চোখ ঢেকে থাক সানগ্লাসে
সানগ্লাস বা রোদ চশমা, জিনিসটির নাম শুনলেই সবার প্রথমে মনে পড়ে গ্লামার ওয়াল্ডে থাকা মানুষগুলোর কথাই। দিন হোক কিংবা রাত, এয়ারপোর্টে যেসব ছোট কিংবা বড়ো পর্দার তারকাদের দেখা মেলে, তাঁদের সবার মধ্যে একটি জিনিস একই থাকে, সেটি হল সানগ্লাস বা এই রোদচশমা। তারকা ছাড়াও ছোট, বড়ো কিংবা মাঝারি, সব বয়েসের মধ্যেই সমানভাবে জনপ্রিয় রোদচশমার ব্যবহার। কিন্তু আদৌ কি সানগ্লাসের দরকার রয়েছে? বা থাকলেও কেন? কেনই বা এতো জনপ্রিয় এই রোদচশমা? চলুন আজকে জেনে নেওয়া যাক সানগ্লাস সম্পর্কে সমস্ত খুঁটিনাটি বিষয়গুলি।
প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক, সানগ্লাসের বাজারে আসার গোড়ার কথা। সানগ্লাসের গোড়ার কথা জানতে হলে আমাদের বেশ কয়েকশো বছর পিছিয়ে যেতে হবে। শোনা যায়, ১৩০০ সালে একটি বিশেষ কারণে চৈনিক নির্মাতারা ধোঁয়াচ্ছন্ন লেন্সের চশমা তৈরি করেন। সেখান থেকেই সানগ্লাসের সূত্রপাত হয়, বলা চলে। তবে ১৩০০ সালের নির্মিত সেই চশমার উদ্দেশ্য কিন্তু চোখের আরাম বা রোদ প্রতিরোধ করা ছিল না, এই চশমা তৈরি করা হয়েছিল আদালতের বিচারকের চোখের দৃষ্টিকে আড়াল করার উদ্দেশ্যে নিয়ে। এরপর চলে আসা যাক, ১৭৫২ সালে। ব্রিটিশ একজন চিকিৎসক জেমস্ আইসকচ ( James Ayscough) বিভিন্ন রঙের কাঁচের ব্যবহার শুরু করে আধুনিকভাবে পুনরায় সানগ্লাসের সূচনা করলেন। এরপর অষ্টাদশ শতাব্দীর কুড়ির দশকে এই সানগ্লাস জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। এই সানগ্লাস তখন মূলত বিখ্যাত জনপ্রিয় উপকরণ হয়ে উঠেছিল চিত্রতারকাদের মধ্যে। কিন্তু এইসময় সানগ্লাসের দাম ছিল গগনচুম্বী, সমাজের উচ্চবিত্ত মানুষেরাই এই রোদচশমা ব্যবহার করতে সক্ষম ছিলেন। ১৯২৯ সালে এই দশার পরিবর্তন হয় এবং ক্রমে বাজারে আসে কম দামের হালকা প্লাস্টিকের সানগ্লাস, যা মজবুতও ছিল। ১৯৩৬ সালে আবিষ্কার হয় পোলারয়েড লেন্সের সানগ্লাস। এডউইন এইচ ল্যান্স সানগ্লাসের প্রচলন ঘটান।
সানগ্লাস ব্যবহারে উপকার :
-
অনেকেই মনে করে থাকেন হয়তো কেবলমাত্র ফ্যাশনের কারণেই সানগ্লাস ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বিষয়টি একেবারেই ভুল। সানগ্লাস ব্যবহার করলে বিভিন্নভাবে আপনার চোখ সুরক্ষা পায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক উপকারিতার তালিকাটি।
-
সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে সুরক্ষা : সূর্যের আল্ট্রা ভাওলেট রশ্মির থেকে চোখকে বাঁচানো সানগ্লাসের প্রধান কাজের মধ্যে একটা। এই ক্ষতিকর রশ্মির কারণে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখের ছানি, ক্যানসার কিংবা বার্ধক্যজনিত ম্যাকুলার ক্ষয় অবধি হয়ে থাকে। ভালো সানগ্লাস সূর্যের এই রশ্মিকে পুরোদমেই প্রতিহত করতে সক্ষম হয়। এছাড়াও সানগ্লাস ব্যবহার করলে চোখের তলার চামড়া কুঁচকে গিয়ে যে বয়সের ছাপ পড়ে, তা হয় না।
-
চোখ এবং মাথাব্যাথা থেকে মুক্তি : Pupil সংকুচিত এবং প্রসারিত হওয়ার মাধ্যমেই চোখে আলো প্রবেশ করে থাকে। বেশি আলোতে pupil সংকুচিত হয়ে যায় এবং চোখেরও সংকোচন ঘটে। এর ফলেই শুরু হয় চোখে এবং মাথায় ব্যাথা। সানগ্লাসের রঙিণ কাঁচের জন্য চোখে বেশি আলো প্রবেশ করতে পারে না ফলে pupil এর সংকোচন ঘটে না। তাই চোখ এবং মাথা উভয়েই আরাম পায়।
-
দূষণ থেকে সুরক্ষা : সানগ্লাস বাইরের ধূলো বালির থেকে চোখকে রক্ষা করে। চোখে মাত্রাতিরিক্ত হাওয়া লাগার ফলে কর্ণিয়া শুকিয়ে যায়, ফলে চোখে একধরনের অস্বস্তি শুরু হয়। বিশেষ করে যাঁরা কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করেন, তাদের সানগ্লাস ব্যবহার করা বিশেষ প্রয়োজনীয়। এছাড়াও বরফের থেকে প্রতিফলিত চকচকে আলো বা গ্লেয়ার থেকে চোখকে রক্ষা করে সানগ্লাস। এই গ্লেয়ারের আলোতে চোখ ঝাপসা হয়ে যায় এবং মাথা ব্যাথা শুরু হয়। এইক্ষেত্রে পোলারাইজড সানগ্লাস ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
তবে সানগ্লাস কেনার আগে কিছু বিষয় অবশ্যই নজর রাখতে হবে, নাহলে উপকারের চেয়ে অপকারের মাত্রা বেশি হয়ে যেতে পারে। আমরা অনেকেই পথচলতি দোকানে নিজের পছন্দের সানগ্লাসটি দেখেই চট করে সেটি কিনে ফেলি, কমদামী রোদচশমার লেন্সে অনেকসময় পাওয়ার থাকে, যা চোখের পক্ষে পরবর্তী সময়ে ক্ষতিকর হতে পারে। তাই সানগ্লাস সবসময় কোন ভালো চশমার দোকান থেকেই ক্রয় করা উচিত। আবার কাঁচের লেন্সের অপেক্ষা প্লাস্টিকের লেন্স হালকা, মজবুত হয় । তাই অনেকেই প্লাস্টিকের লেন্সটিকেই অধিক আরামের কারণে বেঁছে নেন, কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে আদৌ লেন্সটি ১০০% আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি প্রতিহত করে সক্ষম কিনা। যদি তা না হয়, তবে সেই সানগ্লাসের কোন মূল্যই নেই।
আবার সানগ্লাসের লেন্সের রঙও অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে। এই বিষয়টি হয়তো অনেকেরই অজানা।
-
হলুদ : এই রঙের লেন্সে যেকোন দৃশ্যবস্তুর আসল রঙ অতি স্পষ্টভাবে দেখা যায়। তবে বস্তুর উজ্জ্বলতা কিছু বৃদ্ধি পায়।
-
ধূসর এবং সবুজ : এই রঙের লেন্সে দৃশ্যবস্তুর স্বাভাবিক রঙটিই ফুটে উঠতে দেখা যায়।
-
বাদামি এবং ফিরোজা : দৃশ্যবস্তুর রঙের কনট্রাস্ট কিছুটা বাড়িয়ে দেয়।
-
অ্যাম্বার : এই রঙের লেন্স অনেক দূরের দৃশ্যবস্তুকে আরও স্পষ্টভাবে দেখতে সহায়তা করে।
তথ্য সুত্র:
-
https://bit.ly/3ymwPNn
-
https://bit.ly/3GFv0hq
-
https://bit.ly/3pYg9bs