কেমন হবে যদি বাকিটা জীবন কাটে, আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া?

মানুষের আধুনিক জীবনে টেকনোলজি জড়িয়ে আছে অঙ্গে অঙ্গে। রোজ সকালে ঘুম ভাঙা এলার্ম ঘড়ি থেকে রাত্রে ঘুমাতে যাওয়ার সময় এসির বটন অথবা ফ্যানের সুইচ অবধি জড়িয়ে আছে টেকনোলজি। রোজ সকালে আমাদের ঘুম ভাঙে এলার্ম ঘড়ির আওয়াজে। ঘুম ভাঙা চোখে আমরা হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে প্রথমেই যেটা খুঁজি সেটা হলো আমাদের মুঠোফোন বা মোবাইল। শারীরিক থেকে মানসিক যে কোনো ক্ষেত্রে আমাদের জীবনে টেকনোলজির গুরুত্ব অপরিসীম। স্মার্ট ওয়াচে ক্যালোরি মাপা, কতো মাইল হাঁটলাম সারাদিনে মাপা থেকে মন খারাপ করলে ফোনের একটা বটন টিপে প্রিয়জনের গলার আওয়াজ পর্যন্ত বিস্তৃত টেকনোলজির মায়াজাল। তাই, টেকনোলজি ছাড়া একটা গোটা দিন বা একটা গোটা জীবন কাটানো মানুষের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। তবু, ভাবতে ক্ষতি কী? কেমন ছিল আমাদের আদিম জীবন যখন আধুনিক প্রযুক্তির কিছুই ছিল না জীবনে? মানুষ কী করতো তখন? কীভাবে কাটাতো সারাটা জীবন?

 

■ টেকনোলজি বিহীন জীবন :

ধীরে নেওয়া যাক এলার্ম ক্লক বা মোবাইল ফোন আবিষ্কার হয়নি। আপনার ঘুম ভাঙলো কিচিরমিচির করা পাখির ডাকে। অথবা রোদের তাপে বেড়ে যাওয়া গরমে সকাল হতেই ঘেমে উঠলো আপনার গা, এসির রিমোট খুঁজতে গিয়ে দেখলেন এসি নামক কোনও যন্ত্র নেই, এমনকি পাখা ও নেই মাথার ওপর। অস্বস্তি নিয়ে উঠে বসে আপনি ভাবলেন এক কাপ কফি খাওয়া যাক কিংবা এক কাপ চা। কফি বানাতে গিয়ে দেখলেন না আছে গ্যাস, না আগুন, না কফি। বদলে রাখা আছে কিছু কাঠ, শুকনো পাতা আর দুটো পাথর। অস্বস্তি আরো বাড়িয়ে আপনি ভাবলেন নিকুচি করেছে কফির, যাই স্নান করে নিই। স্নান করতে গিয়ে দেখলেন না আছে শাওয়ার, না গিজার, না ট্যাংক ভর্তি জল। স্নান করতে গেলে হয় পুকুরে ডুব দিতে হবে না হলে নদীর জলে। স্নান করে এসে ভাবলেন, যাই এবার অফিস যাই। কিন্তু এক মিনিট? অফিস ও তো নেই। মানুষ অফিস যায় টাকা উপার্জন করতে, আর টাকা উপার্জন করে পেট ভরতে। কিন্তু টাকাই তো আবিষ্কৃত হয়নি। তাহলে পেট ভরবে কী করে?

একমাত্র উপায় বোন জঙ্গলে গিয়ে কিংবা মাঠে গিয়ে খাদ্য সংগ্রহ করতে হবে। কোনও গ্রোসারি অ্যপ বা জম্যাটো আপনাকে খাবার দিয়ে যাবে না। বোনে গিয়ে আপনি হরিণ শিকার করতে গ্যালেন, আর হঠাৎ বিষাক্ত কাঁটা গাছে ছড়ে গেল আপনার গা হাত পা। আপনি বুঝতে পারলেন এক্ষুণি একটা ভালো হসপিটাল প্রয়োজন আপনার। প্রয়োজন ভালো চিকিৎসার। কিন্তু, সেটাও তো নেই! এদিকে আপনি আস্তে আস্তে ঝিমিয়ে পড়ছেন বিষাক্ত কাঁটার বিষে। উপায় কী?  ভাবতে পারছেন?

 

■ টেকনোলজি কেন গুরুত্বপূর্ণ? :

মানুষের জীবনের প্রত্যেক ছোটখাটো অংশে টেকনোলজির গুরুত্ব অপরিসীম। সেটা শিক্ষা হোক বা স্বাস্থ্য বা খাদ্য কিংবা রোজকার জীবন। টেকনোলজি মানুষের জীবনযাপনকে বানিয়ে তুলেছে অত্যন্ত সহজ এবং আরামদায়ক। কীভাবে?

 

◆ কৃষিক্ষেত্রে টেকনোলজির অবদান :

খুব অল্প জমিতে বেশি শস্যের উৎপাদন থেকে উন্নত মানের শস্য উৎপাদনে সার ও বীজের ব্যবহার অবধি সর্বক্ষেত্রে টেকনোলজির ছাপ সুস্পষ্ট। বাড়তে থাকা জনবসতির সাথে সাথে পৃথিবীতে বাড়ছে খাদ্যসামগ্রীর চাহিদা। টেকনোলজির সাহায্য নিয়ে সেই চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হচ্ছে চাষী ভাইরা।

 

◆ ব্যবসা বাণিজ্যে আধুনিক প্রযুক্তির অবদান :

বাণিজ্যে টেকনোলজি প্রতি পদে পদে জড়িত। পরিবহন ব্যবস্থা থেকে আধুনিক গ্যাজেটস অবধি সবজায়গায় টেকনোলজির সাহায্য ছাড়া বাণিজ্য করা অসম্ভব। লক্ষ লক্ষ অফিস, তাতে লক্ষ লক্ষ কম্পিউটার হিসাব রেখে দিচ্ছে ব্যবসার সমস্ত ছোটছোট তথ্য। বাড়িতে বসে মুঠোফোন থেকে অর্ডার করলে চলে আসছে। জরুরি মিটিংয়ে ভিন রাজ্যে মুহূর্তে উড়ে যেতে সাহায্য করছে এয়ারপ্লেন। কোরোনা পরিস্থিতিতে বাড়িতে বসে উপার্জন করতে সাহায্য করছে ল্যাপটপ। আর এভাবেই টেকনোলজি লতা গাছের মতো জড়িয়ে রেখেছে ব্যবসা বাণিজ্যকে নিজের সাথে।

 

◆ স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে টেকনোলজির অবদান :

টেকনোলজির সাহায্য ছাড়া নতুন নতুন মেশিন বানাতে সক্ষম না হলে মানুষ স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকতো সেই আদিম যুগের আশেপাশেই। এক্সরে মেশিন থেকে শুরু করে কেমো অবধি, ব্লাড টেস্ট থেকে শুরু করে এম আর আই অবধি সর্বত্র টেকনোলজির অবদান অনস্বীকার্য। এই জটিল জটিল মেশিনগুলোকে চালানোর লোকেদের জ্ঞান, ডাক্তারদের মতোই বাঁচিয়ে তুলছে রোজ হাজার হাজার রুগীকে। আধুনিক জীবনে টেকনোলজি ছাড়া স্বাস্থ্য অন্ধ বললেও ভুল বলা হবে না।

 

◆ মহাকাশের রহস্য আবিষ্কারে টেকনোলজির অবদান :

অজানা কে আবিষ্কার করার নেশা এবং অচেনা কে চেনার নেশা মনুষ্য প্রজাতির মধ্যে শুরু থেকেই অদম্য। ছোট টেলিস্কোপ থেকে শুরু করে মহাকাশে পাড়ি দেওয়া রকেট অবধি সবই টেকনোলজির অবদান। চাঁদের মাটিতে প্রাণ আছে কিনা, মঙ্গলের লাল মাটির দেশে জল আছে কিনা, বৃহস্পতির উপগ্রহে প্রাণ আছে কিনা, পৃথিবীর দিকে তাক করে কোনও উল্কা পিন্ড ধেয়ে আসছে কিনা সব কিছুর উত্তর দেওয়া একমাত্র টেকনোলজির সাহায্য ছাড়া দেওয়া অসম্ভব।

 

■ টেকনোলজি ভালো না খারাপ? :

মনুষ্য জীবনযাত্রার বিবর্তনের ইতিহাসে টেকনোলজির অবদান অস্বীকার করার কোনও উপায়ই নেই। কিন্তু টেকনোলজি ভালো না খারাপ? এই প্রসঙ্গে উত্তর দিতে গেলে বলতে হয় যে কোনও জিনিসেরই ভালো এবং খারাপ দুই দিকই আছে। প্রযুক্তি যেমন মানুষের জীবনকে অনেক সহজ করেছে, আরামদায়ক করেছে তেমন এর প্রভাবে মানুষের মধ্যে বেড়েছে বিলাসিতা, ল্যাদ। আরামের জীবন কে আপন করার পর মানুষ ভুলে গেছে কষ্ট কী? তাই যে কোনও অসম পরিস্থিতি মানুষকে ভেঙে ফেলেছে সহজেই।

তাই টেকনোলজির সঠিক ব্যবহার মানুষের জন্য ভীষণই জরুরী। উদাহরণস্বরূপ, রাত্রে ডাইনিং টেবিলে খেতে বসে মোবাইল ফোনটাকে হাত থেকে নামিয়ে দূরে কোথাও সরিয়ে রেখে এসে পরিবারের সাথে হা হা হি হি করতে করতে খাওয়ার অভ্যাস শুরু করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, টেকনোলজি যেন আপনার থেকে আপনার আপনজনদের দূরে না সরিয়ে দেয়।

 

Source : https://www.comptia.org/blog/a-day-without-technology

More Articles