'আমি না থাকলে মান্নত থাকত না', কেন বলেছিলেন সলমন?

'পাঠান' থেকে 'ডাংকি'- 'জিরো'-পরবর্তী দীর্ঘ বিরতির পর আবার বড় পর্দায় ফিরছেন শাহরুখ খান। অনুগামীদের আগ্রহ তুঙ্গে।অন্যদিকে টাইগার ফ্র্যাঞ্চাইজির তৃতীয় ছবিতে ফিরছেন ভাইজান। বলিউডের এই 'খানদান' নিয়ে বারবার বিতর্ক দানা বেঁধেছে। দু'বছর আগে সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যা যে প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিয়েছিল বলিউডে, তাতে খানদানও আক্রান্ত হয়। আমির খান কিঞ্চিৎ বিচ্ছিন্ন থাকলেও, শাহরুখ-সলমনকে নিয়ে আগ্রহ-তর্ক বারবার ফিরে ফিরে এসেছে। তাঁদের সম্পর্ক ঠিক যেন কোনও রোলার কোস্টার রাইডের মতোই। কখনও বহু বছর পরস্পরের মুখ দেখাদেখি অবধি বন্ধ ছিল, আবার কখনও শাহরুখের খারাপ সময়ে ভাইজান পাশে দাঁড়িয়েছেন, সম্প্রতি আরিয়ান খানের ক্ষেত্রেই যেমন। ১৯৯৫ সালের বক্স অফিস কাঁপানো 'করণ অর্জুন' সিনেমার মধ্য দিয়ে তাঁদের সুসম্পর্কের সূত্রপাত। সিনেমাটি রেকর্ড মার্জিনে হিট হওয়ার পর অনুগামীরা তাঁদের ‘কুম্ভ মেলায় হারিয়ে যাওয়া দুই ভাই’ হিসেবে গণ্য করতে শুরু করেন। বলা বাহুল্য, সেইসময় তাঁদের সম্পর্কও ছিল খানিক সেই রকমই। কিন্তু এরপরেই পরপর দু'বার সলমনের সঙ্গে সংঘাত ঘটে কিং খানের এবং দ্বিতীয়বারের সংঘাতের পর মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়।  

ঝগড়া যখন ঐশ্বর্যকে নিয়ে

বলিউডের বিখ্যাত পরিচালক সঞ্জয় লীলা বনশালির ‘হাম দিল দে চুকে সনম’ ছবিতে সলমন খান এবং ঐশ্বর্যর কেমিস্ট্রি দর্শকদের মধ্যে সমানভাবে জনপ্রিয়। এই সিনেমার শুটিং চলাকালীনই তাঁদের মধ্যে প্রেমের সূত্রপাত হয় বলে শোনা যায়। কিন্তু প্রথম থেকেই অভিনেত্রীর পরিবারের এই সম্পর্ক নিয়ে আপত্তি ছিল। তাই স্বাভাবিকভাবেই সম্পর্কে বিবাদের অন্ত ছিল না। এমন সময় সলমন খান তাঁর প্রাক্তন প্রেমিকার সঙ্গে বিদেশে দেখা করতে গেলে, ঐশ্বর্য তা মেনে নিতে পারেন না এবং মাত্র দু'বছরেই সম্পর্কের অবসান ঘটে। পরে অবশ্য ঐশ্বর্য নিজের মুখে বলেছেন যে, সম্পর্কে থাকাকালীন তাঁকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে একাধিকবার হেনস্থার শিকার হতে হয়েছিল। কিন্তু এই বিচ্ছেদ খুব সহজে মেনে নিতে পারেননি ভাইজান। শোনা যায়, তিনি ‘চলতে চলতে’ সিনেমার সেটে গিয়ে রীতিমতো ঝামেলা করতে থাকেন এবং মিস ওয়ার্ল্ডকে সকলের সামনেই তাঁর সঙ্গে যাওয়ার জন্য জোরাজুরি করতে থাকেন। এই সিনেমার অভিনেতা এবং প্রযোজক দুইই ছিলেন স্বয়ং কিং খান। অবস্থা বুঝে তিনি পরিস্থিতি সামাল দিতে গেলে তাঁর সঙ্গেও ধস্তাধস্তি করতে পিছপা হন না সলমন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, সলমন না কি সেদিন তাঁর জামার কলার ধরে, তাঁকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেন। এই ঘটনা এবং এককথায় তাণ্ডবের পর কিং খান ঐশ্বর্যর বদলে রানিকে তাঁর নায়িকা হিসেবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু পরিচালক এবং শাহরুখের বিশিষ্ট বন্ধু ফারহা খানের বিয়ের অনুষ্ঠানে, সলমন গিয়ে নিজের সেইদিনকার ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চাইলে এই বিবাদের মীমাংসা ঘটে।  

'কোথায় থাকত মান্নত, আমি না থাকলে?'

একটি সাক্ষাৎকারে সলমনের একটি মন্তব্য ঘিরে জলঘোলা হয় ভালই। সেই সাক্ষাৎকারে সলমন বলে বসেন, 'বাজিগর' ও 'চক দে ইন্ডিয়া'-র প্রথম প্রস্তাব এসেছিল তাঁর কাছে। তিনি সেদিন এই ছবিগুলোকে ফিরিয়ে না দিলে আজ শাহরুখ শাহরুখ হতেন না, অস্তিত্ব থাকত না মান্নতের বিলাসবহুল বাংলোর। শাহরুখ অবশ্য এর প্রেক্ষিতে কোনও মন্তব্য করেন না।

আরও পড়ুন: ছোটবেলার ক্রাশ থেকে জীবনসঙ্গী, কেমন ছিল রণবীর-আলিয়ার এই প্রেম?

যে বিবাদের কারণ এখনও জানা যায়নি

২০০৮ সালে ক্যাটরিনা কাইফের জন্মদিনের পার্টিতে আবার ঝামেলা বাঁধে শাহরুখ এবং সলমন খানের। প্রসঙ্গত, এর এক বছর আগেই মুক্তি পেয়েছিল 'ওম শান্তি ওম', যেখানে 'দিওয়াঙ্গি' গানে তারকা সমাবেশের মধ্যে শাহরুখ-সলমনকেও একত্রে দেখা যায়। যাই হোক, সেদিনের ঝামেলা হাতাহাতির রূপ নেওয়ার আগেই ক্যাট এবং বাদশা-পত্নী গৌরী তা সামলে নেন। পার্টিতে উপস্থিত বলিউডের তিন খানের অন্যতম আমির খানও ঝামেলা আটকানোর চেষ্টা সেদিন করেছিলেন। এরপর থেকেই কার্যত মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে যায় দুই অভিনেতার।

এর বছরপাঁচেক বাদে ২০১৩ সালে মুম্বইতে বাবা সিদ্দিকির ইফতার পার্টিতে পুনরায় মিলন ঘটে করণ–অর্জুনের। দেখা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানান এবং এই তিক্ত সম্পর্কের অবসান ঘটে একটি জোরদার আলিঙ্গনের মধ্য দিয়ে। তবে একথা বলাই চলে যে, শেষ বিবাদের অন্তিমে কিন্তু ঠিক সিনেমার করণ-অর্জুনের মতোই তাঁদের সম্পর্ক আগের থেকেও অনেক বেশি মজবুত হয়েছে। এরপর একাধিকবার কিং খানের খারাপ সময়ে ঠিক ভাইয়ের মতোই পাশে থাকতে দেখা গেছে সলমনকে। মুম্বই ক্রুজ ড্রাগস মামলায় যখন বাদশা পুত্র আরিয়ান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়, তখন এই তারকাকে নিয়মিত মান্নতে যাতায়াত করতে দেখা গিয়েছিল। যদিও আজ অবধি কেউ জানে না, ক্যাটরিনার জন্মদিনের পার্টিতে এমন কী হয়েছিল, যার জট কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘ পাঁচ বছর সময় লেগে গেছিল দুই তারকার, তাও ২০১৬ সালের স্টার অ্যাওয়ার্ড শো-তে কিং খান বলেন, তাঁদের ঝামেলার কারণ নাকি ছিল খুবই ছোট। শাহরুখ নাকি সেদিন সলমনকে বিয়ের জন্য রাজি করানোর চেষ্টা চালাচ্ছিলেন এবং উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন যে দু'জনের মধ্যে আসলে কে বেশি সুখে জীবনযাপন করছে, কিন্তু বলিউডের চিরকুমার সলমন যথারীতি তা অগ্রাহ্য করায় তাঁদের মধ্যে একটা ছোট্ট ঝামেলা হয়েছিল। যদিও এই হাস্যকর যুক্তি নেটিজেনরা মেনে নেননি। সম্প্রতি দুই তারকার অনুগামীদের দৌলতে তাঁদের একটি পুরনো ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে শাহরুখ খানকে বলতে শোনা যায়, তিনি অথবা তাঁর পরিবার যদি কখনও বিপদে পড়ে, তাহলে সলমন খানকে তিনি অবশ্যই পাশে পাবেন এবং সলমনও এই বক্তব্যে তাঁকে সম্মতি জানান। এছাড়াও ভাইজানের ৫৩ বছরের জন্মদিনের পার্টিতে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে তাঁকে এবং কিং খানকে একসঙ্গে ‘প্যার হামে কিস মোড় পে লে আয়া’ থেকে শুরু করে ‘ সাট্টা পে সাট্টা’ গানগুলি গাইতে দেখা যায়। আশা করা যায়, আগামী দিনগুলিতেও অনুগামীরা তাঁদের করণ-অর্জুনকে এইভাবেই পরস্পরের পাশে থাকতে দেখবেন।          

 

 

 

 

More Articles