ভোজ্য তেল কিনতে নাভিশ্বাস উঠবে প্রতিটি ভারতীয়র, কারণ জানুন

আগামী ২৮ এপ্রিল থেকে বহির্বিশ্বে পাম তেল রপ্তানি বন্ধ করতে চলেছে ইন্দোনেশিয়া। সেদেশের প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো বলেছেন, তিনি নিজেই পর্যবেক্ষণ করবেন, যাতে দেশে ভোজ্য তেলের সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকে এবং এর দাম কম থাকে, এবং পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকবে। বর্তমান অবস্থায়, যেখানে ভারতের মতো দেশে ভোজ্য তেলের মূল্য মাত্রাতিরিক্তভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেখানেই ইন্দোনেশিয়ার পাম তেল রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ীদের কাছে অনেকটা বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই। ২০০৮ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে ভারতে ভোজ্য তেলের যে দাম ছিল, তার তুলনায় দাম এখন প্রায় ৪৫ থেকে ৫৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই মুহূর্তে যদি ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশ, যারা বিশ্বের সবথেকে বড় পাম তেল এবং সয়াবিন তেল রপ্তানিকারক, তারাই যদি পাম তেলের রপ্তানি বন্ধ করে দেয়, তাহলে ভারতের জন্য বিষয়টা আরও ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। 

ভারত এই মুহূর্তে প্রচুর পরিমাণে পাম তেল ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করে। তাই ভারতের জন্য এই সিদ্ধান্ত বেশ সমস্যার। সোজা কথায়, দেশে ইতিমধ্যেই ব্যয়বহুল ভোজ্য তেল আরও ব্যয়বহুল হতে চলেছে আর কয়েকদিনের মধ্যেই। ইতিমধ্যেই, গত মার্চ মাসে ভারতে ভোজ্য তেল এবং ভোজ্য ফ্যাটের কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১৯ শতাংশ। ২০২১-'২২ অর্থবর্ষে এই কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স বৃদ্ধি পেয়েছিল ২৭.৪ শতাংশ। সলভেন্ট এক্সট্রাকটর অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট অতুল চতুর্বেদি বলছেন, যদি ইন্দোনেশিয়া এই মুহূর্তেই পাম তেল রপ্তানি বন্ধ করে, তাহলে ভোজ্য তেলের দামে খুব শীঘ্রই ১০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি লক্ষ্য করবে ভারত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইন্দোনেশিয়ার এই পদক্ষেপের পর ভারতে পাম তেলের আমদানি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলেছে, যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে মুদ্রাস্ফীতির কবলে পড়া সাধারণ মানুষের ওপর।

আমদানি-নির্ভরশীলতা 

ভারতে এই মুহূর্তে একটা বড় পরিমাণ ভোজ্য তেল আসে শুধুমাত্র আমদানির মাধ্যমেই। শুধু ইন্দোনেশিয়া নয়, অন্যান্য দেশ থেকেও ভোজ্য তেল আমদানি করে ভারত। প্রায় প্রত্যেক মাসে ভারতকে ১০.৫ লক্ষ টনের কাছাকাছি ভোজ্য তেল আমদানি করতে হয় অন্য দেশ থেকে। এর মধ্যে ৫.৫ লক্ষ মেট্রিক টন হল পাম তেল, যার সিংহভাগটাই আসত ইন্দোনেশিয়া থেকে। বাকি ৫ লক্ষ মেট্রিক টন রয়েছে সূর্যমুখী তেল এবং সয়াবিন তেল। ২০২২ অর্থবর্ষে তার আগের অর্থবর্ষের তুলনায় আমদানির পরিমাণ কম হলেও, ইমপোর্ট বিল ২০২১ অর্থবর্ষের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছিল প্রায় ৭২ শতাংশ, যা ভারতের জন্য খুব একটা ভাল সংকেত বহন করে না। 

আরও পড়ুন: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে আসলে জিতছে কি আমেরিকাই?

তবে শুধু ভারত নয়, সারা বিশ্বেই ইন্দোনেশিয়ার এই রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। বিশ্বের সবথেকে বেশি ব্যবহার হওয়া তেল হলো পাম তেল। আবিশ্ব তেল ব্যবহারের প্রায় ৪০ শতাংশ এই পাম তেল। বাকি ৩২ শতাংশ সয়াবিন তেল এবং ১৫ শতাংশ রেপসিড তেল বা ক্যানোলা অয়েল। বছরকয়েক আগে একটা সমীক্ষায় উঠে এসেছিল, বিশ্বজুড়ে মোটামুটি ৭৭ মিলিয়ন টন পাম তেল রপ্তানি হয়। ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আফ্রিকার প্রত্যেকটি দেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ইউরোপের কয়েকটি দেশে এই পাম তেল বেশ জনপ্রিয়। তবে, পাম তেল উৎপাদন এবং তার রপ্তানি- পুরোটাই এতদিন পর্যন্ত কেন্দ্রীভূত ছিল শুধুমাত্র ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ার ওপরেই। সর্বমোট ৭৭ মিলিয়ন মেট্রিক টনের মধ্যে ৪৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন পাম তেল রপ্তানি করে শুধুমাত্র ইন্দোনেশিয়া। ১৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন পাম তেল রপ্তানি হয় মালয়েশিয়া থেকে। বাকি মাত্র ৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন পাম তেল রপ্তানি করে অন্যান্য দেশগুলি। 

গত এক বছরে, ভোজ্য তেলের বীজ তৈরি করা গাছগুলিও তীব্র খরার সম্মুখীন হয়েছিল। তাই ভোজ্য তৈলবীজের চাহিদা এই মুহূর্তে আকাশছোঁয়া। পাশাপাশি, করোনাভাইরাস অতিমারীর কারণে ২০২০ এবং ২০২১-এর প্রায় অনেকটা সময় ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ায় কাজ করতে যেতে পারেননি পরিযায়ী শ্রমিকরা। তাই এই দু'টি দেশের তেলের ভাঁড়ারেও পড়েছে টান। 

অন্যান্য তেলেরও আকাল

আর্জেন্টিনা হল সমগ্র বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সয়াবিন তেল উৎপাদনকারী দেশ। কিন্তু, ২০২১ সালে আর্জেন্টিনাতেও সয়াবিনের ফলন খুব একটা ভাল হয়নি। তার ওপর, করোনাভাইরাসের কারণে এই মুহূর্তে আর্জেন্টিনার রপ্তানি কর ৩১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৩ শতাংশ করতে বাধ্য হয়েছে আর্জেন্টিনা সরকার। অন্যদিকে, কানাডা এবং ইউরোপে সবথেকে বেশি তৈরি হয় ক্যানোলা তেল। কিন্তু এই বছরে ক্যানোলা বীজের ফলনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কানাডা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। পাশাপাশি ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের ফলশ্রুতিতে সূর্যমুখী তেলের রপ্তানিও গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছে বিশ্বে। এই মুহূর্তে প্রত্যেকটি ধরনের তেলের ক্ষেত্রেই পড়েছে আকাল। 

আরও পড়ুন: কমবে দীর্ঘস্থায়ী রোগ! বিশ্বজুড়ে হু হু করে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই ডায়েট

ভোজ্য তেলের পাশাপাশি অশোধিত তেল এবং গ্যাসের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে লক্ষ্যণীয়ভাবে। এছাড়াও, গম, নিকেল, তামা, প্যালাডিয়ামের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকটাই। এই সমস্ত জিনিসের প্রধান রপ্তানিকারক দেশ ছিল রাশিয়া। এই মুহূর্তে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি চলায় রাশিয়া কোনওভাবেই বহির্বিশ্বে তাদের উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি করতে চাইছে না। তাই দাম বাড়ছে এই সমস্ত পণ্যের।। ইতিমধ্যেই, মার্চ মাসে ভারতের কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স পৌঁছে গিয়েছে ৬.৯৫ শতাংশের গন্ডিতে, যা ১৭ মাসের মধ্যে সবথেকে বেশি। তারই মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার এই তৈল রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তের পর আশঙ্কা রয়েছে, আরও খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে পারে বিশ্ব।

ভারত কীভাবে সামলাবে পরিস্থিতি?

এই মুহূর্তে ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মতো পাম তেল আমদানিকারক দেশগুলির কাছে একটাই বিকল্প খোলা রয়েছে, এবং সেটা হলো মালয়েশিয়া। এখনও পর্যন্ত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাম তেল রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে রয়েছে মালয়েশিয়া। কিন্তু, ইন্দোনেশিয়ার সমান পরিমাণ তেল তৈরি করা মালয়েশিয়ার পক্ষে কখনওই সম্ভব নয়। তাই ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি বন্ধের ফলে যে শূন্যস্থান তৈরি হয়েছে, তা এই মুহূর্তে ভরাট হওয়ার নয়। তবে এই শূন্যস্থান তৈরি হবার ফলে সবথেকে বড় সমস্যায় পড়বে ভারত। এই মুহূর্তে বিশ্বে ভারত হলো সবথেকে বড় শাকাহারী ভোজ্য তেল আমদানিকারক দেশ। ইতিমধ্যেই, ভারতে পাম তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেতে শুরু করে দিয়েছে ২৪ এপ্রিল রাত থেকেই। আগের দামের তুলনায় পাম তেল বিকোচ্ছে ৫ শতাংশ অতিরিক্ত দামে। মূল্যবৃদ্ধি শুরু হয়েছে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশেও। ভারতের সর্বমোট প্রয়োজনের ৪০ শতাংশ পাম তেল আসত ইন্দোনেশিয়া থেকে। যেখানে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে এই সংখ্যাটা ৮০ শতাংশের কাছাকাছি। পাকিস্তান এডিবল অয়েল রিফাইনারি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রশিদ জান মোহাম্মদ মিডিয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, "কোনও দেশের পক্ষে ইন্দোনেশিয়ার মতো পাম তেল তৈরি করা সম্ভব নয়। এই শূন্যস্থান কোনও দেশ ভরাট করতে পারবে না। ভোজ্য তেলের মূল্যবৃদ্ধি অবশ্যম্ভাবী।" 

এই সম্ভাবনা যে শুধুমাত্র পাকিস্তানে সীমিত থাকবে, তা কিন্তু না। ভারতীয় উপমহাদেশের প্রত্যেকটি দেশই এই একই সমস্যার সম্মুখীন হবে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতে সূর্যমুখী তেলের দাম এক ধাক্কায় অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছিল, যা গত ১৭ মাসে ভারত লক্ষ করেনি। তার মূল কারণ ছিল, কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে সূর্যমুখী তেলের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হওয়া। সূর্যমুখী তেলের পাশাপাশি সেইসময় দাম বেড়েছিল অন্যান্য ভেজিটেবিল অয়েলের। তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ভারতের প্রত্যেকটি তৈলশুদ্ধিকরণ সংস্থার ক্যাপিটাল একধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যায়। অনেক সংস্থাকে আরও বেশি খরচ করতে হয় তেল পরিশোধনের জন্য। এর জন্য আরও অতিরিক্ত টাকা চার্জ করা শুরু করে কোম্পানিগুলি। 

এই মুহূর্তে ইন্দোনেশিয়া তেল রপ্তানি বন্ধ করলে, সারা বিশ্বে তেল আমদানিকারক দেশগুলির কাছে পাম তেলের জন্য মালয়েশিয়ার থেকে ভাল বিকল্প আর নেই। অন্যদিকে, ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার হামলার কারণে বিশ্বজুড়ে সূর্যমুখী তেলের আমদানিতেও সমস্যার শুরু হয়েছে। তাই এই মুহূর্তে পাম তেল প্রত্যেকটি দেশের অত্যন্ত প্রয়োজন। আফ্রিকা এবং এশিয়ার বেশি কিছু দেশে এই মুহূর্তে পাম তেলের জন্য শুরু হয়েছে সমস্যা। রয়টার্স-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে এলএমসি ইন্টারন্যাশনালের কমোডিটি কনসালটেন্সি চেয়ারম্যান জেমস ফ্রাই বলছেন, "ইন্দোনেশিয়ার এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র পাম তেলের ইন্ডাস্ট্রি নয় বরং সারা বিশ্বের ভোজ্য তেলের মার্কেটের ওপরে প্রভাব ফেলতে চলেছে।"

কোথায় দাঁড়িয়ে ভারত?

ইন্দোনেশিয়ার এই একটা সিদ্ধান্তের পর ভারতকে মালয়েশিয়ার ওপর নির্ভরশীল হতে হবে পাম তেল আমদানির জন্য। এরকম পরিস্থিতিতে আগামী দিনে দেশে ভোজ্য তেলের দাম আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। রিপোর্ট অনুযায়ী, ইন্দোনেশিয়ার এই সিদ্ধান্তের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে, যা ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের পর রেকর্ড উচ্চপর্যায়ে বৃদ্ধি পাবে। জানিয়ে রাখা ভাল, এই মুহূর্তে সারা দেশে সরিষার তেলের দাম বেশ চড়া। ইউক্রেন এবং রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে সূর্যমুখী তেলের সরবরাহ ব্যাহত, তাই সূর্যমুখী তেলের দাম অনেকটাই বেশি। এখন ইন্দোনেশিয়ার পাম অয়েল রপ্তানি বন্ধ করার পর মূল্যস্ফীতি আরও বৃদ্ধি পাবে। 

এখানে বলে রাখা ভাল, ভারত সরকার এই মুহূর্তে পাম তেল উৎপাদনের ওপর ক্রমাগত জোর দিতে শুরু করেছে। ভোজ্যতেলের জাতীয় মিশনের অধীনে ২০২৫-'২৬ সালের মধ্যে ভারত পাম তেলের উৎপাদন বর্তমানের তুলনায় তিন গুণ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। তবে এটা কোনও তাৎক্ষণিক সমাধান হতে পারে না। ভারতের পাম তেল উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে করতে এখনও প্রায় তিন থেকে চার বছর সময় লাগবে। সেই সময়টুকু অবশ্যই ভারতকে নির্ভরশীল থাকতে হবে ইন্দোনেশিয়া কিংবা মালয়েশিয়ার মতো দেশের ওপর। 

উল্লেখ্য, এই প্রথম না, এর আগেও ইন্দোনেশিয়া জানুয়ারি মাসে পাম তেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, তবে মার্চ মাসে তা তুলে নেওয়া হয়েছিল। তবে এবারে যে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, তাতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে বলে জানানো হয়েছে ইন্দোনেশিয়া সরকারের তরফ থেকে। এই নিষেধাজ্ঞা এমন একটা সময় আরোপ করা হয়েছে, যখন দেশ ইতিমধ্যেই মূল্যস্ফীতিতে ভুগছে এবং জনগণকে ন্যূনতম রান্নার জন্য অনেক বেশি পয়সা খরচ করতে হচ্ছে। এই অবস্থায় যদি আরও বৃদ্ধি পায় ভোজ্য তেলের দাম, তাহলে একদিকে যেমন ভোজ্য তেলের জন্য শুরু হবে হাহাকার, তেমনভাবেই বৃদ্ধি পাবে ভেজাল তেলের উৎপাদন।

তেলের প্যাকেটের গায়ে 'ফ্রি ফ্রম আর্জিমন অয়েল' এই কথাটি লেখা থাকে। আসলে এই আর্জিমন তেল মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ভেজাল তেল হিসেবে মূলত এই তেলটিকেই ব্যবহার করা হয়। এই তেলটি দামেও সস্তা এবং দেখতে অনেকটা সাধারণ ভোজ্য তেলের মতোই। এই অবস্থায় সারা দেশে যখন ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধি পাবে, তখনই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে এই আর্জিমন তেলের কালোবাজারি। পাশাপাশি, সয়াবিন তেল, রাইস ব্র্যান তেল- এইসব তেলের ক্ষেত্রেও একইরকম সমস্যা দেখা যাবে। এই সব তেলের অতিরিক্ত বেআইনি স্টকিং করে দাম বাড়ানো শুরু করতে পারে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী, যার সরাসরি প্রভাব পড়বে সাধারণ জনতার ওপরেই।

​​​​আলোচনার মাধ্যমেই কি মিলবে সমাধান?

কুকিং অয়েল ন্যাশনাল ইন্ডাস্ট্রি বডি-সলভেন্ট এক্সট্রাকটর অ্যাসোসিয়েশন বলছে, এই মুহূর্তে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, ইন্দোনেশিয়া সরকারের সঙ্গে ভারত সরকারের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসা উচিত এই পাম তেল রপ্তানির বিষয়টি নিয়ে। আগামী ২৮ এপ্রিল থেকে ইন্দোনেশিয়া পাম তেল রপ্তানি বন্ধ করতে চলেছে সারা বিশ্বের জন্য। এর ফলে ভারত প্রবল সমস্যার সম্মুখীন হবে। কেক থেকে শুরু করে ভারতের যে-কোনও ছোটখাটো খাবারের দোকানেও প্রধান তেল হিসেবে ব্যবহার হয় এই পাম তেল। ভারতের প্রায় অর্ধেক পাম তেলের প্রয়োজন পূরণ করে শুধুমাত্র ইন্দোনেশিয়া। তাই এই দেশটি রপ্তানি বন্ধ করলে ভারতে আসা পাম তেলের সাপ্লাই সম্পূর্ণ ভেঙে পড়তে পারে। 

এর ফলে একদিকে যেমন পাম তেলের জন্য ছোটখাটো দোকানে শুরু হবে সমস্যা, তেমনই ডোমেস্টিক মার্কেটে বৃদ্ধি পাবে ভোজ্য তেলের দাম। সলভেন্ট এক্সট্রাক্টর অ্যাসোসিয়েশনের ডিরেক্টর জেনারেল বি ভি মেহেতা বলছেন, "আমরা ভারত সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছি, যেন তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইন্দোনেশিয়া সরকারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসে। ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই ভোজ্য তেল আমদানির বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। এই মুহূর্তে ভারত বিশ্বের সবথেকে বড় পাম তেল রপ্তানিকারক দেশগুলির মধ্যে একটি। তাই এই অবস্থায় যদি ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি বন্ধ করে, তাহলে সমস্যায় পড়বে পুরো দেশ। ইতিমধ্যেই সোমবার থেকেই সারা দেশে পাম তেলের দাম বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। ইন্ডাস্ট্রি কোনওভাবেই এই ব্যানের জন্য প্রস্তুত ছিল না। চোরাকারবারিরা এই পরিস্থিতির সুবিধা নিতে পারেন। ভারতীয় তেলের মার্কেট মুহূর্তের মধ্যে পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে ইন্দোনেশিয়ার এই একটা সিদ্ধান্তে। সর্বোপরি, বৃদ্ধি পেতে পারে মালয়েশিয়ার পাম তেলের দাম। এই দেশটি এই মুহূর্তে আমাদের একমাত্র বিকল্প রাস্তা। তাই যদি ইন্দোনেশিয়া তেল রপ্তানি বন্ধ করে, তাহলে সবদিক থেকেই সমস্যায় পড়বে ভারত।"

More Articles