সুস্মিতা সেনের হার্ট অ্যাটাক! কেন চরম 'ফিট' মানুষও আক্রান্ত হচ্ছেন হৃদরোগে?

Sushmita Sen Heart Attack: সুস্মিতা সেন ২০১৪ সালে অ্যাডিসন'স ডিজিজ নামে একটি অটোইমিউন রোগে আক্রান্ত হন এবং সেই চিকিত্সার অংশ হিসাবে তাঁকে স্টেরয়েড নিতে হয়েছে বেশ।

বহুযুগ ধরে লাখো ভক্তের হৃদয়ে কাঁপন ধরিয়েছেন, সেই প্রাক্তন মিস ইউনিভার্স এবং বলিউড অভিনেত্রী সুস্মিতা সেনের হার্ট অ্যাটাকের খবর শুনে মিনিট খানেকের জন্য স্তব্ধ অগণিত অনুরাগীর হৃদয়। কয়েকদিন আগেই হার্ট অ্যাটাক হয় সুস্মিতার, অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টিও করা হয়েছে, সুস্মিতার বুকে বসেছে স্টেন্ট। অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টিতে সাধারণত করোনারি আর্টারি রোগের কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া করোনারি ধমনীকে সচল করা হয়। বিশ্বসুন্দরী জানিয়েছেন, এখন ঠিকই আছেন তিনি। অনেকেই জানেন না, সুস্মিতার এক অন্য রোগও রয়েছে। ৯ বছর আগে হঠাৎ করে সেই 'অটোইমিউন' রোগটি ধরা পড়ে। এই হার্ট অ্যাটাক কি সুস্মিতার সেই বিরল রোগের কারণেই?

সুস্মিতা সেন ২০১৪ সালে অ্যাডিসন'স ডিজিজ নামে একটি অটোইমিউন রোগে আক্রান্ত হন এবং সেই চিকিত্সার অংশ হিসাবে তাঁকে স্টেরয়েড নিতে হয়েছে বেশ। সুস্মিতা আগেও জানিয়েছিলেন, অ্যাডিসন'স রোগের সঙ্গে লড়াই করার সেই দিনগুলি তাঁর পক্ষে বেজায় কষ্টের ছিল। কী এই অ্যাডিসন'স ডিজিজ? মায়োক্লিনিক জানাচ্ছে, অ্যাডিসন'স রোগ আসলে অ্যাড্রিনাল অপ্রতুলতা। এটি এমন একটি অসুস্থতা যাতে অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিগুলি খুব কম কর্টিসল তৈরি করে এবং প্রায়ই অ্যালডোস্টেরন নামে অন্য আরেক হরমোনও খুব কম তৈরি করে। অ্যাডিসন'স রোগ প্রাণঘাতীও হতে পারে।

অ্যাডিসন'স রোগ কি হার্টকে প্রভাবিত করতে পারে?

হ্যাঁ, সুস্মিতার এই বিরল অ্যাডিসন'স রোগ হার্টকেও প্রভাবিত করতে পারে। অ্যাডিসন'স রোগ হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে কিডনির উপরে অবস্থিত অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিগুলি পর্যাপ্ত হরমোন তৈরি করতে পারে না। এই হরমোনগুলি, যেমন কর্টিসল এবং অ্যালডোস্টেরন রক্তচাপ এবং হার্টের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শরীরে এই হরমোনের ঘাটতি হলে রক্তচাপ হঠাৎ কমে যায়, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন এবং হার্ট ফেইলিওর সহ বিভিন্ন কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা দেখা দিতে পারে।

অ্যাডিসন'স রোগ সহ অটোইমিউন যে কোনও রোগই হার্টের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। অটোইমিউন রোগ হচ্ছে এমন এক বিরল অবস্থা যেখানে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজের দেহকেই শত্রু ভেবে ভুল করে নিজের টিস্যুতে আক্রমণ করে, যার মধ্যে রয়েছে হার্টও। এর ফলে হার্টের পেশিতে প্রদাহ হতে পারে, যা মায়োকার্ডাইটিস নামে পরিচিত। এটি হার্টের বিপুল ক্ষতি করতে পারে এবং হার্ট ফেইলিওরও হতে পারে।

আরও পড়ুন- সৌরভ থেকে রাজু শ্রীবাস্তব, মরণফাঁদের নাম জিম, কেন বারবার হার্ট অ্যাটাক

অটোইমিউন রোগ কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বাড়ায় কারণ অটোইমিউন রোগীদের উচ্চ রক্তচাপ, টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং কিডনির রোগের মতো কার্ডিওভাসকুলার ঝুঁকির নানা কারণ রয়েছে৷ অটোইমিউন মায়োকার্ডাইটিস হচ্ছে হার্ট সম্পর্কিত অটোইমিউন এক রোগ৷ এতে কার্ডিয়াক পেশির (মায়োকার্ডিয়াম) প্রদাহ দেখা দেয়। অটোইমিউন মায়োকার্ডাইটিসে আক্রান্ত কিছু রোগীর আবার কোনও উপসর্গই দেখা যায় না।

৪০ বছর বয়সের পরে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাব্য কারণ কী কী?

উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, ধূমপান, ডায়াবেটিস, স্থূলতা এবং হৃদরোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে ৪০ বছরের পরে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বেড়ে যায়। তবে, এই কারণগুলির মধ্যে কোনওটা না থাকলেও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। অনেকসময় কোলেস্টেরলযুক্ত প্লাক জমার কারণেও এমনটা ঘটে। প্লাকগুলি ধমনীকে সংকুচিত করে, হার্টে রক্ত ​​প্রবাহ কমিয়ে ফেলে। প্লাক ফেটে গেলে হৃৎপিণ্ডে রক্ত ​​জমাট বাঁধতে পারে। প্লাক জমে হৃৎপিণ্ডের একটি করোনারি ধমনীর সম্পূর্ণ বা আংশিক অবরোধ ঘটলে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।

সার্বিকভাবেই হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন কারণে দেশের মহিলাদের মধ্যেও হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা বাড়ছে। মহিলাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং অন্যান্য নানা কারণ যা হয়তো তারা জানেনও না, এমন কারণেও হৃদরোগ হতে পারে। জীবনযাত্রার নানা অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস যেমন ধূমপান, অতিরিক্ত মদ্যপান এবং ঘুমের অভাব হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তবে সুস্মিতার মতো ফিট মানুষদের মধ্যেও হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বেড়ে চলেছে। অনেকসময় কার্ডিয়াক অবস্থার কথা না জেনেই ভারী ওয়ার্কআউট হৃদরোগের কারণ হয়ে ওঠে। প্রচণ্ড মানসিক চাপ মানুষকে আরও বিপদের মুখে ফেলছে। এই ধরনের জটিলতা এড়াতে নিয়মিত হার্ট চেক-আপ জরুরি। সুস্মিতা সেনের ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে কীভাবে দ্রুত পদক্ষেপ এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাঁচাতে পারে।

আরও পড়ুন- আয়ু কমছে ভারতীয়দের! প্রতিদিন কত কদম হাঁটলেই কমতে পারে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা?

দীর্ঘমেয়াদি স্টেরয়েড ব্যবহার কি হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে?

স্টেরয়েড, বিশেষ করে বেশি ডোজের স্টেরয়েডের দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার হার্টের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। স্টেরয়েড উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি করতে পারে, কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে পারে এবং রক্ত ​​জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়াতে পারে, যার সবটাই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। নিয়মিত স্টেরয়েড গ্রহণ করতে হলে হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য নিয়মিত পরীক্ষা করাতে হবে।

প্রদাহজনিত রোগ আছে এমন মানুষদের ক্ষেত্রে স্টেরয়েডের কম ডোজও কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহজনক অসুস্থতা যেমন রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা প্রদাহজনক অন্ত্রের রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত স্টেরয়েড হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং অন্যান্য কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বাড়ায়

৪০-এর পরে হার্টের যত্ন নেওয়ার সহজতম উপায়

প্রতি সপ্তাহে মোট ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করতেই হবে। মাঝারি থেকে দ্রুত গতিতে হাঁটা বা সমতলে সাইকেল চালানো দুর্দান্ত ব্যায়াম। ধীরে ধীরে জগিং বা লাফদড়িও হার্টের স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ভালো।

More Articles