ইমরানই প্রথম নন, যেভাবে বারবার প্রাণঘাতী হামলার শিকার হয়েছেন প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রীরা

Imran Khan: কেন গুলিবিদ্ধ ইমরান খান?

অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলেন ইমরান খান। পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে চলল গুলি! আহত ইমরানকে ইতিমধ্যেই ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে। পায়ে একাধিক গুলি লেগেছে প্রাক্তন ক্রিকেটারের। পাকিস্তান সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, পাকিস্তানের ওয়াজিরবাদের (Wazirabad) জাফর আলি চকের কাছে এই ঘটনা ঘটে। একটি কনটেনার থেকে পদযাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন ইমরান খান। সেখানেই ইমরানকে লক্ষ্য করে আচমকা গুলি চালায় অজ্ঞাতপরিচয় এক আততায়ী। ইমরানের নিরাপত্তারক্ষীদের তৎপরতায় সঙ্গে সঙ্গে সরানো হয় তাঁকে। ইমরান খান-সহ আহত হয়েছেন তাঁর ব্যক্তিগত সহায়ক রশিদ এবং সিন্ধুপ্রদেশের প্রাক্তন গভর্নর ইমরান ইসমাইল-সহ একাধিক।

এই ঘটনার পরেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পাকিস্তানজুড়ে। শোরগোল পড়েছে বিশ্বে। ঘটনায় তড়িঘড়ি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে পাকিস্তান সরকার। কিন্তু ইমরানকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনায় উঠছে প্রশ্ন। অনেকেই বলছেন, ইমরান খান অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলেন ঠিকই, কিন্তু ওই গুলি পায়ে না লেগে যদি প্রাণঘাতী হত! তখন? প্রয়াত ইমরানকে নিয়েই শুরু হত আলোচনা?

যদিও পাকিস্তানে এই ঘটনা প্রথম নয়। একের পর এক কাণ্ডে বারবার আক্রান্ত হয়েছেন রাজনেতারা। কেউ বিদায় নিয়েছেন চিরতরে। কেউ বেঁচেছেন একটুর জন্য। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বা রাজীব গান্ধীর মতো অকালমৃত্যুর মুখে পতিত হয়েছেন প্রাতিষ্ঠানিক প্রধানরা। কী বলছে এই হামলা বা খুনের ইতিহাস? কেন ইমরান খানের (Imran Khan) ওপর হামলায় ফের জল্পনায় এই প্রসঙ্গ?

আরও পড়ুন: পাকিস্তান মানেই দুর্নীতি! ইমরান খানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ যে প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে

১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই এই হামলার ইতিহাস বারবার কুরে কুরে খেয়েছে পাকিস্তানকে। বিশ্বের দরবারে মুখ পুড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশের।

১৯৫১। ১৬ অক্টোবর। খুন করা হল লিয়াকত আলি খানকে (Liyaqat Ali Khan)। পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রীকে খুন হতে হয় প্রকাশ্যে। তাঁকে লক্ষ‍্য করে গুলি চালানো যায়। বুকে লাগে আততায়ী সৈয়দ আকবরের ছোড়া গুলি। রাওয়ালপিন্ডির কোম্পানি বাগে খুন করা হয় তাঁকে। লিয়াকতের মৃত্যুর পর অশান্ত হয় পাকিস্তান (Pakistan)। যে এলাকায় খুন হন তিনি, সেই অঞ্চলের নাম পরিবর্তন করে পরে রাখা হয় লিয়াকত বাগ।

১৯৫৮ সালের মে মাস। মাত্র ৭ বছর পর আবার পাকিস্তান দেখল বড় হত্যার ঘটনা। খুন হলেন 'সীমান্ত গান্ধী' খান আব্দুল গফ্ফার খানের ভাই খান আব্দুল জব্বার খান (Khan Abdul Jabbar Khan)। দাদার পরে পাকিস্তান রাজনীতিতে যিনি ছিলেন অন্যতম মুখ। পশ্চিম পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রীকে প্রাণ হারাতে হয় অকালেই। আলতা মহম্মদ নামে এক পরিচিত ব্যক্তির হাতে, বাড়িতেই খুন হন তিনি।

৪ এপ্রিল, ১৯৭৬। ফাঁসির দড়িতে ঝোলানো হয় জুলফিকার আলী ভুট্টোকে (Zulfikar Ali Bhutto) । পাকিস্তানের জনপ্রিয় নেতা, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এবং দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিল সে দেশেরই সেনা সরকার। এটি প্রকাশ্যে খুন না বলা হলেও এটিও যে রাজনৈতিক হত্যা, রাজনীতির কারণেই মেরে ফেলা হয় তাঁকে, সেই বিষয়েই সরব হয়েছিল বিশ্ব। জেনারেল জিয়াউল হকের নেতৃত্বে পঞ্জাবের রাওয়ালপিন্ডিতে এই ঘটনা ঘটে।

যদিও জুলফিকারের মৃত্যুর প্রায় ৯ বছর পর বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান তৎকালীন সেনা সরকারের প্রধান জিয়াউল হক (Ziaul Haque)। সেই ঘটনায় খুনের তত্ত্ব খাঁড়া হয় ফের। ফের যে বিমান দুর্ঘটনার তত্ত্ব, কয়েকদিন আগে থেকেই উঠে এসেছে তেহরিক-ই-ইনসাফের (Tehrik e Insaf) নেতা, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে মেরে ফেলার চক্রান্তের অভিযোগে। তার মধ্যেই ঘটল ইমরানের উপর হামলার ঘটনা।

২০ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬ সাল। খুন হওয়া জুলফিকার আলি ভুট্টোর পুত্রও 'খুন' হলেন এবার। পাকিস্তান পিপলস পার্টির (Pakistan Peoples Party) নেতা মুর্তাজা ভুট্টো-সহ (Murtaza Bhutto) ওই দলের ৬ নেতাকে গুলি করে মারে পুলিশ। করাচির ক্লিফটন এলাকায় এনকাউন্টারে মৃত্যু হয় মুর্তাজার। যদিও চক্রান্ত করে খুন করার দাবি ওঠে সে-বারও।

২৭ ডিসেম্বর, ২০০৭। বিশ্বে বেনজির খুনের ঘটনার উদাহরণ তৈরি করে খুন হন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো (Benazir Bhutto)। দেশের দু'বারের প্রধানমন্ত্রীকে, খুন হওয়া আর এক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুস্থলেই মেরে ফেলা হয়। রাওয়ালপিন্ডির (Rawalpindi) লিয়াকত বাগের পদযাত্রায় আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে রাজীব গান্ধী (Rajiv Gandhi) হত্যার কায়দায় মারা হয় বেনজিরকে। রাজনৈতিক কারণে চিরবিদায় নিতে হয় ভুট্টো পরিবারের আর এক সদস্যকে। প্রশ্ন ওঠে বিস্তর। বেনজিরের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত থেকে শুরু করে দেহের সৎকারেও বাধা দেওয়া হয়। খুন হওয়ার পরেও বিতর্কে জড়াতে হয় বেনজিরকে। যিনি বহুদিন দেশের বাইরে ছিলেন রাজনৈতিক কারণে।

এই ঘটনায় অভিযোগ ওঠে জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদা, পাকিস্তানের তেহরিক-ই-তালিবানের (Tehrik e Taliban) বিরুদ্ধে। ওই একই হামলায় মৃত্যু হয় কমপক্ষে ২৪ জনের। বেনজির ভুট্টোর মৃত্যুর পরে পাকিস্তান সরকারের ভূমিকা এবং দেশের অভ্যন্তরে জঙ্গি কার্যকলাপ নিয়ে বিশ্বের সমালোচনার মুখোমুখি হয় পাকিস্তান সরকার। নিন্দায় সরব হয় ভারতও।

২০১১ সালের জানুয়ারি মাস। খুন হন সলমন তাসির (Salman Taseer) । পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা, একদা পাকিস্তানের জনপ্রিয় মুখ, পঞ্জাবের গভর্নর (Punjab Governor) হিসেবে কাজ করা তাসিরকে খুন হতে হয় তাঁর নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষী মালিক মমতাজ কাদরির হাতে। ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী (Indira Gandhi) হত্যার কায়দায় গুলি করে খুন করা হয় তাঁকে। পাকিস্তানের ইসলামাবাদে রক্তাক্ত হন তাসির। প্রতিপত্তিশালী ব্যবসায়ী ছিলেন সলমন। কিন্তু এই খুনের কারণ হিসেবে উঠে আসে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার তত্ত্ব।

২০১১ এর ২ মার্চ। ইসলামাবাদে খুন হন পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা, দেশের প্রাক্তন সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী শাহবাজ ভাট্টি (Shahbaz Bhatti) । আততায়ীদের হাতে খুন হন এই ক্যাথলিক নেতা। সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন নিয়ে উঠল প্রশ্ন। ফের সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয় পাকিস্তান সরকারকে।

More Articles