অর্জুনের প্রত্যাবর্তন নিয়ে দলের অন্দরেই অশান্তি, কেন ভিন্ন সুর কিছু নেতার?

তৃণমূলের দুই শীর্ষ ব্যক্তিত্ব যে প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত, সেই কাজ নিয়ে দলের একাংশের গলায় ভিন্ন সুর কেন?

অর্জুন সিংয়ের দলত্যাগে বিষন্ন বিজেপি৷ এটা স্বাভাবিক৷ কিন্তু বারাকপুরের সাংসদের 'ঘর ওয়াপসি'-তে তৃণমূলের অন্দরেও আপত্তির চোরা স্রোত কেন?

 

অথচ এমন হওয়ার কথা ছিল না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিয়েই অর্জুনকে দলে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার সেই বৃত্ত সম্পূর্ণ হয়েছে। ছবিতে দেখা গিয়েছে, অভিষেক নিজের হাতে 'জোড়া ফুল'-শোভিত উত্তরীয় দিচ্ছেন অর্জুন সিং-কে। তৃণমূলের দুই শীর্ষ ব্যক্তিত্ব যে প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত, সেই কাজ নিয়ে দলের একাংশের গলায় ভিন্ন সুর কেন?

 

অতীতে একাধিক ইস্যুতে সরব হওয়ায় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এবার অর্জুন সিং-এর দলবদল নিয়েও মুখ খুলেছেন তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়। তিনি বলেছেন, "অর্জুন সিং-কে দলে নিয়ে তৃণমূলের বড় কোনও লাভ হবে না, আবার ক্ষতিও হবে না।" দলের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে, দলের চেয়ারপার্সন এবং জাতীয় সাধারণ সম্পাদকের সিদ্ধান্তের উল্টো পথে কেন হাঁটলেন সৌগত রায়?

 

আরও পড়ুন: বাবুল, অর্জুন, এরপর? আদর্শহীন দলবদলের খেলায় আর কত চমক?

 

কেন এই অভিমত, তার কারণ ব্যাখ্যা করে সৌগতবাবু বলেন, "বারাকপুর লোকসভার অন্তর্গত ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৬টিতেই তৃণমূলের বিধায়ক৷ একটিমাত্র কেন্দ্রে বিজেপি জিতেছে। অর্জুন সিং অথবা আর একজন বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দিলে দলের বাড়তি কোনও লাভ নেই।" পাশাপাশি অর্জুনের এভাবে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ঘটনায় দলের ক্ষতির আশঙ্কা কতখানি, সেই প্রসঙ্গে সৌগত রায়ের বক্তব্য, "অর্জুন তো কার্যত একা একাই তৃণমূলে এসেছে। বারাকপুরে তৃণমূল এখন যথেষ্ট শক্তিশালী। ফলে তৃণমূলের কোনও ক্ষতি হবে না ঠিকই, কিন্তু লাভ কতখানি হলো? পর পর ভোটে প্রমাণিত হয়েছে, বারাকপুরের সাধারণ মানুষ তৃণমূলকেই সমর্থন করছেন‌। অর্জুনের কোনও জনভিত্তিই আর নেই। তাই অর্জুনকে এনে দলের বড় কোনও লাভ হবে না, ক্ষতিও হবে না।" সৌগত রায় খুব ভালো করেই জানেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুমতি না দিলে অর্জুন সিং-এর তৃণমূলে ফেরা অসম্ভব ছিল। তা জানার পরেও তিনি এভাবে কেন মন্তব্য করলেন, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েই। সৌগতবাবু এর আগেও একাধিক ইস্যুতে এমন কিছু মন্তব্য করেছিলেন, যা কার্যত দলের বিরুদ্ধেই গিয়েছিল। হাঁসখালি গণধর্ষণ, পুরভোটে সন্ত্রাস বা লেক গার্ডেন্সে প্রোমোটারি নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় তাঁর কিছু মন্তব্য এতটাই আলোড়ন ফেলে যে, দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি পর্যন্ত বিষয়টি পৌঁছে যায়। তখনই শোনা গিয়েছিল, দল তাঁকে নাকি বারে বারে সতর্কও করে। তবে দেখা যাচ্ছে, দফায় দফায় সতর্ক করা সত্ত্বেও তিনি ওসবকে তেমন গুরুত্ব দিতেই রাজি নন।

 

তৃণমূল অন্দরের খবর, রাজ্য স্তরের কিছু নেতার পাশাপাশি উত্তর ২৪ পরগণায় দলীয় নেতৃত্বের একাংশও নাকি অর্জুনের 'ঘরে' ফেরার বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে নেননি। প্রকাশ্যে কেউ কোনও মন্তব্য না-করলেও অনেকেই ঘনিষ্ঠ মহলে এই ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। এমনকী এটাও শোনা যাচ্ছে, ওই জেলার এক গুরুত্বপূর্ণ বিধায়ক, যিনি বিজেপি-র অর্জুন সিংয়ের বিরুদ্ধে সমানে লড়ে গিয়েছিলেন, তাঁর ক্ষোভ সামাল দিতে ওই বিধায়ককে মন্ত্রিসভায় আনার কথাও বিবেচনা করা হচ্ছে। যদিও দলের অন্য সূত্র বলছে, সত্যিই তাঁকে মন্ত্রী করা হলে, তা হবে অর্জুন সিংকে 'শিক্ষা' দেওয়ার জন্য, যাতে অর্জুন আগের মতো বেপরোয়া না হয়ে উঠতে পারেন।

 

ওদিকে শোনা যাচ্ছে, অর্জুন সিং-কে এই রাজ্যে সেভাবে রাজনীতি করতেই নাকি দেওয়া হবে না। তাঁকে প্রথমে 'প্রায়শ্চিত্ত' করতে হবে।

 

'প্রায়শ্চিত্ত' করতে ভিন রাজ্যে সংগঠনের কাজ করার জন্য অর্জুনকে পাঠানো হচ্ছে। ঠিক যেভাবে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে সংগঠন দেখভালের কাজে ত্রিপুরায় পাঠানো হয়েছে, সেভাবেই এখন অর্জুন সিং-কেও পাঠানো হতে পারে অন্য কোনও রাজ্যে।

 

More Articles