ফাইনালে নির্মমভাবে হারিয়েছিলেন ফ্রান্সকে, যেভাবে মেসির বিরুদ্ধে শোধ নিচ্ছে ফরাসি মিডিয়া
Lionel Messi : মেসির ঠিকানা লেখা নিশ্চিত পাসকে কাজে লাগাতে পারলেন না এমবাপে, তবুও কেন সব দোষ হল মেসির!
বিশ্বকাপ মিটে গিয়েছে বেশ কিছুদিন হল, এখনও অবশ্য সেই নেশায় বুঁদ হয়ে রয়েছেন অধিকাংশ দর্শক। টানটান উত্তেজনার সেই শেষ রাত এখনও ঘুম কেড়ে নেয় ফুটবপ্রেমীদের। সে রাতের নায়ক লিওনেল মেসি। আর ট্র্যাজিক নায়ক এমবাপে। শুধু শেষ রাত নয় এবছরের গোটা কাতার বিশ্বকাপের পরতে পরতে ছিল মেসি ম্যাজিক। নিজের এবং দেশের পাহাড় প্রমাণ স্বপ্ন নিয়ে তিনি নোঙর ফেলেছিলেন কাতারের ময়দানে। প্রথম ম্যাচে হারের পর দুরন্ত কাম ব্যাক করে নীল সাদা বাহিনী। আর কোথাও কোনও ছন্দ পতন নেই। একটার পর একটা ধাপ পেরিয়ে অবশেষে মুখোমুখি ফ্রান্স বনাম আর্জেন্টিনা। মেসির হাতেই ওঠে গোল্ডেন বল।
সেসব মিটেছে ইতিমধ্যেই। বিশ্বকাপের পর আবার পিএসজির জার্সিতে একসঙ্গে মাঠে নামলেন তিন মহাতারকা - লিওনেল মেসি, নেইমার জুনিয়র এবং কিলিয়ান এমবাপ্পে। বিশ্বকাপের পরিচয় অতীত, এখানে সবাই এক শিবিরে। অথচ এমন তিনজন মাঠ কাঁপানো খেলোয়াড় থাকতেও কিনা রেঁনের বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরে গেল প্যারিসিয়ানরা!
আরও পড়ুন - বিশ্বকাপ জিতেও স্বস্তিতে নেই মেসিরা, ফিফার ভয়ংকর শাস্তির মুখে পড়তে চলেছে আর্জেন্টিনা?
ম্যাচের এহেন ফলাফলের পরই শুরু হয়েছে চূড়ান্ত বিতর্ক। ফরাসি মিডিয়া সরাসরি তোপ দাগেন মেসির বিপক্ষে। সব দোষ গিয়ে পরে মেসির কাঁধে। বলা হয়, বিশ্বকাপের পর কার্যত খেলা ভুলেছেন মেসি। কেবল বিশ্বকাপ বলেই নাকি প্র্যাকটিস করছিলেন, এখন হল ছেড়ে দিয়েছেন। কটাক্ষের সুর আরও চড়িয়ে তোলা হয়, ফ্রান্সের সঙ্গে বিরোধিতার প্রসঙ্গও। ফাইনাল ম্যাচের বিরোধিতার জের নাকি এখনও টানছেন মেসি, এমন কথাও বলতে ছাড়ে না ফরাসি মিডিয়া। বিশ্বকাপ ফাইনালে মেসি বাহিনী নির্মমভাবে হারিয়েছিলেন বলেই যেন শোধ তুলছে ফরাসি মিডিয়া। সেই রাত এখনও ভুলতে পারেনি ফ্রান্স।
মনে রাখতে হবে, এবারের বিশ্বকাপে দুরন্ত একটা টিম পেয়েছিল মেসি। তিনি নায়ক ঠিকই তবে, আলভারেজ, দি মারিয়া, কেউই কম যান না। রীতিমত কাঁধে কাঁধ দিয়ে লড়াই করেছেন তাঁরাও। টিবে সুনিশ্চিত হয়েছে জয়, অন্যদিকে গোটা মাঠে ফ্রান্সের হয়ে একা রোজ করেছেন এমবাপে। শেষ রাতে একাই তিন তিনটে গোল করে ম্যাচকে নিয়ে যান পেনাল্টির দোরগোড়ায়। অথচ এমন একজন খেলোয়াড় কিনা রেঁনের বিপক্ষে মেসির বাড়ানো দুরন্ত পাস থেকেও গোল করতে পারলেন না!
একই ম্যাচে একই শিবিরে বিশ্বকাপের সোনার বল এবং সোনার বুটের মালিক। তবুও জমল না রসায়ন। মাঠ জুড়ে আধিপত্য তৈরি করল রেনে। তাদের সামনে কার্যত লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে প্যারাসিয়ানরা। গোটা ম্যাচে গোল লক্ষ্য করে মাত্র একটি শট মারতে পেরেছেন মেসিরা। অন্য দিকে রেনে মেরেছে ৬টি শট। উপরন্তু ১৭টি ফাউল করেছেন পিএসজি। যদিও একখানা দুর্দান্ত পাস বাড়িয়েছিলেন মেসি,সেটাকেও কাজে লাগাতে পারেনি এমবাপে। যার ফলাফল নিশ্চিত হার।
এই হারেই ক্ষেপেছে ফরাসি মিডিয়া। এসবের জন্য আঙুল তুলেছেন মেসি আর নেইমারের দিকে। অথচ ফরাসি ফুটবলার এমবাপেকে মুখে কার্যত কুলুপ এঁটেছেন। কেন সব দোষ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে কেবল মেসি আর নেইমারের দিকেই? নিজেদের দেশের প্লেয়ার বলেই কি তবে দোষ খুঁজে পাচ্ছেন না এমবাপের? প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।
অন্যদিকে, ফরাসি মিডিয়া ‘আরএমসি স্পোর্ট’ এবং ‘লা প্যারিসিয়ান’ -এর কটাক্ষে জেরবার মেসি এবং নেইমার। মেসির পারফরমেন্সকে দশের মধ্যে চার রেটিং দিয়েছে তারা। আর নেইমারকে তো ধুয়ে দিচ্ছে রীতিমত। বিশ্বকাপ খেলার সময়ই ছোট ছিল এই ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারের। এখনও কেন ফর্ম ফিরল না, আদপেও কি প্যারিসিয়ানদের আশা পূরণের যোগ্যতা আছে নেইমারের, এহেন তির্যক মন্তব্যের শিকার হতে হচ্ছে। এমনকী ফরাসি সাংবাদিক দানিয়েল রিওলো সরাসরি বলেন, বার্সেলোনা থেকে নেইমারকে পয়সা খরচ করে কিনে আনা সম্পূর্ণ বেকার হয়েছে পিএসজির।
বিশ্বকাপের তিন মহাতারকা এক দলে থাকা সত্বেও এ হার আশাপ্রদ নয় ঠিকই, তাই বলে সব দায় কেবল দুজনের ঘাড়ে চাপিয়ে কোন ইতিহাস রচনা করতে চাইছে ফরাসি মিডিয়া তা বোঝা দায়! ব্যর্থতার প্রসঙ্গ যখন উঠেইছে তখন দায় গোটা টিমের। এর সংশোধনও সম্ভব সকলের সমান অংশগ্রহণেই। তাই মেসি,নেইমারের দিকে তোলা আঙুলগুলোর সমান দায় আছে এমবাপেকে প্রশ্ন করার। কূটনীতি এসে সুস্থ খেলার পরিবেশকে এভাবে বিষিয়ে দিল তার দায়ভার বর্তাবে সার্বিক ফুটবল ম্যাচের ওপরই।