অজান্তেই ধেয়ে আসছে মৃত্যু! কেন নীরবে হার্ট অ্যাটাকের শিকার হচ্ছেন ডায়াবেটিস আক্রান্তরা

Heart Disease in Diabetics : আপনার ছোট্ট ভুল অজান্তেই ডেকে আনছেন না তো মৃত্যুকে? জানুন ডায়াবেটিসের সঙ্গে হার্ট অ্যাটাকের আসল যোগাযোগ কোথায়...

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে প্রায় সত্তর শতাংশ ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই অকালে মৃত্যুবরণ করে থাকেন। অথচ ডায়াবেটিস অর্থাৎ ব্লাড সুগার বৃদ্ধিজনিত সমস্যা এখন ঘরে ঘরে। নিজেদের বাড়িতে খিজনকরে দেখুন অন্তত একজনের মধ্যে নিশ্চয়ই পাবেন এই প্রবণতা। কিছু ক্ষেত্রে জিনগত কারণেও ছড়ায় ডায়াবেটিস, আর তার পর এই রোগ ডেকে আনে আরও বড় বড় বিপদ। জিনগত প্রভাব ছাড়াও অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি, ধূমপান, বেঠিক খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা ইত্যাদি কারণেও শিকার হতে পারেন ডায়াবেটিসের। অন্যদিকে এই একই সমস্যা কারণ হয়ে উঠতে পারে হৃদরোগেরও। তাই ডায়াবেটিসের সঙ্গে হৃদরোগের একটি অলিখিত সম্পর্ক রয়েছে। ফলে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন যে কোন একটির ঝুঁকি কমলে অপরটির ঝুঁকি কমে আসতে পারে।

বর্তমান সময় দাঁড়িয়ে প্রায়ই অল্প বয়সীদের মধ্যে হার্টের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কম বয়সীদের মধ্যে ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ। এর একটি বিশেষ কারণ হিসেবে চিকিৎসকেরা ডায়াবেটিসকে সূচিত করেন। সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, চল্লিশ বছরের নিচে যারাই আচমকা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের সিংহভাগের শরীরে ব্লাড সুগারের লক্ষণ আগে থেকে ছিল যা তারা বুঝতে পারেননি। আসলে এই আগে থেকে বুঝতে না পারা বা আচমকা হার্ট অ্যাটাকের ও বড় কারণ হল ব্লাড সুগার। আসলে ডায়াবেটিস আমাদের স্নায়বিক অনুভূতিকে ভোঁতা করে দেয়। ফলে কোনরকম চাপা অস্বস্তি হলেও আগে থেকে টের পাওয়া যায় না। কোনরকম উপসর্গ ছাড়াই ধেয়ে আসে মৃত্যুর ঝুঁকি। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় সাইলেন্ট মায়োকার্ডিয়াল ইনরফার্কশন বা নীরব হার্ট অ্যাটাক। এ কারণে অনেক ডায়াবেটিক রোগীই বুঝতে পারেন না তাঁদের হার্টের অবস্থা কী।

আরও পড়ুন - অসম্ভব যন্ত্রণা হচ্ছে পেটে, ফ্যাটি লিভার নয় তো! জানেন কোন কোন খাবার উপযুক্ত এই রোগে?

ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের অন্যতম সাধারণ কারণ হল করোনারি ধমনী বা এথেরোস্ক্লেরোসিস শক্ত হয়ে যাওয়া। এথেরোস্ক্লেরোসিস হলে মানুষের রক্তনালীতে অতিরিক্ত মাত্রায় কোলেস্টেরল জমতে শুরু করে। এদিকে এই রক্তনালীগুলিই হার্টকে যথাযথভাবে অক্সিজেন এবং পুষ্টি সরবরাহ করে। যখন এই কোলেস্টেরল প্লেকগুলি ভেঙে যায়, শরীর তাদের মেরামত করার জন্য প্লেটলেট পাঠায়। এবার এই প্লেটলেটগুলিও ওখানে জমা হয়ে একটি থ্রম্বাস তৈরি করে। যা হৃদযন্ত্রে অক্সিজেন এবং পুষ্টি সরবরাহকারী রক্তনালীর মধ্যে সম্পূর্ণ বাধা সৃষ্টি করে। এই কারণেই হার্ট অ্যাটাক হয়।

আসুন জেনে নেওয়া যাক, এই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের কিছু লক্ষণ -

১. শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা

২. মাথা ঝিমঝিম করা

৩. কারণে অকারণে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া

৪. কাঁধ, চোয়াল এবং বিশেষত বাম হাতে ব্যথা

৫. বুকের বাম দিকে একটা চাপ অনুভব করা

৬. বমি বমি ভাব ইত্যাদি

আরও পড়ুন - গাড়ি থেকে সরাসরি ঢুকছে নাকে! আজীবনের জন্য স্মৃতিশক্তি খোয়াতে পারেন আপনি

তবে আজকের সময় দাঁড়িয়ে সাম্প্রতিক হৃদরোগের মৃত্যুগুলির দিকে পরপর তাকালে দেখা যাচ্ছে যে, বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই আগে থেকে কোন লক্ষণ বা উপসর্গ অনুভূত হয়নি। চাপা কারণে হৃদরোগে মৃত্যু আজকের দিনে একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এই উপরিউক্ত লক্ষণগুলি ছাড়াও যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে বেশ কিছু অতিরিক্ত সর্তকতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক সেগুলি।

১. রক্তে শর্করার মাত্রা যতটা সম্ভব নিয়ন্ত্রণে রাখুন। তিন মাসের গড় শর্করা ৭ এর নিচে, সম্ভব হলে ৬.৫ এর নিচে রাখার চেষ্টা করুন।

২. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখার পাশাপাশি রক্তে কোনভাবে অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি জমা হচ্ছে কিনা সেদিকেও খেয়াল রাখা জরুরি প্রয়োজনে এই বিপদ এড়াতে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ওষুধ খাওয়া দরকার।

৩. শরীরে ব্যাড কোলেস্টেরল যাতে জমা না হয় সেই দিকে অবশ্যই নজর রাখতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট তালিকা প্রস্তুত করে সারাদিনের খাদ্যাভ্যাস স্থির করুন। সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রয়োজনে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে ওষুধ খাওয়াও আবশ্যক।

৪. উচ্চ ক্যালরি ও চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। মাথায় রাখবে চিনি এমনকী অতিরিক্ত লবণও খাওয়া ঠিক নয়।

৫. ধূমপান করবেন না।

৬. দিনে অন্তত আধঘন্টা সমতলে হাঁটাহাঁটি করুন পাশাপাশি সারাদিন নিজেকে কোনো না কোনো কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করুন। শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমা থেকে বিরত রাখুন বিশেষত পেটের চর্বি কমানোর দিকে নজর দিন। এছাড়াও নিয়মিত দিনের নির্দিষ্ট একটা সময় যোগ ব্যায়াম করতে পারেন এতে শারীরিক গঠনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। মেজাজও থাকবে চাঙ্গা।

৭. নিয়মিত রক্তচাপ, ব্লাড সুগার এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা পরীক্ষা করুন। প্রয়োজন অনুসারে নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন এবং ভিতরে ভিতরে অজান্তে হৃদরোগের কোন লক্ষণ ছড়াচ্ছে কিনা সেই বিষয়ে নিজেও যথেষ্ট সচেতন থাকার চেষ্টা করুন।

More Articles