অ্যাডিনোভাইরাস কী, কেন এত শিশু আক্রান্ত হচ্ছে বাংলায়

AdenoVirus : প্রাথমিকভাবে সোয়াইন ফ্লু বা অন্যান্য ভাইরাল ফিভারের মতোই একটি ভাইরাস সংক্রমণ এটি। উপসর্গও প্রায় একই। তবে চিন্তার বিষয় হল এই ভাইরাসের মোকাবিলায় এখনও কোনও যথাযথ প্রতিষেধক বা টিকা বেরোয়নি।

শীতের শেষ আর বসন্তের শুরু, এই সময়টা নিয়ে চিরকালই একটা চিন্তার মেঘ থাকে। একটা রোগের হাওয়া এই সময় বাতাসে বিয়েতে থাকে। সিজন চেঞ্জের সময় সর্দি, কাশি, জ্বর,এটা নতুন কিছুই নয়। তবে ইদানিং যেন সামান্য সর্দি জ্বর মামুলি কিছু থাকছে না আর। অজান্তেই ডেকে আনছে সমুহ বিপদ। চেনা রোগ অচেনা হচ্ছে প্রতি নিয়ত। একবার কাশি শুরু হলে সেই জের থাকছে মাসখানেক। ভিতরে ভিতরেই দানা বাঁধছে নয়া ভাইরাসের আতঙ্ক। করোনা, ডেঙ্গুর পর এবার রাজ্য জুড়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে নয়া অ্যাডেনো ভাইরাস।

আশঙ্কার বিষয় হল, কলকাতা মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত দেড় মাসে তিনজন শিশুর মৃত্যু হয়েছে এই অ্যাডেনো ভাইরাসের প্রকোপে। প্রাথমিকভাবে সোয়াইন ফ্লু বা অন্যান্য ভাইরাল ফিভারের মতোই একটি ভাইরাস সংক্রমণ এটি। উপসর্গও প্রায় একই। তবে চিন্তার বিষয় হল এই ভাইরাসের মোকাবিলায় এখনও কোনও যথাযথ প্রতিষেধক বা টিকা বেরোয়নি। উপসর্গ বা লক্ষণ বলতে জ্বর, সর্দি, কাশি, ফুসফুসের সংক্রমণকেই দায়ী করা হয়েছে যদিও। এবং আবহাওয়ার পরিবর্তনই যে মূলত এই বিপদ ডেকে আনছে সে কথা জানিয়েছেন চিকিসকেরা। এই সময় এমনিতেই শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় আমাদের। পরিস্থিতি এমনটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে যে গোটা কলকাতা শহর জুড়ে বেলাগাম সংক্রমণ ক্রমশ বাড়ছে। জানা গিয়েছে এই রোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে বেশিরভাগ শিশুদের। ফলে শিশু হাসপাতালে আইসিইউতে ইতিমধ্যেই সঙ্কট দেখা দিয়েছে বেডের। আইসিইউয়ে বেডের জন্য হাহাকার তো রয়েছেই পাশাপাশি রোগী উপচে পড়ছে জেনারেল বেডগুলিতেও। পরিস্থিতি সামাল দিতে যান কবুল লড়াই করছেন চিকিৎসকেরা। কোথাও একই বেডে দুজন শিশুকে পাশাপাশি রেখেই চিকিৎসা করতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন - দেহ থেকে অবিরাম রক্তপাত, ভূতের মতো চেহারা! মারাত্মক যে ভাইরাস ছড়াচ্ছে বিশ্বজুড়ে

কিন্তু কী এই অ্যাডেনো ভাইরাস?

সোয়াইন ফ্লু বা অন্যান্য ভাইরাল ফিভারের মতোই ভাইরাস সংক্রমণজনিত রোগ এটি। উপসর্গও প্রায় একই। প্রাথমিকভাবে বোঝার উপায় নেই কোথায় তফাৎ মামুলি সর্দি, জ্বর অথবা কাশির সঙ্গে। তবে রোগ প্রতিরোধে এখনও আলাদা করে কোনও টিকা নেই এক্ষেত্রে তাই বিপদ এড়াতে চিকিৎসা বলতে শুধুই সাপোর্টিভ কেয়ার।

কেন আচমকাই হুহু করে বাড়ছে অ্যাডেনো ভাইরাসের আতঙ্ক?

কলকাতা শহর ও পার্শ্ববর্তী শহর জুড়ে দাপিয়ে সম্প্রতি বেড়াচ্ছে অ্যাডেনো ভাইরাস। মূলত ৫ থেকে ১৪ বছরের বাচ্ছা এবং বেশি বয়স্কদের মধ্যেই এই রোগের শিকার হতে বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, করোনা পরবর্তী সময় থেকেই শহরে ভাইরাসজনিত একাধিক রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এই রোগের ভয়াবহতার সব থেকে বড় দিকটি হল, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সামান্য সর্দি জ্বর ভেবে রোগ অনেকদিন পুষে রাখছেন, অবস্থা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পৌঁছলে তবেই চিকিৎসকদের পরামর্শে ছুটে আসছেন। এবং হাতের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে বিষয়টি তখন। তাই বর্তমান আবহাওয়াকে অগ্রাহ্য করে সামান্য সর্দি জ্বর ভেবে ভিতরে ভিতরে পুষে রাখাই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হতে পারে।

কী কী সতর্কতা অবলম্বন করবেন?

যেহেতু এটিও একটি বায়ু দ্বারা সংক্রমিত রোগ তাই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার ডা. অঞ্জন চৌধুরীর কথায়, কোভিডের মতোই মাস্ক পরা, হাত ভালো করে ধোওয়া, যেখানে সেখানে থুতু না ফেলা, এগুলোই মেনে চলতে হবে প্রাথমিকভাবে। জ্বর-ঠান্ডায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। পিসিআর টেস্ট করে অ্যাডিনোভাইরাস চিহ্নিত করা গেলেও এই ভাইরাসের নির্দিষ্ট কোনও ওষুধ নেই। তাই উপসর্গ দেখে সেই মতো ব্যবস্থা নিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। সংক্রমণ ঠেকাতে উচ্চ মাত্রার কিছু অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তা দিয়েও সবসময় আয়ত্তে আনা যাচ্ছে না সংক্রমণ। তাই আপাতত ভরসা লাইফ সাপোর্টিভ কেয়ার।

More Articles