দুই দশক ধরে বিতর্কে সরগরম 'কফি উইথ করণ', আজও অটুট জনপ্রিয়তা
স্বজনপোষণ কিংবা স্টারকিড প্রোমোট করার প্রসঙ্গ খানিকটা সরিয়ে রাখলে, এই শো কিন্তু প্রায় দুই দশক ধরে অনুগামীমহলের কাছে তাদের প্রিয় তারকাকে অনেক বেশি ঘরের লোক করে তুলেছে।
সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর থেকে বলিউডে, স্টার কিডস বনাম আউটসাইডারদের নিয়ে যে দ্বন্দ্বের জন্ম হয়েছিল, তা ২০২০ সালের পর থেকে আজ অবধি একইভাবে চর্চায় রয়েছে। সুশান্তের মৃত্যুর পর কঙ্গনা রানাওয়াতের ‘নেপোটিজম’ নিয়ে করা মন্তব্য নেটিজেনদের মনে কার্যত নতুন এক ধারণা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল– তা সে সত্যি হোক বা অবান্তর। তবে এই কথা একেবারেই বলা যায় না যে, মানুষের মনে স্টার কিডসদের নিয়ে এই ধারণা আগে থেকে একেবারেই ছিল না। একটি ইন্টারভিউতে আলিয়া ভাট ইনস্টাগ্রামের কমেন্ট চেক করার প্রসঙ্গে জানিয়েছিলেন, সিনেমাজগতে পা রাখার দিন থেকেই তাঁকে লোকজনেরা বিনা কারণেই ‘নেপো, নেপো’ বলে অপমান করতে শুরু করে এবং ঠিক সেই কারণেই তিনি প্রথমদিন থেকে আজ অবধি, কখনওই নিজের ইনস্টাগ্রামের একটি কমেন্টও পড়ে দেখেননি। আলিয়ার এই মন্তব্য থেকে স্পষ্টই বোঝা যায়, সুশান্তের মৃত্যু এবং কঙ্গনার মন্তব্যর অনেক আগে থেকেই ‘নেপোটিজম’ নিয়ে সমালোচনা এবং কটূক্তির শিকার কমবেশি সকল স্টারকিডদেরই হতে হয়েছে। তবে সেই সময়ের ‘নেপোটিজম’ চর্চা ‘ট্রেন্ডের বিষয় ছিল না। বলা বাহুল্য, এই নতুন ট্রেন্ড মূলত ২০২০ সালের পর থেকেই প্রকট রূপ ধারণ করেছে।
এত কথা বলার মূল কারণ হলো, সেই সময় বলিউডের স্টারকিডের দৌরাত্ম্যের পিছনে যে মানুষটির নাম নিয়ে বলতে গেলে একপ্রকার তুলকালাম লেগে গিয়েছিল, তিনি বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় পরিচালক এবং প্রযোজক করণ জোহর এবং এই প্রসঙ্গে তাঁর হোস্ট করা টক শো ‘কফি উইথ করণ’ নিয়ে মানুষের মনে ক্ষোভের অন্ত ছিল না। পরিণীতি চোপড়া, সোনম কাপুর থেকে শুরু করে করিনা কাপুর, সারা আলি খান কিংবা আলিয়া ভাটের সুশান্ত সিং-কে নিয়ে করা মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ জনতার দফায় দফায় কটূক্তি, মিম এবং ট্রোলের বন্যায় ভেসে যেতে থাকে সোশ্যাল মিডিয়া। অবশেষে বিষয়টা খানিক এমন হয়ে গিয়েছিল, যেন করণ জোহর একবার সুশান্তকে তাঁর পরিচালিত এই শো-তে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ করলেই সকলের প্রিয় এসএসআর, আর যাই করুন, আত্মহত্যা করতেন না। ‘জাস্টিস ফর সুশান্ত’ আন্দোলনকারী গোষ্ঠীরা এরপর স্বাভাবিকভাবেই দাবি জানায়, করণ জোহরের এই শো বন্ধ করতে হবে। কিন্তু বছর ঘুরতেই দেখা গেল, করোনা পরিস্থিতি খানিক স্বাভাবিক হলেই, ২০০৪ সালে শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠানের ছয় নং সিজন আগের থেকেও বেশি জনপ্রিয়তার সঙ্গে নতুন করে শুরু হয়েছে।
সিজন ৬-এর জনপ্রিয়তা এতই বেশি ছিল যে, এইবার, অর্থাৎ সিজন ৭ টেলিভিশনে নয়, বরং ভারতের বিখ্যাত জনপ্রিয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘ডিসনি প্লাস হটস্টার’-এ ব্রডকাস্ট করা হচ্ছে এবং মাত্র চারটি এপিসোডেই ‘কফি উইথ করণ’ ভারতের টপ শো-তে পরিণত হয়েছে। শো শুরু হওয়ার প্রথম দিন থেকেই বিতর্কের অন্ত নেই। শো শুরু হওয়ার ঠিক পরেই রণবীর কাপুরের একটি ইন্টারভিউয়ের ক্লিপিংস ভাইরাল হতে শুরু করে, যেখানে তিনি ‘কফি উইথ করণ’ প্রসঙ্গে বলেছেন, সিজন সেভেন-এ তাঁকে ডাকা হলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। ইন্টারভিউতে তিনি আরও বলেন, অনুস্কা শর্মার সঙ্গে মিলে তিনি গোটা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে একজোট করার চেষ্টা করেছেন, যাতে এই শো বন্ধ করা যায়। শো-এর ‘র্যাপিড ফায়ার রাউন্ড'-এর বিজেতাকে যে হ্যাম্পার দেওয়া হয়, সেই হ্যাম্পারের গোপনীয়তাও তিনি ফাঁস করেছেন এই ইন্টারভিউতে।
আরও পড়ুন: ছোটবেলার ক্রাশ থেকে জীবনসঙ্গী, কেমন ছিল রণবীর-আলিয়ার এই প্রেম?
সিজন সেভেন-এর দ্বিতীয় এপিসোডের অতিথি ছিলেন, বলিউডের নতুন দুই ঘনিষ্ট বন্ধু, সারা আলি খান এবং জাহ্নবী কাপুর। এই এপিসোডের পর থেকেই সারা আলি খানের নতুন ক্রাশ দক্ষিণের অভিনেতা বিজয় দেভারাকোন্ডাকে নিয়ে চর্চা তুঙ্গে। এই পর্বেই সারা আলি খানের বক্তব্য থেকে খানিক হলেও স্পষ্ট হয়েছে যে, তিনি একসময়ে কার্তিক আরিয়ানের সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন। অনেকেই আবার দাবি করেছে, এই পর্বে করণ নাকি জাহ্নবীকে সারার থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন, এবং তিনি নাকি শ্রীদেবী কন্যাকে নতুন আলিয়া ভাট বানানোর প্রচেষ্টা ইতিমধ্যেই শুরু করেছেন।
তৃতীয় এপিসোডের অতিথি ছিলেন অক্ষয় কুমার এবং সামান্থা রুথ প্রভু। এই পর্বে দক্ষিণী অভিনেত্রী করণকে সরাসরি বলেন, বর্তমানে সুখী বৈবাহিক জীবনযাপন না করতে পারার পিছনে করণের ছবির এক বিশাল অবদান রয়েছে। তিনি আরও যোগ করেন, করণের সিনেমায় বৈবাহিক জীবন সম্পর্কে যে ভ্রান্ত ধারণা তুলে ধরা হয়, বাস্তব জীবন তার থেকে অনেক বেশি কঠিন। সম্প্রতি সামান্থার ডিভোর্স নিয়েও তিনি এই পর্বে অনেক কথাই বলেছেন। এর মধ্যে করণ একবার ভুলবশত সামান্থার প্রাক্তন স্বামীকে 'হাজব্যান্ড' বলে সম্বোধন করলে তা সংশোধন করে সামান্থা বলেন, 'এক্স হাজব্যান্ড'। অন্যদিকে অক্ষয় কুমার সুখী বৈবাহিক জীবনের টিপস দিয়ে বলেন, এক্ষেত্রে স্ত্রীয়ের কথা শুনে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ।
'কফি উইথ করণ' সিজন ৭-এ সারা আলি খান ও জাহ্নবী কাপুর
২০০৪ সাল থেকে চলে আসা এই শো-এর এমন কোনও সিজন নেই যেখানে বিতর্ক হয়নি। এই শো-তেই রাষ্টপতির নাম পৃথ্বীরাজ চৌহান বলার কারণে আজ অবধি আলিয়া ভাটকে মাঝেসাঝেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে ট্রোলের শিকার হতে হয়। এই শো-এর মাধ্যমেই কঙ্গনা রানাওয়াতের এবং করণের সম্পর্কের তিক্ততা গোটা দেশবাসীর সামনে আসে। আবার এই শো-তেই দেখা যায়, শো-এর হোস্টকে অতিথিদের কাছে অতিরিক্ত ‘পারফেক্ট’ হওয়ার জন্য বকা খেতে। এমনকী, 'অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল'-এর পর অনুষ্কা শর্মা এই শো-তে বসে করণের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিলে, করণ নাকি ছবির শুটিং চলাকালীন অস্বস্তিকরভাবে স্পর্শ করেছেন অনুষ্কাকে। ইমরান হাশমির মল্লিকা শেরাওয়াতকে নিয়ে করা মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছিল, মল্লিকার হলিউডে যাওয়াকে বোকার মতো কাজ বলেছিলেন ইমরান। পুরুষের মধ্যে প্রথম কী লক্ষ করো- করণের এই প্রশ্নের উত্তরে দীপিকা পাড়ুকোনের ইঙ্গিত ঘিরে রসালো জল্পনাও হয়েছে। এই শো-তে বসে আলিয়া বলেছিলেন, রণবীর কাপুরকে তিনি বিয়ে করতে চান।
স্বজনপোষণ কিংবা স্টারকিড প্রোমোট করার প্রসঙ্গ খানিকটা সরিয়ে রাখলে, এই শো কিন্তু প্রায় দুই দশক ধরে অনুগামীমহলের কাছে তাদের প্রিয় তারকাকে অনেক বেশি ঘরের লোক করে তুলেছে, এবং সম্ভবত এই কারণেই হাজারও বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে ‘কফি উইথ করণ’ অতি অল্পদিনের মধ্যেই দেশের সেরা জনপ্রিয় শো-তে পরিণত হতে সক্ষম হয়েছে একাধিকবার।