বিয়ে বাড়িতে ব্যাপক ডিজে! যে কোনও মুহূর্তে হার্ট অ্যাটাক কাড়বে আপনার প্রাণ

DJ Sound and Heart Attack: যখন কোনও ব্যক্তি উচ্চস্বরে সঙ্গীতের সংস্পর্শে আসেন, তখন হৃদস্পন্দন দ্রুত বৃদ্ধি পায়, ঠিক যেমন জগিং বা শারীরিক কসরতের সময় বেড়ে যায়।

গত কয়েক মাসের মধ্যে খবরের শিরোনামে এসেছিল কয়েকটি অদ্ভুত মৃত্যুর ঘটনা। হৃদরোগ আসে হঠাৎই, তবে তা এতটাও যে আকস্মিক হতে পারে ভাবতে পারেননি অনেকেই। গত ৪ মার্চ বিহারের সীতামারহির বাসিন্দা ২২ বছর বয়সী সুরেন্দ্র কুমার কনের সঙ্গে মাল্যদান পর্ব সাঙ্গ করেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তেলেঙ্গানায় আত্মীয়ের বিয়েতে নাচতে গিয়ে ১৯ বছর বয়সী এক ব্যক্তি হঠাৎই পড়ে যান এবং তাঁর মৃত্যু ঘটে। গত বছরের ২৫ নভেম্বর বারাণসীর পিপলানি কাটরায় একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে নাচতে গিয়ে হার্টঅ্যাটাক হয়ে মৃত্যু ঘটে এক ব্যক্তির। এই সবক'টি ঘটনাতেই খলনায়ক একই, ডিজে বক্স! বারাণসীর ওই বিয়ের অনুষ্ঠানের ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে, ওই ব্যক্তি সকলের সঙ্গেই নাচছিলেন, হঠাৎ মাটিতে পড়ে যান তিনি। বিহারের বিয়ের ঘটনাতেও মৃতের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, বর মালাবদল অনুষ্ঠানে তীব্র ডিজে মিউজিকে অস্বস্তি বোধ করার পরেই পড়ে যান।

২০১৯ সালের নভেম্বরে ইউরোপীয় হার্ট জার্নালে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছিল। সেই গবেষণা জানিয়েছিল, যে কোনও ধরনের সঙ্গীত, তা উচ্চস্বরে হোক বা নরম, একজন ব্যক্তিকে দুর্বল করে তুলতে পারে। গবেষকরা ৫০০ জন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের উপর গবেষণা চালান যাদের বাস বা কাজ ব্যস্ত বাজার এলাকায়। এরা সকলেই ক্রমাগত উচ্চস্বরে শব্দের সংস্পর্শে ছিলেন। পাঁচ বছর ধরে পরিচালিত এই সমীক্ষায় দেখা গেছে, যাদের হৃদরোগের কোনও উপসর্গই নেই তারাও কার্ডিওভাসকুলার রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

আরও পড়ুন- সুস্মিতা সেনের হার্ট অ্যাটাক! কেন চরম ‘ফিট’ মানুষও আক্রান্ত হচ্ছেন হৃদরোগে?

কার্ডিওভাসকুলার রোগের (বায়ু দূষণ সহ) কারণ হতে পারে এমন অন্যান্য বিষয়গুলির সঙ্গে তুলনা করার পরে গবেষকরা দেখেছেন যে ২৪ ঘণ্টায় গড় শব্দস্তরে প্রতি ৫ ডেসিবেল বৃদ্ধি হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং অন্যান্য গুরুতর হৃদরোগ ৩৪% বাড়িয়ে তোলে। এটি অ্যামিগডালাকেও (মস্তিষ্কের ধূসর পদার্থ) প্রভাবিত করে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দীর্ঘক্ষণ তীব্র শব্দের মধ্যে থাকার ফলে এই অংশটি সঙ্কুচিত হয়। যার ফলে খিটখিটে ভাব, মেজাজ পরিবর্তনের মতো সমস্যা দেখা দেয়।

জার্মানির মেইনজ ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টারে ৩৫ থেকে ৭৪ বছর বয়সী প্রায় ১৫,০০০ মানুষের উপরও এমনই এক সমীক্ষা করা হয়েছিল। সমীক্ষা বলছে, গান হোক বা আওয়াজ, একটা নির্দিষ্ট সীমার পরে তা বাড়লে মানুষের হৃদয়ে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। যখন কোনও ব্যক্তি উচ্চস্বরে সঙ্গীতের সংস্পর্শে আসেন, তখন হৃদস্পন্দন দ্রুত বৃদ্ধি পায়, ঠিক যেমন জগিং বা শারীরিক কসরতের সময় বেড়ে যায়।

অনিয়মিত হৃদস্পন্দনকে অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন (AFib) বলা হয় এবং এর কারণে হার্ট অ্যাটাক, ব্রেন স্ট্রোক এবং রক্ত ​​জমাট বাঁধার মতো বিপদ ঘটতে পারে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, রক্তচাপ বাড়ায় এমন যেকোনও কাজ বা ঘটনা ফাইব্রিলেশন ঘটাতে পারে। জোরে গান বা মিউজিকও একই কাণ্ড ঘটায়। এতে হৃৎপিণ্ডের উপরের দুই প্রকোষ্ঠে ঠিকমতো রক্ত পৌঁছয় না, যার কারণে নিচের প্রকোষ্ঠের রক্তপ্রবাহও ব্যাহত হয় এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

আরও পড়ুন- আয়ু কমছে ভারতীয়দের! প্রতিদিন কত কদম হাঁটলেই কমতে পারে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা?

খুব বেশি মাত্রায় শব্দ কানের সংবেদনশীল কোশকে ক্লান্ত করে। খুব বেশি সময় ধরে এমন বাজনা চললে কানের সেই কোশ স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যার ফলে শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়। বেশিরভাগ গবেষণাই বলছে, ৬০ ডেসিবেল পর্যন্ত শব্দ মানুষের কানের জন্য স্বাভাবিক। দীর্ঘক্ষণ হেডফোন ব্যবহার করা বা কনসার্ট, বার এবং ক্লাব বা বিয়ের অনুষ্ঠানে দীর্ঘক্ষণ বেশি শব্দের মধ্যে রইলে হতে পারে ভয়ঙ্কর বিপদ।

১৫ মিনিটের বেশি ১০০ ডেসিবেল শব্দ বা তার বেশি গান শোনা বা আওয়াজ থেকে বিরত থাকতে হবে, নাহলে শ্রবণ ক্ষমতা চলে যেতে পারে। ৫০-৭০ ডেসিবেলের বেশি শব্দ হার্ট ও মনকে প্রভাবিত করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, উচ্চস্বরে মিউজিক এবং অন্যান্য বিনোদনমূলক শব্দের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ থাকার ফলে প্রতি দুইজনের মধ্যে একজনের শ্রবণশক্তি হ্রাসের ঝুঁকি রয়েছে। গত বছর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিরাপদ আওয়াজের প্রেক্ষিতে জানিয়েছিল, ১২ থেকে ৩৫ বছর বয়সী মানুষ যারা মিউজিক ক্লাব বা কনসার্টে যান তারা শ্রবণ সমস্যার সম্মুখীন হন। এর মধ্যে, প্রায় ৪০ শতাংশ কিশোর এবং তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব পড়ে।

More Articles