ঘাতক হৃদরোগ প্রাণ নিল কে কে-র, কীভাবে আগেভাগে আপনি চিনবেন আসন্ন বিপদকে?
কে কে-র পোস্টমর্টেমের কারণ হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে 'মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন'।
দর্শকভর্তি নজরুল মঞ্চ। গান গাইছেন বলিউডের জনপ্রিয় গায়ক কে কে। অত দর্শকের চাপ, কলকাতার গরমই কি কাল হল কে কে-র জীবনে? মঞ্চে গান গাওয়ার সময়েই স্পটলাইট বন্ধ করতে অনুরোধ করেন কে কে। মঞ্চে দরদরিয়ে ঘামছিলেন শিল্পী। সেখান থেকে হোটেলে ফিরেই অকস্মাৎ মৃত্যু হয় সংগীতশিল্পীর। মাত্র ৫৪ বছর বয়সে কেন এভাবে চলে যেতে হল শিল্পীকে, তাই নিয়ে তোলপাড় হয়েছে নানা মহল। কে কে-র ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশনে মৃত্যু হয়েছে কে কে-র।
লিভার এবং ফুসফুসের সমস্যা ছিল কে কে-র দীর্ঘদিনের সঙ্গী। মদ্যপান না করলেও নিয়মিত ধূমপানের অভ্যাস ছিল তাঁর। বড় যে কোনও অনুষ্ঠানে গাইতে ওঠার আগে অতিরিক্ত অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণের সমস্যাও ছিল। কলকাতার গরমে, শোয়ের চাপ সামলাতে না পেরে ম্যাসিভ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ফলেই ঘুমের দেশে পাড়ি দিলেন বলিউডের এই তারকা গায়ক, এমনটাই মত চিকিৎসকদের।
কে কে-র পোস্টমর্টেমের কারণ হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে 'মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন'।
আরও পড়ুন: ঠিক কী হয়েছিল কে কে-র! কেন অকালে চলে যেতে হল?
কী এই মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন?
চলতি ভাষায় আমরা যাকে বলি হার্ট অ্যাটাক, তাকেই ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হয় মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন। ডাক্তারদের মতে, কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের আগাম সংকেত সব ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না। সাধারণত ধমনিতে রক্তের প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলেই হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা তৈরি হয়। ধমনিতে রক্ত চলাচল বন্ধ হতে শুরু করলেই হৃদপিন্ডে অক্সিজেন পৌঁছনো বন্ধ হতে শুরু করে। হৃদপিন্ডে অক্সিজেনের মাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গেই হৃৎপিন্ডের সেই অংশটি অকেজো হতে শুরু করে।
মূলত তিনটি কারণেই মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা তৈরি হয়। তাছাড়া ব্লাড প্রেশারের অস্বাভাবিক ওঠা-নামাও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। আবার আমাদের শরীরে ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিও হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ
সাধারণভাবে যাঁদের সুগার বা প্রেশারের মাত্রা বেশি বা ওবেসিটির সমস্যা রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই বেশি। হার্ট অ্যাটাক যে কোনও বয়সেই হয়ে থাকে।
শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা হলে বা দম আটকে গেলে হৃদরোগের সম্ভাবনা থাকে। হৃদপিন্ডে কোনওরকম সমস্যা বা ব্লকেজ তৈরি হলে ফুসফুসে তুলনামূলকভাবে কম অক্সিজেন পৌঁছয়।
অল্পেই ঘাম হওয়া বা একটুতেই হাঁপ ধরাও হৃদরোগের অন্যতম লক্ষণ। শরীরে ব্লাড সার্কুলেশন ঠিকভাবে না হলে শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন পৌঁছয় না। অক্সিজেনের ঘাটতি থেকেও হৃদযন্ত্রের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হল বুকে ব্যথা। সেই ব্যথা আবার অনেক সময় বা কাঁধ বা হাতে ছড়িয়ে পরে। এই পরিস্থিতিতে রোগীকে অবিলম্বে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত।
মেয়েদের ক্ষেত্রে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের সময় বুকে ব্যথা, ঘাম হওয়া ছাড়াও পিঠে ব্যথা এবং গ্যাসের সমস্যাও হতে পারে।
অনেক ক্ষেত্রে হৃদরোগের কোনও লক্ষণই দেখা যায় না। একে বলে সাইলেন্ট ইনফার্কশন। এই ক্ষেত্রে রোগী কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার হৃদযন্ত্রের প্রক্রিয়া থেমে যায়। পরে ময়নাতদন্তে বা অটোপসি রিপোর্টে সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের কারণ বোঝা যায়। সাধারণত রক্তে শর্করার মাত্রা অতিরিক্ত বেশি থাকলে বা নার্ভের সমস্যা থাকলে রোগীর সাইলেন্ট ইনফার্কশনে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
কীভাবে নিজেকে রক্ষা করবেন?
যদি হার্ট অ্যাটাকের আগে ওপরের লক্ষণগুলো দেখা যায়, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বিভিন্ন ছোট ছোট উপসর্গ, যেমন কাঁধে, হাতে ব্যথা বা গ্যাসের সমস্যা অবহেলা না করে ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়াই ভালো। এই ছোট ছোট উপসর্গ থেকেও হৃদরোগ ঘটতে পারে।
হৃদরোগ থেকে বাঁচতে গেলে খাদ্যাভ্যাসের ওপরেও নিয়ন্ত্রণ আনা জরুরি। গরমে পরিমিত খাবার, বেশি পরিমাণে জল খেতে হবে। এছাড়াও বংশগতভাবে হার্টের অসুখ থাকলে ফ্যাটজাতীয় খাবার খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।