কেন অন্যান্য মন্দিরের থেকে আলাদা কালীঘাট? কলকাতার সতীপীঠের যে ইতিহাস আজও অজানা

Kalighat Temple: রাজা নবকৃষ্ণ এই মন্দিরে সোনার মুণ্ডমালা দান করেছিলেন। এছাড়াও খিদিরপুরের গোকুলচন্দ্র ঘোষাল কালী মায়ের চারটি হাত সম্পূর্ণ রূপো দিয়ে তৈরি করেছিলেন।

কলকাতায় তথা পশ্চিমবঙ্গে মাত্র  হাতেগোনা কিছু মন্দির রয়েছে যেগুলো এখনও পর্যন্ত পৌরাণিক এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বকে বহন করে চলেছে। এই তালিকায় একেবারে উপরের দিকে রয়েছে দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাট মন্দির। দক্ষিণ কলকাতার এই মন্দিরটি কলকাতার সবথেকে জনপ্রিয় এবং সবচেয়ে প্রাচীন কালী মন্দির। তবে কলকাতার সবথেকে জনপ্রিয় মন্দির শুধুমাত্র নয়, এই মন্দিরটি আরও অনেক ক্ষেত্রে অন্যান্য কালীমন্দিরের থেকে আলাদা। এই মন্দির সতীর ৫১ সতীপীঠের মধ্যে পড়ে। আদিগঙ্গা অর্থাৎ মায়ের ঘাটের একদম ধারে অবস্থিত এই কালীঘাট মন্দির। আগে আদিগঙ্গা ভাগীরথী নদীর অংশ থাকলেও এখন ভাগীরথী থেকে একেবারেই আলাদা হয়ে গিয়েছে। দু'টি নদীর প্রবাহের সঙ্গে তেমন কোনও সম্পর্ক নেই। শুধুমাত্র কলকাতার উপর দিয়ে গঙ্গা নদী প্রবাহিত হয়। ভৌগলিক পরিবর্তনের দরুন কালীঘাটের কালী মন্দিরের সামনে থাকা আদিগঙ্গা এবং হুগলি নদীর প্রবাহ বারংবার পরিবর্তিত হয়েছে।

কিন্তু কালীঘাটের কালী মন্দির প্রতিষ্ঠার একটি বিশাল কাহিনি রয়েছে, যা হয়তো এখনও পর্যন্ত অনেকেই জানেন না। কথিত আছে, এই কালীঘাটে নাকি সতীর শরীরের ডান পায়ের চারটি আঙ্গুল (মতান্তরে একটি) পড়েছিল। তারপর থেকেই, কালীঘাট মন্দির হয়ে উঠেছে সকলের সতীপীঠ বা শক্তিপীঠ। কালীঘাট মন্দিরের মতো ঐতিহ্যশালী মন্দির ভারতে খুব কম আছে। কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে কালীঘাট অত্যন্ত আকর্ষণীয় জায়গা। অনেকে বলেন, কালীঘাট শুধুমাত্র ভারত নয় সারা বিশ্বের ক্ষেত্রেই জনপ্রিয় এক মন্দির। অনেকের ধারণা কালীক্ষেত্র বা কালীঘাট শব্দটি থেকে বর্তমানে কলকাতা শব্দটির উদ্ভব ঘটেছে। এছাড়াও, ২০০০ বছর আগে গ্রিক দার্শনিক টলেমির ভারত বর্ণনায় একটি কালীগ্রামের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল, যেটি নাকি আজকের কালীঘাটে রূপান্তরিত হয়েছে, যদিও এই ধারণা নিয়ে মতান্তর আছে।

আরও পড়ুন: ‘জয় তারা’ বলে আটকেছিলেন বৃষ্টি, অলৌকিক কাহিনিতে ভরপুর বামাক্ষ্যাপার জীবন

অন্যদিকে অনেকে আবার বলেন, মহাদেব যখন সতীর আত্মহত্যায় ক্ষুব্ধ হয়ে তাণ্ডব নৃত্য শুরু করেছিলেন সেই সময়ে বিষ্ণুর সুদর্শন চক্রের কারসাজিতে সতীর ডান পায়ের আঙ্গুল কেটে গিয়ে পড়েছিল কালীঘাটে। ঘটনাক্রমে সেইসময় কালীঘাটের আদিগঙ্গার সামনে উপস্থিত ছিলেন চৌরঙ্গ গিরি নামের জনৈক পুরোহিত। তিনি সেই সময়ে সেই জায়গার সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ করে তিনি জলের মধ্যে দেখতে পান, পায়ের আঙ্গুলের আকৃতির কোনও জিনিস পড়ে রয়েছে। তিনি সেটিকে যত্ন সহকারে তুলে রাখেন। পরে নাকি তিনি স্বপ্নে কালীকে দেখতে পেয়েছিলেন, তারপর থেকেই কালীঘাটের যাত্রা শুরু।

কালীঘাটের আদিগঙ্গার সামনে একটি কুটির তৈরি করে সেখানে কালীপুজো শুরু করলেন চৌরঙ্গ গিরি। সূত্রপাত হলো কালীঘাট মন্দিরের। ১৫ শতকে লেখা মনসার ভাসান বইতে কালীঘাট মন্দিরের সূচনা নিয়ে এই বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে আবার কবি ভারতচন্দ্রের লেখায় এই একই বর্ণনা ফুটে ওঠে। অনেকে আবার বলেন পুরাণ মতে কালীঘাট নাকি বারানসীর মতো একটি জায়গা।

কিন্তু বলতে গেলে এই ধারণা নিয়ে অনেকের মধ্যেই অনেক বিতর্ক রয়েছে। অনেকে মনে করেন কালীঘাট মন্দির তৈরি করা এবং এই মন্দিরে মায়ের পুজো করার জন্য সবথেকে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিল সাবর্ণ রায়চৌধুরীর পরিবার। কথিত আছে, ১৫৭০ সালে সাবর্ণ রায় চৌধুরীর পরিবারের লক্ষীকান্ত রায়চৌধুরীর মা পদ্মাবতী দেবী ঘুমের মধ্যে একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই স্বপ্নে তিনি দেখেছিলেন স্বয়ং মা কালীকে। তারপরেই তিনি সকালে উঠে কালীঘাটের কালীকুণ্ডা হ্রদে সতীর পায়ের আঙুল আবিষ্কার করেন। তারপর থেকেই তাঁর উদ্যোগে কালীঘাটে মন্দির নির্মাণ করে কালীর পুজো শুরু করা হয়। তার পাশাপাশি, কালীঘাট মন্দির হয়ে ওঠে ৫১ সতীপীঠের একটি বিশেষ নিদর্শন।

যদিও কালীঘাট মন্দির তৈরি করাতে ইংরেজদের কিছুটা ভূমিকা আছে বলেও অনেকে মনে করেন। জানা যায়, যখন ভারতে ইংরেজ শাসন চলছে, সেই সময় কলকাতা এবং এই সমস্ত অঞ্চলগুলি অন্তর্ভুক্ত ছিল ডিহি পঞ্চান্নগ্রামের মধ্যে। ১৭৫৮ সালে ইংরেজরা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মাধ্যমে মীরজাফরের কাছ থেকে এই জমি ক্রয় করে। পলাশির যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলাকে হারিয়ে বাংলায় ক্ষমতায় চলে আসে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। তার পরেই মীরজাফরের সঙ্গে এই জমি কেনা বেচার গল্প কাহিনি। কলকাতার আশেপাশে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন গ্রাম তৈরি করতে শুরু করে ইংরেজরা। কলকাতায় চাকরির সুযোগ সুবিধা বেশি, তাই অনেকে কলকাতায় আসতে শুরু করেন। গ্রামগুলিকে আস্তে আস্তে আরও পরিষ্কার করা হয়। তারপরেই কলকাতার আশেপাশের অঞ্চল মিলে একটি নতুন শহর তৈরি করে ফেলা হয়।

তবে এছাড়াও, আরও কিছু কাহিনি রয়েছে এই কালীঘাট মন্দির প্রতিষ্ঠা নিয়ে। শোনা যায় নাকি সাবর্ণ রায়চৌধুরীর পরিবার ১৮০৯ সালে এই মন্দিরের নির্মাণকার্য সম্পূর্ণরূপে শেষ করে। সেই সময় এই মন্দিরের নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য খরচ হয়েছিল ৩০,০০০ টাকা। কথিত আছে, কালীঘাট মন্দির মোটামুটি বেশ কয়েক বিঘা জমির উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। মধ্যযুগীয় মন্দিরের স্থাপত্য, আটচালা আকৃতির মন্দির সব নিয়ে কালীঘাট মন্দির সত্যিকারের একটি ভাস্কর্যের নিদর্শন। তবে, এই জমিটা ঠিক কাদের সেটা নিয়ে এখনও পর্যন্ত সমস্যা চলছে। সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের পরিবার দাবি করছে এই জমি সম্পূর্ণ তাদের। অন্যদিকে আবার হালদার বাড়ির তরফ থেকে দাবি করা হচ্ছে সেই জমি তাদের। তাই এখনও পর্যন্ত এই জমি নিয়ে সমস্যা চলছে।

অন্যদিকে, কালীঘাট মন্দির প্রতিস্থাপনের এতগুলি কাহিনি থাকলেও সব থেকে বেশি প্রচলিত যে কাহিনিটি সেটির সঙ্গে কিন্তু সরাসরি জড়িয়ে রয়েছেন আত্মারাম ব্রহ্মচারী এবং একইসঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার। জনশ্রুতিতে শোনা যায়, আত্মারাম ব্রহ্মচারী নামের একজন মাতৃ সাধক একদিন কালী সাধনা করছিলেন। সেই সময়ে তিনি একটি দেবী কণ্ঠ শুনতে পান। তিনি ভালোভাবে মন দিয়ে শুনে বুঝতে পারেন তাঁকে জানানো হচ্ছে, যে বেদীর উপরে তিনি বসে আছেন  সেটি আসলে ব্রহ্ম বেদী এবং দেবীর দেহের একটি অংশ পাশের হ্রদের জলে আছে। তাঁকে আদেশ করা হয়, নীলগিরি পর্বতে গিয়ে ব্রহ্মানন্দ গিরি নামে একজন সাধক রয়েছেন তার সঙ্গে দেখা করে তার কাছে যে কষ্টিপাথরের শিলা রয়েছে সেটি যেন এই বেদীর উপর স্থাপন করা হয়।

তারপরেই আত্মারাম ব্রহ্মচারী ব্রহ্মানন্দের সঙ্গে দেখা করেন। তার কাছ থেকে নীলগিরি থেকে কোনও এক দৈববলে ১২ হাত লম্বা এবং ২ হাত চওড়া একটি কষ্টিপাথরের শিলা কালীঘাটের নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন। এমনকী শোনা যায় সেই শিলা থেকে মাতৃরূপ প্রদান করার জন্য এসেছিলেন স্বয়ং দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা। অবশেষে ওই শিলা থেকে একটি দেবী মূর্তি তৈরি করা হয়। কিন্তু দেখা যায়, দেবী মূর্তি তৈরি হয়ে গেলেও তখনও পর্যন্ত দেবীর চরণ নিখোঁজ। তখন হঠাৎ করেই আত্মারাম এবং ব্রহ্মানন্দ পাশের জলাশয়ের মধ্যে একটি আলো দেখতে পান। স্নানযাত্রা দিন অর্থাৎ জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমার দিন সেখানে তারা মায়ের পায়ের অংশ খুঁজে পেয়ে যান। তারপর থেকে প্রত্যেক স্নানযাত্রার দিন প্রথা মেনে বিশেষ পুজো শুরু হয় কালীঘাট মন্দিরে।

কিন্তু কালীঘাট মন্দিরের সবথেকে আকর্ষণীয় বিষয়টি হলো কালীঘাটের মূর্তিটি। সাধারণ কোনও কালীমূর্তি থেকে এটি একেবারে অন্যরকম। এই কালীমূর্তির জিভ অন্যান্য মূর্তি থেকে একেবারে আলাদা। এই জিভ সম্পূর্ণরূপে সোনা দিয়ে মোড়া। আত্মারাম গিরি এবং ব্রহ্মানন্দ গিরি, এদের 'দুজনের তত্ত্বাবধানে এই মূর্তি তৈরি করা হয়েছিল। তবে অনেকে মনে করেন সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের কূলদেবী মাতা ভুবনেশ্বরীর মূর্তির সঙ্গে এই কালীমূর্তির বেশ কিছুটা মিল আছে।

এই মূর্তিতে দেখা যায় তিনটে বড় বড় লাল রঙের চোখ, চারটে সোনালি রঙের হাত এবং একটি দীর্ঘকায় জিভ। আগে যেহেতু এখানে শুধুমাত্র কালীর পুজো করা হতো তাই এটি আগে কালীক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত ছিল। এই কালীক্ষেত্র নাম থেকে পরবর্তীকালে কালীঘাট নামটির উদ্ভব হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। আবার অনেকে বলেন, এই কালীক্ষেত্র নামটি এসেছে একটি ইংরেজি শব্দের বাংলা অনুবাদ থেকে। 

আরও পড়ুন- শিশুদের কলিজা খেয়ে বাঁচতেন বাংলার বেগম! মুর্শিদাবাদে আজও রহস্যে মোড়া এই জ্যান্ত কবর

কীভাবে কালীঘাট হয়ে উঠল ৫১ সতী পীঠের মধ্যে একটি?

কালীঘাট মূলত ৫১ সতীপীঠের মধ্যে অন্যতম। কিন্তু এই সতীপীঠ তৈরি হওয়ার মূল কারণ অনেকেরই অজানা। হিন্দু শাস্ত্রে সর্বমোট ৫১টি সতীপীঠ অথবা শক্তিপীঠ থাকার উল্লেখ করা হয়েছে। শাস্ত্রে জানানো হয়েছে, রাজা দক্ষের কাছে নিজের স্বামীর অপমান শুনে আত্মহত্যা করেছিলেন সতী। ভগবান শিব সতীর আত্মহত্যা কোনওভাবে মেনে নিতে পারেননি। তাই রাগে মহাদেব সারাবিশ্বে তাণ্ডব নৃত্য শুরু করে দেন। সেই অবস্থায় তাণ্ডব নৃত্য বন্ধ করতে মাঠে নামেন বিষ্ণু।

বিষ্ণু সুদর্শন চক্রের ব্যবহার করে সতীর মৃতদেহটিকে একেবারে খণ্ড-বিখণ্ড করে দেন। সতীর দেহের ৫১টি অংশ হয়। সেই সমস্ত অংশ ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। তার মধ্যেই সতীর দেহের ডান পায়ের চারটি আঙুল (মতান্তরে একটি) পড়ে কালীঘাটে।

যে সমস্ত জায়গায় সতীর দেহের কোনও না কোনও অংশ পড়েছিল সেখানে সেখানেই সতীপীঠ অথবা শক্তিপীঠ তৈরি হয়েছে। এই সমস্ত জায়গায় শক্তির আরাধনা করা হয়। ঠিক একইভাবে আরাধনা করা হয় ভৈরবের। আমরা কালীঘাট মন্দিরে শক্তিরূপ হিসেবে দেখতে পাই মায়ের দক্ষিণা কালী রূপ। অন্যদিকে, ভৈরব অর্থাৎ রক্ষক হিসেবে পূজিত হন নকুলেশ্বর মহাদেব।

মন্দিরের আকার আয়তন:

১৮০৯ সালে বড়িশার জমিদার সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের শিবদাস চৌধুরী, তাঁর পুত্র রামলাল চৌধুরী এবং তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র লক্ষীকান্ত চৌধুরীর উদ্যোগে নতুন করে তৈরি করা হয় কালীঘাট মন্দির। ১ বিঘা ১১ কাঠা ৩ ছটাক জমির উপরে এই সম্পূর্ণ মন্দির তৈরি করতে খরচ হয়েছিল ৩০,০০০ টাকা। এই মন্দির তৈরি করতে সময় লেগেছিল মোটামুটি ৮ মাস। বঙ্গীয় আটচালা স্থাপত্যশৈলীতে এই মন্দির তৈরি করা হয়েছিল। যদিও পরবর্তীকালে রাজস্থানী শিল্পীদের দিয়ে এই মন্দিরের ছাদ উঁচু করা হয়েছে।

এই মন্দিরের গর্ভগৃহে বেশ সাজানো এবং বেশ উঁচু। কৃষ্ণ শিব এবং অন্যান্য দেবতারা এখানে পূজিত হন। এই সমস্ত পুজো হয় ছোটখাটো মন্দিরে। তারপরে আসে ভৈরব অর্থাৎ নকুলেশ্বরের মন্দির। মন্দিরের উচ্চতা ৯০ ফুটের কাছাকাছি। এই মন্দিরে ৩টি কলস, ১ টি ত্রিশূল, ১ টি ধাতব ধ্বজা আছে যেখানে লেখা আছে ওঁ। এছাড়াও মন্দিরের সামনাসামনি রয়েছে কেওড়াতলা মহাশ্মশান।

কালীঘাট বিষয়ে আরও কিছু কথা:

কালীঘাট মন্দির কলকাতার সবথেকে প্রাচীন কালীমন্দির। স্বাভাবিকভাবেই বহু দিন ধরে এই মন্দির নিয়ে মানুষের মধ্যে কৌতূহল রয়েছে। শুধুমাত্র রাজা এবং জমিদাররা নন বহু ইংরেজ সাহেব কালীঘাট মন্দিরে এসে পুজো দিয়ে গেছেন। শোনা যায় একটি মামলা জেতার জন্য একবার একজন ইংরেজ সাহেব কালীঘাট মন্দিরে মানত করেছিলেন। সেই মামলায় জয়লাভ করার পরে তিনি কালীঘাট মন্দিরে ৩,০০০ টাকার পুজো দিয়েছিলেন।

এছাড়াও পঞ্জাব এবং বর্মা দখলের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষ থেকে এই মন্দিরে পুজো দেওয়া হয় বলে জানান স্থানীয়রা। রাজা নবকৃষ্ণ এই মন্দিরে সোনার মুণ্ডমালা দান করেছিলেন। এছাড়াও খিদিরপুরের গোকুলচন্দ্র ঘোষাল কালী মায়ের চারটি হাত সম্পূর্ণ রূপো দিয়ে তৈরি করেছিলেন। যদিও পরবর্তীকালে কালীচরণ মল্লিক নামে একজন সেই রুপর হাত সোনা দিয়ে করিয়ে দিয়েছিলেন। এছাড়াও, দেবীর মাথায় ছাতা দান করেছিলেন নেপালের সেনাপতি জঙ্গ বাহাদুর। তার পাশাপাশি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নাকি মন্দির সংলগ্ন আদি গঙ্গার ঘাট বাঁধিয়ে দিয়েছিল। বড়িশার জমিদার সন্তোষ রায় চৌধুরী এই মন্দির সংস্কার করেছিলেন। বাংলা সংস্কৃতির সঙ্গে দীর্ঘ বেশ কিছু বছর ধরে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে কালীঘাট মন্দির। কলকাতা সবথেকে পুরনো কালীমন্দির হওয়ার সুবাদে বিশ্বের বহু মানুষের জনসমাগমে মুখরিত হয়ে থাকে এই জায়গাটি। এই মন্দিরে পুজো দিয়ে গেছেন হিন্দু থেকে শুরু করে খ্রিস্টান বৌদ্ধ এবং সকল ধর্মের মানুষেরা। তাই ঠিক এইখানেই সকলের থেকে আলাদা হয়ে ওঠে কালীঘাট।

তথ্যসূত্র:

More Articles