ট্রেনের হর্নেই লুকিয়ে সমস্ত ইঙ্গিত! ভারতীয় রেলের হর্ন ব্যবস্থার অজানা যেসব তথ্য

Unknown Facts of Indian Railway: তিনটি ছোট হর্ন খুব কমই বাজানো হয়। এর অর্থ, মোটরচালকরা মোটরের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছেন।

নিঃসন্দেহে ভারতীয় পরিবহন ব্যবস্থায় অন্যতম প্রধান মাধ্যম ভারতীয় রেল। যাতায়াতের এই প্রধান মাধ্যম ভারতের আম আদমির কাছে সবচেয়ে সুলভ ও নির্ভরযোগ্য। বলাই বাহুল্য, রেলব্যবস্থা প্রচলিত হওয়ার পরেই খুব দ্রুত উন্নতি করেছে ভারত। ট্রেনের দ্রুততা এবং বহন ক্ষমতার জোরে একসঙ্গে অনেক মানুষ এবং পণ্য কম সময়েই অনেকটা দূরত্বে পাড়ি দেয়। গ্রাম হোক বা শহর, যে কোনও জায়গা থেকেই খুব সহজেই পরিবহণ করতে পারে মানুষ রেলের মাধ্যমেই, পাশপাশি রেল বিবিধ কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রও।

এমন কেউই নেই যিনি কখনও ট্রেন চড়েননি। দেশের নব্বই শতাংশ কর্মজীবী মানুষই ট্রেনের মাধ্যমে নিজের গন্তব্য স্থলে পৌঁছন। তবে প্রতিদিন ট্রেনে যাতাওয়াত করলেও এমন অনেক মানুষই আছেন যাঁদের কাছে ট্রেনের বিষয়ে অনেক সাধারণ তথ্যই অজানা। ভারতীয় রেল বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম রেল নেটওয়ার্ক। এতো বড় পরিবহন ব্যবস্থায় প্রতিদিন লাখ লাখ যাত্রী ট্রেনে যাতায়াত করেন। তাই পরিচালনার সুবিধার্থে ভারতীয় রেল অনেক ভাগে ভাগ করা। শুধু রেল না, ট্রেনে বগিও বিভিন্ন ধরনের হয়।

এই বগি গুলিতে কিছু এসি কোচ, স্লিপার কোচ থাকে, সঙ্গে থাকে জেনেরাল কোচ। এছাড়া ট্রেনে অনেক সময় তিনটে আলাদা আলাদা রঙের বগিও দেখতে পাওয়া যায়। বিশেষত লাল, নীল ও সুবজ রঙের হয় এই বগি কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের কাছেই এর কারণ অজানা। ইঞ্জিনের সঙ্গে যে লাল রঙের কোচ বা বগিটি লেগে থাকে তাকে বলা হয় লিংক হফম্যান বুশ (এলএইচবি)। এই কোচগুলি ২০০০ সালে জার্মানি থেকে ভারতে আনা হয়েছিল। তবে এখন এর নির্মাণ হয় পঞ্জাবের কাপুরথালায়। এগুলি অ্যালুমিনিয়াম দ্বারা তৈরি, যার ফলে এগুলি ওজনে বেশ হালকা।

আরও পড়ুন- বুলেট ট্রেনের চেয়েও দ্রুত ছুটবে নতুন বন্দে ভারত, চোখ ধাঁধিয়ে দেবে এই ট্রেনের অন্দর

নির্মাণের সময়ের এসব কোচে ডিস্ক ব্রেক ব্যবহার করা হয়, গতিবেগ হয় প্রতি ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার। এগুলি রাজধানী এবং শতাব্দীর মতো দ্রুত চলমান ট্রেনগুলিতে দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু ইতিমধ্যেই সমস্ত ট্রেনে লিঙ্ক হফম্যান বুশ (এলএইচবি) কোচ বসানোর পরিকল্পনা চলছে।

অনেকেই লক্ষ্য করেছেন কিছু ট্রেনের রং নীল রঙেরও হয়। নীল রঙের কোচটিকে বলা হয় ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি (আইসিএফ)। এগুলো লোহার তৈরি হয় এবং এগুলিতে এয়ার ব্রেক ব্যবহার করা হয়। চেন্নাইতে অবস্থিত ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরিতে (আইসিএফ) এই কোচগুলি তৈরি করা হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে এখন এর জায়গায় লিঙ্ক হফম্যান বুশ ব্যবহার করা হচ্ছে।

আর একটি রং যেটা প্রায়ই দেখা যায় তা হলো সবুজ রেলের কোচ। গরিব রথ ট্রেনে সবুজ রঙের কোচ ব্যবহার করা হয় এবং মিটার গেজ ট্রেনে বাদামি রঙের কোচ ব্যবহার করা হয়। বিলিমোরা ওয়াঘাই প্যাসেঞ্জার একটি ন্যারোগেজ ট্রেন যাতে সবুজ রঙের কোচ ব্যবহার করা হয়। তবে কখনও কখনও এতে ব্রাউন কোচও ব্যবহার হয়ে থাকে।

তবে কেবল রঙেই নয়, আরও অনেক রকম তথ্য আছে যেগুলো এখনও অনেকের কাছে অজানা। ট্রেনে চড়ে কোথাও যাওয়ার সময়, নানা ধরনের হর্নের আওয়াজ কানে আসে। ভালো করে শুনলে বোঝা যাবে, জায়গা ও পরিস্থিতি বিশেষে ট্রেনের হর্নের আওয়াজও কিন্ত পাল্টে যায়। এই হর্নেরও নানা প্রকারভেদ রয়েছে। এগুলি আসলে রেলওয়ে গার্ড, কর্মী এবং যাত্রীদের জন্য একটি শ্রবণযোগ্য সতর্কতা যন্ত্র হিসাবে কাজ করে, একটি শক্তিশালী এয়ার হর্ন বলা যেতে পারে। তবে এই হর্ন কেবলমাত্র ট্রেনের আগমন বা প্রস্থান নির্দেশ করে না, বিপদ সম্পর্কে সংকেত দেওয়া থেকে শুরু করে ট্র্যাক পরিবর্তন করা পর্যন্ত- প্রতিটি পরিস্থিতির জন্য এক এক রকম হর্ন রয়েছে ভারতীয় ট্রেনগুলিতে৷

আরও পড়ুন- স্টিম ইঞ্জিন নয়, বরং বলদ দিয়েই শুরু হয়েছিল বাংলায় ট্রেন চলাচল

একটি ছোট হর্নের সংকেত যার অর্থ, মোটরম্যান পরবর্তী ভ্রমণের জন্য যাত্রার আগে ট্রেনটিকে ধোয়া এবং পরিষ্কার করার জন্য ইয়ার্ডে নিয়ে যাবে। এবার যদি মোটরম্যান দু’টি ছোট হর্ন দেন, তাহলে এর মাধ্যমে তিনি রক্ষীকে রেলওয়ে সিগন্যালটি চালুর নির্দেশ দিতে বলছেন। তিনটি ছোট হর্ন খুব কমই বাজানো হয়। এর অর্থ, মোটরচালকরা মোটরের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছেন। আবার হঠাৎ যদি কোনও ‘প্রযুক্তিগত সমস্যা’ দেখা যায়, তখন মোটরম্যান এই ধরনের চারটি ছোট হর্নের ব্যবহারের মাধ্যমে সেটাই বোঝাতে পারেন। কখনও কখনও যাত্রীদের সতর্ক করার জন্য ক্রমাগত হর্ন বাজানো হয়ে থাকে, যার অর্থ হল ট্রেনটি কোনও রকম না থেমে স্টেশন পার করবে।

একটি লম্বা হর্ন এবং একটি ছোট হর্নের মাধ্যমে, মোটরম্যান ইঞ্জিন চালু করার আগে, ব্রেক-পাইপ সিস্টেম সেট করার জন্য গার্ডকে সংকেত দিয়ে থাকেন। যদি মোটরম্যান দু’টি লম্বা এবং দু’টি ছোট হর্ন দেন, তার মানে হল তিনি ইঞ্জিনের নিয়ন্ত্রণ নিতে গার্ডকে ইঙ্গিত দিচ্ছেন। যখন ট্রেনটি একটি রেল ক্রসিং দিয়ে চলতে থাকে, তখন দু’টি বিরতিসহ দু’টি হর্ন ব্যবহার করা হয়ে থাকে৷ এই বিশেষ হর্নের মাধ্যমে পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সতর্ক করা হয়। মোটরম্যান যখনই ট্রেনের ট্র্যাক পরিবর্তন করতে চলেছে, তখন এই বিশেষ হর্নটি বাজানো হয়ে থাকে। এই ধরনের হর্নের শব্দ দু’টি সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়। হয় কোনও যাত্রী চেইন টেনেছেন অথবা গার্ড ভ্যাকুইম ব্রেক টেনেছেন৷

More Articles