেই বছরই তিনি কোডিং শেখেন এবং ঠিক দুই বছরের মধ্যে দ্বাদশবর্ষীয় বালক বানিয়ে ফেলে ভিডিও গেমব্লাস্টার যা দক্ষিণ আফ্রিকান ম্যাগাজিন পিসি অ্যান্ড অফিস টেকনোলজিকে বিক্রি করে পাঁচশো ডলার রোজগার করে সে।

প্রযুক্তি এবং কম্পিউটারকে আরো আঁকড়ে ধরার সময় সেটা। একটু বড় হতেই এলন পাখির চোখ করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিকে। তাছাড়াও পিতার অত্যাচার এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বাধ্যতামূলক সেনার প্রশিক্ষণ এড়ানোও একটি বড় কারণ ছিল নিজের জন্মস্থান ছেড়ে চলে আসার। মাত্র ১৭ বছর বয়সে এলনের কানাডা যাত্রা, নিজের মার কাছে। এতদিন পরে সন্তানকে কাছে পেয়ে তার মা আশা করেছিলেন এলন আগামী দিনগুলিতে তাঁর কাছেই থাকবে। কিন্তু তা হয়নি। মাস্ক নিজের জন্যে অত্যন্ত কঠিন জীবনটাই বেছে নেন।

মাত্র এক ডলারেরও কম খরচায় দিন কাটাতে শুরু করলেন এলন একজন আত্মীয়র ফার্মে চাকরি এবং তারপর হোস্টেলে ফিরে আসা, এই ছিল তার জীবন। সেই জীবনের ইতি ঘটে যখন তিনি কুইনস বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ পান। তার প্রথম স্ত্রী জাস্টিনের সাথে সেখানেই আলাপ হয় তাঁর।

কিছুদিন পর তিনি ভর্তি হন ওয়ার্টন স্কুলে যেখানে তিনি পদার্থবিজ্ঞান এবং অর্থনীতি নিয়ে স্নাতক হন। তারপর, নিজের জীবন ও পৃথিবী পাল্টে দেওয়ার স্বপ্ন নিয়ে তিনি রওনা দেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এসে পড়লেন ক্যালিফোর্নিয়ায়, ভর্তি হলেন স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার জন্যে। ভর্তি হয়েই উপলব্ধি করলেন, যে পদার্থবিজ্ঞানের চেয়ে ইন্টারনেটের ক্ষমতা অনেক বেশি, ইন্টারনেটই তাঁর স্বপ্ন পূরণ করবে। মাত্র দুদিনের মাথায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়েন এবং নিজের ভাই কিম্বালের সঙ্গে হাত মিলিয়ে, বাবার থেকে পাওয়া ২৮ হাজার ডলার পুঁজি নিয়ে নিজের প্রথম কোম্পানি জিপ-টু চালু করেন।

আরও পড়ুন-ঘরপালানো গানক্ষ্য়াপার ভক্ত স্বয়ং হৃত্বিক রোশন! শাকিলের গল্পটা হাজার ছেলেমেয়েকে স্বপ্ন দেখাবে

১৯৯৫ সালে যাত্রা শুরু হল জিপ টু-র, একটি ওয়েব সফটওয়ার কোম্পানি যারা ইন্টারনেটে শহরের গাইড তৈরি করবে সংবাদপত্রগুলির জন্যে। শুরুতে কেউ পাত্তা দিতে চায়নি। ১৯৯৯ সালে মিলিয়ন ডলারে তিনি এই সংস্থাকে বিক্রি করেন। এই চার বছরের মধ্যে বেশির ভাগ রাত তার কেটেছে অফিসে, প্রায় বেশির ভাগ রাত কোডিং করে।

৩৪০ মিলিয়ন পেয়ে তিনি উচ্ছ্বাসে গা ভাসিয়ে দেওয়ার জায়গায় নতুন এক প্রজেক্টে হাত দিলেন। নতুন সংস্থার নাম এক্স ডট কম। ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে একেবারে বদলে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে শুরু হয় এক্স ডট কম এর পথ চলা, যাকে ভবিষ্যত পৃথিবী চিনবে পে-প্যাল নামে, যাকে আমেরিকান বহুজাতিক সংস্থা কিনে নেবে ১.৫ বিলিয়ন ডলারে, যা থেকে মাস্ক নিজে রোজগার করবেন ১৮০ মিলিয়ন ডলার।

বেশিরভাগ তরুণই এত কম বয়সে এত সাফল্য পেয়ে বিহ্বল হয়ে পড়েন। মাস্কের কাছে এতটাই টাকা ছিল, তিনি চাইলে ওই দিনেই দুটো দ্বীপ কিনে বা প্রমোদতরী কিনে উল্লাসে মেতে যেতে পারতেন। কিন্তু এলন সাড়ে সাতশ কোটি মানুষের মত ভাবেন না, আর ভাবেন না বলেই তিনি ধনকুবেরদের মধ্যেও স্বতন্ত্র।  তার মোট সম্পদের মাত্র দুই শতাংশ দিয়ে বিপদসীমায় থাকা, বা বলা যেতে পারে, মৃত্যুমুখী প্রায় ৪২ কোটি মানুষের খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে প্রাণরক্ষা করা সম্ভব বলে দাবি করছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের ডিরেক্টর, এলন উত্তরে বলছেন প্রমাণ করতে পারলে তিনি দিতে রাজি। এলন মানবজাতিকে এই পৃথিবীর গন্ডির বাইরে নিয়ে যেতে চাইছেন, এবং সেই লক্ষ্য পূরণ করার দিকে বেশ দ্রুত গতিতে এগিয়েও চলছেন তিনি। এমন মানুষ কখনও ১৮০ ডলার রোজগার করে থেমে থাকতে পারে?

২০০৪ সালে তিনি টেসলাতে যোগ দেন। পেপ্যালের থেকে রোজগার হওয়া ১৮০ মিলিয়নের মধ্যে ৭০ মিলিয়ন তিনি বিনিয়োগ করে। ইঞ্জিনিয়ার মার্টিন ইবরহার্ড ও মার্ক তারপেনিং তখন বৈদ্যুতিন গাড়ি বানানোর প্রকল্প সবে শুরু করেছেন। পৃথিবী বদলানোর আশায় বুঁদ মাস্ক তখন মনে করলেন, তার টাকা বিনিয়োগ করার শ্রেষ্ঠ জায়গা হলো এই টেসলা। বাকিটা ইতিহাস। লেখার শুরুতে চারটে আলাদা কোম্পানির কথা উল্লেখ করেছি, টেসলা ছাড়া সবই তার প্রতিষ্ঠা করা। আরো একটি কোম্পানির কথা উল্লেখ করা খুব প্রয়োজন, তার নাম হল সোলার সিটি। সোলার সিটি তাঁর প্রতিষ্ঠা করা নয়, তবে এই মুহূর্তে এই কোম্পানিরও মাথায় বসে আছেন তিনি। পাঁচটি আলাদা সংস্থা, যারা মানবজাতির ভবিষ্যৎ পাল্টে দিতে পারে, তাদের সবার কর্ণধার সেই একজন। এমনকী হালের কৃপ্টোকারেন্সি বাজারেরও তিনি ভাগ্য বিধাতা।  পৃথিবীর শুধু ধনীতম মানুষই নন, সবচেয়ে চর্চিত মানুষও এলন।

আজও এলন দিনে ষোলো ঘণ্টা কাজ করেন, অবসরটুকু ছয় সন্তানের সাথে কাটান। তাঁর চোখে স্বপ্ন, মানবজাতি পৃথিবীর গন্ডি ছাড়িয়ে পাড়ি দেবে মহাকাশে, স্থাপন করবে সভ্যতা ভিন গ্রহে, যার শুরু হবে মঙ্গল গ্রহ থেকে। কারণ, আজ থেকে এক হাজার কোটি বছর পর এমনিতেও পৃথিবীতে কোনও প্রাণের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব হবেনা, তাই তাঁর বক্তব্য, আমাদের এই গ্রহ ছাড়তেই হবে।

কিছুদিন আগে Anonymous নামের একটি গ্রুপ একটি ভিডিও প্রকাশ করে। তারা মাস্ককে হুঁশিয়ারি দেয়, "ইলন মাস্ক, তোমার জন্যে আমরা আসছি, তোমার ক্ষমা নেই।"  Anonymous গ্রুপটির নাম আপনারা Black Lives Matter আন্দোলনের সময়ে শুনেছেন নিশ্চয়ই। তাঁরা একটি হ্যাকারদের দল যারা বিভিন্ন সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি ফাঁস করেছে। কিন্তু মাস্ক তো অন্য ধাতুতে গড়া। যাঁরা তাকে জানেন তাঁদের একটা অংশ বিশ্বাস করেন আমাদের জীবন পাল্টে দেবেন, আমাদের বাঁচাবেন কৃত্রিম মেধার আগ্রাসন থেকে, সূর্যের বাড়তে থাকা উত্তাপের থেকে। কিন্তু ব্যপারটা ঠিক এতোটা সরল হয়তো নয়। তিনি শুধুই রঙিন নন, চূড়ান্ত বিতর্কিত একজন মানুষ, ভুরি ভুরি অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

এক্সডটকম-এর সময়ে থেকেই বিতর্কের শুরু। এলনের ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে তখনই সেই সংস্থার বোর্ড তাঁকে সিইও এর পদ থেকে অপসারণ করে। শুধু মাত্র শেয়ার অনেক বেশি ছিল বলে তিনি সেখান থেকে ১৮০ মিলিয়ন বের করে আনতে সক্ষম হন।  আগেই বলেছি টেসলা ওঁর তৈরি করা সংস্থা নয়। উনি সেখানে বিনিয়োগ করেন প্রথমে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০০৭ সালে কোম্পানিকে প্রায় দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার দিকে ঠেলে দেন তিনি, যাতে টেসলার দু'জন আসল প্রতিষ্ঠাতাকে তিনি সরিয়ে নিজে শীর্ষ পদে বসতে পারেন। বাস্তবে এটাই হয়েছিলো কিনা জানা নেই, তবে আদালত পর্যন্ত বিষয়টা গড়ায় এবং মাস্ক বিষয়টা নিষ্পত্তি করেন।

ট্যুইটারে তিনি খুব স্বচ্ছন্দ, প্রায় রোজই কিছু না কিছু ট্যুইট করেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ, তিনি শেয়ারহোল্ডারদের জীবন নিয়ে ছেলেখেলা করেন। অভিযোগটা খুব মিথ্যা এটাও বলা যায়না, কারণ কিছু দিন আগে টেসলার শেয়ার নিয়ে করা তাঁর এক ট্যুইটে শেয়ারবাজারে ধস নামে, অনেকের অনেক টাকার ক্ষতি হয়। মার্কিন সরকার জরিমানাও করে।

ক্রিপ্টো বাজারও নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। টেসলা আর বিটকয়েন গ্রহণ করবে না, মাস্কের এই ঘোষণার পর সেখানেও ধস নামে, কয়েক ঘন্টায় বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ তছনছ হয়ে যায়।

তাঁর বৈদ্যুতিন গাড়ি টেসলার বিরুদ্ধেও অভিযোগ ভুরি ভুরি। এমনকি অনেকে জানাচ্ছেন, এই গাড়ি হ্যাক করা সম্ভব। তাছাড়াও এই গাড়ির ব্যাটারি খুব ভালো নয়, এবং যে পরিবেশ বাঁচানোর জন্যে এই গাড়ি বিখ্যাত, তাকেই পৃথিবীর অন্য প্রান্তে মাস্ক ধ্বংস করছেন তার লিথিয়াম খনির মাধ্যমে। এখানেই শেষ নয়, সেসব জায়গায় নাকি তিনি শিশুশ্রম ব্যবহার করছেন।

নিউরালিন্ক এর কথা শুরুতে লিখেছি। মাস্কের দাবি, এই চিপ দিয়ে মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পাবে, যা দিয়ে কৃত্রিম মেধার সাথে আমরা লড়াই করতে পারব, তাছাড়া আমাদের মস্তিষ্কের সমস্ত রোগ এই সংস্থার চিপ দিয়ে শুশ্রষা করা সম্ভব হবে। কিন্তু সমালোচকদের মতে, এই চিপ ওঁর হাতে এমন ক্ষমতা তুলে দেবে যে উনি মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।

এছাড়াও মাস্কের মঙ্গলগ্রহকে আমাদের নতুন বাসস্থান বানানোর পরিকল্পনাকেও অনেকে সহজ ভাবে দেখতে পারেননা। তারা বলেন, উনি ওনার বিশাল সম্পদ দিয়ে পৃথিবীকে ঠিক না করে পালিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন। তিনি মহাকাশের নিয়ন্ত্রণ নিতে চান, তার স্টারলিঙ্ক প্রকল্প দিয়ে গোটা পৃথিবীকে নিজের মুঠোয় আনতে চান।

এই লেখাটা যখন প্রকাশিত হচ্ছে, তখনও তিনি আদালতে তাঁর সোলার সিটি সংস্থা নিয়ে একটি মামলা লড়ছেন। উনি ভিলেন, না হিরো, না শুধু মাত্র একজন ব্যবসায়ী, পুঁজিবাদী তা সময় বিচার করবে। কিন্তু নীলগ্রহের বর্তমান, বা ভবিষ্যত, কখনোই ওঁকে ছাড় ভাবা সম্ভব নয়। এটুকু বলতে পারি, ভবিষ্যত পৃথিবী ঠিক কেমন হবে, তার দিক নির্ধারণে সবথেকে বেশি যদি কারোর প্রভাব থাকে, সেটা এই মানুষটারই থাকবে। কেউ বলে দেবতা, কেউ বলে শয়তান, এলন যে কী এলন নিজেই জানেন।

More Articles