কৌশল না স্মৃতিভ্রম! টাটা তাড়ানোর ইতিহাস নিয়ে মমতার মন্তব্যে দানা বাঁধছে জল্পনা

Mamata Banerjee: সিঙ্গুর প্রসঙ্গে মুখ‍্যমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে কী বলছেন শমীক লাহিড়ী, সুখেন্দুশেখর রায় ও শমীক ভট্টাচার্যরা?

অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে! বঙ্গের সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ফের প্রাসঙ্গিক এই কথায়! কেন? অনেকেই বলছেন, মানুষ যদি চোখে দেখা বন্ধ করে দেন তবেই হয়তো এমন বলতে পারেন! ঠিকই ধরেছেন, বলছি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা। উত্তরবঙ্গের একটি বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে গিয়ে সিঙ্গুর-টাটা প্রসঙ্গে তাঁর করা একটি মন্তব্যেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। অনেকেই বলছেন, একথা কীভাবে বলছেন মমতা! আবার কেউ কেউ বলছেন, এত সহজে সবকিছু গুলিয়ে নেওয়া যাবে না! এর মধ্যেও রয়েছে আসলে অন্য তত্ত্ব! কথার কথা হতেই পারে না এটাও!

'আমি নই, সিপিএম'
বুধবার উত্তরবঙ্গের একটি অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "কেউ কেউ বলছেন আমি নাকি সিঙ্গুর থেকে টাটাদের তাড়িয়ে দিয়েছি, বলছি আমি নই সিপিএম তাড়িয়েছে। ওরা মানুষের জমি জোর করে নিয়েছে আন্দোলন করেছি। আমাদের সময়ে এত কাজ হয়েছে কারওর জমি জোর করে নিইনি।''

টাটা-উবাচ
৩ অক্টোবর, ২০০৮। টাটা গোষ্ঠীর প্রধান রতন টাটা বলেছিলেন, 'বন্দুক ঠেকালেও যাব না বলেছিলাম, কিন্তু মমতা তো ট্রিগার চেপে দিলেন!' অর্থাৎ সিঙ্গুর এবং ন্যানো কারখানার স্বপ্নের বিদায়ে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দায়ী, একথা বলে দিয়েছেন স্বয়ং রতন টাটা।

আরও পড়ুন: পথের কাঁটা চিনেই সিঙ্গুর অস্ত্রে শান মমতার

১৮ মে, ২০০৬ সাল। যে রতন টাটা রাজ্যের উন্নয়নের শরিক হতে এসেছিলেন, তিনিই ২২ অগাস্ট, ২০০৮-এ বলেন, 'পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যদি আমাদের অবাঞ্ছিত বাসিন্দা মনে করেন আমরা সরে যাব।' যে ব্যক্তি এর আগেই বলেছিলেন, বন্দুক ঠেকালেও যাব না!

ঘটনা-পরম্পরা এবং সিঙ্গুর ছেড়ে টাটার চলে যাওয়ার দায় যে মমতার, একথা বারবার প্রমাণ করার চেষ্টা হয়েছিল। আবার বিপরীত দিক থেকে চেষ্টা হয়েছিল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিল্পের বিরুদ্ধে নন একথাও।

বুদ্ধদেব-অবস্থান
সিঙ্গুর আন্দোলন, মমতার অনশন-লড়াইয়ে রাজ্য সরকার 'হেরেছিল' শেষমেশ। জাতীয় সড়ক বন্ধের পরেও অপারগ ছিল সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয় হয়েছিল। বন্ধ হয় প্রকল্প। ফিরে যায় টাটাগোষ্ঠী। কিন্তু ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের বাম-প্রচার এবং ক্ষমতা হারানোর পরেও ৭৮ বছর বয়সের অসুস্থ পাম অ্যাভিনিউর বাসিন্দা, রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছিলেন, মমতার জন্য টাটা বিদায় নিয়েছে, বাধ্য হয়েছে প্রকল্প ছাড়তে, এই জিনিস আসলে বহু ছেলেমেয়ের ভবিষ্যত নষ্ট করবে। বহু লোকের চাকরি হতে পারত, তা হলো না। অন্যরা এখানে শিল্প আনতে ভয় পাবেন!

দায় যে মমতার, একথা স্পষ্ট করেছিলেন তিনি। একই সুরে শিল্পবিরোধী মমতার ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল সিপিআইএম। রাজ্যজুড়ে শুধু নয়, দেশজুড়ে টাটা-বিদায়, গুজরাতে রতন টাটার ন্যানো চলে যাওয়ার মধ্যে উঠে এসেছিল মমতার এক শিল্পবিরোধী ভাবমূর্তিও।

'প্যাথোলজিকাল লায়ার'
সেপ্টেম্বর, ২০১৪। প্রাক্তন বাম সরকারের মন্ত্রী গৌতম দেব মমতাকে প্যাথলজিকাল মিথ্যাবাদী বলে আক্রমণ করেছিলেন বারবার। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম-সভায় তিনি বলতেন, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্যাথলজিকাল লায়ার, পরীক্ষিত মিথ্যাবাদী।' তিনি ছবি থেকে শুরু করে ডিগ্রি সবকিছু নাকি মিথ্যা কথা বলেই বিক্রি করেন!

ফের একই কথা বলছেন রাজ্যের বর্তমান সিপিএম নেতারা। একই প্রশ্ন জেগেছে অনেকের মনেই। সত্যিই কি মিথ্যা বলছেন মমতা! ঠিক এখানেই উঠেছে আরও এক জল্পনাও।

'পরিকল্পিত মিথ্যাবাদী'
ইনস্ক্রিপ্ট-কে রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য জানান, ''মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসব ইচ্ছা করেই বলছেন। পরিকল্পনা করে। খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি, চাকরি চুরি, দুর্নীতি-সহ একাধিক ঘটনা থেকে নজর ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি একথা বলছেন। এটা পরিকল্পিত। যাতে অন্য দিক থেকে নজর ঘুরিয়ে দেওয়া যায়। সান্ধ্যকালীন বিতর্কের টপিক তৈরি করা যায়। সিঙ্গুর থেকে টাটাদের তাড়িয়েছেন, মানুষ জানেন। তাঁরা সব দেখছেন।''

মমতার মন্তব্যে সিপিআইএম নেতা শমীক লাহিড়ীর বক্তব্য, "মমতা পরিকল্পনা করে মিথ্যা বলেন, মিথ্যা রটান, যখনই বিপাকে পড়েন, আবোল তাবোল কিছু করেন বা বলেন। দুর্নীতি, বেকারত্ব, নিজের মন্ত্রী-নেতা থেকে চুনোপুঁটি সব ডাকাতগুলো ধরা পড়ছে। এইসব নিয়ে মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় নেত্রীর। তাই আলোচনা ঘোরাবার জন্য পরিকল্পনা করেই এই সব বলা।"

'মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা'
সত্যিই কি মিথ্যে কথা বলছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জলের মতো স্পষ্ট একটি আন্দোলনকে গুলিয়ে দিয়ে নিজের শিল্পবিরোধী ভাবমূর্তি কি নস্যাৎ করতে চাইছেন মমতা?

এই প্রসঙ্গে ইনস্ক্রিপ্টকে তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় বলছেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলছেন, তাঁর ভুল ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছে ৩৪ বছরে ৫৩ হাজারের বেশি ছোট-বড় শিল্প বন্ধ করার কারিগর সিপিএম। সেদিনের সেই আন্দোলন ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে, অনিচ্ছুক কৃষকদের পক্ষে। সেই অন্যায়ের বিপক্ষে। মমতা যে সঠিক ছিলেন, তা শীর্ষ আদালতের রায়েও প্রমাণ হয়েছে। আর আমাদের আন্দোলন তো টাটার বিরুদ্ধে ছিল না। এই রাজ্যে একাধিক সংস্থা কাজ করছে, টাটা গোষ্ঠীর। মমতার আন্দোলন ছিল জোর করে জমি নেওয়ার বিরুদ্ধে। সিপিএম এটা করেছিল, সেটাই বলেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য গুলিয়ে নিয়ে রাজনীতি করছে বিরোধীরা।''

সিঙ্গুর-উপাখ্যান
সবেমাত্র ২৩৫টি বিধানসভা আসনে জয় পেয়েছে বামেরা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। মন্ত্রিসভা গঠনের পরেই তিনি সচেষ্ট হলেন রাজ্যে শিল্প আনতে। একাধিক বিতর্ক, শালবনি প্রসঙ্গের সঙ্গেই রাজ্যে এল টাটা। হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালের পরে হুগলির সিঙ্গুরকে বাছা হলো টাটার ঐতিহাসিক ন্যানো গাড়ি তৈরির প্রথম কারখানা হিসেবে। সিদ্ধান্ত হল ওই অঞ্চলে তৈরি হবে ছোট গাড়ির প্রথম কারখানা।

জমি অধিগ্রহণ
ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতের ১৮৯৪ সালের জমি অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের সিঙ্গুর এলাকায় রাস্তার পাশে প্রায় ৯৯৭ একর জমি অধিগ্রহণ করল রাজ্য সরকার। সেখানে তৈরি হবে কারখানা।

জমি-বিতর্ক
অভিযোগ উঠল, বাম সরকার জোর করে জমি নিয়েছে। তিন ফসলি জমির উপর কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই হাত বাড়িয়েছে বাম সরকার। অনিচ্ছুক কৃষকদের কথা ভাবেনি। সরব হলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সিঙ্গুর এবং মমতার অবস্থান
১ ডিসেম্বর, ২০০৬। শীতের মধ্যেই উত্তপ্ত হল সিঙ্গুর। এদিকে তখন থেকেই নন্দীগ্রাম নিয়েও খানিকটা চাপে পড়েছে বাম সরকার। সিঙ্গুরে পুলিশ মমতার ধ্বস্তাধ্বস্তি দেখল বাংলা।

৪ ডিসেম্বর, ২০০৬। মমতার আন্দোলন রূপ নিল অনশনে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হয়ে কলকাতায় ২৬ দিনের অনশন শুরু করলেন তৃণমূল নেত্রী। দেশজুড়ে ছড়িয়ে গেল খবর। প্রবল চাপে পড়ল বাম সরকার। দিকে দিকে জনবিরোধী মুখ্যমন্ত্রী, প্রচার শুরু করল তৃণমূল। সাংসদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন দেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। মমতার আন্দোলনে যোগ দেন মেধা পাটেকর থেকে শুরু করে একাধিক সমাজকর্মীরা। পাশে দাঁড়ান রাজ্যের বুদ্ধিজীবীদের একটা বড় অংশ।

ঠিক এর মধ্যেই সামনে আসে তাপসী মালিক হত্যাকাণ্ড। ওই কিশোরীকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ ওঠে। খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হন সিপিএম নেতারা। আরও চাপে পড়ে সিপিএম।

২০০৮ সালের অগাস্ট মাসে ফের সিঙ্গুর ইস্যুতে অবস্থানে বসলেন মমতা। এবার রাস্তায় বাঁধলেন মঞ্চ। উত্তপ্ত হল সিঙ্গুর।

সিঙ্গুর নিয়ে রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর মধ্যস্থতায় বৈঠকে বসেন মমতা-বুদ্ধদেব। কিন্তু রফাসূত্র বেরোয়নি সেদিনও। ফের উত্তপ্ত হয় পরিস্থিতি। অবশেষে ২ বছর এই টালমাটাল পরিস্থিতি চলার পরে, পিছু হঠে টাটাগোষ্ঠী। প্রকল্প বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। ন্যানো পৌঁছয় নরেন্দ্র মোদীর গুজরাতের সানন্দে।

আদালতে সিঙ্গুর মামলা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার আগেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেবেন। সেই মোতাবেক চেষ্টা শুরু করেন তিনি। তার আগেই কলকাতা হাইকোর্টে ওঠে এই মামলা। কিন্তু নিষ্পত্তি না হওয়ায় জমি ফেরানো ইস্যুতে ফের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য। ২০১৬ সাল নাগাদ দেশের শীর্ষ আদালতের রায়ে জমি ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য। ৯৯৭ একর জমি, প্রায় ৯১৭৭ জন কৃষককে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ পায় রাজ্য সরকার। যদিও এর আগেই জমিদাতাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে মমতার সরকার।

২০১১ সাল নাগাদ। ক্ষমতায় আসার পরে, আদালতের আবহেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার রাজ্য বিধানসভায় সিঙ্গুর সংক্রান্ত একটি বিল পাশ করে। তা নিয়েও শুরু হয় বিতর্ক। আদালতের পথে এগোয় এই মামলাও।

সিঙ্গুর নিয়ে রাজনীতি
বঙ্গের রাজনৈতিক আবহে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম জুড়ে রয়েছে নিরন্তর। ভুল না ঠিক এই বিবেচনার মধ্যেই ২০১৬ সালের বিধানসভা, ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনেও বড় ইস্যু হয়েছে এই সিঙ্গুর। ২০২১ এর ম্যান অফ দ্য ম্যাচ শুভেন্দু-নন্দীগ্রাম ছাড়িয়ে সিঙ্গুর ইস্যুতে বারবার সরব হয়েছেন লকেট চট্টোপাধ্যায়রা। মমতার গতিপথে লেগে থেকেছে সিঙ্গুর। শিল্পের পক্ষে না বিপক্ষে, এই প্রশ্নের দোলাচলে শিল্প সম্মেলনের আবহেও মমতার সিঙ্গুর থেকেছে অনন্য।

সিঙ্গুরের বর্তমান অবস্থা
দীর্ঘ প্রকল্পের জমিতে গজিয়েছে আগাছা। মুখ্যমন্ত্রী শস্যের বীজ ছড়ালেও ওই জমিতে ফলেনি ফসল। প্রায় অন্ধকার আর ভঙ্গুর পরিকাঠামো নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সিঙ্গুর। জাতীয় সড়কের পাশের বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও ফাঁকা। অবস্থা কোনও পুরনো, ভঙ্গুর স্থানের মতো। চাষ শুরু হয়নি সেই ভাবে। হয়নি অন্য কোনও সুরাহা। মামলার দোলাচলেও আটকে থেকেছে সিঙ্গুর।

মমতা মন্তব্যে বিতর্ক
মমতার মুখে একাধিকবার সিঙ্গুর প্রসঙ্গ এলেও এদিনের এই 'তাড়িয়ে দিইনি আমি'; বলার মধ্যে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। প্রশ্ন উঠেছে, একথা কোন যুক্তিতে বলছেন মমতা। এই প্রসঙ্গে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন সাধারণ জনতার একটা অংশও। 

কৌশলী মমতা?
'সিঙ্গুর থেকে টাটা তাড়ায়নি,' এই মন্তব্য করে নয়া জল্পনা উসকে দেওয়ার পিছনে কি রয়েছে অন্য কোনও কারণ? এই বিষয়ে ব্যাখ্যা করেছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তাঁদের অনেকের দাবি;

প্রথমত, দুঁদে রাজনীতিক, পোড়খাওয়া নেত্রী বহু কালের অভিজ্ঞতা থেকে আলপাটকা এমন কিছু মন্তব্য করবেন না!

দ্বিতীয়ত, তিনি এমন কিছু বলবেন, যে মন্তব্য বা বক্তব্য থেকে বিতর্ক তৈরি হয়। এমনকী সেই আলোচনা এতটাই তীব্র হবে, যাতে তিনিও শিরোনামে থাকেন নিরন্তর!

তৃতীয়ত, জেনে বুঝেই এই সিঙ্গুর মন্তব্য করতে পারেন মমতা। কারণ; তিনি জানেন সিঙ্গুর নিয়ে তাঁর উপর দায় রয়েছে। তিনি বারবার সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন শিল্পবিরোধী ভাবমূর্তিতে। এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে এবং বর্তমান রাজ্যের নানা ইস্যুর মধ্যে মমতা এমন একটা কিছু বলবেন, যা সমস্ত লাইমলাইট নিয়ে নেবে নিমেষেই। যা ভেবেই এমন বলতে পারেন মমতা!

টেট ঢাকতে টাটা?
দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের চাকরি সংক্রান্ত অস্বস্তি, নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ, সরকার এবং তাঁর দলের প্রতি একাধিক চাপ, সমালোচনার মুখোমুখি হওয়া এক ধাক্কায় কমিয়ে দিতে, সিঙ্গুর প্রসঙ্গে এই মন্তব্যের পথে গিয়েছেন! যা হঠাৎ করেই ঘুরিয়ে দিয়েছে আলোচনার স্টিয়ারিং। রাজনৈতিক ভাবে ফের আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে অন্য ইস্যু। টেট-দুর্নীতি ঢাকার কৌশল, অর্থাৎ টেট ঢাকতে টাটার কথাই বলেছেন তিনি! সামগ্রিক এই অবস্থানে দাঁড়িয়ে, সমস্ত দিক আঁচ করেই টাটা এবং সিঙ্গুর নিয়ে এমন মন্তব্য করতে পারেন মমতা, বলছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একটা অংশ।

যদিও বিপরীত অংশের মত, এই মন্তব্যে তিনি যে শিল্প-বিরোধী নন, টাটা-বিদায়ে তাঁর থেকেও দায় বেশি ছিল বাম সরকারের, এই কথাও স্পষ্ট করতে পারেন মমতা।

More Articles