দুইবোন মাত্র কথা বলতে পারেন আর, কীভাবে খাদের ধারে পৌঁছল বাংলাদেশের এই ভাষা?

Endangered language Kharia : বর্তমানে এই ভাষা জানা মানুষ বলতে মাত্র দুই জন। তাঁদেরও বয়স প্রায় আশি ছুঁইছুঁই। তাঁরা মারা গেলেই পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে একটা আস্ত ভাষা।

একটা গোটা ভাষার অধিকারী মাত্র দুজন, শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। বাংলাদেশে রয়েছে এমনই একটি ভাষা, যে ভাষায় কথা বলতে পারেন শুধুমাত্র দুই বোন। তাঁদের অবর্তমানে এই ভাষার ভবিষ্যত একপ্রকার অন্ধকার বলাই চলে। ভাষাটির নাম ‘খাড়িয়া’। বর্তমানে এই ভাষা জানা মানুষ বলতে মাত্র দুই জন। তাঁদেরও বয়স প্রায় আশি ছুঁইছুঁই। আর তাঁরা মারা গেলেই পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে একটা আস্ত ভাষা। কেবলমাত্র ইতিহাসের পাতায় জায়গা পাবে ‘খাড়িয়া’।

বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার ফিনলে টি কোম্পানির বর্মাছড়া চা বাগানের বস্তিতে থাকেন এই দুই বোন। তাঁদেরই মাতৃ ভাষা এই ‘খাড়িয়া’। যদিও এই ভাষাতে কথা বলার সুযোগ তাঁরা বিশেষ পান না। আশেপাশের কেউই এই ভাষা বুঝতে পারেন না। কেউ কেউ আবার উড়িয়া ভাষার সঙ্গে সামঞ্জস্য খুঁজে পান। ফলে বাংলাতেই বেশি কথা বলতে হয় তাঁদের। এমনকী পরিবর্তী প্রজন্ম এই ভাষায় কথা বলতে শুনলে রীতিমতো হাসি ঠাট্টা করে। এই সবের কারণেই ধীরে ধীরে ব্যবহারিক জীবন থেকে হারিয়ে যেতে থাকে খাড়িয়া ভাষাটি।

আরও পড়ুন - বিশ্বের দীর্ঘতম ভাষা আন্দোলন ঘটেছিল এই বাংলায়, জানেন কীভাবে জন্ম হয়েছিল পুরুলিয়া জেলার

এই দুই বোনের নাম ভেরোনিকা কেরকেটা ও খ্রিস্টিনা কেরকেটা। তাঁরা ছাড়া পরিবারের আর কেউই জানে না এই ভাষা। অথচ ওই অঞ্চলে প্রায় ১১০টি খাড়িয়া পরিবারের বসবাস, কিন্তু ভাষার চর্চা একেবারেই নেই। বিশ্ব ভাষার তালিকায় ঠিক কতো নম্বরে জায়গা পাবে খাড়িয়া, এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা তো দূর, ভাষা বাঁচাতেই রীতিমতো বেগ পাওয়ার জোগাড় এখন। সম্প্রতি বিশ্ব জুড়ে পালিত হল আন্তর্জাতিক মাতৃ ভাষা দিবস, অথচ অচিরেই যে একটা মাতৃ ভাষা হারিয়ে যেতে বসেছে সেই হিসেব রাখে কজন!

২০২০ সাল থেকে “খাড়িয়া” জনসংখ্যার ওপর একটি সমীক্ষা পরিচালনা করেছেন “খাড়িয়া” ভাষা রক্ষার উদ্যোক্তা ও সমাজকর্মী পিউস নানোয়ার।তিনি জানান, বাংলাদেশে ৪১টি গ্রামে প্রায় ৫,৭০০ জন “খাড়িয়া” জনগোষ্ঠীর মানুষের খোঁজ পাওয়া গেছে। যদিও তাদের মধ্যে সিংহভাগ মানুষই আর এই ভাষায় কথা বলেন না। নতুন প্রজন্ম হয়তো ভাষার একটা বা দুটো শব্দ জানে মাত্র। এমনকী বাংলাদেশে খাড়িয়াদের নিজস্ব কোনও বর্ণমালা পর্যন্ত নেই।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে ৪০টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা রয়েছে। এর মধ্যে খাড়িয়াসহ আরও ১৪টি ভাষাকে বিপন্ন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা। তাই এখনই যদি সংরক্ষণের পথে না হাঁটা যায় তবে অচিরেই হয়তো সেগুলোও হারিয়ে যাবে যে কোনও দিন। আর একটু ভালো ভাষাই তো জন্ম দিতে পারে চিরন্তন ভালোবাসার, তাই ভাষাকে আগলে রাখা একান্ত কর্তব্য।

More Articles