নখ দিয়ে যায় চেনা

আর্টিকেলের এরকম অদ্ভুত নাম দেখেই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন টপিকটা বেশ মজাদার এবং আকর্ষণীয় হতে চলেছে। আচ্ছা যদি আমি আপনাকে বলি আপনার শরীর এবং স্বাস্থ্য ভিতর থেকে কেমন তা কেবল আপনার নখের দিকে তাকিয়েই বলে দেওয়া যায়, আপনি কি বিশ্বাস করবেন? যদি বলি আপনার নখের রং আর গঠন দেখেই আপনি বুঝতে পারবেন কোনো মারণ রোগ বাসা বাঁধছে অন্দরমহলের এক কোণে, আপনি কি বিশ্বাস করবেন? আপনি কি বিশ্বাস করবেন যদি বলি, আপনার লিভার, লাং বা হার্টের অবস্থা বোঝা যায় আপনার নখের দিকে তাকিয়ে? আপনি বিশ্বাস করুন বা না করুন, চিকিৎসাশাস্ত্র কিন্তু বলছে,

'নখের আমি নখের তুমি, নখ দিয়ে যায় চেনা

নখের রঙে আটকে জীবন, নখ কে চিনবেনা?'

হ্যাঁ, আজ আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু হলো নখের রং। নখের রং দেখে কীভাবে বুঝবেন আপনার শরীর স্বাস্থ্যের হাল হাকিকত! আসুন জেনে নেওয়া যাক কোন রঙের নখ কোন সমাচার দিতে চায় -

১.  ফ্যাকাসে নখ:

আপনার নখের রঙ যদি ভীষণ ফ্যাকাসে হয়, তবে তা মোটেও আপনার জন্য সুখবর নয়। ডাক্তারদের মতে, নখের রং খুব ফ্যাকাসে হওয়া মানে কিছু মারাত্মক রোগের বসবাস হতে পারে আমাদের শরীরে। সেই রোগগুলি হলো যথাক্রমে -

■ কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিওর।

■ অ্যনেমিয়া বা রক্তাল্পতা।

■ অপুষ্টি

■ লিভারের রোগ

 

২. নীলচে নখ।

আপনার নখের রং যদি হালকা নীলচে হয়, তবে হতে পারে আপনার শরীরে পরিমান মতো অক্সিজেন পৌঁছাচ্ছে না। শরীরে ঠিকঠাক অক্সিজেনের সরবরাহ না থাকা মানেই ফুসফুস সংক্রান্ত রোগ আপনার দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে কলিংবেল বাজাচ্ছে। যেমন এম্ফিসেমা। এম্ফিসেমা হলে ফুসফুসের ছোটছোট এয়ার স্যাকের গুলোর ক্ষতি হয়।এছাড়াও হৃদয় এর রোগের সম্ভাবনাও প্রচুর।

৩. হলুদ নখ:

নখের রং হলুদ হওয়ার অন্যতম কারণ হলো ফাঙ্গাল ইনফেকশন। এ ছাড়াও আপনি যদি বেশি বেশি হলুদ দেওয়া রান্না খেয়ে ঠিক ভাবে হাত না ধুয়ে থাকেন, তবে নখের রং হলুদ হতেই পারে। কিন্তু সেই হলুদ কৃত্তিম হলুদ। ডাক্তারদের মতে যাদের নখ প্রাকৃতিক ভাবেই হলুদ রংয়ের তাদের নখে ফাঙ্গাল ইনফেকশনের সম্ভাবনা প্রচুর। যা ভবিষ্যতে নখের গঠনকে মোটা করে দিতে পারে। এ ছাড়াও কিছু রেয়ার কেসে হলুদ রঙয়ের নখ ইশারা করে থাইরয়েড, সুগার এবং ফুসফুসের রোগের দিকে।

৪. সাদা নখ:

যদি নখের অগ্র্যাংশের রং সাদা হয় এবং তার নিচে একটা কালো রঙয়ের বলয় থেকে থাকে তবে সাবধান আপনার লিভার সংক্রান্ত রোগ থাকতেই পারে। যেমন হেপাটাইটিস। এছাড়াও নখের রং সাদা হলে দেখবেন আপনার চামড়ার রং ও হালকা হলুদের দিকে, যা কিনা জন্ডিসের লক্ষ্মণ।

৫. ফাটা বা চিড় ধরা নখ:

নখ যদি অকারণেই শুকিয়ে যেতে থাকে এবং নিজে নিজেই ফেটে যেতে থাকে, চিড় ধরতে থাকে নখের দেওয়ালে তবে তা থাইরয়েড সংক্রান্ত রোগের লক্ষণ।

৬. নখের নিচে কালো কালো লাইন:

নখের নীচে কালো কালো লম্বা লাইন নেমে যাওয়া খুব একটা সুবিধার লক্ষণ নয়। এরকম হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত কারণ এটা মেলানোমা নামক এক অত্যন্ত বিপদজনক চর্মরোগের উপস্থিতির কথা জানান দেয়।

 

এ তো গেলো সমস্যার কথা। এবার আসি সমাধানে। ইংরাজিতে বলে Precaution is better than cure অর্থাৎ কোরোনা হয়ে হসপিটালে ভর্তি হওয়ার চেয়ে মাস্ক পরা স্যানিটাইজার ব্যবহার করা এবং সোশ্যাল ডিস্টেনসিং বজায় রাখা ভালো। বুঝতে পেরেছেন নিশ্চয়ই কি বলতে চাইছি! তবে আসুন আলোচনা করি কীভাবে আমরা নখ কে ভালোবাসতে পারি আজ থেকে।

নখের যত্ন নিন :

■ বেশি বেশি করে প্রোটিন যুক্ত খাবার খান। প্রোটিন যুক্ত খাবার আমাদের শরীরে কেরাটিনের পরিমান বাড়িয়ে দেয় যার ফলে শরীরে চুলের আর নখের সুবৃদ্ধি এবং সুস্বাস্থ্য বজায় থাকে। ভালো কোনও ডায়েটিশিয়ান আপনাকে বলে দিতে পারবে ওজন অনুযায়ী আপনার শরীরে কতটা প্রোটিন প্রয়োজন রোজ।

■ নখ কে অস্ত্র বা Tool হিসাবে ব্যবহার করা বন্ধ করে দিন আজ থেকেই। টিফিন বক্সের ঢাকনা খোলার জন্য, কোকের ক্যানের ঢাকনা খোলার জন্য, শক্ত দড়ির গিঁট খোলার জন্য নখের ব্যবহার বন্ধ করে দিন। এতে আপনার নখের সুস্বাস্থ্য বজায় থাকবে।

■ নখ বেশি লম্বা করবেন না। খুব বেশি লম্বা হওয়ার আগেই নখ কেটে ফেলুন ছোট ছোট করে। সবদিক থেকে সমান্তরাল আকারে কাটবেন যাতে নখের বৃদ্ধি ছোট বড় না হয়।

■ নখ পালিশ করুন মাঝে মধ্যেই। নেলপেন্ট বা নেল কালার করতে বলছি না, নাইলন ফাইবার সমৃদ্ধ ক্লিয়ার পালিশ ব্যবহার করুন সপ্তাহে অন্তত একবার। নখ এর মলম লাগাতে পারেন ডাক্তারের থেকে পারমিশন নিয়ে।

■ কেমিক্যাল কাজের সাথে যুক্ত হলে গ্লাভস পরুন। ঘরের কাজ যেমন বাসন ধোয়া, ঘর পরিষ্কার করার সময়ও গ্লাভস পরুন। আর্টিফিশিয়াল নখের ব্যবহার বন্ধ করুন কারণ আর্টিফিশিয়াল নখ ব্যবহার করলে যে আটা বা গ্লু নখে লাগাতে হয় তা খুবই ক্ষতিকারক। এই গ্লু নখের গঠনকে দুর্বল করে দেয়।

নখ পরিষ্কার রাখুন।

শরীর আকাশ হলে, নখ অনেকটা আবহাওয়া দফতরের মতন। তার কাজ পূর্বাভাস দেওয়া। রোগের কালো কালো মেঘ ভেসে আসার আগেই শরীরকে দুর্যোগের সম্ভাবনার কথা জানান দেওয়া। তাই নখ কাটলে ব্যথা না লাগলেও, নখ কে অঙ্গ না ভাবা বন্ধ করতে হবে। নখ পড়তে শিখতে হবে, নখের যত্ন নিতে শিখতে হবে।

Source: https://www.webmd.com

More Articles