মাথার দাম ৪০ হাজার ডলার, ক্রীতদাস দুনিয়ার 'কালো' ঈশ্বরী হ্যারিয়েটকে সেলাম

চাবুক চাবুক আর চাবুক। চাবুকের হিসহিসে শব্দের ঘাতে-প্রত্যাঘাতে ঘামে ভেজা চকচকে কালো চামড়ার ওপর রক্তের ফিনকিতে লেখা হচ্ছিল প্রতিরোধের নতুন শব্দ। টম চাচার কেবিন যখন ভয়ঙ্কর রকমের সত্যি। উত্তর আর দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যে ক্রীতদাস আইন নিয়ে শুরু হয়েছে যুদ্ধ। নামেই ক্রীতদাসের স্বার্থে সে যুদ্ধ। আর বাকি পাঁচটা যুদ্ধের মতোই বড়লোকদের যুদ্ধে প্রাণ গিয়েছিল বহু সাধারণ মানুষের। যদিও খাতায় কলমে ঘোচে সে অমানবিক প্রথা, আজ দেড়শো বছর কেটে গেল, চাবুকের শব্দ এখনও আচ্ছন্ন করে রেখেছে মানুষের মন। শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ যে বেড়েছে, এ কথা ‘ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটারস্‌’ আন্দোলনের পর আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু দুঃখের বিষয়, যে এই আন্দোলন এখনও করতে হয়। এখনও প্রকাশ্য দিবালোকে গলায় পা দিয়ে জলজ্যান্ত একটা মানুষকে শুধুমাত্র তার রঙের জন্য খুন করা হয়।  দেড়শো বছর। কম নয়। ‘ফ্রি স্টেট অব জোনস্‌’ ঘোষণার কয়েকদিনের মধ্যে ইউনিয়ন নিউটন নাইটের সঙ্গে কী ব্যবহার করেছিল তা যদি আমরা মনে রাখি, তাহলেই কালোদের জীবনে সিভিল ওয়ারের অসারতা আরও পরিষ্কার হবে। বরং অ্যাবোলিশনিস্ট আন্দোলনে একের পর এক ইন্ধন জুগিয়েছেন মুক্তমনা কয়েকজন ব্যক্তি। তাঁদের মধ্যে সামনের সারির বিশেষ চেয়ারটিতে যাঁর নাম সংরক্ষিত থাকবে তিনি হ্যারিয়েট টাবম্যান।

১৫ শতকের আশেপাশে আফ্রিকান মানুষদের নিজের দেশ থেকে বন্দি করে দলে দলে জাহাজের খোলে পুরে আনা হতে থাকে ইউরোপের কলোনিগুলিতে। ষোলো থেকে উনিশ শতকের মধ্যে কেবলমাত্র আমেরিকার ক্ষেত্রেই সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ১ কোটি ২০ লক্ষের কাছাকাছি। এরাই পরবর্তীতে আফ্রিকান আমেরিকান হিসেবে পরিচিত হবেন। ক্রীতদাস হিসেবে এদের কেনাবেচা করা হত। ভারতের গোধনের ধারণা যেমন ছিল, তেমনই ক্রীতদাসও ছিল সমৃদ্ধির লক্ষণ। যার যত বেশি ক্রীতদাস, সে তত সম্মানীয় অভিজাত সমাজে। তার সঙ্গে ছিল এদের উপর অকথ্য অত্যাচার। একবার বছর বারো বয়সের একটি কালো বাচ্চা মেয়েকে তার সাদা মালিক আরেকজন ক্রীতদাসের ওপর ‘কড়া শাস্তি’ দেওয়ার হুকুম করেন। ওইটুকু মেয়ে নিজের কালো ভাইবোনদের গায়ে হাত তুলতে চায়নি। দু'পাউণ্ড ভারী একটা লোহার টুকরো ছুঁড়ে তার খুলি এমনভাবে ফাটিয়ে দেওয়া হল যে সারা জীবন সে আঘাতের হাত থেকে নিস্তার পেল না মেয়েটি। যদিও হ্যারিয়েটের মতে সেই আঘাত ঈশ্বরের অনেক কাছাকছি নিয়ে এসেছিল তাঁকে। ঈশ্বর তাঁর সঙ্গে সরাসরি কথা বলতেন, পথনির্দেশনা করতেন। মেয়েটির মাথার ঘন উলের মতো কোঁকড়া চুল সে আঘাত ঢাকতে পারেনি, অথবা চায়নি ইচ্ছাকৃতই। এই আঘাত তাকে জীবন্ত ‘মোজেস’ করে তুলেছিল ক্রীতদাসদের মধ্যে।

বলেছিলাম, চাবুকের হিসহিসানি আর রক্তের বুননে গড়ে হচ্ছিল প্রতিরোধের নতুন সমস্ত সংজ্ঞা। চলতি ধারণাকে উপড়ে ফেলে। এতদিন রুখে দাঁড়ানো ছিল সম্মানের, পালানো ছিল কাপুরুষোচিত। হ্যারিয়েট দেখালেন পালানোর মধ্যে দিয়েও রুখে দাঁড়ান যায়। গড়ে তোলা যায় এক বিপুল প্রতিরোধ। একা, এক মহিলা, তায় কালো—সে যুগের প্ররিপ্রেক্ষিতে যতরকম ভাবে প্রান্তিক হওয়া যায়, হ্যারিয়েট ছিলেন সব। এবং বিশ্বাস করুন, যে কোনও যুগেই প্রান্তিকতার সঙ্গে ‘মহত্বের’ খুব একটা বনিবনা হয়নি। কারণ চিৎকারে ঘাম ও রক্তের গন্ধ লেগে থাকে।

১৯২০ সালে আমেরিকার ডরচেস্টার কাউন্টিতে জন্ম আরামিন্টা রসের। লোকের মুখে মিণ্টি হিসেবেই বেশি পরিচিত। বাবা বেঞ্জামিন রস এবং মা হ্যারিয়েট গ্রিন। বারো বছর বয়েসেই রুখে দাঁড়ানোর প্রতিদান পেয়ে গিয়েছিল মিণ্টি। ঘা সেরে গেলেও দাগ থেকে গেল। মাঝে মাঝেই খিঁচুনি দিত সমস্ত শরীরে। জ্ঞান থাকত না বেশ কিছুক্ষণ। ঝিমুনি দিত। সেই ঝিমুনির জন্য ওই বয়সেই যা চাবুক খেতে হত প্রায়ই। সেইসব আঘাত সামলে উঠতে কখনও কখনও লেগে গিয়েছে মাস দু'য়েকও। এত অত্যচারের মধ্যেও  শরীর-মন বেড়ে চলেছিল মিন্টির।

যদিও ক্রীতদাসদের মধ্যে আইনি বিবাহ ছিল নিষিদ্ধ, ১৮৪৪ সালে জন টাবম্যান নামে এক স্বাধীন কৃষ্ণাঙ্গকে বিবাহ করে আরামিন্টা। বিবাহিত জীবন যে খুব সুখের ছিল না সে বলাই বাহুল্য। কৃষ্ণাঙ্গ মানুষেরা আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলে নামমাত্র স্বাধীন ছিল। ১৮৪৯ সালে বাতাসে কথা এল মিন্টিকে বিক্রি করে দেওয়া হবে। আবার নতুন মালিক। দুই বোন বিক্রি হয়ে গিয়েছে শৈশবেই। অবশিষ্ট বোনেদের, ভাইদের, বাবা-মায়ের সঙ্গ ছিঁড়ে পড়তে হবে গিয়ে নতুন অত্যাচারের মুখে। মন থেকে মেনে নিতে পারল না মিন্টি।

ততদিনে মনে তার গেঁথে গিয়েছে–সামনে দু'টিমাত্র পথ, বাঁচতে হলে স্বাধীন ভাবে বাঁচব, নইলে এ জীবন রাখব না। এতদিন যে পালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে মনের মধ্যে লালিত হচ্ছিল, এই খবর এক ধাক্কায় তাকে বাস্তবের মাটিতে এনে ফেলল। ভাইদের সঙ্গে পালাল আরামিন্টা। বাকিরা পালাতে সাহস পেল না। কুকুরের মতো পলাতক ক্রীতদাসদের তখন খুঁজে বেড়াচ্ছে স্লেভ-হাণ্টাররা। ধরা পড়লে দুনিয়া নরক। ভাইদের সঙ্গ ছাড়তে হল পথেই। এক সঙ্গে থাকলে ধরা পড়ার সম্ভাবনা বেশি। প্রায় ১০০ মাইল পথ পায়ে হেঁটে বন-বাদাড়ে লুকিয়ে অর্ধনগ্ন, অর্ধমৃত অবস্থায় অবস্থায় পেন্সিলভেনিয়ায় পৌঁছল সে। অবশেষে মুক্তি। এই অঞ্চলে তখন ক্রীতদাস বলে আর কিছু নেই। সবাই মানুষ। স্বাধীন রোদ বড় মিঠে মুখের ওপর। প্রথমবার সেই মিঠে রোদের স্পর্শে আনন্দে কি কেঁদে ফেলেছিলেন আরামিন্টা? জানা যায় না।

যদিও আনন্দ খুব বেশিদিন স্থায়ী হল না তার। দাসত্ব ঘুচিয়ে সেই ছোট্ট আরামিন্টা রস, ওরফে মিন্টি তখন হ্যারিয়েট টাবম্যান। মায়ের নাম, প্রিয়ের পদবি–দুইয়ে মিলে হয়ে উঠেছে তাঁর স্বাধীনতার স্মারক। কাজও জুটে গিয়েছে একটা। কিন্তু সেই পরিচিত মুখগুলি ভিড় করে থাকে হ্যারিয়েটের একাকিত্বের আশেপাশে। সেই সব প্রিয়জন, যারা একান্ত আপনার, বহু ঝড়ঝঞ্ঝার সঙ্গী। বর্ণবিদ্বেষের অত্যাচার যাদের বুনে দিয়েছে একটি সুতোয়। গান গেয়ে যাদের বিদায় জানিয়েছেন। পালানোর আগে নিজেকে লুকিয়ে রেখে একটি কালো মেয়ে তার ক্ষেতে খামারে কাজ করা কালো আত্মীয়দের গান গেয়ে বিদায় জানাচ্ছে—এ কোনো সিনেমার দৃশ্য নয়। দেড়শো বছর আগে আমেরিকায় এটাই ছিল অত্যন্ত বাস্তব। ক্রীতদাসদের এক জায়গায় জড়ো হওয়ার অনুমতি ছিল না। তাই গানকে বার্তাবহ হিসেবে ব্যবহার করতেন তাঁরা। নিজের ভাই বোন বাবা মাও রয়েছে সেই আগলের ওপারে।

আরও পড়ুন-কুরিয়ানের সমবায় স্বপ্ন, দেশের ঘরে ঘরে ‘আমুল’ বদল যে ভাবে সম্ভব হল

আবার পথে নামলেন হ্যারিয়েট। বহু শুভাকাঙ্ক্ষীর বহু আপত্তি তুচ্ছ করেই নামলেন। শুধু কোমরে এবার গোঁজা রইল একটা পিস্তল। বাজি রইল স্বাধীনতা, পুরস্কার রইল মৃত্যু। ধরা পড়া যাবে না কিছুতেই। পঞ্চাশের ডিসেম্বর নাগাদ বোন এবং বোনঝিদের উদ্ধার করে আনলেন। এই শুরু হল একের পর এক উদ্ধারের আখ্যান, পরিত্রাতা ‘মোজেস’ হয়ে ওঠার আখ্যান। ক্ষেতের বাইরে জঙ্গলের মধ্যে থেকে, খামারের পিছনের দিকের অন্ধকার থেকে ‘মোজেসের’ সংকেত পেলেই উত্তেজিত হয়ে উঠত ক্রীতদাসেরা। জনশ্রুতি, কাউকে কখনও পিছনে ফেলে আসেননি হ্যারিয়েট। কেউ ফিরে যেতে চাইলে তার দিকেও উঠত বন্দুক, “হয় মুক্তি, নয় মৃত্যু” মন্ত্রোচ্চারণ করতেন কালো মসিহা। ব্রিটানিকা বলছে ১৩ বারে প্রায় জনা সত্তর স্লেভকে উদ্ধার করে এনেছিলেন হ্যারিয়েট, যদিও সারা ব্র্যাডফোর্ড বলেছেন, সংখ্যাটা ১৯ বারে ৩০০-৪০০র কাছাকাছি।

কৃষ্ণাঙ্গদের দাস হিসেবে খাটানোকে ভগবানের ইচ্ছে বলে প্রচার করতে খৃষ্টধর্মকে ব্যবহার করা হত দীর্ঘদিন। যাজকেরা ক্রীতদাসদের বোঝাত মালিকের হাত এড়িয়ে পালিয়ে যাওয়া পরম অধর্ম। কিন্তু ওই যে, চাবুকের হিসহিসে ঘাত-প্রত্যাঘাতের তলায় রক্ত আর ঘামের সুতোয় বোনা হচ্ছিল নতুন সমস্ত প্রতিরোধ। অ্যাবলিশনিস্ট আন্দোলন এই ধর্মকে হাতিয়ার করেই নিজের ভিত শক্ত করেছিল। তাদের দাবি, যদি ভগবান মানুষ গড়েছেন, তাহলে মানুষ কখনও মানুষের সম্পত্তি হতে পারে না। সমস্ত মানুষ ভগবানের সন্তান। পাশা উল্টে যেতে থাকল। সিভিল ওয়ারের সময় ক্রীতদাস প্রথার বিরোধী এবং অত্যচারিতের সহমর্মী কিছু কালো ও সাদা মানুষ একত্রে গড়ে তুললেন ‘দ্য আণ্ডারগ্রাউণ্ড রেইলরোড’। এই গোপন সংস্থাটি ছড়িয়ে পড়ল সমগ্র আমেরিকার অলিতে গলিতে। এদের অবিশ্বাস্য যোগাযোগ বহু ক্রীতদাসকে পালিয়ে সাহায্য করছিল উত্তরে। হ্যারিয়েটও এদের সাহায্য পাচ্ছিলেন। কিন্তু বাধ সাধল মালিকপক্ষ। লোকসানের পর লোকাসানে ক্ষেপে গিয়ে ১৯৫০-এ তারা পাস করাল ফিউজিটিভ স্লেভ ল। এই আইনের হাত থেকে পেনসিলভেনিয়াও রক্ষা পেল না। দক্ষিণের যে কোনও রাজ্যে যদি কোনও পলাতক ক্রীতদাস ধরা পড়ে এবং তার পরিচয় প্রমাণিত হয়, তবে তাকে আবার ফিরতে হবে তার মালিকের কাছে। রেইলরোড নিজেদের ঘাঁটি উত্তরে সরিয়ে নিতে বাধ্য হল। এর পরেও ক্ষান্ত হননি টাবম্যান। প্রায় ৫০০ মাইল পাড়ি দিয়েও উদ্ধার করেছেন কালো ভাইবোনদের। ‘মোজেসের’ মাথার দাম তখন দাঁড়িয়েছে ৪০০০০ ডলারে। খেয়াল রাখা প্রয়োজন, সময়টা উনিশ শতকের মাঝামাঝি।

অ্যাবলিশনিস্ট জন ব্রাউন এই সময় অ্যাণ্টিস্লেভারি রেইড অব আ ফেডেরাল আরমারি-র পরিকল্পনা করছেন। তিনি টাবম্যানকে এই রেজিমেণ্টের নেতৃত্ব নিতে অনুরোধ করলেন। হ্যারিয়েট হলেন ‘জেনারেল টাবম্যান’। আমেরিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা যাঁর নেতৃত্বে গোটা একটা রেজিমেণ্ট লড়াই করেছে। ১৮৫৮ সালে নিউ ইয়র্কে একটা ছোট্ট ফার্ম কিনে বৃদ্ধ বাবা মাকে থিতু করলেন টাবম্যান। ৬১তে শুরু হল আমেরিকার গৃহযুদ্ধ। আবার কাজে নামলেন হ্যারিয়েট। ইউনিয়নের হয়ে কনফেডারেশনের নানা অঞ্চলে গুপ্তচরবৃত্তি করেছেন ৬২ থেকে ৬৫ লাগাতার। সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রে কখনও নার্স, কখনও লওউণ্ড্রেস। ক্রীতদাসদের কাছ থেকে কনফেডারেশনের সৈন্যরা কোথায় তাবু ফেলেছে, কোত্থেকে তারা খাবারদাবার ওষুধপত্র জোগাড় করছে, তাদের সঙ্গে কী পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে–হাঁড়ির খবর পেয়ে যেতেন। এই সমস্ত কৃষ্ণাঙ্গদের পালাতে সাহায্যও করেছেন সাধ্যমতো। ৬৩ সালে কর্নেল মণ্টগেমারির সেনাদলের একটি অংশ টাবম্যানের নেতৃত্বে কম্বাহী নদীর তীরে কনফেডারেশনের সৈন্যদের উপর অতর্কিতে হামলা করে। গোলাবারুদ ও খাবারের প্রত্যেকটি গুদাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। উদ্ধার করা হয় প্রায় ৭৫০ জন ক্রীতদাসকে। গেরিলা অপারেটিভ হিসেবে টাবম্যান এ সময় বেশ নাম কেনেন কেউকেটা মহলে।

আরও পড়ুন-সোনার খোঁজে সাহিত্যিকের মরণঝাঁপ! জ্যাক লন্ডন যেন বিভূতিভূষণের ‘শংকর’

তবে কেন যুদ্ধকে বড়লোকেদের যুদ্ধ বললাম? কৃষ্ণাঙ্গরা এতে সুবিধে পেয়েছে ঠিক ততটুকুই, যতটুকু জায়গা তারা নিজেরা লড়াই করে নিয়েছে। যুদ্ধশেষে ৬৮ সালে নিউইয়র্কে বাবা মার কাছে ফিরলেন টাবম্যান। এক লড়াই শেষ, শুরু হল আরেক লড়াই। মিলিটারি পেনশনের আবেদন খারিজ হয়ে যাচ্ছে বারবার। অথচ চারিদিকে আর সবার পেনশন আসছে দিব্য। আর্থিক অবস্থা মোটেই স্বচ্ছল নয়। কিন্তু যে বিপুল বাধা ‘কালো মসিহা’ পেরিয়ে এসেছেন, তার সামনে এ আর কতটুকু। তখনও রাজনীতিতে নামছেন। সুজান বি অ্যান্থনি ও এলিজাবেথ কেডি স্যান্টনের নারীর অধিকারের দাবিতে ক্যাম্পেইনে যোগ দিচ্ছেন। ৯৬-এ ‘ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব কালার্ড উইমেন’-এর প্রতিষ্ঠাসভায় ইডা বি ওয়েলস্‌-এর সঙ্গেও তাঁর পরিচয় হয়। কিন্তু সংসার আর চলছে না। যার নাম নিজের স্বাধীনতার স্মারক করেছিলেন, সেই জীবনসঙ্গী তাঁর সঙ্গে পালাতে অস্বীকার করেন। হ্যারিয়েট পালানোর বছর খানেকের মধ্যে আরেক স্বাধীন কৃষ্ণাঙ্গ মহিলাকে বিয়ে করেন জন। তার সঙ্গে সম্পর্ক চুকে গিয়েছে অনেক দিন। কেবল নামটুকুই রয়ে গিয়েছে। ১৮৬৯ নাগাদ বিয়ে করেছেন সিভিল ওয়ারের এক প্রাক্তন কৃষ্ণাঙ্গ সৈনিক, নেলসন ডেভিসকে। গার্টি নামে একটি ফুটফুটে কন্যাসন্তান দত্তকও নিয়েছেন। দায়িত্ব অনেক। সঙ্গতি নেই। সাধের সরকার টাকা তাঁকে দিয়েছিল বটে, তবে মিলিটারি পেনশন নয়, একেবারে বিধবা ভাতা। প্রথমে ৮ ডলার, পরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২০ ডলারে। অবশেষে ১৯১৩ সালে, নেলসন মারা যাওয়ার ২৫ বছর পর মারা গেলেন টাবম্যান। বয়েস হয়েছিল ৯১। প্রায় এক শতক ধরে আমৃত্যু যে লড়াই তিনি করে গেলন তার কোনও সরকারি স্বীকৃতি জীবদ্দশায় পাননি। পাননি নিজের প্রাপ্য অবসরভাতাটুকুও। পাঠক মনে করুন আরেকটিবার, যে কোনও যুগেই প্রান্তিকতার সঙ্গে ‘মহত্বের’ খুব একটা বনিবনা হয়নি। কারণ চিৎকারে ঘাম ও রক্তের গন্ধ লেগে থাকে।

তথ্যঋণ-

  • “Harriet Tubman | Biography, Facts, & Underground Railroad | Britannica.” 
  • “Harriet Tubman Biography.” n.d. National Women’s History Museum. 
  • “Historian: What the True Story of Harriet Tubman Teaches Us | Time.” 
  • “Life Story: Harriet Tubman.” n.d. Women & the American Story (blog). 
  • “Maxwell Perspective: The Truths Behind the Myth of Harriet Tubman.” 2008. The Maxwell School of Syracuse University. December 22, 2008.
  • Harriet, the Moses of her People, Sarah Bradford

More Articles