করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে চিনে, তবে কি শেষ হয়নি অতিমারী?
যত কাণ্ড সেই চিনেই। শেষ হয়েও যেন ঘাড়ের কাছে দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়ছে করোনা অতিমারী। আর তাতেই নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না বিশ্বের চিকিৎসক মহল ও সাধারণ নাগরিকরা। গোটা বিশ্বে যখন করোনার দাপট নিম্নগামী তখন ভয় ধরাচ্ছে চিনের সংক্রমণ পরিস্থিতি। গত দুবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। সংক্রমণ রুখতে ফের একবার লকডাউনের পথে হেঁটেছে দেশের সরকার। ঘরবন্দী করা হয়েছে চিনের একাধিক শহরের মানুষকে।
সর্বশেষ পাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯ প্রদেশে ৫২৮০ জনেরও বেশি মানুষ কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন চিনে। এর মধ্যে ১,৮০৭ জনের মধ্যেই সংক্রমণের একাধিক লক্ষণ উপস্থিত রয়েছে। নতুন করে সংক্রমণ যেন ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য লকডাউনের পাশাপাশি ভ্রমণ বিধিনিষেধও জারি করা হয়েছে। জিলিন শহরে আংশিক লকডাউন চলছে। চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সংক্রমণের হার। শনিবার নতুন করে সংক্রামিতের সংখ্যা ছিল ১৮০০, যা শুক্রবারের তুলনায় তিনগুণেরও বেশি। শুক্রবার কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৭৬। আজ সেই সংখ্যাটাই পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। ফলে অনেকেই মনে করছেন, করোনার চতুর্থ ঢেউয়ে জর্জরিত চিন।
উত্তর-পূর্ব চিনের চাংচুন প্রদেশের ৯ মিলিয়ন মানে নব্বই লক্ষ বাসিন্দাকে এই মুহূর্তে বাড়ি থেকে কাজের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। জরুরী পরিষেবা ছাড়া বাকি সবকিছু বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ব্যাপক হারে করোনা পরীক্ষার কথাও জানিয়েছে প্রশাসন। চাংচুনের রাজধানী জিলিন দেশের অন্যতম বানিজ্য কেন্দ্র।নতুন নির্দেশ অনুযায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার জন্য জিলিনের অধিবাসীরা দুদিন অন্তর বাজার যেতে পারবেন।
জাং ইয়ন, জিলিন শহরের এক স্বাস্থ্যকর্তা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন,' প্রথমদিকে সংক্রমণ রুখতে যথাযথভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। সংক্রমণের চরিত্র বুঝতেও বেশ কিছুটা সময় লেগেছে।সে কারণে জরুরী পরিষেবা খানিক ব্যাহত হয়েছে '।তিনি আরও জানিয়েছেন,' সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার অন্যতম কারণ শহরের স্বাস্থ্য দপ্তরের অপ্রস্তুতি। যার ফলে নতুন করে সংক্রমিতদের প্রথম থেকেই পরীক্ষা ও আলাদা করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া সংক্রমিতদের বেশিরভাগই লক্ষণবিহীন তাই সমস্যা আরও বেশি হচ্ছে'। চিনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়েছে, অব্যবস্থার জেরে জিলিনের মেয়র ও চাংচুন স্বাস্থ্য কমিশনের প্রধানকে শনিবার বরখাস্ত করেছে প্রশাসন।
দেশের অন্য আরেক বানিজ্য ও প্রযুক্তিকেন্দ্র দক্ষিণের শেনজহেন শহর। রবিবার নতুন করে ৬৬ জন করোনা আক্রান্ত হতেই তিন পর্যায়ে করোনা পরীক্ষার করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নতুন করে আক্রান্তদের মধ্যে ৬ জনের শরীরে করোনার কোনো লক্ষণ নেই। ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত শেনজহেনেই ৪৩২ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। সমস্ত ধরণের গণপরিবহন ব্যবস্থা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে শহরে। নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে সীমান্তেও।উত্তর কোরিয়ার ইয়ানজিতেও প্রায় সাত লক্ষ মানুষকে ঘরবন্দি থাকতে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। দেশের অর্থনৈতিক কেন্দ্র সাংহাইতেও জারি হয়েছে লকডাউন।
গত কয়েকদিনে সংক্রমণের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী হতেই দেশের স্বাস্থ্য দপ্তর ওমিক্রণ ও ডেল্টা উভয়প্রকার ভেরিয়েন্ট নিয়েই সাবধান করেছেন সাধারণ মানুষকে। তবে স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে যারা নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছে তাঁদের বেশিরভাগই ওমিক্রনে আক্রান্ত। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় দৈনিক সংক্রমণের হার কম হলেও প্রথম থেকে কোমড় বেঁধে নেমেছেন প্রশাসন। চিনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সন চুলান শনিবার দেশের সমস্ত প্রদেশের স্বাস্থ্যকর্তাদের শূন্য কোভিড কেস নীতি অনুসরণ করে যত দ্রুত সম্ভব সংক্রমণ সামলানোর জন্য আবেদন জানিয়েছেন। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যখন সবেমাত্র ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে এমন সময়ে কোনো ঝুঁকি নিতে নারাজ চিন সরকার।
২০১৯ সালে চিনের উহান প্রদেশে প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের হদিশ মেলে। চিন থেকেই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে। শুরু থেকেই ভাইরাসের দাপটে নাজেহাল অবস্থা গোটা বিশ্বের। একের পর এক সংক্রমণের ঢেউয়ে সংক্রমণের পাশাপাশি প্রাণ হারিয়েছেন কয়েক লক্ষ মানুষ। এই মুহূর্তে বিশ্বজুড়ে করোনার গ্রাফ যখন নিম্নমুখী তখন চিনে নতুন করে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার খবর ভয় ধরাচ্ছে সকলকে।তবে কি এখনই শেষ হয়নি অতিমারী?