সঙ্গমরত যুগলের ওপর গরম আঠা, শেষে কুপিয়ে খুন, তান্ত্রিকের বীভৎস প্রতিশোধের সাক্ষী ভারত

Rajasthan Tantrik kills Couple : ওই যুগলকে সে-ই খুন করেছে। তারপর যে কাহিনির বিবরণ দিল, তা শুনে পুলিসেরও গায়ের লোম খাঁড়া হয়ে যায়…

ভারতের জনপ্রিয় আঠা প্রস্তুতকারক সংস্থার বিজ্ঞাপনের একটি লাইন প্রবলভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। ‘জীবনকে জুড়ে দেয়’। এখনও মানুষের মুখে মুখে ঘোরে এই লাইনটি। কিন্তু সেই আঠাই যখন হয়ে ওঠে খুনের অস্ত্র? কুসংস্কারের সুযোগ নিয়ে এদেশে একের পর এক অপরাধ হয়। কখনও সাধু, কখনও জ্যোতিষ, তান্ত্রিকের বেশে লুকিয়ে থাকে অপরাধ। কিন্তু তাই বলে সঙ্গমরত যুগলের ওপর আঠা ঢেলে নৃশংসভাবে খুন? এমন দৃশ্য কি এর আগে কখনও দেখেছে ভারত?

২০২২ সালের নভেম্বর মাস। রাজস্থানের উদয়পুরের কেলাবাভদি এলাকার বেশ কিছুটা অংশ জঙ্গলাকীর্ণ। কিছুটা শুনশান, ঘন ঝোপঝাড়, গাছপালায় ঘেরা। সেখানেই হঠাৎ দুই যুগলের ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ পাওয়া যায়। খবর পাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে সেখানে হাজির হয় পুলিস। যাওয়ার পর পুরো থ মেরে যান অফিসাররা। অন্তত তিনদিনের পুরনো লাশ হবে; দু’জনেই সম্পূর্ণ নগ্ন। এবং আরও বড় ব্যাপার, দু’জনেই সঙ্গমরত অবস্থায় রয়েছেন সেটা বোঝা যায়। অবৈধ সম্পর্ক? তার জেরে খুন, না আত্মহত্যা? এত প্রশ্নের ভিড়েও সেই যুগলের মৃতদেহ দেখে অন্যরকম একটা গন্ধ পান পুলিস অফিসাররা। দুজনের শরীরই বীভৎসভাবে কোপানো হয়েছে। পুরুষটির গলার নলি কাটা। দু’জনেরই শরীরের ওপর কিছু একটা ছড়ানো রয়েছে। ব্যাপারটা একটু ঘাঁটার পরই বোঝা গেল, এই ছড়িয়ে থাকা বস্তুটি আসলে আঠা। কিন্তু কেন এটি ছড়ানো রয়েছে এখানে?

বীভৎস এই মৃতদেহ দু’টি উদ্ধারের পর শোরগোল শুরু হয়ে যায়। সেইসঙ্গে শুরু হয় তদন্ত। জানা যায়, ওই এলাকার আশেপাশে মোট ৫০টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো রয়েছে। ব্যস, সমস্ত ক্যামেরার ফুটেজ তন্নতন্ন করে দেখা হয়। আশেপাশে বসবাসকারী মানুষদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেই সময়ই একজনের কথা বারবার সামনে আসে। এক তান্ত্রিক, নাম ভলেশ কুমার। সিসিটিভি ফুটেজেও ওই দু’জনের সঙ্গে তান্ত্রিক গোছের এক ব্যক্তিকেও দেখা যায়। তাহলে সে-ই ভলেশ কুমার হবে। কিন্তু তার সঙ্গে এই খুনের কী যোগ?

আরও পড়ুন : ৩০০ জনেরও বেশি কিশোরীকে ধর্ষণ, খুন! এখনও বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই সিরিয়াল কিলার

তড়িঘড়ি খোঁজখবর শুরু হল। ভলেশ কুমারের খোঁজও পাওয়া গেল। থানায় নিয়ে এসে শুরু হল জেরা। দুঁদে পুলিস অফিসারদেরও মনে হতে লাগল, এই ব্যক্তির সঙ্গে নিশ্চয়ই ঘটনার কোনও যোগসূত্র রয়েছে। অব্যর্থ সন্দেহ! দীর্ঘ জেরার সময়ই ভেঙে পড়ে ওই তান্ত্রিক। পুলিসের সামনে কবুল করে খুনের কথা। ওই যুগলকে সে-ই খুন করেছে। তারপর যে কাহিনির বিবরণ দিল, তা শুনে পুলিসেরও গায়ের লোম খাঁড়া হয়ে যায়…

অবৈধ সম্পর্কের শুরু

রাজস্থানের উদয়পুরে ভাদাভি গুদা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করতেন ৩০ বছরের যুবক রাহুল মিনা। পেশায় শিক্ষক ছিলেন তিনি। বিয়েও হয়ে গিয়েছে তাঁর; এক কথায় সুখী সংসারের ছবি। এলাকার ইচ্ছাপূর্ণ শেষনাগ ভাবজি মন্দিরে প্রায়ই পরিবারের সঙ্গে যেতেন তিনি। কেবল পূজার্চনার জন্য নয়, তন্ত্র মন্ত্র ও জ্যোতিষচর্চাও চলত মন্দির চত্বরে। সেখানেই আসতেন ২৮ বছর বয়সী সোনু কুনওয়ার। তিনিও বিবাহিতা ছিলেন। সেই মন্দিরেই রাহুল আর সোনু পরস্পরকে প্রথমবার দেখেন।

কথায় বলে, প্রেম অতি বিষম বস্তু। সুন্দর মুহূর্তের পাশাপাশি কাঁটায় বিছানো পথও তৈরি রাখে। রাহুল আর সোনুর ক্ষেত্রে এই কাঁটাপথই হয়ে উঠল ভবিতব্য। মন্দির থেকেই দু’জনের আলাপচারিতা শুরু। তারপর বন্ধুত্ব, সেখান থেকে প্রেম। রাহুল, সোনু – দুজনেই নিজেদের সংসার একপাশে সরিয়ে প্রেমে মত্ত হয়ে উঠেছিলেন। স্বামীর জীবনে কিছু তো বদল এসেছে, বুঝতে পেরেছিলেন রাহুল মিনার স্ত্রী। অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন নাকি? সন্দেহ ক্রমশ গাঢ় হচ্ছিল। তবে এসবের আড়ালে আরও একজন সেই সম্পর্কের দিকে চোখ রেখেছিল। শেষনাগ ভাবজি মন্দিরের সেই তান্ত্রিক – ভলেশ কুমার। তার কাছেই আসত রাহুল আর সোনুর পরিবার। সুতরাং আড়াল থেকে গোটা ব্যাপারটির দিকেই নজর রেখেছিল ভলেশ।

আরও পড়ুন : পৃথিবীর সবচেয়ে কমবয়সি সিরিয়াল কিলার আছে ভারতেই! যে নৃশংসতায় হার মানবে সিনেমা

দীর্ঘ ৭-৮ বছর ধরে ওই মন্দিরেই থাকত ভলেশ। তন্ত্রবিদ্যার সাধনাই ছিল তার উপার্জন ও আশ্রয়ের পথ। ওই অঞ্চলে বেশ পরিচিতিও হয়ে গিয়েছিল তার। সোনু কুনওয়ালের পরিবার যখন তার কাছে আসে, তখনই টনক নড়ে ভলেশের। নজর পড়ে সোনুর ওপর। তারও ভালো লাগে ওই বিবাহিতা যুবতীকে। কিন্তু পুরো ব্যাপারে সামনে চলে আসেন রাহুল মিনা। রাহুলের সঙ্গে সোনুর সম্পর্ক হয়তো মেনে নিতে পারেনি ভলেশ। তাই আসল কাজটি তড়িঘড়ি করে ফেললেন। রাহুলের স্ত্রীকে গিয়ে সমস্ত ব্যাপারটি বলে দিলেন।

আগুনে ঘি পড়াই বোধহয় বাকি ছিল। রাহুলের বাড়িতে অশান্তি চরমে উঠল। কিন্তু বাড়ি অবধি খবর পৌঁছল কী করে? ওই শিক্ষক রাহুল জানতে পারেন, মন্দিরের তান্ত্রিক ভলেশই তাঁর স্ত্রীকে সমস্ত বিষয় বলে দেয়। ব্যস, মাথায় আগুন চড়ে যায় রাহুলের। সমস্ত বিষয়টি সোনুকে জানান তিনি। তারপর দুজনে চলে যান ভলেশের কাছে। শুরু হয় তীব্র বাদানুবাদ। এক পর্যায়ে গিয়ে ভলেশকে রীতিমতো শাসানি দেন রাহুল ও সোনু। এরকম করলে সোজা পুলিসের কাছে গিয়ে মিথ্যা শ্লীলতাহানির মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে – এমন কথা বলে সেখান থেকে চলে যান রাহুল ও সোনু।

শেষের কথাটিই যাবতীয় চিন্তার কারণ হয়ে ওঠে। ভলেশের মাথায় হাত পড়ে। এঁরা যদি সত্যি সত্যিই পুলিসের কাছে চলে যায়? তাহলে এতদিনের মান-সম্মান তো ধুলোয় মিশে যাবে! চরম প্রতিশোধ নিতে হবে। এমন প্রতিশোধ, যাতে সে-ও বাঁচবে, আর এই দুজনও জন্মের মতো ‘শিক্ষা’ পাবে। এখান থেকেই শুরু হয় খুনের পরিকল্পনা।

খুনের চক্রান্ত

১৫ নভেম্বর, ২০২২। ভলেশ দোকান থেকে কিনে আনে ৫০ টিউব সুপারগ্লু। এই আঠা যথেষ্ট শক্তিশালী, একবার চামড়ায় পড়লে সহজে টেনে তোলা যায় না। একেবারে চামড়া সমেত ছিঁড়ে চলে আসে। সেই ৫০ টিউব সুপারগ্লু একসঙ্গে জড়ো করে গলিয়ে ফেলে ভলেশ। একটা বোতলে সেটি নিয়ে ডাক দেয় রাহুল আর সোনুকে। বলে, তোমাদের যাবতীয় সমস্যা আজই মিটিয়ে দিচ্ছি। তন্ত্র মন্ত্রের কথা বলে রাহুল-সোনুর ভরসা আদায় করে সে। তারপর নিয়ে যায় কেলাবাভদির সেই জঙ্গলে।

আরও পড়ুন : মাথা কেটে দেহ থেকে ছেঁড়া হল চামড়া! পাকিস্তানের হিন্দু মহিলাকে যে ভাবে খুন করা হয়েছে

এরপরই শুরু হয় আসল খেলা। ভলেশ ওই যুগলকে বলে, তোমরা এখন থেকে দম্পতির মতোই থাকবে। কিন্তু তার আগে দম্পতি হওয়ার প্রমাণ দিতে হবে। কী প্রমাণ? ভলেশের সামনেই দু’জনকে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে সঙ্গমে লিপ্ত হতে হবে। একটু অবাক লাগলেও, অন্ধবিশ্বাসের বশে সেই কাজটিও করে রাহুল আর সোনু। পোশাক খুলে ওই জায়গাতেই পরস্পর সঙ্গম করতে শুরু করে। এই মুহূর্তটিরই অপেক্ষায় ছিল ভলেশ। তড়িঘড়ি গিয়ে সেই গলানো সুপারগ্লু এনে ওই যুগলের ওপর ঢেলে দেয়। শক্তিশালী সেই আঠা যত চেপে বসে, ততই ছটফট করতে থাকেন দুজনে। ছাড়ানোর চেষ্টা করতে গেলে হিতে বিপরীত হয়। দুজনেরই শরীরের চামড়া ছিঁড়তে শুরু করে। এমনকী, রাহুল মিনার লিঙ্গও শরীর থেকে আলাদা হয়ে যায়। সোনু কুনওয়ালের যোনিও ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়।

শেষমেশ ধারালো ছুরি এনে রাহুলের গলার নলি কেটে দেয় ভলেশ। আর সোনুকে কুপিয়ে খুন করে। ভলেশ ভেবেছিল, এমন আপত্তিকর অবস্থায় দেখলে স্থানীয়রা ওদের অবৈধ সম্পর্ক নিয়ে আরও ব্যস্ত হয়ে পড়বে। ততক্ষণে ভলেশ অন্য কোথাও চলে যাবে। সে বেঁচে যাবে। কিন্তু হিতে বিপরীতও যে হতে পারে, সেই কথা তার মনে হয়নি। শেষমেশ সে ধরা পড়ে।

More Articles