অসম্ভব যন্ত্রণা হচ্ছে পেটে, ফ্যাটি লিভার নয় তো! জানেন কোন কোন খাবার উপযুক্ত এই রোগে?

Fatty Liver : কোন কোন খাবার পাতে রাখলে ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত রোগীরা ভালো থাকবেন? কী বলছে সমীক্ষা?

ফ্যাটি লিভার, নাম শুনেই আঁচ করা যাচ্ছে লিভারের সঙ্গে ফ্যাট অর্থাৎ মেদের সম্পর্ক এখানে চূড়ান্ত। বর্তমান চিকিৎসা পরিভাষায় খুবই পরিচিত রোগ এটি। ঘরে ঘরে কমবয়সীদের মধ্যে ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় আক্রান্তদের সংখ্যা দিনদিন ঊর্ধ্বমুখী। অনিয়মিত জীবনযাপন এবং ওজন বৃদ্ধি, এই দুয়ের কারণে রোজই একটু একটু করে মেদ জমছে লিভারে। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, প্রত্যেকের লিভারে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ চর্বি থাকে। তা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তবে এই চর্বির পরিমাণ যদি বেড়ে যেতে থাকে, তা হলেই মুশকিল। তখনই দেখা দেয় নানাবিধ সমস্যা। আর এই সমস্যার নামই ফ্যাটি লিভার।

ফ্যাটি লিভার দু’রকম — অ্যালকোহলিক এবং নন-অ্যালকোহলিক। মদ্যপান করার ফলে লিভারে মেদ জমলে তা অ্যালকোহলিক ফ্যাট। অন্যদিকে অতিরিক্ত তেল-মশলা অথবা ফ্যাট জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে লিভারে বাড়তি মেদ জমলে তা ‘নন-অ্যালকোহলিক’ ফ্যাটি লিভার। এই ধরনের ফ্যাটি লিভারের ক্ষেত্রে অনেক সময় বংশগত প্রভাবও একটা বড় কারণ হতে পারে। তবে যে কারণেই ফ্যাটি লিভারের সমস্যা হোক না কেন, সঠিক সময়ে সতর্ক না হলে এর জেরে লিভার সিরোসিসও হয়ে যেতে পারে। এতে লিভার নিজের কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং আপনাকে মৃত্যুর দোরগোড়ায় ঠেলে দিতে পারে। তাই চিকিৎসকদের মতে ফ্যাটি লিভারের সমস্যার হাত থেকে বাঁচতে একদিকে যেমন মদ্যপান বন্ধ করা জরুরী, পাশাপাশি তেমনই রোজকার খাবারের দিকেও যথেষ্ট নজর প্রয়োজন। অতিরিক্ত তেল ঝাল মশলা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতেই পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। আসুন এক নজরে জেনে নেওয়া যাক, এই নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য উপযুক্ত খাদ্য তালিকা কেমন হতে পারে।

আরও পড়ুন - রাতের পর রাত ঘুম নেই, জানেন আপনার সামান্য গাফিলতিই ডেকে আনতে পারে যে মারণ ঝুঁকি

ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত রোগীর শরীর ইনসুলিন তৈরি করে তা সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারে না। ফলে রক্তে গ্লুকোজ জমা হতে থাকে এবং লিভার সেটিকে চর্বিতে পরিণত করে। তাই প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে, ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের লিভারের চর্বি দূর করতে চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে স্বাস্থ্যকর চর্বি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি খাদ্যতালিকা প্রস্তুত করতে হবে।

১. সুস্থ শরীরের জন্য সবুজ শাকসবজি কোনও বিকল্প হয় না। ফাইবার, মিনারেলস, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের মতো উপকারী পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার পেতে রোজ পাতে রাখুন কিছু সবুজ শাক সবজি, এতে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা সহজেই দূর হবে। ভাত অথবা ময়দার পরিবর্তে সেই জায়গায় বেশি পরিমাণে শাকসবজি খেয়ে পেট ভরাতে পারলে তা ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে খুবই উপকারী। সবজির মধ্যে সবুজ ব্রকলি ফ্যাটি লিভারের ক্ষেত্রে খুবই উপযোগী।

২. অন্যদিকে শরীরে প্রোটিনের মাত্রা বজায় রাখতে মাছ একটু খুবই প্রয়োজনীয় উপাদান। তালিকায় ছোট মাছ রাখতে পারেন তবে অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত মাছ এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয়। অন্যদিকে শরীরের প্রোটিনের মাত্রা সঠিক রাখতে ডিমের সাদা অংশ এবং মুরগির মাংস খুবই জরুরী উপাদান। তাই খাদ্য তালিকায় এই দুটিকেও যোগ করতে পারেন।

৪. এছাড়াও কিছু সামুদ্রিক খাবার, ফল, আস্ত শস্যদানা, বাদাম, জলপাই তেল, অ্যাভোকাডো ইত্যাদি খাবার খাদ্যতালিকায় যুক্ত করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল-কে কমাতে পারে ওমেগা থ্রি। এইসব খাবারে থাকে পরিমিত ওমেগা থ্রি।

৫. ভিটামিন ডি ফ্যাটি লিভারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই পরিমিত ভিটামিন ডি পেতে নিয়মিত রোদ পোহানোর পাশাপাশি কিছু দুগ্ধজাত খাবার নির্দিষ্ট পরিমাণে তালিকায় রাখতে পারেন।

৬. এছাড়াও চিনি ছাড়া কফি খেতে পারেন দিনে অন্তত এক থেকে দুবার।

৭. রসুন ফ্যাটি লিভার রোগীদের জন্যও ভীষণই উপকারী। ২০১৬ সালের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, ফ্যাটি লিভার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে রসুন। এমনকী এই মশলা ওজন কমাতেও খুবই সহায়তা করে বলে নন অ্যালকোহোলিক ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি পেতে রসুন ভীষণ উপকারী।

More Articles