পিছিয়ে পড়া 'জেনারেল'দের সংরক্ষণ! এই কোটায় কারা, কী কী সুবিধে পাবেন?

EWS Reservation: এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হতে গেলে বার্ষিক আয় (পারিবারিক) ৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে হবে। পরিবারের ৫ একরের বেশি কৃষি জমি থাকা যাবে না। ১০০০ স্কোয়ার ফুটের বেশি জায়গা নিয়ে ফ্ল্যাট হলে চলবে না।

পিছিয়ে পড়া! দেশের তথাকথিত সমাজব্যবস্থায় বিভিন্ন ক্ষেত্রের মধ্যে আর্থিকভাবে অনগ্রসর, এই তত্ত্বও সামনে এনেছিল কেন্দ্র। একাধিক দাবির উপর ভিত্তি করে, ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেয় নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত রচনা করে নয়া ইতিহাস। কিন্তু আর্থিকভাবে অনগ্রসর শ্রেণির নির্বাচন, গঠন কাঠামো এবং সার্বিক অবস্থানের প্রয়োগ নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। একের পর এক প্রশ্নের মুখে পড়ে এই সিদ্ধান্ত। মামলা ওঠে দেশের শীর্ষ আদালতে। ২০১৯-এর সিদ্ধান্ত নিয়ে শুরু হয় আইনের লড়াই। এবার একাধিক বিতর্ক জিইয়ে রেখেই এই প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত।

পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চের তরফে এর পক্ষেই এসেছে রায়। ৩-২ ফলে আদালতে জিতেছে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়াদের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণের তত্ত্ব। কিন্তু কী এই সংরক্ষণ? কেন বিতর্ক? কী বলছে আদালত? কী নিয়ে মতবিরোধ দেখা গেল বিচারপতিদের মধ্যেও। জানা যাক বিস্তারিত।

আদালতের 'আর্থিক রায়'

আর্থিকভাবে অনগ্রসর শ্রেণির জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণ নিয়ে সোমবার ৩-২ রায়ে, পুরনো সিদ্ধান্ত এবং সেই প্রেক্ষিতে নিয়ম বহাল রেখেছে দেশের শীর্ষ আদালত। বিচারপতি দীনেশ মহেশ্বরী, বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদী, বিচারপতি জেবি পারিদিওয়ালা এই সংরক্ষণের পক্ষে মত দিলেও দেশের প্রধান বিচারপতি ইউইউ ললিত, যিনি আজই অবসর নেবেন তিনি এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে মত দেন। এমনকী বিচারপতি এস রবীন্দ্র ভাটও এর বিপক্ষে মত দেন। বিচারপতি ভাট মন্তব্য করেন, "সংরক্ষণ সমান অধিকারের ক্ষেত্রে বাধা!"

আরও পড়ুন- অভাবনীয় বৃদ্ধি সম্পত্তির! উইপ্রো, নেসলে, ওএনজিসির থেকেও ধনী তিরুপতি মন্দির

যদিও এই প্রসঙ্গে পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চের অন্যতম সদস্য, বিচারপতি দীনেশ মাহেশ্বরী তাঁর পর্যবেক্ষণে জানান, "আর্থিক অবস্থার ভিত্তিতে সংরক্ষণ (EWS reservation) সংবিধান বিরোধী নয়।" তিনি আরও জানান, 'সংরক্ষণ হল ইতিবাচক পদক্ষেপের জন্য অন্যতম হাতিয়ার। সমাজে সমতা আনার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে এই সংরক্ষণ। এর মাধ্যমে কোনও কোনও অনগ্রসর বা পিছিয়ে পড়া জাতিকে সমাজের মূলস্তরে আনার উপায় হতে পারে এই সংরক্ষণ।"

প্রবীণ এই বিচারপতির মন্তব্য, "আর্থিক অবস্থার ভিত্তিতে সংরক্ষণের বিষয়টি ভারতীয় সংবিধানকে লঙ্ঘন করে না। ৫০ শতাংশ (যা দেশের সংরক্ষণের শতাংশের ঊর্ধ্বসীমা) পার করলেও সংবিধানের মূল কাঠামো লঙ্ঘিত হত না।" বিচারপতি আরও জানান, "এর কারণ শুধুমাত্র ১৬ (৪)এবং (৫) ধারার জন্য সর্বোচ্চসীমা ধার্য হয়েছে।"

বিচারপতি মহেশ্বরীর ব্যাখ্যা, অর্থের অবস্থার উপর ভিত্তি করে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির জন্য এই সংরক্ষণের বিষয়টি সংবিধানের মূল ভিত্তিকে লঙ্ঘন করে না।

এদিকে প্রায় একই মত পোষণ করেন বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদীও। তিনি জানান, "সাধারণ শ্রেণির সঙ্গেই তাঁদের সমান বিচার করা ঠিক নয়। আর এই ধরণের বিভাগের ফল হিসেবে কখনওই সমান অধিকারের নিয়ম লঙ্ঘিত হয় না।"

আদালতে মামলা হলে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে একাধিকবার নিজেদের মতামত জানায় কেন্দ্র। সংবিধানের ১০৩তম সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ একাধিক মামলা দায়ের হয়। উল্লেখ্য, এই সংশোধনীর আওতায় ছিল আর্থিকভাবে দুর্বল, এমন শ্রেণির জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণ, যেখানে সংবিধানের ১৫ (৬) এবং সংবিধানের ১৬ (৬) ধারাকে অস্ত্র করা হয়।

মামলাকারীদের দাবি

অভিযোগ করা হয়, এই সিদ্ধান্তে সমান অধিকারের সাংবিধানিক অধিকার মানছে না কেন্দ্র। বলা হয়, ভারতের সংবিধানের ৪৬ নম্বর ধারায় 'শ্রেণি' হিসেবে শিক্ষাগত দিক থেকে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির কথা বলা হলেও সেখানে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির কথা বলা হয়নি।

কী এই কোটা?

৭ জানুয়ারি, ২০১৯ সাল। দেশজুড়ে সংরক্ষণ তুলে দেওয়ার দাবি এবং নানা বিতর্কের মধ্যেই নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ক্যাবিনেট বা মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়াদের জন্য দেশে ১০ শতাংশ সংরক্ষণ চালু করা হবে। যার ফলে শিক্ষা, চাকরির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা ভোগ করতে পারবে এই অংশও যাঁরা মূলত সাধারণ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ছিলেন এতদিন। বার্ষিক ৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় হলে এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হওয়া যাবে।

৮ জানুয়ারি, ২০১৯। সংসদে পেশ হয় ১২৪ তম সংবিধান সংশোধনী বিল। সেদিনই পাশ হয়।

তারপর ৯ জানুয়ারি রাজ্যসভায় পাশ হয় এই বিল। এদিনই ইয়ুথ ফর ইকুয়ালিটি নামের একটি সংগঠন এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দেশের শীর্ষ আদালতে।

১২ জানুয়ারি স্বাক্ষর করেন দেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।

১৪ জানুয়ারি, ২০১৯। সংবিধানের ১৫ (৬) এবং ১৬ (৬) ধারার অন্তর্ভুক্তির জন্য সরকার আনে প্রস্তাব। যা এই সংরক্ষণ বিষয়ক সিদ্ধান্তে সিলমোহর দেবে।

২৫ জানুয়ারি, ২০১৯। দেশের শীর্ষ আদালত এই সিদ্ধান্তের উপর স্থগিতাদেশ বহাল রাখতে অস্বীকার করে। এই মামলার বিচারে তৈরি হয় পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ।

আরও পড়ুন- হাহাকার, মৃত্যু, কান্না! ফিরে দেখা নোটবন্দির বিভীষিকাময় দিনগুলো

কেরল ও মহারাষ্ট্র সরকারের স্বীকৃতি

কেরল সরকার কিছু নিয়মের বদল এনেও একপ্রকার এই সিদ্ধান্তের পক্ষে দাঁড়ায়। সে রাজ্যে চালু হয় এই নিয়ম।

মহারাষ্ট্র সরকারের তরফ থেকে ২০২১ সালের জুন মাসে এর প্রয়োগ ঘটে একাধিক ক্ষেত্রে।

কেন্দ্রের নিয়ম

এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হতে গেলে যা যা লাগে;

বার্ষিক আয় (পারিবারিক) ৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে হবে।

পরিবারের ৫ একরের বেশি কৃষি জমি থাকা যাবে না।

১০০০ স্কোয়ার ফুটের বেশি জায়গা নিয়ে ফ্ল্যাট হলে চলবে না।

বাড়ি হতে হবে ১০০ স্কোয়ার ইয়ার্ডসের মধ্যে। পৌর এলাকার ক্ষেত্রে এই নিয়ম।পৌর এলাকা না হলে এই আয়তন ২০০ ইয়ার্ড পর্যন্ত হতে পারে।

সাধারণ শ্রেণির হতে হবে, যাঁরা অন্য কোনও সংরক্ষণের আওতায় নেই। বয়স শিক্ষা ক্ষেত্রে ১৮-এর নিচে হলেও হবে। চাকরির ক্ষেত্রে ১৮ হতে হবে।

More Articles