শূন্য থেকে শুরু করে পৌঁছে গেছেন শীর্ষে! এই ধনকুবেরদের জীবন দেখাল, আপনিও পারেন

আজকে তাঁরা যে স্থান অর্জন করেছে, যে জায়গায় নিজেদের নিয়ে গেছে, সেই স্থান অর্জন করতে তাঁদের রক্ত জল করতে হয়েছে, ভেঙে পড়লেও আবার উঠে দাঁড়াতে হয়েছে।

যাঁরা পৃথিবী-কাঁপানো ধনী, তাঁদের শীর্ষে পৌঁছনোর গল্পটা অনেকের কাছে অজানা থেকে যায়। কোনও ধনী ব্যক্তির অর্থের পরিমাণ শুনে মোহে অন্ধ হয়ে যাই আমরা। কিন্তু লক্ষ করি না যে, প্রথম থেকেই তাঁদের কাছে এত ধনসম্পদ ছিল না। আজকে তাঁরা যে স্থান অর্জন করেছে, যে জায়গায় নিজেদের নিয়ে গেছে, সেই স্থান অর্জন করতে তাঁদের রক্ত জল করতে হয়েছে, ভেঙে পড়লেও আবার উঠে দাঁড়াতে হয়েছে। তেমনই ঘাম-রক্ত ঝরানো কিছু মানুষের কথা আজ আমরা শুনব, যারা শূন্য থেকে শুরু করে শীর্ষে অবস্থান করছেন।

জ্যাক মা

আপনার দরিদ্র হয়ে জন্মানোটা দোষের না। কিন্তু দরিদ্র হয়ে থাকাটা দোষের।

জ্যাক মা-র নাম শোনেনি, এমন লোক পাওয়া যাবে না। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চিনের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি তিনি। অনলাইন ই-কমার্স কোম্পানি আলিবাবা.কম-এর প্রতিষ্ঠাতা তিনি। কিন্তু তাঁর সফলতার গল্পটা অন্যরকম। জ্যাক মা-র আসল নাম মা ইয়ং। ১৯৬৪ সালের ১৫ অক্টোবর চিনের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে ঝেজিয়াং অঞ্চলের হোমচো শহরে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় ছিলেন। তাঁর মা-বাবা ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে এবং মানুষকে গল্প শুনিয়ে অর্থ উপার্জন করতেন। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন বিষয় শিখতে ভালবাসতেন তিনি। ইংরেজি ভাষা শেখার জন্য চিনে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সঙ্গে ফ্রি ট্যুর গাইড হিসেবে থাকতেন। ইংরেজি ভালো শিখে গেলেও অঙ্কে ডাহা ফেল করেছিলেন। অঙ্কে তাঁর মাথা না থাকায় কলেজে ভর্তির পরীক্ষাতেও দু’বার ফেল করেছেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাতেও তিনবার ফেল করেন। আর চাকরির পরীক্ষা দিতে গিয়ে ৩০ বার ব্যর্থ হয়েছেন। তবু পিছু ছাড়েননি, লেগেছিলেন। চিনে যখন কেএফসি আসে, তখন মোট ২৪ জন চাকরির আবেদন করে। কিন্তু তার মধ্যে ২৩ জনের চাকরি হয় আর বাদ পড়ে যায় একজন। তিনি হলেন জ্যাক মা। এমনও দেখা গেছে, চাকরির জন্য ৫ জন আবেদন করেছে কিন্তু চারজন সিলেক্ট হয়েছে আর বাদ পড়ে গেছেন জ্যাক মা। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ১০ বারের ১০ বারই তিনি প্রত্যাখ্যান পেয়েছেন। কিন্তু হার মানতে শেখেননি জ্যাক।

১৯৯৪ সালে জ্যাক মা প্রথম ইন্টারনেটের সঙ্গে পরিচিত হন। ১৯৯৫-এর প্রথমদিকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং সেখানে থাকাকালীন বিয়ার ও অন্যান্য পানীয় সমন্ধে তথ্য খুঁজতে গিয়ে দেখেন, বিভিন্ন দেশের তথ্য আছে, কিন্তু চিনের কিছুই সেখানে নেই। পরে এক বন্ধুর থেকে ইন্টারনেটে কীভাবে কী হয়, তা শিখে নেন এবং এক বন্ধুর সহযোগিতায় একটি সাধারণ ওয়েবসাইট তৈরি করেন। সেই বছরই তাঁর স্ত্রী-র সহযোগিতায় বন্ধুদের কাছ থেকে প্রায় ২০ হাজার ইউএস ডলার সংগ্রহ করে ‘চায়না ইয়েলো পেজ’ বলে একটি কোম্পানিও তৈরি করেন। যাদের মূল কাজ ছিল, চিনের বিভিন্ন কোম্পানির জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করা। ১৯৯৯ সালে তিনি হাংযু-তে ফিরে আসেন এবং ১৮ জন বন্ধুকে  নিয়ে পাঁচ লক্ষ ইয়েন মূলধনের নতুন একটি চিনভিত্তিক স্টার্ট আপ কোম্পানি শুরু করেন, যা আজকের ‘আলিবাবা’।

'আলিবাবা' তৈরির আগেও তিনি উদ্যোগ নিয়েছিলেন, যাতে তিনি বেশ খারাপভাবেই ব্যর্থতা পান। ইংরেজিতে দক্ষতার জন্য একটি স্থানীয় কলেজে ৫ বছর শিক্ষকতাও করেন তিনি। তাঁর বেতন ছিল মাসে ১৫ ডলার। এক সময় তিনি সংসার চালাতে রাস্তায় মাল টানাটানির কাজও করেছেন। আজকে সেই জ্যাক চিনের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি। ২০০৩ সালে জ্যাক মা আন্তর্জাতিক ই-কমার্স সিস্টেমের উন্নতির জন্য E-bay-র আদলে Taobao marketplace, Ali pay, Ali Mama, Lynx প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময় একটি পত্রিকা তাঁকে ‘ক্রেজি জ্যাক’ বলেও অভিহিত করেছিল। ২০১৪ সালে আইপিও হিসেবে 'আলিবাবা' নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ পেরিয়ে যায় ২৫০০ কোটি ডলার। তখন তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ১৯৫০ কোটি ডলার। ২০১৬ সালে এশিয়ার ধনীতম ব্যক্তি হিসেবে ঘোষিত হন তিনি। ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর 'আলিবাবা'-র বোর্ড থেকে সরে দাঁড়ান জ্যাক মা। অতিমারী-কালেও বিশ্বের ধনকুবেরদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাঁরও সম্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে। মার্কিন আর্থিক সংস্থা ব্লুমবার্গ-এর দাবি, বর্তমানে তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৫৪০৮ কোটি ডলার। 'ফোর্বস' পত্রিকার বিচারে বিশ্বের ২০তম ধনকুবের হলেন জ্যাক মা। তাঁর প্রত্যাখ্যান থেকে সফলতার গল্প নতুন প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণা। কীভাবে নিজের লক্ষে পৌঁছনোর জন্য মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হয়, জ্যাক মা-র থেকেই শেখা যায়।

অপরাহ উইনফ্রে

Where there is no struggle, there is no strength

অপরাহ উইনফ্রেকে আজ আমরা সকলেই চিনি। তিনি প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ, যিনি কোটি টাকার মালিক হিসেবে সুপরিচিতি পেয়েছেন। কিন্তু তাঁর শীর্ষে ওঠার পথ এতটা মসৃণ ছিল না। Queen of all media– অপরাহ উইনফ্রের জন্ম হয় ১৯৫৪ সালের ২৯ জানুয়ারি অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে। হিব্রু বাইবেল থেকে নিয়ে তার নাঁম রাখা হয় অর্পাহ। কিন্তু দেখা গেল, তাঁর মা ছাড়া আর কেউ এই নাম উচ্চারণ করতে পারে না, তাই পরে নাম বদলে করলেন অপরাহ। তাঁর মা ছিলেন গৃহ-পরিচারিকা আর বাবা ছিলেন নাপিত। এক সময় তাঁর মা-বাবার বিচ্ছেদ হলে তিনি তাঁর দিদার কাছে থাকতে শুরু করেন। সেখানেও দারিদ্র তাঁর পিছু ছাড়েনি। জামার বদলে ‘আলুর বস্তা’ পড়ে থাকতে হতো। আর একটু পান থেকে চুন খসলেই দিদা বেতের লাঠি দিয়ে উত্তমমধ্যম দিতেন। কিন্তু তাও তাঁর রোল মডেল ছিল তাঁর দিদা। কারণ তাঁর মতে, তাঁর দিদার কারণেই তিনি পড়াশোনার জগতের সঙ্গে পরিচিত হতে পেরেছেন।

কিন্ডারগার্ডেনে ভর্তি হওয়ার পর তিনি নিজেই স্কুলের প্রিন্সিপালকে বলেন, তাঁকে যেন প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হয়। সেই চিঠি পড়ে কৌতূহলের সঙ্গেই প্রিন্সিপাল তাই করেন। কিন্তু পরবর্তীকালে পড়াশোনায় তাঁর সাফল্য দেখে প্রিন্সিপাল নিজে তাকে তৃতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করেন। ছোট বয়স থেকেই তিনি নিজের লোকের কাছে ক্রমাগত নিগৃহীত ও নির্যাতিত হয়েছেন। অনেক সময় এইসব সহ্য করতে না পেরে পালিয়েও গেছেন বাড়ি থেকে। এত ঝড়ঝাপটার পরেও কিশোর বয়সেই তিনি নিজের যোগ্যতায় ন্যাশভিল টেলিভিশনে একটি চাকরি পেয়ে যান, কিন্তু সেখান থেকে তাঁকে বিনা কারণে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর বাল্টিমোরে একজন সাংবাদিক ও কো-প্রেজেন্টারের কাজ পেয়ে যান। তাঁর ভয় ছিল, হয়তো সেখান থেকেও তাঁকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে জাতিগত কারণে। কিন্তু নিজের প্রতিভা ও পরিশ্রমের জন্য তিনি রাতারাতি স্টার হয়ে যান।

১৯৮৮ সালে তিনি ‘দ্য হার্পো এন্টারটেইনমেন্ট গ্রুপ’ নামে একটি কোম্পানি খোলেন। ২০০০ সালে তাঁর ম্যাগাজিন "দ্য অপরাহ’স ম্যাগাজিন" বাজারে আসে। "দ্য অপরাহ উনফ্রে’স শো" বর্তমানে সবথেকে জনপ্রিয় শোগুলির মধ্যে শীর্ষে। মার্কিন-আফ্রিকান অপরাহ-র মোট সম্পদের পরিমাণ ২.৮ বিলিয়ন ডলার, যাঁর একটা অংশ যায় সমাজসেবায়। বর্তমানে তিনি উত্তর আমেরিকার প্রথম এবং একমাত্র মাল্টিবিলিয়নিয়ার হিসেবে পরিচিত। আজ যে অপরাহ-কে আমরা দেখি, তাঁর সঙ্গে অতীতের অপরাহর কোনও মিল নেই। আজ তিনি অনেক বাধা পেরিয়ে নিজের ভয়কে জয় করেছেন। থেমে যাননি, তাঁর লড়াই চালিয়ে গেছেন। পথ সংকীর্ণ ছিল, কিন্তু তিনি যুদ্ধ জয় করেছেন। একদিনে হয়তো সব হয়নি, কিন্তু আস্তে আস্তে সব হয়েছে। ধৈর্য ধরেছেন তিনি।

জ্যান কউম

সাল ১৯৯২। ইউক্রেনে তখন অর্থনৈতিক মন্দা। জ্যান কউমের বয়স তখন ১৬। সেই সময় মায়ের সঙ্গে পাড়ি দেন আমেরিকায়। জ্যান কউমের মা ছেলের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা ভেবে ইউক্রেন ত্যাগ করেন। আমেরিকায় এসে কউম একটি মুদির দোকানে ক্লিনারের কাজে যোগ দেন আর তাঁর মা আয়ার কাজ নিয়ে বাচ্চাদের দেখাশুনো করতেন।

কিছুদিন যেতে না যেতেই উচ্চশিক্ষার জন্য কউমকে তাঁর মা স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। ১৮ বছর বয়স থেকে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং-এর প্রতি তাঁর আগ্রহ বাড়ে। দারিদ্রর কারণে কীভাবে প্রোগ্রামিং শিখবেন, সেই ভয়ে পিছিয়ে না থেকে উপায় বের করলেন। বইয়ের দোকান থেকে বই নিয়ে এসে সেগুলো পড়তেন, তারপর আবার ফেরত দিয়ে আসতেন। এইভাবেই নেটওয়ার্কিং সম্পর্কে তাঁর জ্ঞানলাভ। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন তাঁর বন্ধু ব্রিয়ান অ্যাক্টনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। স্নাতক ডিগ্রি পাওয়ার পর দুই বন্ধুই ‘ইয়াহু’ কোম্পানিতে চাকরি করতে শুরু করেন। নিজের কোম্পানি শুরু করার কথা ভেবে চাকরি ছাড়েন। কিন্তু প্ল্যান ঠিক হলেও কোনও সফলতা না পেয়ে ২০০৯ সালে আবার চাকরি খোঁজা শুরু করে। ফেসবুক, ট‍্যুইটার থেকে প্রত্যাখ্যানের পর তাঁরা মনস্থির করেন যে, নিজেরাই কোম্পানি খুলবেন। সেই শুরু। ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সালে তাঁদের হাত ধরে বাজারে হোয়াটসঅ্যাপ আসে। ২০১৫ সালের মধ্যে ১০০ কোটি অ্যানড্রয়েড ফোনে হোয়াটসঅ্যাপ ডাউনলোড করা হয়েছিল। ২০১৪ সালে কউম ফেসবুকের কাছে ১৯০০ কোটি মার্কিন ডলারে হোয়াটসঅ্যাপ বিক্রি করে দেন। একসময়ে ফেসবুক যাঁদের খালি হাতে ফিরিয়ে দিয়েছিল, আজ তাঁদের হাতেই তুলে দিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। হোয়াটসঅ্যাপের ৪৫% অংশীদার হয়ে কউম এখন ৬৮০ কোটি ডলারের মালিক। বাদ যাননি অ্যাক্টনও, তাঁর হাতে এখন ৩০০ কোটি ডলার আর ২০% শেয়ার।

রীতেশ আগরওয়াল

‘ওয়ো’ হোটেলের কথা বললেই রীতেশ আগরওয়ালের কথা আসবেই। তিনিই এই সংস্থার মালিক। উড়িষ্যার রায়গড়ে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে ১৯৯৩ সালের ১৬ নভেম্বর তাঁর জন্ম। তাঁর বাবার একটি ছোট দোকান ছিল। তাঁর বাবার স্বপ্ন ছিল, ছেলে ভালো লেখাপড়া শিখে একটা চাকরি পেলেই হলো। কিন্তু রীতেশ বরাবরই দুর্দান্ত কিছু করতে চেয়েছিলেন। ধরাবাঁধা ছকের বাইরে বেরিয়ে কিছু করতে চেয়েছিলেন। ২৬ বছর বয়সেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন কোটি টাকার মালিক। রীতেশ খুব অল্প বয়সেই বিল গেটস, স্টিভ জোবস, মার্ক জুকারবার্গ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।

মাত্র ১৭ বছর বয়সেই তিনি তাঁর ব্যবসার কাজ শুরু করেন। নতুন জায়গায় বেড়াতে যাওয়া ছিল তাঁর শখ। কীভাবে অল্প খরচে ভ্রমণ করা যায়, তাঁর অভিজ্ঞতা করতে চেয়েছিলেন। পরবর্তীকালে যা তাঁর অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়। তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, নিজের অনলাইন রুম বুকিং অফিস খুলবেন, যাতে গ্রাহকরা কম খরচে ভালো সুবিধা পান। ২০১৩ সালে তিনি ‘অরাভেল স্টে’-র নাম বদলে রাখেন ‘ওয়ো’। যেখানে স্বল্প খরচে আরামদায়ক রুম ছাড়াও গ্রাহকদের সব সুযোগসুবিধে দেওয়া হবে। আর সঙ্গে সকালের ব্রেকফাস্ট ফ্রি।

ব্যবসা শুরুর দিকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাঁকে, কিন্তু না থেমে তিনি এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। অর্থের সমস্যা ছিল সবচেয়ে বড়। ২০১১-তে দিল্লিতে ৬০,০০০ টাকার পুঁজিতে গুরগাঁওয়ের একটি হোটেল দিয়ে এই ব্যবসা শুরু হয়। প্রথমদিকে নিজে রুমসার্ভিস বয় থেকে শুরু করে বেবিসিটার- বিভিন্ন ভূমিকায় কাজ করেছেন। চিরাচরিত হোটেলের থেকে ‘ওয়ো’-র ধারণা অনেক আলাদা। মাত্র ৯ বছরে ‘ওয়ো’ এখন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম হোটেল চেন। এখন তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১০ বিলিয়ন ডলার। তিনি দেশের সবথেকে কমবয়সি বিলিয়নিয়ারদের মধ্যে একজন। ছকভাঙা তরুণ শিল্পোদ্যোগী হিসেবে তিনি অনুপ্রেরণা দেন আজকের যুবসমাজকে।

হাওয়ার্ড শুল্টজ

বিখ্যাত ‘স্টারবাকস’ কফির কথা কে না জানে! আর এই স্টারবাকস-এর কর্ণধার হলেন হাওয়ার্ড শুল্টজ। ১৯৮৬ সালে সিঙ্গল কফি শপ থেকে শুরু করে এখন ২০,০০০ আউটলেটের একটি জায়ান্ট কোম্পানি। ১৯৯২ সালের মধ্যে হাওয়ার্ড শুল্টজ ১৪০টি স্টোর ওপেন করেছিলেন, তখন কোম্পানির ভ্যালু ছিল ২৭১ মিলিয়ন। ২০০৭ সালে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়। তখন স্টারবাকস-এর কফি একটি ব্যয়বহুল বস্তু ছাড়া কিছু ছিল না। সাধারণ মানুষ লোকাল শপের পাশে স্টারবাকস-এর মতো বড় কোম্পানি সহ্য করতে পারছিল না। কিন্তু হাওয়ার্ড শুল্টজ অন্য পন্থা অবলম্বন করলেন। তিনি গোটা কফির বদলে গুঁড়ো কফি দিয়ে তৈরি কফি পরিবেশন করলেন। তার ফল হল উল্টো। কফির পাশাপাশি তিনি নন-কফি প্রোডাক্ট বিক্রি করা শুরু করলেন, কিন্তু তাতেও কোনও ফল হলো না। কোম্পানি প্রফিট করলেও ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি হারিয়ে শেয়ার মূল্য ৪২% কমে গেল।


 
কিন্তু শুল্টজ ধৈর্য হারাননি। মাথা ঠান্ডা রেখে ভেবেচিন্তে আবার যুদ্ধে নামলেন ২০০৮ সালে। যুদ্ধটা সহজ ছিল না। ৭১০০টি আউটলেট বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তাতে লস হয়েছিল ৬ মিলিয়ন ডলার। কাস্টমারদের কাছে যাওয়ার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় স্টারবাকস-এর পেজ নতুন করে সাজানো হলো। ২০০৯-এর শেষের দিকে আস্তে আস্তে কাস্টমাররা ফিরে আসতে লাগলেন। ফোর্বস-এর রিপোর্ট অনুসারে আজ শুল্টজ এর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৪ বিলিয়ন ডলার। যুদ্ধে হেরে গিয়েও কীভাবে ফিরে আসা যায়, তার শিক্ষা শুল্টজের কাছ থেকেই পাওয়া যায়।

 

More Articles