বাংলাদেশের কালীমূর্তি চুরি হয়ে রাজস্থানের দুর্গে! যেভাবে পুজো হয় যশোরেশ্বরী কালীর

Jeshoreshwari Kali Temple Bangladesh: মূর্তির অবয়ব পুরোটাই আবৃত মখমলে। মাথার ওপর টকটকে লাল রঙের চাঁদোয়া ও সোনার মুকুট। কণ্ঠে রক্তজবার মালা ও নানা অলংকার। লোলজিহ্বা দেবীর ভীষণা মূর্তি।

যশোরেশ্বরী কালী মন্দির বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত মন্দির। এই শক্তিপীঠটি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর গ্রামে অবস্থিত। যশোরেশ্বরী নামের অর্থ ‘যশোরের দেবী।’ পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, সত্য যুগে নিজের পিতা দক্ষের যজ্ঞে উপস্থিত হয়ে স্বামী মহাদেবের অপমান সহ্য করতে পারেননি সতী। দক্ষযজ্ঞের সেই জলন্ত অগ্নিকুণ্ডে আত্মাহুতি দেন তিনি। এ সংবাদ পেয়ে ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে সেই যজ্ঞের বিনাশ করেন মহাদেব। এরপর শোকার্ত মহাদেব সতীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে শুরু করলেন প্রলয় নৃত্য। ত্রাহি ত্রাহি রব উঠল সমস্ত বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড জুড়ে। এভাবে সমগ্র সৃষ্টি যখন রসাতলে যাওয়ার উপক্রম, তখন নারায়ণ তাঁর সুদর্শন চক্র দিয়ে সতীর দেহ ৫১ টি খণ্ডে ছেদন করে দেন। সেই ৫১ টি ছিন্ন খণ্ড পতিত হয়েছিল বিভিন্ন স্থানে। এর মধ্যে ছয়টি পীঠ রয়েছে বাংলাদেশে। এই ৫১টি খণ্ডের একটি তথা সতীর করকমল বা পাণিপদ্ম পতিত হয়েছিল সুন্দরবনের কোল ঘেঁষা ঈশ্বরীপুর গ্রামে।

তন্ত্রচূড়ামণিতে বলা হয়েছে –

'যশোরে পাণিপদ্ম দেবতা যশোরেশ্বরী / চণ্ডশ্চ ভৈরব যত্র তত্র সিদ্ধ ন সংশয়’।

অর্থাৎ, যশোরে সতীর পাণিপদ্ম বা করকমল পড়েছিল। দেবীর নাম যশোরেশ্বরী, ভৈরব হলেন চণ্ড। এই সতীপীঠে কায়মনোবাক্যে পুজো করলে ভক্তের মনোবাসনা পূর্ণ হয় বলে সকলের বিশ্বাস।

মন্দিরের ইতিহাস

মন্দিরের ইতিহাস বলতে গেলেই গল্প বা কাহিনির কথা চলে আসে। নানা ঐতিহাসিক এবং অলৌকিক ঘটনার উল্লেখও পাওয়া যায়। কিংবদন্তি অনুসারে, বয়োবৃদ্ধরা জানান, তাঁরা তাঁদের পূর্বপুরুষদের মুখে শুনেছেন, ঈশ্বরীপুর এলাকায় যশ নামের একজন খেয়ামাঝি ছিলেন। তাঁকে ঈশ্বর বলেও ডাকত কেউ কেউ। এক রাতে এক নারীমূর্তি খেয়ামাঝিকে বলেন, তাঁকে নদী পার করিয়ে দিতে হবে। তিনি পার করার সময় অন্ধকারে দেখতে পান ওই নারীমূর্তিকে কেন্দ্র করে পুরো নৌকা ও নদীতে আলোকবর্তিকা ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি তাঁকে প্রণাম করেন এবং তাঁর কাছে আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন। পরে ঈশ্বরীপুরে যে মন্দিরটি স্থাপিত হয়, তার নাম দেওয়া হয় ‘যশোরেশ্বরী কালী মন্দির’। সেখানেই রয়েছে ঘনকৃষ্ণ আবক্ষ মূর্তি শক্তিপীঠ।

অন্যদিকে, প্রতাপাদিত্যের মন্দির নির্মাণ নিয়ে কাহিনিটি হল- মূল মন্দিরটি তাঁর হাতে নতুন রূপ পায়। কথিত আছে, গৌড় থেকে এসে এই অঞ্চলেই ইছামতী ও যমুনার সঙ্গমস্থলে রাজধানী স্থাপন করতে চান রাজা প্রতাপাদিত্য। রাজধানী নির্মাণের জন্য বন জঙ্গল সাফ করাচ্ছিলেন রাজা। এমন সময় এক অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী হন কামালউদ্দিন নামে তাঁর এক কর্মচারী। কামালউদ্দিন দেখেন, ঝোপের আড়ালে জ্যোতির্ময় আলোক ছটা। সেখানে এক পাথরের খণ্ড। পাথরের খণ্ডটি অনেকটা হাতের তালুর মতো দেখতে। পাশেই পড়ে রয়েছে টাটকা জবা ফুল। তখনই সেই স্থানে দেবমাহাত্ম্য অনুভব করেন তিনি। তাঁরই উদ্যোগে নতুন করে তৈরি হয় মন্দির। জায়গার নাম রাখেন যশোরেশ্বরী পুরী। আর সেই নাম থেকেই দেবীর নাম যশোরেশ্বরী।

আরও পড়ুন- দশ মাথা, দশ পা! বিপ্লবীদের হাতে পূজিত হতেন মালদহের মহাকালী

যশোরেশ্বরীর মহিমার কথা এক সময় যশোর থেকে পৌঁছে গিয়েছিল দিল্লির মসনদ পর্যন্ত। দিল্লির মসনদে বসার পর সম্রাট আকবর তাঁর পুত্র জাহাঙ্গীরকে পাঠিয়েছিলেন বঙ্গবিজয়ের উদ্দেশ্যে। কিন্তু বাংলার মাটিতে মুঘল বাহিনীর সামনে পাহাড় হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বারো ভুঁইয়ার অন্যতম প্রতাপশালী জমিদার ও যশোরের মহারাজা প্রতাপাদিত্য। যশোরেশ্বরী কালীর আশীর্বাদ নিয়ে মুঘলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামা প্রতাপাদিত্যের সেনার হাতে পরাজিত হয়েছিল মুঘলবাহিনী। দিল্লি ফিরে গিয়েছিলেন হতোদ্যম জাহাঙ্গীর।

সম্রাট আকবরকে নাকি জাহাঙ্গীর বলেছিলেন, যশোরেশ্বরী কালীর আশীর্বাদেই মহারাজা প্রতাপাদিত্যের এত প্রতাপ। তাই প্রতাপাদিত্যকে হারিয়ে বাংলা জয় করা দুষ্কর। মহারাজা প্রতাপাদিত্যকে শায়েস্তা করতে সম্রাট আকবর তখন বাংলায় পাঠিয়েছিলেন তাঁর সেনাপতি রানা মানসিংহকে। কিন্তু অম্বররাজ মানসিংহও বেশ কয়েকটি যুদ্ধে হেরে গিয়েছিলেন। অবিশ্বাস্যভাবে যুদ্ধে হারার পর মানসিংহ জাহাঙ্গীরের কথার অর্থ বুঝতে পারেন। প্রতাপাদিত্যের সকল শক্তির কেন্দ্র হলেন যশোরের যশোরেশ্বরী কালী। মহারাজা প্রতাপাদিত্যের শক্তিকে খর্ব করার জন্য যশোরেশ্বরী কালীর এক পুরোহিতকে অর্থ দিয়ে বশ করেছিলেন মানসিংহ। তারপর সেই পুরোহিতের সাহায্যে যশোরের থেকে যশোরেশ্বরীর বিগ্রহটি চুরি করে নিজের কাছে লুকিয়ে রেখেছিলেন।

আরাধ্যা দেবী যশোরেশ্বরী কালীর বিগ্রহটি চুরি যাওয়ায় শোকে মহারাজা প্রতাপাদিত্য সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়েছিলেন। মূর্তি চুরির পুরো দায় চাপিয়ে দিয়েছিলেন মন্দিরের প্রধান সেবায়েত রামানন্দগিরির ওপর। যশোরেশ্বরী কালীর প্রধান সেবায়েত রামানন্দগিরিকে অপমান করে মন্দির থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। অথচ নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ ও কালীর পরম ভক্ত রামানন্দগিরি ছিলেন নিরপরাধ। অপমানিত রামানন্দগিরি সত্যি সত্যিই উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলেন। কিছুদিন পর রানা মানসিংহ হীনবল প্রতাপাদিত্যকে হেলায় হারিয়ে দখল করেছিলেন বাংলা। যশোরের মন্দির থেকে চুরি করা যশোরেশ্বরী কালীর বিগ্রহটি রাজস্থানের অম্বর দুর্গে প্রতিষ্ঠিত হয়। আজও সেই দুর্গেই বিরাজ করছে যশোরেশ্বরী কালীর প্রাচীন বিগ্রহটি।

বঙ্গবিজয়ের কিছুদিনের মধ্যেই অম্বররাজ মানসিংহ স্বপ্নে দেখেছিলেন যশোরেশ্বরী কালীকে। রুষ্ট কণ্ঠে কালী নাকি মানসিংহকে বলেছিলেন, মানসিংহের জন্যই তাঁর পরমভক্ত রামানন্দগিরি বিনা দোষে উন্মাদ হয়ে জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মানসিংহ যেন নিজে গিয়ে রামানন্দগিরিকে জঙ্গল থেকে উদ্ধার করেন এবং উদ্ধার করার পর সূক্ষ্মাবতী নদীর তীরে কালীর নতুন একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। মন্দিরে কালীর সেবার পূর্ণ দায়িত্ব যেন রামানন্দগিরিকে দেওয়া হয়। এর অন্যথা হলে সমূহ বিপদে পড়তে হবে রানা মানসিংহকে।

যশোরেশ্বরী কালীর সেই ভীষণা রূপ দর্শন করার পর মানসিংহ দেরি না করে চলে এসেছিলেন বাংলায়। যমুনার শাখা সূক্ষ্মাবতী নদীর তীরে থাকা জঙ্গল থেকে উদ্ধার করেছিলেন রামানন্দগিরিকে। দেবীর আদেশ মেনে সূক্ষ্মাবতী নদীর তীরের জঙ্গলের মধ্যেই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন করুণাময়ী কালীর বিগ্রহ। রানা মানসিংহ প্রতিষ্ঠিত সেই মন্দিরের নামই আজ ‘আমডাঙা করুণাময়ী মঠ’। পরবর্তীকালে যশোরের মূল মন্দিরে আবার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা করা হয়েছিল যশোরেশ্বরী কালীর বিগ্রহ। যশোরের বুকে ফিরে এসেছিলেন যশোরের সুখ, সমৃদ্ধি ও আশা ভরসার প্রতীক যশোরেশ্বরী কালী।

ইতিহাসপ্রাচীন ও পুরাকীর্তিসমৃদ্ধ এই ঈশ্বরীপুর গ্রামে রয়েছে চণ্ডভৈরবের ত্রিকোণ মন্দিরের ভগ্নাবশেষ। রয়েছে পদ্মপুকুর এবং রাজা প্রতাপাদিত্যের দরবার বলে পরিচিত বারোদুয়ারি অট্টালিকা। বলা হয়, এ দরবারের দরজা ছিল ১২টি। সেখান থেকে এর নাম হয় বারোদুয়ারি।

জনশ্রুতি, শুধু মন্দির নির্মাণ নয় তৎকালীন সমাজে সৌহার্দ্যের বার্তাও দেন রাজা প্রতাপাদিত্য। মন্দিরের অদূরে নির্মাণ করান একটি মসজিদ ও একটি গির্জা। মসজিদটির নাম টেঙ্গা মসজিদ। টেঙ্গা শব্দের অর্থ ‘যুদ্ধ শিবির’। মসজিদটি উৎসর্গ করেন তাঁর কর্মচারী কামালউদ্দিনের উদ্দেশে, যিনি প্রথম দেবীস্থানে অলৌকিক দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন।

মন্দিরের স্থাপত্য

ধারণা করা হয় যে, মন্দিরটি আনারি নামের এক ব্রাহ্মণ কর্তৃক নির্মিত হয়। তিনি এই যশোরেশ্বরী শক্তিপীঠের ১০০টি দরজা নির্মাণ করেন। কিন্তু মন্দিরটি কখন নির্মিত হয় তা জানা যায়নি। মূল মন্দির সংলগ্ন স্থানে নাটমন্দির নামে একটি বৃহৎ মঞ্চমণ্ডপ নির্মাণ করা হয়েছিল যেখান হতে দেবীর মুখমণ্ডল দেখা যায়। পরবর্তীতে এটি লক্ষ্মণ সেন ও প্রতাপাদিত্য কর্তৃক তাঁদের রাজত্বকালে অর্থাৎ ত্রয়োদশ শতাব্দীতে সংস্কার করা হয়েছিল কিন্তু কারা এটি নির্মাণ করেছিলেন তা জানা যায়নি। ১৯৭১ সালের পর এটি ভেঙে পড়ে। এখন শুধুমাত্র স্তম্ভগুলি দেখা যায়। দু’ একটা স্তম্ভ কয়েকশো বছরের নীরব সাক্ষী হয়ে ইটের পাঁজর বের করে দাঁড়িয়ে আছে কোনওরকমে। একদা মন্দিরের চারদিকে সুউচ্চ প্রাচীরও ছিল। কিন্তু মূল মন্দিরটি বাদে আর সবকিছুই কালের গর্ভে বিলীন। মন্দিরের নহবতখানাটিও এখন ভগ্নস্তূপ। বর্তমানে এই মন্দিরটি বাংলাদেশ সরকারে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সংরক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে।

পরবর্তীতে রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহ নানা কারণে জনবসতি ধ্বংস হয় এবং অঞ্চলটি জনশূন্য হয়ে পড়ে ফলে যশোরেশ্বরী কালীর মন্দির নষ্ট হয়। এরপর সপ্তম শতকের শেষ বা অষ্টম শতকের শুরুতে ফের জনবসতি গড়ে ওঠে। এই সময়ের মন্দিরের বণর্না দিতে গিয়ে বলতে হয়, বর্তমানে মন্দিরটি ১৮ জোড়া খুঁটির উপরে দণ্ডায়মান। উপরে একটি গোল প্রধান চূড়া গম্বুজ, মন্দিরটি চতুষ্কোণী ও চারপাশে বারান্দা রয়েছে। উত্তর–দক্ষিণ পাশে একই সমান্তরালে দু’টি দরজা এবং দর্শনীয় সদর দরজা মন্দির চত্বরের পশ্চিমে, উত্তর-দক্ষিণ দিকে পুরনো নহবৎ খানা, অতিথিশালা, দর্শনার্থীদের কক্ষ ভেঙে পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। সম্ভবত এগুলি ১৯ শতকের দিকে বর্তমান সেবায়তগণের পূর্বপুরুষেরা অতীতের আদলে পুননির্মাণ করেছিলেন।

মূর্তির বিশেষত্ব

উপমহাদেশের ধর্ম, সংস্কৃতি ও ভাস্কর্যের অসাধারণ নিদর্শন এই মন্দির ও কালী মূর্তি। এই মূর্তি দক্ষিণ বাংলার স্থানীয় চন্দ্রজাতির ভাস্কর্য শিল্পের অনুপম নির্মাণ। মন্দিরে অধিষ্ঠাত্রী কষ্ঠিপাথরে নির্মিত ভয়ংকর করালবদনা ও একইসঙ্গে মনোহরা কালী মূর্তি। মন্দির-বেদির ওপর প্রতিষ্ঠিত মূর্তির শুধু মুখমণ্ডলই দৃষ্টিগোচর হয়। যশোরেশ্বরীর কণ্ঠের নিচে তাঁর শ্রীহস্ত ও শ্রীচরণ কিছুই নজরে পড়ে না। মূর্তির অবয়ব পুরোটাই আবৃত মখমলে। মাথার ওপর টকটকে লাল রঙের চাঁদোয়া ও সোনার মুকুট। কণ্ঠে রক্তজবার মালা ও নানা অলংকার। লোলজিহ্বা দেবীর ভীষণা মূর্তি। মালদহের জাগ্রত জহুরা কালীর মুখমণ্ডলের সঙ্গে কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে যশোরেশ্বরীর। যশোরেশ্বরীর ভীষণদর্শন উগ্রমূর্তির পিছনেই যেন লুকিয়ে আছে সন্তানবৎসলা এক অপরূপ মূর্তি। এই কালী মন্দির ও মূর্তি পশ্চিম বাহিনী।

আরও পড়ুন- কেলে ডাকাত থেকে আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের বংশ, জিরাট গ্রামে ডাকাতেকালীর রোমাঞ্চকর ইতিহাস

পুজো এবং ভোগ

যশোরেশ্বরীর পুজো হয় মন্ত্রমতে। পুজোয় সমবেত ভক্তগণ ফুল, ফল ও নানাধরনের মিষ্টি আনেন। মূর্তির সামনে সুন্দর করে কাঁসার থালা ও মাটির পাত্রে থরে থরে নৈবেদ্য সাজানো হয়। শ্রীযশোরেশ্বরীর পুজো তন্ত্রমতেও হয়। প্রতি বছর মন্দিরে খুব ধুমধাম করে শ্যামাপুজো হয়। শ্যামাপুজোয় এই মন্দিরে হাজার হাজার ভক্ত পুজো দেন, মানত করেন। বড় করে হোমযজ্ঞ হয়। মূর্তিকে নানা অলংকারে সাজানো হয়। মন্দিরের সামনে তিনদিন মেলা বসে। মন্দিরের বারান্দায় হিন্দু ভক্তদের পাশাপাশি মুসলমান ভদ্রমহিলাদেরও সমাগম চোখে পড়ার মতো।

প্রতিবছর কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে যশোরেশ্বরী কালীর মন্দিরে সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হয় শ্রী শ্রী শ্যামার আরাধনা। বলিদানের প্রথা আছে এই মন্দিরে। দেবীকে তুষ্ট করার জন্য শ্যামাপুজোর সময় ছাগবলি দেওয়া হয়। যাঁরা যশোরেশ্বরীর কাছে মানত করেন, তাঁদের মনোকামনা পূর্ণ হলে মন্দিরের দালান থেকে তাঁরা নীল আকাশে উড়িয়ে দেন দু’টি দুধ সাদা পায়রা।

একটা সময় ছিল, যখন কালীপুজোর দিনগুলোতে গমগম করত যশোরেশ্বরীর মন্দির। অবিভক্ত বাংলাদেশের দূর দূরান্ত থেকে জমিদাররা আসতেন পুজো দেখতে। পুজোর ক’দিন কাটাতেন এখানেই। এখন রোজ পুজো না হলেও কালীপুজোয় ভক্ত সমাগমে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে মন্দির চত্বর। এখন এই মন্দির দেশের অন্যতম পুরাতাত্ত্বিক সম্পদ৷ তবে এখানে, এই ঈশ্বরীপুরে যশোরেশ্বরী ছাড়াও প্রতাপাদিত্যের হাম্মামখানার সদম্ভ অস্তিত্ব বর্তমান। অতিথিশালা আর চণ্ডা মন্দির বিলুপ্ত হলেও সাক্ষী রয়ে গেছে ইতিহাসে। আর রয়ে গেছে বিশাল বটবৃক্ষের নিচে যশোরেশ্বরী। কিন্তু যশোরেশ্বরী সব কিছুর উর্ধ্বে টিকে গেলেও মন্দির এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এখনও যেটুকু মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে তাতেও মধ্যযুগীয় স্থাপত্যশৈলীর সমৃদ্ধ নিদর্শন আছে বটে কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রতিদিনই কমছে ইতিহাসের চিহ্ন। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো এই শিশু গাছ দেখিয়েই বলতে হবে, এখানে এই গাছের নিচে এক সময় যশোরেশ্বরী ছিলেন।

কীভাবে যাবেন?

ঢাকার গাবতলী, নবীনগর, শ্যামলী, কল্যাণপুর এবং সাভার থেকে সাতক্ষীরার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন এসি/নন-এসি বাস যায়। সাতক্ষীরা থেকে স্থানীয় পরিবহণে শ্যামনগর উপজেলায় এসে সহজেই যশোরেশ্বরী কালী মন্দির দেখতে যেতে পারবেন।

More Articles