মৃত ছেলে বেঁচে থাকবে অন্য ১১ জনের মধ্যে, যে উদাহরণ গড়লেন মহারাষ্ট্রের চিকিৎসক দম্পতি

Donate organ : মৃত ছেলের অঙ্গেই জীবনের মূল স্রোতে ফেরালেন এগারো জন মুমূর্ষুকে, সমাজ বদলের এই ছবিটাই কি নতুন ভোরের শুরুর ইঙ্গিত?

মৃত ছেলে বাঁচিয়ে রাখার এমন প্রয়াস বিরল। এক জন দুজন নয় মোট এগারো জনকে জীবনের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে অভিনব প্রয়াস নিলেন মহারাষ্ট্রের এই চিকিৎসক দম্পতি। দুর্ঘটনা প্রাণ নিয়েছে ছেলের তবুও ছেলেকে অন্যদের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন তাঁরা। জানা গিয়েছে, মৃত ছেলের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রস্থাপনের জন্য তাঁরা তুলে দিয়েছেন আরও এগারোটি পরিবারের হাতে। ওই দম্পতির বিশ্বাস এভাবেই তাঁদের হারিয়ে যাওয়া ছেলে বেঁচে থাকবে আরও অনেকটা সময়।

ঘটনাটি মহারাষ্ট্রের পালঘরের ভিরার এলাকার। ওই চিকিৎসক দম্পতির ছেলের নাম সাকেত দণ্ডওয়াত। বেঙ্গালুর কাছে একটি বাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় বছর তিরিশের সাকেতের। সাকেতের বাবা বিনীত দণ্ডওয়াত এবং সুমেধা দণ্ডওয়াত দুজনেই পেশায় চিকিৎসক। বিনীত ভিরারের ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট। জানা গিয়েছে, মাত্র ৫ মাস আগে বিয়ে করেছিলেন সাকেত। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই ছেদ পড়ল আসন্ন সাংসারিক জীবনে। আচমকাই চলে যেতে হল সাকেতকে। কিন্তু এই ঘটনায় ভেঙে পড়ার পাশাপাশি চিকিৎসক অভিভাবক হিসেবে নিজেদের দায়িত্ব থেকে মোটেই সরেননি তাঁরা। ঠিক করেন, মৃত ছেলের অঙ্গগুলি তুলে দেবেন মুমূর্ষুদের।

ছেলের মৃত্যুর পরেই তাঁর অঙ্গদান করার সিদ্ধান্ত নেন বিনীত-সুমেধা। সেই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানান সাকেতের সদ্যবিধবা স্ত্রী অপূর্বাও। গত শনিবার সেই কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। মহারাষ্ট্র ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের অঙ্গদান কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এই ঘটনায় উপকৃত হবেন অন্তত এগারো জন। দুটি, চোখ, দুটি কিডনি, ফুসফুস সহ মোট এগারোটি অঙ্গ তুলে দেওয়া হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে।

অন্যদিকে সম্প্রতি এই একই রকম একটি ঘটনার সাক্ষী থেকেছে দেশের অন্য এক প্রান্ত। কেরালার ১৬ বছর বয়সী এক স্কুল পড়ুয়া মারা যায় একটি সড়ক দুর্ঘটনায়। এরপরই তারও অভিভাবকরা ঠিক করেন ছেলের অঙ্গ দান করবেন বলে। সেই মতো প্রায় ছয়জনের নতুন জীবন ফিরেছে ওই অঙ্গে। আরও একটি ঘটনা, গত ১৫ মে’র। একজন বিদেশী পর্যটক বেঙ্গালুরুতে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে মারা যান এবং তাঁর পরিবারও মৃত ওই পর্যটকের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পদক্ষেপ নেন। প্রায় একই সময়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পরপর তিনটি ঘটনা। তিনটি ঘটিনাতেই লক্ষ্য একটাই। অর্থাৎ এ কথা স্পষ্ট যে, সময় বদলাচ্ছে। নতুন সমাজ গড়ার পথে নতুন করে ভাবছেন মৃতদের পরিবারও। আগামীতে আরও এই ধরনের পদক্ষেপের দিকে উৎসাহিত করছেন তাঁরা অন্যান্যদেরও। নতুন জীবন তো বটেই, পাশাপাশি একটা নতুন সময় তৈরি হচ্ছে এভাবেই।

More Articles