ছোটদের মধ্যেও দিনকে দিন বাড়ছে 'নীল ছবি' দেখার নেশা! চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল গবেষণায়

Teenagers Watching Pornography Frequently : যত দিন যাচ্ছে, শিশু, কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ‘নীল ছবি’ অর্থাৎ পর্নোগ্রাফিক সিনেমা, ভিডিও দেখার প্রবণতা বাড়ছে।

স্কুল হোক বা টিউশন, বাড়ি ফিরেই নিজের ঘরে ঢুকে পড়ছে খুদে সদস্যটি। সারাদিন মোবাইল, নয়তো কম্পিউটারের পর্দায় চোখ সেঁটে আছে। কী এমন দেখছে সে? এত নেশা কেন? মা-বাবা হিসেবে চিন্তা হওয়া স্বাভাবিক। কোনও ‘কু-সঙ্গে’ পড়ছে না তো? এমন ভয়ও পাচ্ছেন তাঁরা। অভিভাবকদের ভয়ের কি সত্যিই কারণ আছে? সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষা অবশ্য জানান দিচ্ছে, ভয়ের কারণ লুকিয়ে আছে ঘরের ভেতরেই। কারণ, সেই পরিসংখ্যান বলছে, যত দিন যাচ্ছে, শিশু, কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ‘নীল ছবি’ অর্থাৎ পর্নোগ্রাফিক সিনেমা, ভিডিও দেখার প্রবণতা বাড়ছে। এখন সেই জায়গাটা বেশ মারাত্মক আকারই নিয়েছে।

ভারত তো বটেই, অনেক জায়গাতেই যৌনতাকে একটু বাঁকা চোখেই দেখা হয়। সেক্স, যৌনতা – এই শব্দগুলো শুনলেই একটা ‘খারাপ’ তকমা লাগিয়ে দেওয়ার ‘প্রথা’ অনেকদিনের। অথচ এই ব্যাপারটি অত্যন্ত স্বাভাবিক, নিত্যনৈমিত্তিক একটি ঘটনা। কিন্তু একেবারে শিশু বয়সে পর্নোগ্রাফি ছবি দেখা? ডাক্তারদের মতে, এটা একেবারে স্বাভিক ঘটনা নয়। কৈশোরে, পরবর্তীতে যৌবনেও যৌনতার প্রতি কৌতূহল, আকর্ষণ থাকবেই, সেটা জানা কথা। কিন্তু দিনের পর দিন পর্নোগ্রাফিক ছবি, ভিডিওর প্রতি রীতিমতো আসক্ত হয়ে পড়া, তাও একেবারে ছোট বয়সে, সেটা বিভিন্ন সংকটের চিহ্ন তো বটেই।

আরও পড়ুন : কামসূত্রেও যা নেই! পাড়াগাঁয়ের লুকোচুরি যেভাবে শেখায় শিরশিরে যৌনতার সহজপাঠ

সেই ছবিটাই উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ডিগনিফাই’-এর একটি সমীক্ষায়। সম্প্রতি তারা ইংল্যান্ডের হার্টফোর্ডশায়ারের স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে এই বিশেষ সমীক্ষা চালিয়েছে। লক্ষ্য ছিল, ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সি কিশোর-কিশোরীরা। অন্তত ৪০০০ জনকে পর্নোগ্রাফি এবং এই ভিডিও, ছবিদেখার নেশা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। তার রিপোর্ট সামনে আসার পরই হকচকিয়ে গিয়েছেন সবাই। দেখা গিয়েছে, পাঁচজনের মধ্যে একজনের পর্ন ফিল্ম দেখার অভিজ্ঞতা রয়েছে। প্রতি দশজনের মধ্যে একজনের তো রীতিমতো নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে এটি। শুধু তাই নয়, অন্তত ২২ শতাংশ কিশোর-কিশোরী বিভিন্ন জায়গায়, বারবার পর্নোগ্রাফিক ছবি দেখেছে। এবং এখনও দেখে চলেছে।

এই সমীক্ষা চলাকালীনই উঠে আসে বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই ৪০০০ জনের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, প্রথম কবে ‘নীল ছবি’ দেখেছে তারা? এই প্রশ্নটির অনেকেই উত্তর দেয়নি। অনেকে পর্ন দেখার কথা অস্বীকারও করেছে। কিন্তু যা জবাব এসেছে, তা মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো। একজনের বক্তব্য, সে মাত্র তিন বছর বয়সে প্রথম পর্নোগ্রাফিক ছবি দেখে! সবসময় যে অনলাইন ওয়েবসাইট সার্চ করেই দেখা হয়, তা নয়। অনেকসময় বন্ধুবান্ধব, বয়সে বড়দের হাত ধরেও এই পর্নোগ্রাফির আসক্তি চলে আসে। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, গড় হিসেবে মোটামুটি ১২ বছর বয়সেই এই ছোট শিশুরা পর্নোগ্রাফির কবলে পড়েছে।

এখানেই উঠে এসেছে উদ্বেগের ছবিটা। যেহেতু অনেকেই খোলাখুলি এই ব্যাপারটি স্বীকার করতে চায় না, তাই সংখ্যাটি কয়েকগুণ বাড়ার আশঙ্কা দেখছেন সমাজতাত্ত্বিকরা। এমনকী, বেশিরভাগ কিশোর-কিশোরীই বাড়িতে এই কথা বলে না। বাবা-মার কাছে লুকিয়ে যায় সবটা। আর এর পেছনে আমাদের দ্রুতগতিতে চলা জীবনই অনেকটা দায়ী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আরও পড়ুন : হেঁটেছিলেন গান্ধী-সুভাষের বিপরীতে! যৌনতা নিয়ে কেন পাপবোধ ছিল না নেহরুর?

কীরকম? আজকের অর্থনৈতিক, সামাজিক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে বেশিরভাগ জায়গাতেই স্বামী ও স্ত্রী দুজনেই চাকরি করেন। সকাল সকাল নিজের সন্তানকে একটু দেখেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান কাজে। ফেরেন সেই রাত করে। তারপর ক্লান্তি, অবসাদ – সব মিলিয়ে সেভাবে বাড়ির বাচ্চাকে সময়ই দেওয়া হয় না। অথচ সেই জিনিসটাই সবচেয়ে বেশি দরকার। শাসনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার, নজরদারিও প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে, বয়ঃসন্ধির সময় কিশোর-কিশোরীদের অবশ্যই খেয়ালে রাখা উচিত। তাদের কৌতূহল, শারীরিক, মানসিক পরিবর্তন নিয়ে খোলাখুলি, স্বচ্ছ আলোচনা জরুরি। কেবল বাড়ি নয়, সমাজ ও স্কুলেও এমনটা ওঁরা উচিত বলে মনে করছেন গবেষকরা। তা না হলে এমন পরিসংখ্যানের গ্রাফ আরও ওপরের দিকেই উঠবে।

More Articles