২৭৩ বছরের রীতি অমলিন, এই পুজোয় পান্তাভাত আর কচু শাকের ভোগেই সন্তুষ্ট দুর্গা

Durgapuja 2022: দশমীর দিন ভোগ দেওয়া হয় পান্তা ভাত, কচু শাক। কারণ, দশমীর দিন অরন্ধন হিসেবে পালিত হয়। সে দিন রান্না হয় না।

আলপনা, ফলকাটা, পুজোর আয়োজন শুধুই বাড়ির মেয়েদের কাজ নয়। পরিবারের নারী পুরুষ নির্বিশেষে হাতে হাতে কাজ করাটাই অনন্য রীতি বারুইপুরের বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির। বারুইপুরের আদি গঙ্গা সংলগ্ন কল্যাণপুরের বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়িতে দুর্গাপুজোর নৈবেদ্য সাজনো থেকে ফল কাটা সবই করেন বাড়ির ছেলেরাও। যা দেখতেই পুজোর ক’দিন মানুষজনের বিশেষ ভিড় লেগে থাকে। ১১৫৭ সালে পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল থেকে জমিদার সহস্ররাম বন্দোপাধ্যায় এসে বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়িতে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর থেকে বংশ পরম্পরায় দুর্গাপুজো হয়ে আসছে এই দুর্গা মন্দিরে। এখন চলছে দুর্গা মন্দিরে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। রঙের প্রলেপ পড়ছে মন্দিরে। বর্তমানে এই বাড়ির সদস্যরা কেউ থাকেন মুম্বইতে, কেউ বেঙ্গালুরুতে, কেউ বা আবার আমেরিকায়। তবে, ঠিক সিনেমার মতোই, বাড়ির পুজোর টানে সবাই চলে আসেন পুজোর এই কয়েকটা দিন।

রথের দিন থেকে কাঠামো পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়। প্রতিপদেই বসে ঘট। কুলপুরোহিতের সঙ্গে তন্ত্রধারক মিলে শুরু করেন চণ্ডীপাঠ। বাড়ির গিন্নি কল্পনা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যেদিন থেকে ঘট বসে দুর্গা মন্দিরে, সেইদিন থেকেই পরিবারে মাছ ছাড়া মাংস, ডিম, পেঁয়াজ এসব কিছুই খাওয়া হয় না। এই প্রথা চলে লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত। বকখালির নবগ্রাম থেকে পুজোর কয়েকটা দিন কাজের জন্য ছেলেরা আসে, তারাই পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে গঙ্গাজল আনা সবটা করে থাকে। মায়ের বোধন শুরু হয় দরমার বেড়া দিয়ে বেলগাছ ঘিরে।”

আরও পড়ুন- মূল্যবৃদ্ধির কোপে দুর্গাও! এই বাজারে কতদিন টিকবে সাবেকি ডাকের সাজ?

বাড়ির পুত্রবধূ, পেশায় শিক্ষিকা রুমকি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পুরোনো ঐতিহ্যকে বজায় রেখেই একমাত্র এই বাড়িতেই পুজার কয়েকটা দিন ফলকাটা থেকে শুরু করে নৈবেদ্য সাজানো সব কাজ বাড়ির ছেলেরাই করে। দীক্ষিত মহিলারাই পায় পুজোর ভোগ রান্নার অনুমতি। বংশ পরম্পরায় বাড়ির পরিবারের গৃহবধূরা পালাক্রমে মায়ের বরণ সারেন।” তিনি আরও বলেন, “সমস্ত পুজোর কলাবউ স্নান যখন আদি গঙ্গায় বা পুকুরে হয়, তখন এই পরিবারে সেই স্নান হয় মন্দিরের ভিতরেই। সপ্তমীর দিন মন্দির সংলগ্ন চাতালে যূপকাষ্ঠে হয় পাঁঠা বলি, এছাড়া অষ্টমীর দিন ও সন্ধিপুজার সময়ও পাঁঠাবলির রীতি রয়েছে।” এই বাড়িতে নবমীর দিনও পাঁঠা ও শস্য বলি হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন- কোনও পুরুষই সামলাতে পারেননি কোহিনূর! কোন মন্ত্রে ‘অভিশপ্ত’ হিরের নতুন মালিক হচ্ছেন ক্যামিলা!

পুজোর কয়েকটা দিন দুর্গার ভোগ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। সপ্তমী থেকে নবমী ভোগের নানা পদে মাছ, মাংস, ডাল, খিচুড়ি সবই দেওয়া হয়। কিন্তু দশমীর দিন ভোগ দেওয়া হয় পান্তা ভাত, কচু শাক। কারণ, দশমীর দিন অরন্ধন হিসেবে পালিত হয়। সে দিন রান্না হয় না। নবমীর ভোগের পর ফের দশমীর রান্নার আয়োজন করা হয়। দশমীর দিন মহিলাদের সিঁদুরখেলা দেখতেই ভিড় জমে যায় বাড়িতে।

More Articles