ইউক্রেনের এই 'ভূত'-এর ভয়ে কাঁপছে রাশিয়া, আসল ঘটনা জানলে শিউরে উঠতে হয়

তাঁর মৃত্যুকে ঘিরে তৈরি হয়েছিল রহস্য। সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম তাঁকে ‘দ্য ঘোস্ট অফ কিভ’ আখ্যা দিয়েছে। কিভের এই ‘ঘোস্ট’ বা ভূতের মৃত্যুর প্রায় দু'মাস পর ইউক্রেন সরকার জানিয়েছে, তাঁর আসল নাম মেজর স্টেপান তারাবালকা। মৃত্যুর আগে এই ইউক্রেনীয় বিমানযোদ্ধা একা হাতে অন্তত ৪০টা রুশ যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছিলেন বলে জানা যাচ্ছে। সূত্র মারফৎ জানা যায়, রুশ বিমানবাহিনীর গুলিতে স্টেপানের মৃত্যুর পর প্রায় একমাস তাঁর কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি। স্টেপানের সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়ে ইউক্রেনবাসী তাঁর নাম দিয়েছেন ‘দ্য গার্জিয়ান এঞ্জেল’। কিন্তু কে এই স্টেপান তারাবালকা? দেখে নেওয়া যাক।

পশ্চিম ইউক্রেনের কোরোলিভকা গ্রামে জন্ম হয় স্টেপানের। তাঁর বাবা-মা পেশায় শ্রমিক ছিলেন। ছোট থেকেই স্টেপানের শখ ছিল, বড় হয়ে বিমানযোদ্ধা হওয়ার। তাঁর মা নাটালিয়া তারাবালকা এবং বাবা ইভান তারাবালকা জানিয়েছেন, কোরোলিভকার ওপর দিয়ে যখন কোনও ইউক্রেনীয় যুদ্ধবিমান উড়ে যেত, তখন এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকতেন স্টেপান। কালে কালে তাঁর স্বপ্ন সত্যি হল। পড়াশোনা শেষ করে ইউক্রেনের সামরিক বিভাগে যোগ দিলেন তিনি। বিমানযোদ্ধা হিসেবে তিনি নিজের কাজে অত্যন্ত পটু ছিলেন বলে জানা যায়। অল্প সময়ের মধ্যেই ইউক্রেনের সামরিক বিভাগে তিনি সুখ্যাতি অর্জন করে নিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে ইউক্রেন আক্রমণ করে পুতিনের সৈন্যরা। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রস্তুতি দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল, অবশেষে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তা শুরু হল পুরোদমে।

যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর স্টেপানের ঘাড়ে গুরুদায়িত্ব এসে পড়ল।তাঁকে তাঁর বিভাগ থেকে যথাসম্ভব গোপনীয়তা বজায় রেখে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হল। অর্থাৎ, পোশাকি ভাষায় বলতে গেলে তাঁকে ‘আন্ডারকভার ফাইটার পাইলট’ হিসেবে নির্বাচন করল ইউক্রেনের সামরিক দপ্তর। নিজের বিভাগের নির্দেশমতো স্টেপান বাড়িতে কিছু না জানিয়ে যুদ্ধে গেলেন। স্টেপানের মৃত্যুর পর তাঁর বাবা-মা বলেছিলেন, “আমরা শুধু জানতাম, স্টেপান কোনও এক বিশেষ মিশনে গেছে। এর বেশি  কোনও তথ্য আমাদের কাছে ছিল না।” এমনকী, স্টেপানের স্ত্রী ওলেনিয়া এবং আট বছরের ছেলে ইয়ারিক পর্যন্ত তাঁর এই ‘বিশেষ মিশন’ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানতেন না।

আরও পড়ুন: ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হয়ে পস্তাচ্ছেন? জেলেনস্কির নয়া সাক্ষাৎকার কোন ইঙ্গিত দিচ্ছে?

সূত্র মারফৎ জানা যায়, যুদ্ধের প্রথম দিনেই তিনি ছ'টা রুশ বিমান ধ্বংস করেছিলেন একা। ১৩ মার্চ রুশ হানাদার বাহিনীর গুলিতে ২৯ বছর বয়সি এই বিমানযোদ্ধার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর সময়ে তিনি একটা মিগ-২৯ বিমান চালাচ্ছিলেন বলে যানা যায়। স্টেপানের মৃত্যুর পর দীর্ঘদিন তাঁর কোনও সন্ধান পাওয়া যায় না। অনেকে মনে করেন, স্টেপানের মৃত্যুর খবর ইউক্রেনের সামরিক দপ্তরের কাছে ছিল, কিন্তু নিজেদের পেশাদারি গোপনীয়তার ফলেই তাঁরা তা প্রকাশ করেননি। সাম্প্রতিককালে স্টেপানের সাহসিকতার প্রতি সম্মান জানিয়ে তাঁর নামে ইউক্রেনের সর্বোচ্চ সামরিক পুরস্কারের ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও জেলেন্সকি সরকার তাঁকে ‘হিরো অফ ইউক্রেন’ উপাধি দিয়েছেন বলে জানা যায়। মৃত্যুর কালে যে হেলমেট এবং গগলস পরেছিলেন স্টেপান, তা ভবিষ্যতে লন্ডনে নিলাম হওয়ার কথা। স্টেপানের মৃত্যুর পর তাঁকে নিয়ে বেশ কিছু গল্পকথা গড়ে উঠেছে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে। তাঁর সাহসিকতার তুলনা করা যেতে পারে ইভান কোজহেডাবের সঙ্গে।

১৯২০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের ওব্রাজহিয়েভকা গ্রামে জন্ম হয়েছিল ইভানের। ১৯৪১ সালে একজন সাধারণ বিমানচালক হিসেবেই তিনি তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। কিন্তু সেবছরই হিটলারের নাৎসিবাহিনী সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে। সোভিয়েত সরকার তখন কিছুটা বাধ্য হয়েই ইভানকে যুদ্ধবিমান চালানোর দায়িত্ব দেয়। যুদ্ধ-পরিস্থিতিতে ইভান চটজলদি এলএ-৫ বিমান চালানোয় পটুতা অর্জন করেন এবং ১৯৪৩ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের সামরিক বিভাগের কম্যান্ডার পদে উত্তীর্ণ হন। ইভান নিজের কর্মজীবনে একক প্রচেষ্টায় প্রায় ৬০খানা বিমান সংঘর্ষে জয়ী হয়েছিলেন বলে জানা যায়। পরবর্তীকালে সোভিয়েত সরকার তাঁকে ‘ফাইটার এস’ উপাধি দিয়ে সম্মান জানায়। প্রসঙ্গত, স্টেপানের মৃত্যুর পর তাঁকেও ইউক্রেন সরকারের পক্ষ থেকে ‘ফাইটার এস’ উপাধি দেওয়া হয়েছে।

রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিণতি কী হতে চলেছে, তা নিয়ে এখনই কোনও নিদান দেওয়া চলে না। ইতিমধ্যেই ৯ মে ইউক্রেনে আরও বড় হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। যুদ্ধে জর্জরিত ইউক্রেনবাসীকে হয়তো ভবিষ্যতে আরও ঘোরতর কোনও হামলার মোকাবিলা করতে হতে পারে। তবে পরিস্থিতি যাই হোক, আগামী দিনে ইউক্রেনের কিংবদন্তি হয়েই থেকে যাবেন মেজর স্টেপান তারাবালকা।

 

More Articles