সামান্য মদ্যপানও ডেকে আনতে পারে চরম ক্ষতি, বলছে নতুন গবেষণা

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া তথ্য বলছে, অত্যধিক অ্যালকোহল গ্রহণের ফলে বাহ্যিক লক্ষণ প্রকাশের আগেই হার্ট নষ্ট হতে শুরু করে।

অ্যালকোহল স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর, একথা সকলেরই জানা। তবে অনেকে মনে করেন, সীমিত মাত্রায় অ্যালকোহল গ্রহণ করা একেবারেই নিরাপদ। এতে শরীরের কোনও ক্ষতি হয় না। কিন্তু সদ্য-আয়োজিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে নতুন তথ্য। গবেষণায় দেখা গেছে, পুর্বানুমানের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে হার্টের ক্ষতি করে অ্যালকোহল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ইউরোপের দেশগুলোতে অ্যালকোহল গ্রহণের পরিমাণ অত্যধিক বেশি। ক্ষতিকারক প্রভাবের কথা জানা সত্ত্বেও এখানকার মানুষ তা উপেক্ষা করেই অ্যালকোহল পান করছেন দীর্ঘদিন ধরে। ইউরোপিয়ান সোসাইটি অফ কার্ডিওলজি-তে এই গবেষণার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষণার খুঁটিনাটি

নতুন এই গবেষণার জন্য ৪০ বছরের ৭৪৪ জন মানুষকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে বেশিরভাগ মানুষেরই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং অতিরিক্ত ওজন সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে। এই ধরনের মানুষের মধ্যে হার্টের সমস্যার প্রবণতা বেশি থাকে। পরীক্ষার জন্য এঁদের প্রত্যেককে ১০ গ্রাম করে অ্যালকোহল দেওয়া হয়েছিল। গবেষণার সঙ্গে যুক্ত এক চিকিৎসক বলেছেন, আগে মনে করা হতো সীমিত মাত্রায় অ্যালকোহল পান করলে শরীরের কোনও ক্ষতি হয় না। তবে এই গবেষণায় বলা হয়েছে, ঠিক কত অ্যালকোহল শরীরের পক্ষে নিরাপদ, তা নির্ধারণ করা কঠিন।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের অ্যালকোহল গ্রহণের অভ্যাস ও পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে বেশ কয়েকটি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে প্রতিদিন ও সাপ্তাহিক অ্যালকোহল গ্রহণ এবং কম ও অতিরিক্ত মাত্রায় অ্যালকোহল পানের ক্ষেত্রে ভিন্ন গ্রুপ ছিল। পরীক্ষার পর দেখা গেছে, অত্যধিক মাত্রায় অ্যালকোহল পানের ফলে মোট ২০১ জন ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা যথেষ্ট উদ্বেগজনক।

আরও পড়ুন: অত্যধিক মদ্যপানে ঠিক কতটা ক্ষতি লিভারের, উপসর্গ জেনে সতর্ক হোন

একই সঙ্গে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৩৫৬ জন ব্যক্তি কম পরিমাণে অ্যালকোহল গ্রহণ করেন এবং ১৮৭ জন সীমিত মাত্রায় অ্যালকোহল পান করেন। দেখা গেছে, যে কোনওভাবেই অ্যালকোহল গ্রহণ শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক। হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা থাকা ব্যক্তিরা যদি অ্যালকোহল গ্রহণ করতে থাকেন, তবে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা ৪.৫ গুণ বেড়ে যায়। পরিমিত মাত্রায় হলেও অ্যালকোহল গ্রহণের কোনও উপকার নেই। প্রতি সপ্তাহে ৭০ গ্রাম বা তার বেশি পরিমাণে সুরা পান করলে হার্ট ফেলিওরের আশঙ্কা বাড়ে। তাই যত দ্রুত সম্ভব মানুষের উচিত, অ্যালকোহল গ্রহণের মাত্রা কমিয়ে দেওয়া। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, আয়ারল্যান্ডের মানুষের মধ্যে হার্টের সমস্যার পরিমাণ বেশি। তাই ওই দেশের সরকারের উচিত অ্যালকোহল গ্রহণের পরিমাণ বেঁধে দেওয়া। এই পরিমাণ প্রতি সপ্তাহে একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের ক্ষেত্রে ১৭ ইউনিট এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ১১ ইউনিট হওয়া উচিত।

অ্যালকোহল গ্রহণ শরীরের অন্যান্য অঙ্গের জন্য কতখানি ক্ষতিকারক?

তবে শুধু কিন্তু হার্ট নয়, অ্যালকোহল গ্রহণ শরীরের অন্যান্য অঙ্গের জন্যও ক্ষতিকারক হতে পারে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, অত্যধিক মাত্রায় অ্যালকোহল গ্রহণ করলে রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই ট্রাইগ্লিসারাইড অতিরিক্ত কোলেস্টরলের সঙ্গে (কম ঘনত্ব বা বেশি ঘনত্বযুক্ত) যুক্ত হয়ে হার্টের ধমনির দেওয়ালে ফ্যাট হিসেবে জমতে থাকে। ফলস্বরূপ, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন অ্যালকোহল অ্যাবিউস অ্যান্ড অ্যালকোহলিজম-এর মতে অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে যে যে সমস্যা হতে পারে, সেগুলি হল:

অ্যালকোহলিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি: এক্ষেত্রে হার্টের আকার বেড়ে যায় এবং পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে, ঠিকভাবে হার্টে রক্ত চলাচল হতে পারে না।

অ্যারিথমিয়াস: যে ব্যক্তি এই অসুখে আক্রান্ত হন, তাঁর হার্টবিট খুব বেশি বা খুব কম হয়ে যায়। ফলে সমস্যা দেখা দেয়।

স্ট্রোক: কোনও ব্যক্তির স্ট্রোক হওয়ার অর্থ রক্ত ঠিকভাবে মস্তিষ্কে প্রবাহিত না হওয়া বা প্রবাহপথে বাধা সৃষ্টি হওয়া। এর ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলির মৃত্যু ঘটে।

হাইপারটেনশন: এক্ষেত্রে রক্তবাহকে রক্তপ্রবাহের সময় অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়। রক্তের প্রবাহপথ সরু হয়ে গেলে বা কোনও তরলের পরিমাণ বেড়ে গেলে এই রোগ হয়।

• যেহেতু অ্যালকোহলে অতিরিক্ত ক্যালোরি রয়েছে তাই মদ্যপানের ফলে শরীরে ফ্যাটের পরিমাণ বাড়তে থাকে। শরীরে ফ্যাটের পরিমাণ বাড়লে তা হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। দেহের ওজন বাড়তে থাকে মদ্যপানের কারণে। হার্ট ছাড়াও লিভার, কিডনি, যকৃৎ এবং ইমিউনিটি সিস্টেমের মতো দেহের অত্যাবশ্যকীয় অংশগুলো নষ্ট হয়ে যায়।

তবে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া তথ্য বলছে, অত্যধিক অ্যালকোহল গ্রহণের ফলে বাহ্যিক লক্ষণ প্রকাশের আগেই হার্ট নষ্ট হতে শুরু করে। এক্ষেত্রে তাই অনেকেরই হার্ট অ্যাটাকের পূর্বে বোঝা যায় না। নিজেকে সুস্থ রাখতে মদ্যপান ত্যাগ করতে হবে এইসব মানুষদের। সঙ্গে পুষ্টিকর ডায়েট এবং এক্সারসাইজ করতে হবে।

 

More Articles