রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন কি মৃত?

Vladimir Putin Russia: ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছিল পুতিন খুব অসুস্থ, সম্ভবত মৃতও। তবে মৃত্যু গোপন করার জন্য রাষ্ট্রপতির 'ডামি' ব্যবহার করা হচ্ছে।

ভ্লাদিমির পুতিন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত, মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন? না কি থাইরয়েড ক্যান্সার? পেটের ক্যান্সারও হতে পারে আবার পারকিনসন্সও। রাষ্ট্রপতির ডিমেনশিয়া আছে, তিনি দৃষ্টিশক্তিও হারাচ্ছেন। সমস্ত দেহ আস্তে আস্তে সাড়া দেওয়া বন্ধ করে দিচ্ছে। আসলে পুতিনের ঠিক কী হয়েছে সেই তথ্য নির্ভর করছে কোন সংবাদ মাধ্যমের নোটিফিকেশন পাচ্ছেন আপনি তার উপর। কেউ কেউ বলছে বিভিন্ন রোগে মারাত্মকভাবে অসুস্থ রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি। কিছু কিছু সংবাদপত্র আবার বলছে ভ্লাদিমির পুতিন মারা গিয়েছেন। ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস MI6-এর এক গোয়েন্দা সূত্র ডেইলি স্টারকে গতবছরই জানিয়েছিল পুতিন খুব অসুস্থ, সম্ভবত মৃতও। তবে মৃত্যু গোপন করার জন্য রাষ্ট্রপতির 'ডামি' ব্যবহার করা হচ্ছে। ভ্লাদিমির পুতিন বেঁচে আছেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিও!। জেলেনস্কি প্রশ্ন তুলেছেন, "এখন কার সঙ্গে কথা বলব বুঝতে পারছি না। আমি নিশ্চিত নই যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট এখনও বেঁচে আছেন কিনা।"

পুতিনের মৃত্যু সম্পর্কে গুজব এতদূর এবং এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যে রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সার্জেই ল্যাভরভ ফরাসি টেলিভিশন চ্যানেল TF1-এর একটি সাক্ষাত্কারে সব গুজব অস্বীকার করতে বাধ্য হন। তিনি জানান, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রতিদিন জনসমক্ষে উপস্থিত হচ্ছেন। মানুষ তাঁকে টিভি পর্দায় দেখতে পাচ্ছেন, তাঁর বক্তৃতা পড়তে এবং শুনতে পারছেন। তিনি অসুস্থ বা মৃত হলে এসব কীভাবেই বা সম্ভব হতো?

সত্যিই তাই! পুতিন যে গুরুতর অসুস্থ তার কোনও যাচাইযোগ্য প্রমাণও হাতে নেই। তিনি মারা গেছেন কী না তাই নিয়েও নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই। সূত্রের খবর, সম্ভবত রাষ্ট্রপতির স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা বিষয়ে গোপনীয়তা ইচ্ছাকৃতভাবেই বাড়ানো হয়েছে। পুতিন কেমন আছেন সেই সম্পর্কে রাশিয়ারই একটি স্বাধীন সংবাদমাধ্যম কিছু নথি ফাঁস করেছে। পুতিনের ভ্রমণ সংক্রান্ত তথ্য তুলে এনে সেই সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে পুতিনের নিবিড় চিকিৎসা চলছে। ১ এপ্রিল প্রকাশিত একটি তদন্ত অনুসারে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে তিনি প্রায়শই তাঁর কৃষ্ণ সাগরের বাসভবনে ঘুরতে যান। সেখানে তাঁর সঙ্গে যান একজন অঙ্কোলজি সার্জন এবং দু'জন অটোল্যারিঙ্গোলজিস্ট সহ সেরা চিকিৎসকদের একটি দল। যে ধরনের চিকিৎসা চলছে তা থাইরয়েড ক্যান্সারের চিকিত্সার মতোই খানিক। যদিও পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এসব দাবিগুলোকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

আরও পড়ুন- অসুস্থ পুতিন এবার সরে দাঁড়াবেন? আমূল বদলে যাবে রুশ ইউক্রেন যুদ্ধের পরিণতি?

৬৯ বছর বয়সী ভ্লাদিমির পুতিনের জীবন যাপন সবটাই রহস্যে মোড়া, বলা ভালো তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ নিরাপত্তায় ঢাকা। শোনা যায়, কোথাও ভ্রমণে গেলে নিজস্ব শৌচালয়ও বয়ে নিয়ে যাওয়া হয় যাতে তাঁর দেহনিঃসৃত বর্জ্যটুকুও শত্রুপক্ষের হাতে না আসে। গত ২১ এপ্রিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সার্জেই শোইগুর সঙ্গে একটি টেলিভিশন বৈঠকে হঠাৎই দেখা যায় পুতিন আসনে ঝুঁকে পড়ে প্রায় ১২ মিনিট ধরে সামনের টেবিলটি আঁকড়ে ধরে রয়েছেন। অনেকেরই অনুমান হাত কাঁপা লুকনোর চেষ্টা করছিলেন তিনি যা পারকিনসন্স রোগের সঙ্গেও জড়িত হতে পারে।

পশ্চিমের গোয়েন্দা সূত্রগুলি সাম্প্রতিক সময়ে পুতিনের চেহারা দেখে অনুমান করছে, তিনি ক্যান্সার বা স্নায়বিক রোগের জন্য স্টেরয়েড গ্রহণ করছেন। একইভাবে, গত ৯ মে মস্কোর রেড স্কোয়ারে বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ দেখার সময় তাঁর হাঁটু ঢেকে রাখার জন্য কম্বল ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। হয়তো সবটাই সত্য বা সবটাই গুজব। হতেও পারে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছেন এই স্বৈরশাসক।

আরও পড়ুন- ভয়াবহ মিসাইল রাশিয়ার হাতে! ইউক্রেনের পর পুতিনের টার্গেট কে?

পুতিনের স্বাস্থ্য নিয়ে এত গুজব কেন তা বোঝা খুব একটা দুষ্কর নয়। পুতিন কতকাল বাঁচবেন তার উপরেই নির্ভর করছে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ, বিশ্বের রাজনীতি এবং রাশিয়ার অর্থনীতিও। যে রাষ্ট্রপতির শাসনামলে এতকাল ধরে যুদ্ধ চলতে পারে, এতকাল ধরে মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে থাকতে পারে সেই শাসকের স্বাস্থ্য আর মৃত্যু সারা বিশ্বের কাছে স্বাভাবিকভাবেই গুরুত্বপূর্ণ।

রাশিয়ার সংবিধান অনুযায়ী, পুতিন মারা গেলে, প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্টিনকে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিতে হবে। তারপরে তিন মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচন হবে। কিন্তু মিশুস্টিন মূলত একজন টেকনোক্র্যাট যার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা সামান্যই। যদিও রাশিয়ায় তিনি পুতিনের নিতান্তই অনুগত কর্মী, ফলে আশা করা যায় পুতিনের পদচিহ্নই তাঁর অনুপ্রেরণা। এমনও হতে পারে যে তিনি পুতিনের চেয়েও বেশি স্বৈরাচারী। মিশুস্টিনের নিকটতম প্রতিযোগীদের মধ্যে থাকতে পারেন নিরাপত্তা পরিষদের সচিব নিকোলাই পাত্রুশেভ, যাকে 'রাশিয়ার সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যক্তি' মনে করা হয়।

More Articles