নতুন করে মৃত্যু মিছিল বাংলাদেশ! "ছাত্র নয়, সব সন্ত্রাসবাদী", কেন বলছেন হাসিনা?
Bangladesh Protest: এখন আর নয় দফা দাবি নয়, একটিই মাত্র দাবিতে লড়ছে আন্দোলনকারী। বাংলাদেশ জুড়ে আওয়াজ উঠছে— হাসিনা সরকারের পদত্যাগ চাই।
বাংলাদেশ ভোলেনি। শয়ে শয়ে সাধারণ মানুষের মৃত্যুর দৃশ্য, সন্তানহারা পরিবারের বিলাপ ভোলেনি বাংলাদেশ। এবার তাই আরও বেশি শক্তি নিয়ে পথে নেমেছে বাংলাদেশের মানুষ। তাতে সামিল হয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ। এত মৃত্যুর পরে, এত বিক্ষোভের পরেও যে হাসিনা সরকারের অবস্থান বদলায়নি তা আবারও স্পষ্ট করে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের এই অশান্ত পরিস্থিতিতে সরকার আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় বলে জানিয়েছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মহম্মদ আলি আরাফাত। পাশাপাশি স্পষ্ট বলেছেন, অশান্তি সৃষ্টি করা হলে তা শক্ত হাতে দমন করা হবে, আইনের প্রয়োগ করেই। ছাত্র আন্দোলন যে আরও কঠিন হাতে দমন করতে চলেছে সরকার সেই ইঙ্গিতও দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছাত্রদের সরাসরি ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলে আক্রমণ করেছেন বাংলাদেশের শাসকদল আওয়ামী লীগের নেত্রী হাসিনা।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে জুলাইয়ের গোড়া থেকেই উত্তপ্ত ছিল বাংলাদেশ। ব্যাপক আন্দোলন, তা দমনে সরকারের নজিরবিহীন আক্রমণ, মৃত্যু, বিশ্বজুড়ে বাড়তে থাকা প্রবল জনরোষের মুখে পড়ে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট কোটা সংস্কারের পক্ষেই রায় দেয়। তবে দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যুর প্রতিবাদে, ন’দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’।
ধৃত আন্দোলনকারীদের মুক্তি, সমস্ত মামলা প্রত্যাহার, কোটা আন্দোলনে হামলাকারীদের শাস্তি-সহ আরও বিভিন্ন দাবি ছিল এই আন্দোলনকারী ছাত্রদের। তবে কয়েক সপ্তাহ ধরে পুলিশ-প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগের যৌথ ‘হামলা’য় একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় এখন আর নয় দফা দাবি নয়, একটিই মাত্র দাবিতে লড়ছে আন্দোলনকারী। বাংলাদেশ জুড়ে আওয়াজ উঠছে— হাসিনা সরকারের পদত্যাগ চাই।
আরও পড়ুন- ফের অশান্ত বাংলাদেশ! নির্বিচারে ‘গণহত্যা’র বিরুদ্ধে পথে এবার সব স্তরের মানুষ
রবিবার জরুরি ভিত্তিতে ডাকা সাংবাদিক সম্মেলনে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, "আমরা সংঘাত এড়ানোর জন্য আলোচনার দরজা খোলা রেখেছি। আমরা সংঘাতে যেতে চাইছি না। কিন্তু একই সঙ্গে বলতে চাই, সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাস করলে আইনের প্রয়োগও ঘটাতে হবে। অশান্তি সৃষ্টি করা হলে তা শক্ত হাতে দমন করা হবে। আমরা সন্ত্রাসকে দমন করব।"
তথ্য প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, আন্দোলন এখন সন্ত্রাস, হিংসায় পর্যবসিত হয়েছে। হাসনা সরকার নাকি বরাবরই শান্তির পক্ষে ছিল, তাই আলোচনার পথেই হাঁটতে চেয়েছিলেন তারা। হিংসার ফলে যে হতাহতের ঘটনা ঘটেছিল, তার বিচারও চেয়েছিল হাসিনা সরকারই! মহম্মদ আলি আরাফাত বলেছেন, আহত-নিহতদের মধ্যে অনেকেই শিশু ছিল। এই মৃত্যুগুলোর জন্য বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষ কাঁদছে। এই মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী, তাদের বিচার করতে হবে। প্রতিমন্ত্রী বলছেন, সাধারণ মানুষের লাশের উপর দাঁড়িয়ে আন্দোলনকারীরা এর সুবিধা নিয়েছে, মানুষকে আরও উস্কে দিয়ে বিপথে পরিচালিত করেছে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেছেন, বিএনপি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। আন্দোলনকারীরাই বিএনপির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। আন্দোলনকারীরা বিএনপি–জামায়াতই। আন্দোলন আর ছাত্রদের অধিকারের জায়গায় নেই। আন্দোলনের নামে যে সন্ত্রাস চলছে।
আরও পড়ুন- খিদে-যন্ত্রণা সয়ে নেবে বাংলাদেশের আমজনতা, শুধু হাসিনাকে গদি ছাড়তে হবে
বাংলাদেশ নতুন করে অশান্ত হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘অসহযোগ কর্মসূচি’ ঘিরে পড়শি দেশে নতুন করে যে অশান্তির সূত্রপাত হয়, তাতে কেবল রবিবারেই অন্তত ৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ১৪ জন পুলিশকর্মীও। এই হামলা, পাল্টা হামলায় জখম হয়েছেন শতাধিক মানুষ। সারা বাংলাদেশ জুড়েই শাসকদল আওয়ামী লীগের কর্মী এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান আন্দোলনকারীরা। রবিবার হাসিনাও ওই বৈঠকে একই কথা বলেছেন, ‘‘যাঁরা হিংসা চালাচ্ছেন, তাঁরা কেউই ছাত্র নন, তাঁরা সন্ত্রাসবাদী।’’
‘প্রথম আলো’ জানাচ্ছে, বাংলাদেশে রবিবার মৃত্যু হয়েছে ৯৭ জনের। নরসিংদীতে ছ’জন, ফেনীতে আট জন, সিরাজগঞ্জে ১৩ জন পুলিশ-সহ মোট ২২ জন এবং কিশোরগঞ্জ, ঢাকা, বগুড়ায় ৪ জন করে, মুন্সিগঞ্জে ৩ জন, মাগুরা, রংপুর, সিলেটে ৪ জন করে, ভোলা, পাবনায় ৩ জন করে, কুমিল্লায় পুলিশ সদস্য-সহ ৩ জন, শেরপুরে ২ জন, জয়পুরহাট, হবিগঞ্জ, ঢাকার কেরানিগঞ্জ এবং বরিশালে ১ জন করে মানুষের মৃত্যুর খবর মিলেছে।
এই নতুন করে অশান্ত হওয়া পরিস্থিতি মোকাবিলায় রবিবার থেকে আবার কার্ফিউ জারি করা হয়েছে বাংলাদেশে। রাজধানী ঢাকা-সহ সব জেলা সদর, বিভাগীয় সদর, মহকুমা, পুরসভা এলাকা, উপজেলায় কার্ফিউ চলছে। সোমবার থেকে পরবর্তী তিন দিন বাংলাদেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকছে। বন্ধ করা হয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবাও।