ভয়াবহ মারণাস্ত্র রাশিয়ার হাতে, ফিরে আসছে ঠান্ডা যুদ্ধের স্মৃতি?

ইউক্রেনের মাটিকে বোমার চাদরে মুড়িয়ে দিলেও এখনও তাদের বশ্যতা স্বীকার করাতে পারেনি রুশ বাহিনী। যুদ্ধ এখনও চলছে। পশ্চিমি দেশগুলোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও উঠে যায়নি। এরই মধ্যে রাশিয়া পরীক্ষা করল নতুন আইসিবিএম বা আন্তর্মহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল, যার নাম দেওয়া হয়েছে সার্মত। রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন দাবি করছেন, রাশিয়ার শত্রুরা এবার তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আগে দু'বার ভাববে।

কীসের ভিত্তি এই দাবি করছেন পুতিন? কি ক্ষমতা এই সার্মতের?

২০২১ সালের শুরুতেই এই মিসাইলের প্রথম পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু কিছু অজানা কারণে তা প্রথমে পিছিয়ে ডিসেম্বরে নির্ধারিত হয়, ফের পরীক্ষা পিছিয়ে চলে আসে একেবারে ২০২২ সালের এপ্রিলে। বুধবার রাশিয়ার উত্তর পশ্চিমের প্লেসেতস্ক শহর থেকে কামচটকা উপদ্বীপে যাত্রা করে এই মিসাইল। দূরত্ব- ছয় হাজার কিলোমিটার। রাশিয়ার সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্তি হওয়ার আগে সার্মতের আরও পাঁচবার পরীক্ষা হবে। মিসাইল প্রক্ষেপণের আগেও বিশেষভাবে সার্মতের পরীক্ষা হয়।

আরও পড়ুন: সত্যিই কি শুরু হয়ে গেল তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ?

তবে এই খবরে নতুন কোনও চমক নেই। ২০১২ সালে আইনসভার ভাষণেই পুতিন স্পষ্ট করে দেন যে, তিনি পুরনো সমস্ত আন্তর্মহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইলকে বাতিল করে
নতুন সার্মত মিসাইল সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিতে চান। আরও মজার ব্যাপার হলো, মিসাইলের প্রযুক্তি নির্মাণের কাজ ২০০৯ থেকে ২০১১-র মধ্যেই শুরু হয়েছিল, এবং সেই কাজ গতি পায় রাশিয়ার ক্রাইমিয়া অভিযানের সময়।

আরএস-২৮ সার্মত প্রায় দশ, এমনকী, প্রয়োজনে তারও বেশি পরমাণু অস্ত্র বহন করার ক্ষমতা রাখে। সেই সঙ্গে এর যাত্রা-ক্ষমতা বা পাল্লাও যথেষ্ট আতঙ্কের সৃষ্টি করবে শত্রু দেশে, এমনই মনে করা হচ্ছে। ১১,০০০ থেকে ১৮,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত যাত্রা করার ক্ষমতা রাখে এই মিসাইল। সার্মতের সবচেয়ে বড় ক্ষমতা হল, এটি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসকারী র‌্যাডারকেও ফাঁকি দিতে সক্ষম। সার্মত হাইপারসনিক বুস্ট মিসাইলও বহন করতে সক্ষম এটি। এককথায়, রাশিয়ার হাতে এই মুহূর্তে এক মারাত্মক মারণাস্ত্র এসে পড়েছে।

তবে পশ্চিমি বিশেষজ্ঞদের দাবি, আমেরিকা বা তার মিত্রদের ওপর আক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যর্থতা ঢাকতে, বিশেষ করে যুদ্ধজাহাজ মস্কোভা ডুবে যাওয়ার ব্যর্থতা আড়াল করতেই এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বলে মনে করছেন তাঁরা। কারণ, ইউক্রেনের এই প্রতিরোধ তাদের স্বপ্নের অতীত ছিল। পুতিনের বাহিনী মনে করেছিল, তারা চার-পাঁচ দিনেই ইউক্রেনের দখল নিয়ে নেবেন, কিন্তু তা হয়নি। বরং চূড়ান্ত মুখ পুড়েছে তাদের। তার ওপর গোদের ওপর বিষফোড়ার মতো আর্থিক নিষেধাজ্ঞা। সব মিলিয়ে নিজের দেশের ভেতরেই প্রবল চাপে ছিলেন পুতিন। সেই কারণেই এই যুদ্ধাস্ত্র প্রদর্শনী করে পেশি প্রদর্শন করলেন তিনি। ঐতিহাসিকরা বলছেন, হিটলারও এইভাবে অস্ত্র পরীক্ষা করাতেন এবং জার্মানদের বিশ্বাস করতেন যে, তারাই যুদ্ধে জিতবেন।

মার্কিন সেনা জানাচ্ছে, তারা একেবারেই এই পরীক্ষা নিয়ে চিন্তিত নয়। তাদের অস্ত্রভান্ডারেও এমন অস্ত্র রয়েছে, যা পৃথিবীর যে-কোনও প্রান্ত থেকে রাশিয়ার যে-কোনও অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, রাশিয়াকে এই পরীক্ষার কথা আমেরিকাকে জানাতে হয়েছিল। সেই কারণেই এই পুরো পরীক্ষাটি আমেরিকা নজরে রাখতে পেরেছিল।

যুদ্ধবাজ পুতিন এই অস্ত্র হাতে এলে ঠিক কী-ই বা করবেন, তা
নিয়েও জল্পনা চলছে। এই খবরের সূত্র ধরে কি দাবি করা যায় যে, ঠান্ডা যুদ্ধের প্রত্যাবর্তন ঘটল? আবারও সেই পরমাণু শক্তিধরদের টক্কর? 

More Articles