অল্প পুঁজিতে বিশেষ মুরগি পালন, লক্ষ টাকা রোজগারের হাতছানি, জেনে নিন কীভাবে

যদি আপনি শুধুমাত্র শীতকালে ভালোভাবে ব্যবসা করেন, তাহলে ৩৫ লক্ষ টাকার বেশি আয় করতে পারবেন খুব সহজেই।

বিশ্বে আমিষভোজী মানুষের সংখ্যা যে নিরামিষভোজী মানুষের সংখ্যার থেকে অনেক বেশি, সেটা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। আর যাঁরা আমিষ খান, তাঁদের মধ্যে সিংহভাগই মুরগির মাংস খেতে বেশ পছন্দ করেন। আর এই সংখ্যাটা ভারতে বেশ ভালোরকম। তবে আমাদের দেশে পোলট্রি এবং ব্রয়লার মুরগির মাংস হামেশাই খেয়ে থাকেন সকলে। কিন্তু আপনি কি কোনওদিন কড়কনাথ মুরগির মাংস খেয়েছেন কিংবা চোখে দেখেছেন?

দেশের নানা প্রান্তের মতোই আমাদের রাজ্যেও এই মুহূর্তে কড়কনাথ চিকেনের জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে বাড়ছে। অর্থাৎ যেমন চাহিদা বাড়ছে এই মুরগির ডিমের, তেমনই চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে এই মুরগির মাংসের। এমনকী, এই ব্যবসায় নেমে পড়েছেন খোদ ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। তাঁর রাঁচির খামারবাড়িতে তিনি চাষ করছেন এই কড়কনাথ মুরগি। তাই আপনি যদি ভেবে থাকেন, এই মুরগির ফার্ম খুলবেন, অর্থাৎ নতুন কিছু ব্যবসা করবেন, তাহলে খুব সহজেই এবং অল্প খরচের মধ্যে করে ফেলতে পারেন এই ব্যবসা।

কড়কনাথ আসলে কোথাকার মুরগি?
ইন্দোনেশিয়ায় প্রথম এই প্রজাতির মুরগি পাওয়া যায় এবং সেখানে এই মুরগির নাম ছিল 'অ্যায়াম কেমানি'। যদিও ভারতে এই প্রজাতির মুরগির আগমন একটু পরেই। মধ্যপ্রদেশের কিছু আদিবাসীর হাত ধরে ভারতে আসে এই মুরগি। তারাই ইন্দোনেশিয়া থেকে এই মুরগি নিয়ে এসে একটি নতুন হাইব্রিড প্রজাতির সৃষ্টি করে। দেশের মধ্যে এই মুরগি প্রথম পালন শুরু হয় মধ্যপ্রদেশে। তারপরেই হাইব্রিড মুরগির নামকরণ করা হয় 'কড়কনাথ মুরগি'। প্রসঙ্গত, এই মুরগির সমস্ত অংশই কিন্তু কালো। অর্থাৎ এই মুরগির মাংস, হাড়, চামড়া- সবকিছুই কালো কুচকুচে। এমনকী এই মুরগির ডিমও কিন্তু কালো। এইজন্য গ্রামবাংলায় কালো মুরগি বা কালিমাসি মুরগি হিসেবে এই কড়কনাথ চিকেন পরিচিতি পেয়ে থাকে।

আরও পড়ুন: নিজের জমিতে গড়ে তুলেছেন জঙ্গল, ফিরিয়েছেন কোটি কোটি টাকার টোপ! কে এই ব্যক্তি?

কোথায় কোথায় পাওয়া যায় কড়কনাথ মুরগি?
কড়কনাথ মুরগি বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রথমবার মধ্যপ্রদেশের ঝাবুয়া জেলায় এটির উৎপাদন শুরু হয়। তারপরে ছত্তিশগড়, তামিলনাড়ু, অন্ধপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, এমনকী, পশ্চিমবঙ্গেও এই মুরগির চাষ শুরু হয়। একটা সময় পশ্চিমবঙ্গে এবং উড়িষ্যার মধ্যে রসগোল্লার আবিষ্কারক নিয়ে যে দ্বন্দ্ব বেঁধেছিল, সেরকমভাবেই মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড়ের মধ্যে লড়াই হয়েছিল কড়কনাথ মুরগির জন্য। তবে পরবর্তীতে জানা গিয়েছে, মধ্যপ্রদেশে এই মুরগির উৎপত্তি। তবে, কড়কনাথের ভৌগোলিক পরিচয় অর্থাৎ জিআই ট্যাগ কিন্তু রয়েছে মধ্যপ্রদেশের কাছেই। কিন্তু এখনও এই মুরগির পেটেন্ট পাওয়ার জন্য মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড়ের মধ্যে লড়াই হয়।

কড়কনাথ মুরগির পুষ্টিগুণ
১৯৭৮ সালে মধ্যপ্রদেশে এই প্রজাতির মুরগির প্রথম প্রতিপালন শুরু হয় কেন্দ্রের তরফে। একটা সময় এই মুরগি খুব একটা জনপ্রিয় না হলেও পরবর্তীতে এর পুষ্টিগুণের জন্য ধীরে ধীরে এই মুরগির জনপ্রিয়তা বেড়েছে সারা ভারতে। এমনকী, ব্যবসায়ীদের জন্য 'কালো সোনা' হয়ে উঠেছে এই কড়কনাথ মুরগি। এই ব্যবসা থেকে বছরে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করতে পারেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু কী এমন পুষ্টিগুণ, যার জন্য এতটা জনপ্রিয় কড়কনাথ মুরগি?

১) প্রোটিন: যেখানে সাধারণ পোলট্রি কিংবা ব্রয়লার মুরগিতে ১৮ থেকে ২০ শতাংশ, সেখানে কড়কনাথ মুরগিতে প্রোটিন থাকে ২৫ থেকে ২৭ শতাংশের কাছাকাছি।

২) চর্বি: সাধারণ পোলট্রি কিংবা ব্রয়লার মুরগিতে চর্বি থাকে মোটামুটি ১৩ থেকে ২৫ শতাংশ। কিন্তু কড়কনাথ মুরগিতে চর্বি থাকে মাত্র ০.৭৩ থেকে ১.০৩ শতাংশের কাছাকাছি।

৩) কোলেস্টেরল: সাধারণ পোলট্রি কিংবা ব্রয়লার মুরগিতে কোলেস্টেরলের পরিমাণ থাকে ২১৮.১২ মিলিগ্রাম। অন্যদিকে কড়কনাথ মুরগিতে কোলেস্টেরল থাকে ১৮৪.৭৫ মিলিগ্রাম।

৪) লিনোলেইক অ্যাসিড: সাধারণ মুরগিতে লিনোলেইক অ্যাসিডের পরিমাণ থাকে মাত্র ২১ শতাংশ এবং কড়কনাথ মুরগিতে এই অ্যাসিডের পরিমাণ থাকে ২৪ শতাংশ।

৫) এছাড়াও এই মুরগিতে রয়েছে ১৮ ধরনের প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যসিড, ভিটামিন বি-১, বি-২, বি-৬, বি-১২, সি এবং ভিটামিন ই। এছাড়াও আজকাল স্নায়ু রোগ নিরাময়ের ওষুধ হিসেবে এই মুরগি ব্যবহার হয়। উল্লেখ্য, এই মুরগির দ্বারা অনেক রোগ নিরাময় হতে পারে।

৬) এই মুরগির আরও গুণাগুণ আছে, যেমন এই মুরগির মাংস বা ডিম খেলে স্মৃতিশক্তি উন্নত হয়, হার্ট সুস্থ থাকে এবং ক্যানসারের ঝুঁকি কমে যায়। পাশাপাশি এই মুরগি রক্তাল্পতার ঝুঁকি রোধ করে, হাড় শক্তিশালী করে। বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে, যাঁদের অস্টিওপোরোসিস এবং অস্টিওআর্থ্রারাইটিস রোগ রয়েছে, তাঁদের জন্য কড়কনাথ মুরগি অত্যন্ত লাভজনক। এছাড়াও ত্বকে পুষ্টির জোগান, মাথা ব্যথা এবং হাঁপানির রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে কড়কনাথ মুরগি লাভদায়ক।

কড়কনাথ মুরগির দাম কেমন?
কড়কনাথ মোরগ এবং মুরগি, দু'টি রংই কালো হয়। তবে হার্ট এবং ডায়াবেটিসের রোগীর জন্য এই অগি অত্যন্ত উপকারী হওয়ার কারণে এই মাংসের বিপুল চাহিদা রয়েছে। পাশাপাশি এই মাংসের উপকারিতার কথা মাথায় রেখে কড়কনাথ মাংসের ব্যবসা শুরু করার জন্য সরকারের তরফ থেকেও প্রত্যেক স্তরে সাহায্য করা হয়। মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড়ে যদি কেউ কড়কনাথ মুরগির ব্যবসা করেন তাহলে তার জন্য একাধিক যোজনা চালানো হয়ে থাকে। তবে পশ্চিমবঙ্গে এরকম যোজনার সংখ্যা কম। ছত্তিশগড়ে কেবল ৫৩,০০০ টাকা জমা করলে সরকারের তরফ থেকে তিনটি কিস্তিতে ১,০০০ মুরগির ছানা, ৩০টি মুরগির শেড এবং ছয় মাসের জন্য বিনামূল্যে মুরগির খাবার দেওয়া হয়। অন্যদিকে, টিকাকরণ এবং স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখার দায়িত্ব সরকার নিয়ে থাকে। মুরগি বড় হওয়ার পর মার্কেটিংয়ের কাজ সরকার করে। পাশাপাশি এই একইরকম যোজনা মধ্যপ্রদেশ সরকারও চালিয়ে থাকে মধ্যপ্রদেশের ব্যবসায়ীদের জন্য।

ভারতীয় বাজারে ৫০ টাকায় কড়কনাথ মুরগির একটি ডিম বিক্রি হয়। অন্যদিকে একটি মোরগ কিংবা এক কেজি মুরগির মাংস বিক্রি হয় ৫০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে। আর এই প্রজাতির মুরগির একদিনের একটি ছানার মূল্য প্রায় ৭০ টাকা। তবে কিছু কিছু জায়গায় আপনারা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা প্রতি কিলো দরে এই মুরগির মাংস কিনতে পারেন।

কড়কনাথ চিকেনের ব্যবসা কীভাবে শুরু করবেন?
কড়কনাথ মুরগির ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রথমে আপনাকে সঠিক জায়গা এবং সঠিক ইনভেস্টমেন্ট নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে হবে। সঠিক জায়গা বেছে নিয়ে তার পরেই আপনি কোনও একটি বিশেষ জায়গা থেকে কড়কনাথ মুরগির ছানা কিনুন। যে কোনও ভেটেরিনারি ইউনিভার্সিটি থেকে এই মুরগির ছানা আপনি কিনতে পারেন। এছাড়া স্থানীয় কোনও ফার্ম থেকেও এই মুরগির ছানা কেনা যেতে পারে। অনলাইনে অনেক সময় কড়কনাথ চিকেনের ছানা বিক্রি হয়। তবে সেক্ষেত্রে ছানা কেনার আগে অবশ্যই সেই মুরগি সুস্থ কি না, সেটা দেখে নেবেন। মনে রাখবেন, সময়ে সময়ে কিন্তু মুরগির ছানার ভ্যাকসিনেশন করানো প্রয়োজন। নতুবা আপনার মুরগির ছানা অসুস্থ হতে পারে।

 

কড়কনাথ মুরগির জন্য সঠিক ফার্ম
যদি আপনি এই মুরগির ব্যবসা শুরু করতে চান, তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপে আপনাকে এই মুরগির জন্য একটি সঠিক ফার্ম তৈরি করতে হবে। এজন্য আপনাকে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে।

১) কড়কনাথ মুরগির যদি আপনি ব্যবসা করতে চান, তাহলে আপনাকে ন্যূনতম ১০০টি মুরগিছানা নিয়ে শুরু করতে হবে। এজন্য আপনার প্রয়োজন হবে ১৫০ বর্গফুট জায়গা। যদি আপনি ১০০০টি মুরগির ছানা নিয়ে শুরু করেন, তাহলে আপনাকে ১,৫০০ বর্গফুট জায়গা নিতে হবে।

২) ফার্ম সবসময় গ্রাম অথবা শহরের বাইরে এবং মূল সড়কের থেকে অনেকটা দূরে হতে হবে। সেখানে যেন পরিবেশ দূষণ খুব একটা বেশি না হয় এবং আশপাশে সবুজের পরিমাণ বেশি থাকে। তবে হ্যাঁ অবশ্যই সেখানে জল এবং বিদ্যুতের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে।

৩) সম্ভব হলে ফার্ম একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় করুন, যেখানে জল জমার সম্ভাবনা থাকবে না। জল জমলে কড়কনাথ মুরগি প্রতিপালনের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়।

৪) এই প্রজাতির মুরগি পালন করতে হলে অন্ধকারে এবং রাতে মুরগির এবং মুরগির ছানার প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। তার সঙ্গেই ফার্মে প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা হালকা আলো এবং পর্যাপ্ত বায়ু প্রবেশ করতে হবে।

৫) একের বেশি ফার্ম হলে কখনওই এই সমস্ত ফার্ম কাছাকাছি রাখবেন না। তবে খেয়াল রাখবেন, যাতে একই জাতির ছানা সবসময় একই শেডের তলায় থাকে। অবশ্যই মনে করে দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে জলের পাত্র পরিষ্কার করুন।

কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন?
যদি আপনি কড়কনাথ মুরগির পোলট্রি ফার্ম খোলার কথা ভাবেন, তাহলে এলাকার কোনও ভেটেরিনারি হাসপাতাল কিংবা স্থানীয় কোনও চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়া যাঁরা মুরগির খামার চালান এবং মুরগি চাষ করেন, তাঁদের সঙ্গে আপনি যোগাযোগ করতে পারেন। তাঁদের থেকে আপনি ফার্ম পরিচর্যা এবং ফার্ম তৈরি করার আরও কিছু ভালো টিপস পেয়ে যাবেন।

নিজের একটি স্পেশাল লোগো তৈরি করুন
যদি আপনি নিজের পোলট্রি ফার্মের ব্যবসাকে আরও বড় করতে চান, তাহলে নিজের একটি আলাদা লোগো তৈরি করুন। সেই লোগোতে যেন অবশ্যই পোলট্রি ফার্ম, কড়কনাথ মুরগি এবং ডিমের চিহ্ন থাকে। আপনাকে বোঝাতে হবে, আপনি এই কোম্পানির মাধ্যমে কড়কনাথ মুরগি বিক্রি করবেন, এবং এই মুরগির মার্কেটিং করবেন।

বাজেট
যদি খুব ছোট আকারে আপনি কড়কনাথ মুরগি চাষ করতে চান, তাহলে হয়তো অতটা খরচ হবে না। তবে যদি আপনি মাঝারি কিংবা বড় মাপের ব্যবসা করতে চান, তাহলে কিন্তু আপনার খরচ মোটামুটি ভালোই হবে। একটি পোলট্রি ফার্ম তৈরি করার জন্য নানা ধরনের জিনিস আপনাকে কিনতে হবে। আলোর ব্যবস্থা, ইনকিউবেটর, হিটার, ব্রুডার, খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা সবকিছুই আপনাকে আলাদা করে কিনতে হবে। তার সঙ্গে যদি আপনার কাছে নিজের জমি না থাকে, তাহলে তো জমির ভাড়া এবং শ্রমিকের মাইনে আছেই। তাই যদি আপনি কড়কনাথ চিকেনের ব্যবসা একটু বড় মাপে শুরু করতে চান, তাহলে আপনার আর্থিক অবস্থা ভালো হতে হবে, নতুবা কোনও সরকারি কিংবা বেসরকারি ব্যাঙ্ক এবং সংস্থা থেকে আপনাকে লোন নিতে হবে।

এই মুহূর্তে ভারতের বেশ কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক রয়েছে, যারা পোলট্রি ফার্মিং করার জন্য সেই ব্যক্তিকে লোন প্রদান করে থাকে। খুবই কম সুদে আপনি সেই লোন গ্রহণ করতে পারেন। ভারত সরকারের তরফ থেকে এই মুহূর্তে পোলট্রি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড স্কিম (PVCF) শুরু করা হয়েছে, যা আপনাকে পোলট্রি ফার্ম তৈরি করার জন্য কিছু বিশেষ সাবসিডি দিতে পারে।

মার্কেটিং
তবে পোলট্রি ফার্মের ব্যবসায় লাভ করার জন্য সবথেকে যেটা বেশি প্রয়োজনীয়, সেটা হল মার্কেটিং। আপনাকে নিজের মার্কেটিংয়ের দিকটা যথেষ্ট শক্তিশালী রাখতে হবে এবং নিজের ব্যবসাকে অবশ্যই অনলাইনে নিয়ে যেতে হবে। নিজের ব্যবসার প্রোমোশনের জন্য আপনাকে বেশ কিছু পরিমাণ টাকা খরচ করতে হতে পারে। শুধুমাত্র অনলাইন মার্কেটিং নয়, ফেসবুক এবং ই-মেল মার্কেটিং ছাড়াও, গ্রাউন্ড মার্কেটিং আপনার প্রয়োজন হবে।

তাই যদি আপনি আপনার ব্যবসার জন্য মার্কেটিং করতে চান, তাহলে অবশ্যই আগে মার্কেটিং নিয়ে কিছু রিসার্চ করে নিন। রিসার্চের মাধ্যমে আপনি আপনার মুরগির ব্যবসার জন্য সঠিক প্রোমোশন এবং সঠিক টার্গেট অডিয়েন্স নিয়ে আসার রাস্তা পেয়ে যাবেন।

মার্কেটিং স্ট্র‍্যাটেজি
মুরগির ব্যবসা এমন একটি ব্যবসা যেখানে আপনাকে যে টিভি চ্যানেলে কিংবা প্রিন্ট মিডিয়ার মত দামি জায়গায় বিজ্ঞাপন দিতে হবে সেরকমটা নয়। আপনি নিজে গিয়েও চিকেন ডিলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন এবং তাদের সাথে যোগাযোগ করে কথা বলে আপনার প্রোডাক্ট এর ব্যাপারে জানিয়ে তাদের সঙ্গে চুক্তি করতে পারেন। এছাড়াও আপনার কাছে যদি রেডিমেড মাংস সাপ্লাই করার মত চেইন থাকে তাহলে স্থানীয় বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় গিয়েও তাদের সাথে কথা বলতে পারেন এবং তারা যদি আপনার থেকে মাংস এবং ডিম কিনতে ইচ্ছুক থাকে, তাহলে তাদেরকে বিক্রি করতে পারেন। তবে হ্যাঁ যদি আপনি আপনার ব্যবসার জন্য ফান্ড রেইজ করতে চান, তাহলে কিন্তু অবশ্যই আপনাকে অনলাইন মার্কেটিং করতে হবে। পাশাপাশি আপনাকে কিছু গ্রাউন্ড মার্কেটিং এর রাস্তা খুঁজতে হবে।

অনলাইন মার্কেটিং
তবে অনলাইন মার্কেটিং করার আগে আপনাকে অবশ্যই একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে। এই ওয়েবসাইটে আপনি খুব সহজভাবে আপনার অনলাইন প্রোফাইল তৈরি করবেন। আপনি কী ধরনের মুরগি বিক্রি করছেন, আপনি মুরগির ছানা বিক্রি করেন না কি মুরগির মাংস বিক্রি করেন, সবকিছুই পরিস্কারভাবে জানান সেই ওয়েবসাইটে। আপনার কোম্পানির সঠিক লোগো ব্যবহার করুন নিজের ওয়েবসাইটে। অনলাইন গ্রাহকদের বিশ্বস্ততা বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করুন এসএসএল সার্টিফিকেট। তার সঙ্গে সঙ্গেই মেনশন করে দিন আপনার কোন প্রোডাক্টের দাম কীরকম। ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারলে ভালো, তাহলে আপনি ওই ওয়েবসাইট থেকে পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করে অনলাইনে বিক্রিও করতে পারবেন। নতুবা যদি আপনি সাধারণ ওয়েবসাইট তৈরি করেন, তাহলে অবশ্যই আপনার প্রত্যেকটি প্রোডাক্টের নিচে আপনার যোগাযোগের নম্বর, আপনার বিক্রয়কেন্দ্র এবং আপনার ব্যবসার জায়গার কথা উল্লেখ করবেন।

এবার আসছে মার্কেটিংয়ের বিষয়। অনলাইন মার্কেটিং করার সবথেকে বেশি প্রচলিত দু'টি জায়গা রয়েছে, আপনি সোশ্যাল মিডিয়া (ফেসবুক) মার্কেটিং করে নিজের প্রোডাক্ট সেল করতে পারেন। নতুবা আপনি কোনও জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিনে মার্কেটিং করে সেখানেও নিজের প্রোডাক্ট বিক্রি করতে পারেন। ফেসবুকে অনলাইন মার্কেটিংয়ের জন্য আপনি কোনও একটি ছবি দিয়ে ক্যাম্পেইন চালাতে পারেন। ফেসবুকে আগ্রহীদের ফিডে স্পনসর্ড কন্টেন্ট হিসেবে পৌঁছে যাবে আপনার সেই বিজ্ঞাপন। সেই বিজ্ঞাপন থেকে আগ্রহীরা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে।

অন্যদিকে, যদি আপনি কোনও সার্চ ইঞ্জিনে মার্কেটিং করতে চান, তাহলে অবশ্যই গুগলকে বেছে নিন। গুগল ছাড়া যদি অন্য কোনও সার্চ ইঞ্জিনে বিক্রি করতে হয় তাহলে রয়েছে, বিং। এই দু'টি বাদ দিয়ে অন্য কোনও সার্চ ইঞ্জিনে মার্কেটিং করার পরিকল্পনা না নেওয়াই ভালো। গুগলে মার্কেটিং করতে হলে আপনাকে গুগল অ্যাওয়ার্ডের ব্যাপারে জানতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনাকে একটি সঠিক কি-ওয়ার্ড বেছে নিতে হবে এবং কিছু অনলাইন টুলের মাধ্যমে দেখে নিতে হবে সেই কি-ওয়ার্ডের সার্চ ভলিউম কতটা এবং কি-ওয়ার্ড ডিফিকাল্টি কীরকম (পেইড ডিফিকাল্টি)। এবারে সেই কি-ওয়ার্ড এর ওপরে আপনি মার্কেটিং করতে পারেন। সেক্ষেত্রে যদি কেউ সেই কি-ওয়ার্ড সার্চ করে, তাহলে আপনার ওয়েবসাইট এবং বিজ্ঞাপন সবার ওপরে চলে আসবে। সেখান থেকে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে আগ্রহীরা।

কতদিন পরে বিক্রি করতে পারবেন?
পোলট্রি ফার্মে যদি আপনি কড়কনাথ মুরগি চাষ করেন, তাহলে আপনাকে কিন্তু একটু সময় দিতে হবে এই ব্যবসার জন্য। কড়কনাথ চিকেন সম্পূর্ণরূপে খাওয়ার জন্য তৈরি হতে ন্যূনতম ১১৫ দিন সময় লাগে। ১.৭৫ কিলোগ্রাম পর্যন্ত ওজন হতে পারে প্রত্যেকটি কড়কনাথ মুরগির। কিন্তু এই মুরগির দেহ থেকে মাংস বের করা খুব একটা সহজ কাজ নয়।

মুরগি ভালো করে কেটে-ধুয়ে পরিষ্কার করে তারপরে আপনাকে এই মাংস স্টোর করতে হবে। তার জন্য আপনি ব্যবহার করতে পারেন ফ্রিজার এবং ব্যবহার করতে পারেন কিছু উন্নতমানের প্যাকেজিং ব্যবস্থা। এছাড়া যদি আপনি ফ্রোজেন মাংস বিক্রি করতে চান তাহলে সেইমতো আপনাকে স্টোরেজ ব্যবস্থা রাখতে হবে। তবে জানিয়ে রাখা ভালো, খুব বেশি দিন পর্যন্ত কড়কনাথ মুরগির মাংস ফ্রিজে স্টোর করা যায় না। একটা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত যদি এই মাংস ফ্রিজে থাকে, তাহলে সেই মাংসের স্বাদ বদলে যেতে পারে। তাই আপনাকে প্যাকেজিংয়ের দিকে নজর দিতে হবে এবং পাশাপাশি মার্কেটিংয়ের দিকেও যথেষ্ট নজর দিতে হবে। আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যেন ব্যবসা শুরুর ৪ মাসের মধ্যে আপনার ব্যবসায় যথেষ্ট পরিমাণ গ্রাহক থাকে।

রেজিস্ট্রেশন প্রসেস
কড়কনাথ চিকেনের পোলট্রি ফার্ম তৈরি করার আগে আপনাকে অবশ্যই আপনার পোলট্রি ফার্ম রেজিস্টার করতে হবে ভারত সরকারের ক্ষুদ্র, এবং মাঝারি শিল্প দপ্তরের অধীনে। আপনার পোলট্রি ফার্ম রেজিস্টার হয়ে গেলে আপনার কাছে ভারত সরকারের তরফ থেকে চলে আসবে একটি উদ্যোগ আধার কার্ড এবং এই কার্ডের মাধ্যমে আপনি ভারত সরকারের একাধিক প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারবেন। এছাড়াও ব্যাঙ্ক এবং অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা থেকে যদি আপনি ঋণ গ্রহণ করেন তাহলে ঋণের ক্ষেত্রেও কিছু সুবিধা আপনি পাবেন। উদ্যোগ আধার কার্ড অবশ্যই গ্রহণ করবেন আপনার পোলট্রি ফার্ম ব্যবসার জন্য। এটি আপনার ব্যবসার বিশ্বস্ততাও অনেকাংশে বৃদ্ধি করবে।

কত টাকা লাভ হবে?

কড়কনাথ মুরগি পালন করার জন্য কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্র থেকে যদি আপনি ছোট মুরগি ক্রয় করেন, এবং সেই হিসেবে কড়কনাথ মুরগি পালন করেন তাহলে আপনার লাভের পরিমাণ হবে বেশ ভালোই। ৭০ কিংবা ১০০ টাকা দিয়ে আপনি একটি মুরগির বাচ্চা কিনতে পারবেন। আর সেই মুরগি বড় হলে বাজারে একেকটি কড়কনাথ মুরগির দাম হবে প্রায় ৩০০০-৪০০০ টাকা। মাংসের দাম মোটামুটি ৫০০ থেকে ৭০০ কিংবা কোনও কোনও জায়গায় ৮০০ টাকা হতে পারে। তবে এই মাংসের চাহিদা শীতকালে বৃদ্ধি পায়। এই কারণে সেই সময় দাম পৌঁছে যায় ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায়। ধরে নিন, আপনি সরকারের কাছ থেকে ১০০০টি মুরগি ছানা ৫৩,০০০ টাকায় কিনে নিয়ে এসেছেন। একেকটি মুরগি থেকে গড়ে আপনি ৩ কিলোগ্রাম মাংস পেয়ে যাবেন। এই হিসেব অনুযায়ী যদি আপনি শুধুমাত্র শীতকালে ভালোভাবে ব্যবসা করেন, তাহলে ৩৫ লক্ষ টাকার বেশি আয় করতে পারবেন খুব সহজেই।

 

More Articles