খাসি বা ইলিশ নয়! ইছামতির গলদা চিংড়ি ভোগে সন্তুষ্ট কৃষ্ণচন্দ্রের সাধের ইটিন্ডার সিদ্ধেশ্বরী কালী

Kali Puja 2022: মন্দির পার্শ্ববর্তী যে পুকুর রয়েছে সেখানে নাকি কালী স্নান করতেন এবং একাধিক পূণ‍্য তিথিতে খাঁড়া হাতে কালীকে নাকি রাস্তায় প্রদক্ষিণ করতেও দেখা যেত।

আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগে কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় যশোহরের ধূমঘাট থেকে নৌপথে টাকিতে যাচ্ছিলেন। অধুনা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের এই এলাকাটি সেই সময় ছিল অরণ্যে ঘেরা। দীর্ঘ নৌযাত্রার ফলে ক্লান্ত হয়ে বসিরহাট শহরের উত্তর-পূর্ব দিকে ইছামতি নদীর পাড়ে একটি স্থানে বিশ্রাম করার পরিকল্পনা নেন তিনি। রাত কাটানোর পর ইছামতি নদীর সূর্যোদয় দেখে আপ্লুত হন রাজা। সেই সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে তিনি সেখানে একটি গঞ্জ তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন। যার নামকরণ হয় ইটিন্ডা।

এখানেই শেষ নয়, সেই গ্রামে তিনি একটি কালীমন্দির তৈরি করার নির্দেশ দেন তৎকালীন টাকীর রায়চৌধুরী জমিদারদের। যেমন কথা তেমন কাজ! এলাকার বন-বাদাড় পরিষ্কার করে একদিকে জোরকদমে তৈরি হয়ে গেল গঞ্জ। অন্যদিকে তালে তাল মিলিয়ে গড়ে উঠল সিদ্ধেশ্বরী মন্দির। বাঁশ ও বিচালির ছাউনি দিয়ে তৈরি হয়েছিল সেই মন্দির। বসিরহাট মহকুমার বসিরহাট ১নং ব্লকের ইটিন্ডা-পানিতর গ্রাম পঞ্চায়েতের ইটিন্ডা কলবাড়ি সংলগ্ন এলাকায় সেই মন্দির কালের নিয়মে এখন কংক্রিটের কাঠামোয় রূপান্তরিত হয়েছে কিন্তু তার ঐতিহ্য তথা পুজোর পরম্পরা কিছুই বদলায়নি।

আরও পড়ুন- কালো বা নীল নয়! অবাক করবে বাংলার এই তিন অঞ্চলের সাদা কালীর কাহিনি

শ্যামাপুজোর দিন সাধারণত দেখা যায়, ভোগ হিসেবে দেওয়া হচ্ছে খিচুড়ি, কোথাও বা খাসির মাংস, আবার কোথাওবা ইলিশ মাছ। কিন্তু ইটিন্ডার এই সিদ্ধেশ্বরী কালীর পুজো ইছামতির গলদা চিংড়ি ছাড়া সম্পূর্ণ হয় না। যুগ যুগ ধরে মৎস্যজীবিরা ইছামতি থেকে যে গলদা চিংড়ি কালীর কাছে নিয়ে আসেন, সেগুলিই ভোগ রূপে কালীকে অর্পণ করা হয়। এই ভোগের বৈচিত্র্য রাজ্যের মধ্যে একপ্রকার নজির সৃষ্টি করেছে বলা যায়।

লোক মুখে শোনা যায়, এই মন্দির থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পার্শ্ববর্তী গ্রাম সংগ্রামপুরের দক্ষিণা কালী ইটিন্ডার এই সিদ্ধেশ্বরী কালীর সম্পর্কে বোন হন। তাঁদের মধ্যে এক মন্দির থেকে অন্য মন্দিরে যাতায়াতের গল্পও শোনা যায়। কালীর পায়ের সামনে তিনটি ঘট স্থাপন করা আছে। যা একদিকে কালি অন্যদিকে শীতলা ও চণ্ডীকে এক অনন‍্য রূপ দিয়েছে। লোকমুখে আরও শোনা যায়, মন্দির পার্শ্ববর্তী যে পুকুর রয়েছে সেখানে নাকি কালী স্নান করতেন এবং একাধিক পূণ‍্য তিথিতে খাঁড়া হাতে কালীকে নাকি রাস্তায় প্রদক্ষিণ করতেও দেখা যেত। এমন একাধিক ইতিহাস, গল্পকথা ও লোককথা জড়িয়ে রয়েছে এই সিদ্ধেশ্বরী কালীর সঙ্গে যা আজও ঐতিহ্যকে বহন করে চলেছে।

More Articles