করোনার XE সাব-ভ্যারিয়েন্ট কী? কতটা ক্ষতিকর ভাইরাসের এই নতুন রূপ?

অবশেষে ভারতেও পৌঁছল করোনাভাইরাসের XE সাব-ভ্যারিয়েন্ট (Sub-variant), অন্তত সেইরকমই আশঙ্কা করা হচ্ছে। বছর পঞ্চাশের এক মহিলার সাম্প্রতিককালে সাউথ আফ্রিকা ভ্রমণের ইতিহাস ঘেঁটে ৬ এপ্রিল মুম্বইতে বিএমসি-র তরফ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, ওই মহিলা কোভিডের নতুন XE সাব-ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হলেও হতে পারেন। তবে সেই আশঙ্কা আদৌ ঠিক কি না, সে-বিষয়ে সুনিশ্চিত হতে এখনও বাকি আছে।

কিন্তু কী এই XE সাব-ভ্যারিয়েন্ট? কতটা ভয়ঙ্কর এটি?  আদৌ কি আতঙ্কিত হওয়া উচিত সাধারণ মানুষের? দেখে নেওয়া যাক!

XE আদতে ওমিক্রন (Omicron) ভ্যারিয়েন্টেরই একটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট। এই বছরের শুরুতেই ভারতে কোভিডের তৃতীয় ঢেউ (Third Wave) আছড়ে পড়েছিল, যার জন্য দায়ী ছিল মূলত ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট। এর আগে ওমিক্রনের মোট তিনটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট  পাওয়া গিয়েছিল। আর সেগুলি হল বিএ.১ (BA.1), বিএ. ২ (BA.2) এবং বিএ.৩ (BA. 3) সাব-ভ্যারিয়েন্ট।

XE সাব-ভ্যারিয়েন্টের উৎপত্তি হয়েছে ওমিক্রনের বিএ.১ এবং বিএ.২ সাব-ভ্যারিয়েন্ট থেকে। ওমিক্রনের এই দুই সাব-ভ্যারিয়েন্টে উপস্থিত জেনেটিক বস্তুর মিলন বা রি-কম্বিনেশনে (Recombination) তৈরি এই XE সাব-ভ্যারিয়েন্ট।

আরও পড়ুন: করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে চিনে, তবে কি শেষ হয়নি অতিমারী?

অর্থাৎ, বিএ.১ সাব-ভ্যারিয়েন্টের জেনেটিক বস্তুর পাশাপাশি বিএ.২-এর জেনেটিক বস্তুও উপস্থিত নতুন এই সাব-ভ্যারিয়েন্টে। বিএ.১ সাব-ভ্যারিয়েন্ট জিনগত দিক থেকে সামান্যই আলাদা বিএ.২ সাব-ভ্যারিয়েন্টের থেকে। আর এই পার্থক্যের কারণ, এদের জিনে ঘটা রাসায়নিক পরিবর্তন বা মিউটেশন।

XE সাব-ভ্যারিয়েন্টের জেনেটিক পদার্থে এই দুই সাব-ভ্যারিয়েন্টেরই জেনেটিক মিউটেশনের নিদর্শন রয়েছে। এই ধরনের জেনেটিক রি-কম্বিনেশন বা জেনেটিক বস্তুর মিশ্রণ খুবই সাধারণ ঘটনা এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা-সহ একাধিক ভাইরাসের ক্ষেত্রে এই ঘটনা ঘটে। এসব ক্ষেত্রে ভাইরাস তার রূপ এবং চরিত্র বদলায়। ভাইরাসের চারিত্রিক বদলের সঙ্গে সঙ্গে ঘটে সেই ভাইরাসের কারণে হওয়া রোগেরও চারিত্রিক বদল।

এবার আসা যাক, এই সাব-ভ্যারিয়েন্ট কতটা ভয়ঙ্কর সেই প্রসঙ্গে। XE সাব-ভ্যারিয়েন্ট যে ওমিক্রনের মূল দুই সাব-ভ্যারিয়েন্ট- অর্থাৎ বিএ.১ এবং বিএ.২ -এর থেকে লক্ষ্যণীয় রকমের আলাদা, তেমন কোনও প্রমাণ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

আমরা এই বিষয়ে ওয়াকিবহাল যে, ওমিক্রন খুব সহজে ছড়ালেও, রোগের প্রকোপ খুব বেশি হয় না বা এর ফলে মৃত্যুর হারও খুব বেশি দেখা যায়নি। তবে একথা সত্যি যে, বিএ.২ সাব-ভ্যারিয়েন্ট, বিএ.১ সাব-ভ্যারিয়েন্টের থেকে অনেক বেশি সহজে ছড়ায়। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজে়শন বা 'হু'-য়ের মতে, ওমিক্রনের মূল দুই সাব-ভ্যারিয়েন্টের মতোই এরা দ্রুত ছড়ালেও, এখনও পর্যন্ত রোগের তীব্রতা পুরনো দুই সাব-ভ্যারিয়েন্টের মতোই মৃদু।

কোভিডের ভাইরাস কি ভাবেই রূপ বদলাতে থাকবে ঘন ঘন?

'হু'-এর মতে, কোভিডের জিনে মিউটেশন ঘন ঘন হয়, জিন রি-কম্বিনেশনের ঘটনাও নেহাৎ কম নয়। তাই নতুন ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েই যাচ্ছে।

তাছাড়া, নোভেল করোনাভাইরাস বা এর জেনেটিক পদার্থ হিসেবে থাকে আরএনএ বা রাইবো-নিউক্লিক অ্যাসিড। আরএনএ ভাইরাসের বংশবৃদ্ধির সময় যখন আরএনএ-র প্রতিলিপিকরণ ঘটে, অর্থাৎ একটি আরএনএ-র কপি থেকে আরেকটি আরএনএ-র কপি তৈরি হয়, তখন সেই প্রতিলিপিকরণে ত্রুটি হলেই নতুন ভ্যারিয়েন্ট বা সাব-ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হয়। আর আরএনএ-র প্রতিলিপিকরণের এই ভুল শুধরে দেওয়ার কেউ থাকে না, যা আবার ডিএনএ-র ক্ষেত্রে থাকে।

সোজা কথায়, আপনাকে টুকতে বলা হল, "শাহজাহান যুদ্ধে হারিয়া কখনও ভাঙিয়া পড়িতেন না।' আপনি টুকতে গিয়ে ভুল করে লিখলেন, "শাহজাহান যুদ্ধে হারিয়া কখনও জাঙিয়া পরিতেন না।" আপনার থেকে টুকে আরেকজন লিখল, "শাহজাহান বুদ্ধকে হারাইয়া কখনও জাঙিয়া পরাইতেন না।" (পাঠক-পাঠিকাদের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখা, এই উদাহরণ 'হু' দেয়নি) । আরএনএ এই ভুলগুলো খুব করে, তার মাথার ওপর কোনও মাস্টারমশাই বা দিদিমণি বসে থাকে না সেই ভুল শুধরে দেওয়ার জন্যে।

এদিকে ডিএনএ-র ক্ষেত্রে ছায়া প্রকাশনীর ছায়া-র পাশাপাশি একটি প্রাইভেট টিউটর থাকে, যাকে বলে ডিএনএ প্রুফরিডিং অ্যান্ড রিপেয়ার মেশিনারি- প্রতিলিপিকরণের সময় ভুল শুধরে দেওয়ার জন্য। তাই ডিএনএ ভাইরাস চট করে রূপ বদলায় না, নতুন ভ্যারিয়েন্টের জন্মও দেয় না হুটহাট।

সেজন্যই কোভিডের মতো আরএনএ ভাইরাস হুটহাট ভ্যারিয়েন্টের জন্ম দিয়ে আমাদের আতঙ্কগ্রস্ত করে তোলে।

More Articles