বাংলায় সিপিএম তৃণমূল জোট সম্ভব? INDIA যা ঠিক করল...
INDIA Alliance : বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রীর মুখ হবেন কে? যেখানে নীতিশ কুমারও রয়েছেন আবার রাহুল গান্ধীও, যেখানে শরদ পাওয়ার আছেন আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও!
সাধারণত, যত মত ততোধিক পথ হওয়াটাই স্বাভাবিক। এই ভিন্ন ভিন্ন মত যদি বলে একই গন্তব্যে যাবে, তাহলে ভিন্ন ভিন্ন পথকে গিয়ে মিলতে হবে নির্দিষ্ট বিন্দুতে। পথ যদি বা মেলে, মত মেলে না, মত যদি বা মেলে, কৌশল মেলে না। এত ভিন্ন আচরণ, ভিন্ন কৌশল নিয়ে তবু একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করা গিয়েছে। মোদি হঠাও। মোদিকে ঠেকাতে, বিজেপিকে সরাতে তাই দেশের বিজেপি বিরোধী দলগুলি 'ইন্ডিয়া' জোট গড়েছে। এমন এমন দল এই জোটে আছে, যারা আঞ্চলিক স্তরে আবার একে অন্যের ঘোর বিরোধী! দেশের স্বার্থে কতটা একসঙ্গে লড়তে পারবে তারা? বিরোধী জোট বলছে 'যতদূর সম্ভব' একসঙ্গেই লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তারা। লড়বে একটাই বাণী সামনে রেখে, 'জুড়েগা ভারত, জিতেগা ভারত'। ইন্ডিয়া জোট ১৩ সদস্যের একটি সমন্বয় কমিটি ঘোষণা করেছে যা 'সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা' হিসাবে কাজ করবে। কিন্তু মত মিলবে তো?
কংগ্রেসের কে সি ভেনুগোপাল, এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন, আরজেডির তেজস্বী যাদব, তৃণমূলের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, শিবসেনার সঞ্জয় রাউত, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, আম আদমি পার্টির রাঘব চাড্ডা, সমাজবাদী পার্টির জাভেদ আলি খান, জেডিইউ-এর লাল্লন সিং, সিপিআই নেতা ডি রাজা, ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ওমর আবদুল্লাহ এবং পিডিপির মেহবুবা মুফতি মূল প্যানেলের অংশ। জোট বলছে, আসন ভাগাভাগির বিষয়টা নিয়ে অবিলম্বে কাজ শুরু হবে এবং তা হবে সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গিতেই।
আরও পড়ুন- এনডিএ বনাম ইন্ডিয়া, দেশের নামে বিজেপির আসন টলাতে পারবে কি বিরোধী মহাজোট?
ইন্ডিয়ার বিরোধী এনডিএ বলছে, এই যত মত কোনওকালেই এক পথে মিলবে না। তাই ঝামেলা শুরু হবে আসন ভাগাভাগি থেকেই। যেহেতু এই জোটে এমন দল আছে যারা রাজ্যে তীব্র বিরোধী তাই রাজ্যে আসন ভাগাভাগি থেকেই শুরু হবে ঝামেলা। হচ্ছেও খানিক তাই! আসন সমঝোতা নিয়ে ইতিমধ্যেই মতানৈক্য ঘটেছে বাম ও তৃণমূলের মধ্যে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমীকরণ একেবারেই পছন্দ হয়নি সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এবং সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজার।
তৃণমূলের দাবি ছিল, লোকসভা ভোটে আসন সমঝোতা কী হবে তা কেন্দ্রীয় স্তরেী ঠিক হোক। সীতারাম ইয়েচুরির বক্তব্য, প্রতিটি রাজ্যে সমস্যা ও পরিস্থিতি ভিন্ন। কেন্দ্রীয় স্তরে বসে আঞ্চলিক আসনের ভাগাভাগি কখনই করা যায় না। কাজটি হতে হবে রাজ্য স্তরেই। সীতারামের মতেই অবশ্য এগিয়েছে ইন্ডিয়ার পরিকল্পনা। ইন্ডিয়া জোট ঠিক করেছে ‘রাজ্যওয়াড়ি’ আসন ভাগাভাগিই হবে। নিজের রাজ্যে গিয়ে অন্যের ভোট ভাঙানোর খেলার বদলে বিজেপি-বিরোধী ভোট এক জায়গায় আনার চেষ্টা করতে হবে।
আরও পড়ুন- এক দেশ, এক নির্বাচন! সারা দেশে একসঙ্গে নির্বাচন কেন চাইছে বিজেপি?
ইন্ডিয়া এমনটা ঠিক করেছে বটে তবে ইন্ডিয়ার জোটের বৈঠক শেষে যে সাংবাদিক সম্মেলন হয় সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত ছিলেন না। মতানৈক্য বা তাঁদের মতকে গুরুত্ব না দেওয়ার জন্যই কি? পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন ২ অক্টোবরের মধ্যে জোটের ইস্তেহার প্রকাশ করতেই হবে। হাতে খুব বেশি সময়ও নেই। বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ আরও চারটি পৃথক কমিটিও ঘোষণা করেছে। সংবাদমাধ্যম, সামাজিক মাধ্যম, গবেষণা ও প্রচার সংক্রান্ত কমিটিতে রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিরা রয়েছেন। এই নিয়ে তিনখানা বৈঠক করল ইন্ডিয়া। জোটের নেতারা এর আগে এই বছরের শুরুতে পটনা এবং বেঙ্গালুরুতে বৈঠক করেছিলেন। তবে এখনও মুখপাত্র নিয়োগ এবং জোটের লোগো গড়া বাকি।
কংগ্রেস এবং সিপিএম আগেই জানিয়েছিল বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে জোট হবে না। তাহলে ইন্ডিয়ার স্বপ্ন বাস্তব হবে কীভাবে? রাজনীতিতে সকলই সম্ভব। কোনও এক আশ্চর্য সকালে যদি বাম তৃণমূল জোট হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই হয়, অবাক হওয়ার নেই। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী অবশ্য বলছেন, বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে বিজেপির পক্ষে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হওয়া অসম্ভব। ভারতীয় জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করছে তাঁদের ইন্ডিয়া জোট। এই দলগুলি একত্রিত হলে বিজেপির পক্ষে নির্বাচনে জেতা অসম্ভব। তবে বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রীর মুখ হবেন কে? যেখানে নীতিশ কুমারও রয়েছেন আবার রাহুল গান্ধীও, যেখানে শরদ পাওয়ার আছেন আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেখানে আসন ভাগাভাগিতে সমঝোতা যদি বা হলো, একমত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী ঠিক করা যাবে কি? এনডিএ-র মোদির বিরুদ্ধে সত্যিই একজোট হবে ভিন্ন মতের পথেরা?